#বৃষ্টিস্নাত প্রেমের গল্প
#পর্ব-২৯
#লেখনীতে-আসমিতা আক্তার ( পাখি )
হুর তার সকল বন্ধু-বান্ধব কে নিয়ে এসেছে শপিংমলে। আসার আগে অবশ্য রুদ্ধের কাছ থেকে পারমিশন নিয়ে এসেছে। এবং সাথে আছে দুইটা বডিগার্ড। দুজনেই তার পিছে পিছে ঘুরঘুর করছে। সটান বলিষ্ঠ দেহ। মাথা থেকে পা অবদি সবকিছুই কালো রঙে আবৃত করা। চেহারায় গাম্ভীর্য স্পষ্ট। বডিগার্ডরা বুঝি এমনই হয়!রুদ্ধের কথা প্রাধান্য দিয়ে হুর রুদ্ধের সমস্ত কথা মেনে নেয়। যে বডিগার্ডের সে পছন্দ করে না সে বডিগার্ডদের নিয়ে চলাফেরা করে। এতে মাঝে মাঝে বিরক্তীর সীমা অতিক্রম হলেও কিছু বলতে পারেনা সে। এখন অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। অনেকদিন পর বন্ধুবান্ধবদের সাথে সাক্ষাৎ করতে পেরে খুবই আনন্দিত হুর। পরীক্ষার পর অবসর সময় কাটাচ্ছিল সে। অবসর সময় বললেও ভুল হবে,বাড়িতে বসেও পড়ালেখা সে কন্টিনিউ করেছে। কারণ ভালো একটা মেডিকেলে তার চান্স পেতে হবে। শুধু হুর নয় বন্ধু-বান্ধব মহলের সবাই ই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ইচ্ছে একত্রে সবাই পড়বে।
প্রথমে শপিং করবে তারপর রেস্টুরেন্টে গিয়ে ভরপুর পেট ভরিয়ে বাসায় যাবে।হুরের পরনে লম্বা কালো গাউন।গাউন এর মাঝে ফুলের মধ্যে সাদা স্টোনের পাথর ও বসানো। লম্বা চুল বেনী করে পিছনে ছাড়া। সাজবিহীন ঠোঁটে শুধু লিপ বাম লাগিয়ে বাহিরে বেরিয়েছে সে।হুর স্নেহার হাত ধরে শপিং মলের ভেতর এগিয়ে যাচ্ছে। তখনই মিম বলে ওঠে,
“প্রথমে কোন দোকানে যাই বলতো?
মুক্তা বলে,
“চল শাড়ির দোকানে যাই।। সবাই মিলে একরকম শাড়ি কিনব।
সায় জানাল স্নেহা ও হুর। বিরাট বহুল একটি শাড়ির দোকানে সবাই প্রবেশ করলো।মেয়ের দলরা চেয়ার টেনে বসলো। তাদের পিছনে সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে দাঁড়িয়ে রইলো আকাশ,শিহাব ফিহান।ওরা তিনজন মেয়েদের বাছা বাচি দেখছে। একটা ছেড়ে আর একটা শাড়ি দেখছে আর রিজেক্ট করছে। মাঝে মাঝে নাক মুখ ও কুচকাচ্ছে । দেখে বোঝাই যাচ্ছে তাদের একটা শাড়িও পছন্দ হচ্ছে না।এক সময় সে দোকানের শাড়ি পছন্দ না করে অন্য আরেকটি দোকানে চলে গেল। সে দোকানের শাড়ির কালেকশন খুবই ভালো। আকর্ষণীয় সুন্দর সুন্দর শাড়ি দেখে স্নেহা,হুর,মুক্তা,মিম তাদের চোখ চকচকে হয়ে আসলো।আবারো মেয়েরা চেয়ার টেনে বসলো আর ছেলেরা তাদের পেছনে দাঁড়িয়ে রইল।এ দোকানের বেশ কয়েকটি শাড়ি সবার মনে ধরেছে। তবে কোনটা রেখে কোনটা নিবে সেটাই বুঝতে পারছে না। মনে হচ্ছে একটা নিলে আরেকটার সাথে বেইমানি করা হবে।তাই করুন মুখে একে অপরের দিকে তাকালো। এমনকি সেলসম্যান এর দিকেও তাকালো।
করুন মুখ দ্বারা বোঝানোর চেষ্টা করলো তারা শাড়ি চুজ করতে অক্ষম।সেলসম্যান সবার অসহায়ত্ব চেহারা দেখে ফট করেই বুঝে গেলেন তাদের আকুলতা।তাই সে তিনটা শাড়ি বেছে সামনে দিয়ে বললেন,
“ম্যাম আপনারা এই তিনটি শাড়ির মধ্যে বাছাই করে নিতে পারেন। এই তিনটি শাড়ি আপনাদের ওপর খুবই স্যুট করবে।
বড় বড় চোখ করে তিনটি শাড়ি দেখতে লাগলো সবাই। মন আটকালো কফি কালার জর্জেট শাড়িতে। কালো স্টোনের কাজ করা। সবাই ডিসাইড করল কফি কালার শাড়িটাই নিবে। চারজন একই ডিজাইন একই কালারের শাড়ি নিল।সবাই ক্যাশ দিয়ে বিল পে করলেও হুর করলো কার্ড দিয়ে।শপিংয়ে আসার আগে রুদ্ধ তাকে তার কার্ড দিয়েছিল। বলেছিল যত প্রয়োজন হয় ব্যবহার করতে। হুর প্রথমে নিতে চায়নি। শেষে রুদ্ধের ধমক শুনে নিতে হয়েছে।
বিল পে ছেলেরা করতে চেয়েছিল। কিন্তু মেয়েরা তা হতে দিল না। শর্ত রেখেছিল আজকের খাবারের বিল সব ছেলেরা দিবে।তাই শপিংয়ে তারা একটু ছুট দিল।ছেলেরাও তাদের জন্য টুকটাক কিছু কিনলো। শপিং মল থেকে বের হয়ে রাস্তা দিয়ে হাটছে আর আশেপাশে রেস্টুরেন্টের তালাশ করছে। ভালো কোন রেস্টুরেন্ট পেলে তার মধ্যে তারা ঢুকে যাবে। সামনে একটা রেস্টুরেন্ট চোখে পড়লো। সেখানে যাওয়ার জন্য সবাই হাঁটতে লাগলো। তার আগেই ঘটে গেল এক বিপত্তি। কোন খান থেকে একদল লোক এসে তাদের ঘেরাও করলো।আকস্মিক ঘটনায় সবাই হকচকিয়ে গেল। বাকরুদ্ধ হয়ে একে অপরের দিকে তাকালো। লোকগুলোর দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারল লোকগুলো বখাটে। তবে তাদের কেন ঘেরা করে রেখেছে সেটা বোধগম্য হলো না।হুরের সাথে থাকা বডিগার্ড’সদের আগেই তারা ধরে নেয়। তাই তারা সাহায্য করতে পারে না।আপাতত তাদের মাথায় পি’স্তল ঠেকানো।নতজানু হয়ে আছে।মেয়েরা ইতিমধ্যে ভয়ে সিটে গেছে। ১৫ থেকে ১৬ জন লোক। চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে পুনর্জন্ম থেকে তারা বখাটে ছিল। দেখতে গুন্ডা টাইপ। নেশাও করে বোধ হয়। সবার চোখের সাদা অংশ লাল টকটকে হয়ে আছে। যার দরুন বোঝা যাচ্ছে সবাই নেশাখোর।
শুধু যে মেয়েরা ভয় পেয়েছে এমন না। ফিহান, শিহা,ব আকাশ তারাও ভয় পেয়েছে। কারণ এমন পরিস্থিতিতে কখনো তাদের পড়তে হয়নি। আজ পড়েছে। তাও আবার তাদের সাথে মেয়েরাও আছে। তাই ভয় আরো বেশি হচ্ছে।ভয়ে সবার ভেজানো গলা শুকিয়ে এসেছে।শিহাব সবার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,
“কে আপনারা? আর আমাদেরকে এভাবে ঘেরো করে রেখেছেন কেন?
বিদঘুটে এক হাসি দিকে সামনে থাকা এক লোক বলে,
“তোমাগো যত্ন করবার জন্য ঘেরা কইরা রাখছি।কিন্তু সবার যত্ন করবার লেইগা সময় আমাগো হাতে সময় নাই।ওই মাইয়ারে দিয়া নিজের জা’ন নিয়া যাও এইখান থেইকা। নাইলে কেউ জা’ন নিয়া ফিরবার পারবি না।
হুরের উদ্দেশ্য করে বলল লোকটি।এতে হুর ভয় পেয়ে আকাশের পিঠের পিছে লুকিয়ে যায়।ভয়ে গলা শুকিয়ে নেত্রকোনায় পানি আসলো।হুরকে নিয়ে যাওয়ার জন্য গুন্ডারা আসছে শুনে আকাশের ক’লিজা ধক করে উঠলো।দুই হাত মেলে হুরকে আগলে রাখার চেষ্টা করল।আতঙ্ক নিয়ে বলল,
” ওকে কেন নিতে চাচ্ছেন?খবরদার!কাছে আসার চেষ্টা করবেন না। নাহলে…
আকাশের কথা শুনে একজন অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো। কোন ক্রমে নিজের হাসি নিয়ন্ত্রণে এনে উপহাস করে বলল,
“না হলে, না হলে কি করবি?
চুপ মেরে যায় আকাশ। আসলেই তো সে কোন কিছুই করতে পারবে না। এতগুলো লোক। তাও আবার সবগুলো গুন্ডা। হাতে পিস্তল। তাদের সামনে নিতান্তই তারা বাচ্চা।তিনজন কি আর পারবে ১৫-১৬ জনের সাথে লড়াই করতে!তার ওপর গায়ে গোতোরে নেই কোন মাংস।এমন হ্যাংলা শরীর নিয়ে লড়াই করে সবার জা’ন বিপদে ফেলতে চাচ্ছে না আকাশ।যেখানে সে নিশ্চিত হারবে। সেখানে লড়াই করার চিন্তা করতে ভয় পাচ্ছে।আকাশকে চুপ হয়ে থাকতে দেখে অট্ট হাসিতে ফেটে পড়া সেই লোকটি আবার বলে।
“দেখ তোদের দিয়ে আমাদের কোন কাজ নেই। তাই কোন ঝামেলা না করে স্বশরীরে ফিরে যা। তোদের দিয়ে আমাদের কোন লেনা-দেনা নেই। ওই মেয়েটাকে আমাদের হাতে তুলে দে।
বন্ধুবান্ধব মহল ভয়ে আরষ্ট হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আতংক ছেয়ে আছে সবার মুখশ্রী। যেন এই বুঝি পরান পাখিটা উড়ে গেল।হুর ইতিমধ্যে কান্না করে দিয়েছে। টপটপ করে চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। ভয়ে কুকড়ে গেছে মেয়েটা। আকাশের এখন জানতে ইচ্ছে হলো গুন্ডা গুলো হুরকে কেন নিতে চাচ্ছে। কেন হুরের পিছে পড়েছে সবাই।তাই বলে উঠল ,
“কিন্তু আপনার ওকে নিয়ে যেতে চাচ্ছেন কেন? ওতো কোন কিছুই করেনি।
“করেছে কি করেনি সেটা তোদের বিষয় না? বস আমাদের হুকুম দিয়েছে মেয়েটা কে তুলে নিয়ে যেতে। তাই বাধা না দিয়ে কেটে পড়।
গুন্ডাদের কথা কেউ আমলে নিল না এমন ভাব।গুন্ডারা বুঝলো হুরকে তারা ছাড়বে না। সবাই হুর কে আগলে রেখেছে। গুন্ডারা আর বেশি সময় নষ্ট করলো না। নিজেদের ফর্মে চলে আসলো।গুন্ডাদের লিডার একজনকে হুকুম করলে সে এগিয়ে আসে হুরকে নেয়ার জন্য। ফিহান, শিহাব, আকাশ বাধা দিতে চাইলে তাদের আটকে রাখা হয়। এক সমানে শিহাব, ফিহান, আকাশ চেঁচামেচি করছে হুরকে যেন না ছোঁয়। তাদের চেঁচামেচি শুনে গুন্ডারা অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো। হুরের সামনে এগিয়ে এসে হুরের হাত আছে চেপে ধরে টেনে হিচড়ে নিয়ে যেতে লাগলো।হুর বারবার নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে।তবে ব্যর্থ হচ্ছে। হাত ছাড়াতে ছাড়াতে কান্না করে হুর বলে।
“কেন আমাকে নিয়ে যাচ্ছেন? কি ক্ষতি করেছি আমি আপনাদের? প্লিজ আমায় ছেড়ে দিন। কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে?কে আপনার বস আর কোথায় নিয়ে যেতে চাচ্ছেন আমায়?
কান্নার তীব্রতা গভীর থাকায় হুরের চোখ বুজে এসেছিল। হঠাৎ অনুভব করল পুরুষালী শক্ত হাতের ছোঁয়া তার হাতে নেই। হালকা অনুভব হচ্ছে হাত। কি কারনে হালকা মনে হচ্ছে দেখার জন্য চোখ খুলল।অশ্রুকণা নেত্রকোনায় থাকার কারণে সব কিছু ঘোলাটে দেখা গেল। ঘোলাটে চোখ নিয়ে কয়েক সেকেন্ড পর বুঝতে পারল সামনে দ্বন্দ্ব চলছে। কয়েকজন লোক সমানতালে গুন্ডাদেরকে মারছে। হঠাৎ একজনের দিকে চোখ আটকে গেল তার। পিছন দিক থেকে দেখে বোঝা যাচ্ছে তার কেউ পূর্ব পরিচিত হবে। শুধু যে পূর্ব পরিচিত এমন নয়। দেখে মনে হচ্ছে তার আপন কেউ হবে। পিছনের সাইড ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে মুখ না দেখেই বুঝতে পারলো মানুষটিকে। বুক চিরে বের হলো এক স্বস্তির নিঃশ্বাস। মনে মনে আল্লাহকে ধন্যবাদ জানালো।চোখ বন্ধ করতেই চোখে জমে থাকার জল চোখের কার্নিশ বেয়ে গড়িয়ে পড়ল। কর্ণকুহরে পৌছালো,
“মা/দা/র/চো/দে/র বাচ্চা তোর সাহস তো কম না তুই আমার বউয়ের গায়ে হাত দিস। কোন হাত দিয়ে আমার বউয়ের হাত ধরেছিলি তুই?এই হাত দিয়ে তাই না। এই হাত তুই আর বাড়ি ফিরে নিয়ে যেতে পারবি না।
মোটা এক বড় লাঠি দিয়ে লাগাতার হাতে বারি দিতে লাগলো রুদ্ধ। কয়েকটা বারি দিয়েই বুঝতে পারলো লোকটার হাত এই জনমে আর কাজে দিবে না। নিজের ক্রোধ নিয়ে ভেঙ্গে পড়ে থাকা নিস্তেজ হাতে আরও দুইটা বাড়ি মারলো রুদ্ধ। কতই না আহাজারি আর্তনাদ করেছিল লোকটির রুদ্ধের কাছে!তবে রুদ্ধের মন গলল না। সে নিজের সিদ্ধান্তে অটল। যেই লোক তার বউয়ের গায়ে হাত দিয়েছে সেই লোকের সাথে এত মায়া দেখে লাভ কি? তাইতো মায়া দয়া না দেখিয়ে একজন গ্যাংস্টার মানুষের আসল রূপ সে দেখিয়েছে।
সকল গুন্ডা মাটিতে লুটু পুটু খাচ্ছে। কেউ হাত ধরে তো কেউ পা,পেট ধরে আর্তনাদ করছে। সবার আর্তনাত রুদ্ধের কানে গুজছে আর সে শান্তি অনুভব করছে।রুদ্ধ যে লোকটির হাত গুড়িয়ে দিয়েছে সেই লোকটির সামনে হাঁটু গেড়ে বসে তাচ্ছিল্য করে বলে।
“পরেরবার তোদের বস কে বলবি তোদের মত সস্তা গুন্ডা ভাড়া না করতে। আর তার যদি সাহস থাকে সে যেন পরবর্তীতে আমার মুখোমুখি হয়ে লড়াই করে। পিঠ পিছে লড়াই করার স্বভাবটা তোদের বসের এখনো যায়নি।এবার হাত পা ভেঙ্গে জা’ন বাঁচিয়ে রেখে দিয়েছি। পরেরবার আর এমন সুযোগ পাবি না।
বসা থেকে দাঁড়িয়ে হুরের কাছে গেল রুদ্ধ। রুদ্ধকে সামনে পেয়ে এক মুহুর্ত ও অপেক্ষা না করে হুর, রুদ্ধকে জাপ্টে ধরলো। রুদ্ধের বুকের সাথে মিশে যেতে চাইল।আঁকড়ে ধরল তার পিঠ। হাউমাউ করে অঝোর ধারায় কান্না করতে লাগল।বলিষ্ঠ এক হাত হুরের পিঠে রেখে অপর হাত হুরের মাথায় রাখল রুদ্ধ।কিছু না বলে মাথায় হাত বোলাতে লাগলো।রুদ্ধের আদুরে হাতের ছোঁয়া পেতেই হুর কান্নার শব্দ বেড়ে গেল।নাক,মুখ ডুবিয়ে রুদ্ধের বুকের সাথে লেপ্টে আছে সে।শরীর কেঁপে উঠছে।কাঁপুনি দ্বারা রুদ্ধ বুঝলো অতিরিক্ত ভয় পেয়েছে মেয়েটা।রুদ্ধ হুরের মাথায় হাত বোলানো না থামিয়ে হুরের বন্ধু-বান্ধবদের দিকে তাকালো। তারা অবাক নয়নে রুদ্ধের দিকে তাকিয়ে আছে।সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করোনা রুদ্ধ ।বলল,
“আমার ড্রাইভার তোমাদেরকে পৌঁছে দিবে।যাব গাড়িতে বসো।
রুদ্ধের আদেশ পালন করলো সবাই। গাড়িতে গিয়ে বসলো। সবাই একটা ট্রমার মধ্যে আছে। যে ট্রমা থেকে বের হতে পারছে না কেউই। স্বস্তি পেলেও ভয় কমছে না। রুদ্ধ হুরকে নিজের বুক থেকে ছাড়াতে যায়।আরো আঁকড়ে ধরে হুর। যার অর্থ সে রুদ্ধকে ছাড়বে না। রুদ্ধ পাজা কোলে তুলে নিল হুরকে। গাড়িতে নিয়ে বসলো।হুরকে সিটে বসিয়ে নিজে বসলো ।ড্রাইভার গাড়ি চালাতে লাগলো। পকেট থেকে ফোন বের করে ইমতিয়াজকে একটা মেসেজ করল। ফ্যাচ ফ্যাচ করে এখনো কান্না করছে হুর। এত কান্না করার কারণ বুঝতে পারেনা রুদ্ধ। তবে হুরকেও থামায় না। এখনো হুর রুদ্ধের বুকের সাথে মিশে আছে। পরনের কালো শার্ট বুকের পাশটায় চোখের পানিতে ভিজে গেছে। বাড়ির সামনে গাড়ি থামতে রুদ্ধ আবারো হুরকে কোলে তুলে নেয়। চলে যায় তার রুমে। ড্রয়িং রুমে বা তার আশেপাশে লিলি আর জেরিন কেউ ছিলনা। তাই এই দৃশ্য তারা দেখতে পায়নি।
হুরকে বিছানায় বসিয়ে হাটু গেড়ে বসে পড়লো রুদ্ধ। নিজের পকেট থেকে টিস্যু বের করে হুরের চোখ গাল মুছতে লাগলো। শান্ত স্বরে বলল,
“হয়েছে তো আর কত কান্না করবে?
শব্দবিহীন কান্না করছে হুর। চোখে পানি টলোমলো। ভেজা গলায় বলে,
“আপনি সঠিক সময় না আসলে তারা আমায় নিয়ে যেত। আমার সাথে কি করত তা…
হুরের মুখ থেকে কথা ছিনিয়ে নিয়ে রুদ্ধু বলে,
“কেউ তোমার সাথে কোন কিছুই করতে পারত না।আজ যেমন তোমার কিছু হওয়ার পূর্বেই আমার সাক্ষাৎ পেয়েছ, ভবিষ্যতেও পাবে।
গাঢ় করে হুরের কপালে চুম্বন দিলো রুদ্ধ।চোখ বুজে ফেলল হুর। ভেজা গলায় শুধু একটা কথাই বলল,
“আমার কেন জানি মনে হচ্ছে আপনার সাথে আমার বিচ্ছেদ অতি শীঘ্রই হতে যাচ্ছে।
…