#প্রেমকুঞ্জ 💓
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_৬
কথা মতো নীল রঙের শাড়ি পড়েছি আজ। মাথার চুল গুলো সুন্দর করে আঁচড়ে নিলাম। চোখে গাঢ় কাজল টেনে, শেষে ছোট একটা টিপ দিলাম। কাঁধে ব্যাগটা ঝুলিয়ে বের হলাম। ঘর থেকে বের হতেই রিক্সায় উঠলাম। খুব ইচ্ছে করছে আজ আরবার সাথে রিক্সায় চড়তে। দেখা হলে বলবো, চলো আমাকে নিয়ে রিক্সায় চড়ো। একসাথে খানিকক্ষণ ঘুরি দুজন! আশপাশ তাকিয়ে দেখছি। নিজেকে দেখছি বারবার। এটা প্রথম সাক্ষাৎ নয় তবুও যেন মনে হচ্ছে এটাই তার সাথে প্রথম সাক্ষাৎ।
ভার্সিটি যাবার পথে ফরহাদ কে দেখতে পাই নি। তবে আজ আর ক্লাস করলাম না। ভার্সিটির কাছে যেতেই পেছন থেকে ডাকল আবরার। তার ডাক শুনে ছুটে এলাম আমি। দৃষ্টিপল্লব স্থির আমার! মনে হচ্ছে আজ কতো বছর আবরার কে দেখছি। আবরার কিঞ্চিত হেসে বলল, চলো!
আমার চোখের কোনে অশ্রু জল জল করছে। আবরার হাঁটছে, তার পাশে পাশে হাঁটছি। হঠাৎ করেই হাত খানা ধরল আবরার। আমাকে নিয়ে বসল শহীদ মিনারের প্রাঙ্গনে!
“কেমন আছো?
“যেমন রেখে গেছিলে!
“রাগ করো না, তিহাশ হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে গেল। তাকে নিয়েই দৌড়াদৌড়ি করে অবস্থা খারাপ!
“এক মাস বুঝি দৌড়াদৌড়ি করলে!
“না, মোটেও না। কিন্তু আমার কথা এখনো বাকি ছিল। হঠাৎ করেই হুমাশা’র ননদের বিয়ে ঠিক হয়ে গেল। ছেলে নাকি বিদেশে থাকে। জলদি বিয়ে করে বউ কে সাথে করে নিয়ে যাবে। আর তুমি তো জানোই দুলাভাই এখানে ছিল না। তাই তাকে নিয়ে গেলাম আবার সেখানে। গ্রাম গঞ্জের এলাকা। কিন্তু আমার জানামতে তাদের বাসায় টেলিফোন ছিল। তবে কপাল খারাপ ছিল কারণ..
“টেলিফোন খারাপ ছিল!
“হুম!
“চিঠি লিখলে খুব বেশি কি ক্ষতি হতো তোমার।
“সময় হয় নি!
“তুমি বরাবরই এমন করো। আমার জন্য আদৌও কখনো সময় আছে তোমার।
আবরার হেসে উঠলো।এক দৃষ্টিতে তার হাসির দিকে তাকিয়ে আছি। হাসিটা বরাবরই সুন্দর। আবরার বলল, “একটা খুশির খবর আছে!
“সরকারি চাকরি হয়ে গেছে তোমার।
“না এবার হয়েই যাবে। ইন্টারভিউ দিয়েছি খুব ভালো। দুলাভাই ও এবার সাহায্য করছে।
“বাহ বেশ ভালো তো।
“ভালো বলেই ভালো। শহরে এসেই এই ইন্টারভিউ নিয়ে খুব খাটা খাটুনি করতে হয়েছে।
“বুঝতে পেরেছি।
“নিলু আর রাগ করো না। তুমি জানো রাগ করলে তোমাকে..
“কুৎসিত লাগে কি তাই তো!
“না আরো বেশি সুন্দর লাগে। তোমার নাক খানা যখন লাল টকটকে হয়ে যায় তোমার চেহারার সৌন্দর্য মনে হয় বেড়ে যায়।
“তাই কাঁদিয়ে এই সৌন্দর্য উপভোগ করো তুমি!
আবরার আবারো হাসল। নিলুফারের হাত ধরে বলল, তা যা বলেছে! কিন্তু একটা কথা কি জানো, সুন্দর জিনিস বেশি দেখতে নেই। তাহলে তার সৌন্দর্যের দাম থাকে না।
“…
“কাঁদতে কাঁদতে মনে হচ্ছে সর্দি বসিয়ে ফেলেছ! ( কপালে হাত রেখে ) দেখো আজ তোমার জ্বর আসবে। যাবার আগে তোমাকে এক পাতা প্যারাসিটামল কিনে দেবো কি!
“লাগবে না। আমি চাই আমি একটু অসুস্থ হই তখন যদি আমার কথা তোমার একটু মনে থাকে!
জোরে জোরে হাসল আবরার! “বাহ বেশ ভালো বুদ্ধি তো। তা চিঠি আনো নি!
আমি মাথা নেড়ে না না করি। আবরার কাঁধের ব্যাগ হাতে নিয়ে বলল, আমি জানি ব্যাগ আজ চিঠিতে ভরপুর!
“অভিমানী চিঠি সব!
“তোমার অভিমানী চিঠি পড়তে আমার বেশ লাগে।
“বোকা বোকা কথা লিখা আছে সবকিছুতে!
“থাক না আমি সেগুলোই পড়বো!
মৃদু হেসে কতো গুলো চিঠি বের করল আবরার। গুনে গুনে দেখল ৭ টা চিঠি। আবরার ভ্রু কুঁচকে বলল, এতো কম কেন?
“এবার কম লিখছি!
“মিথ্যে বলছো!
আমি হাসলাম। ব্যাগ হাতে নিয়ে বলি, ওগুলোর কথা গোছানো না ছিল না তাই আনি নি!
আবরার চিঠি গুলো যত্নে হাতে নিল। এগুলো রেখে দিবে সে। আগের চিঠি গুলোও রেখে দিয়েছে আমি জানি। আমার সব কিছুই যত্নে রেখে দেয়। কিন্তু আমাকে একটু যত্নে করে না!
সারাদিন দুজনে ঘুরলাম। দুপুরের সময় এক কাপ চা আর ফুচকা খেলাম। যদিও আবরার সাধল একটা ভালো রেস্টুরেন্টে গিয়ে খাবার জন্য তবুও আমার ইচ্ছে হলো না। পড়ন্ত বিকেলে আবরার আর আমি রিক্সায় চড়লাম। রিক্সা এসে থামল পার্কের সামনে। আমি আর আবারার বসে আছি এক বেঞ্চিতে। আশেপাশে আরো অনেক প্রেমিক প্রেমিকা! সবাই করছে গল্প গুজব। আমরাও করছি। আবরার তার ইন্টারভিউ সম্পর্কে বলছে আমাকে। আজ সারাদিন’ই আবরার কথা বলেছে আর আমি শুনেছি। ওর কথা শুনতে সবসময় ভালো লাগে। কিন্তু আজকে কেন জানি ওর কথা শোনার পর কিছুটা মন খারাপ করলাম। কারণ ওর কথার মাঝে ছিল এক মেয়ের প্রসঙ্গ!
হুমাশা’র শশুড় বাড়িতে এক মেয়ের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে নাকি তার। হুমাশার বড় ঝা’র বোন সে। আবরার মা’র ও নাকি অনেক পছন্দ। বিয়ের কথাও চলেছিল তবে আবরার নিষেধ করে দিয়েছে। আবরার বলছে গল্প এখানেই শেষ কিন্তু আমার মনে হচ্ছে না। গল্প এখানেই শুরু, এতো তাড়াতাড়ি সবকিছু শেষ হবে না। কিছু একটা তো হবেই!
“চাকরি টা পেয়ে গেলেই বাড়িতে আমি তোমার কথা বলবো! তুমি কি শুনতে পারছো আমার কথা নিলু!
“উহু!
“কি ভাবছো এতো মন দিয়ে?
“ভাবছি একটা কথা!
“কি?
“তোমার চাকরির কথা!
আবরার অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। আমি সহজ গলায় বললাম, তোমার চাকরি হয়ে গেলে আমার আর তোমার বিয়েটা বোধহয় আর হবে না!
“নিলু!
“বড্ড দেরি হয়ে গেল। চলো এখন বাড়িতে ফেরা যাক!
অতঃপর উঠে দাঁড়ালাম!
——
শ্রেয়া স্কুল শেষে বাড়িতে ফিরছে। চুল গুলো দুটো বেনী করা। মা চুলে তেল দিয়ে বেনী করে দিয়েছে। মাথা নিচু করে হাঁটছে শ্রেয়া। হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ করে পা থেমে গেল তার। মুখ ফিরিয়ে চাইলো বাম পাশের চায়ের দোকানে। ছেলে গুলো আজ আসে নি। হাঁফ ছেড়ে বাঁচল শ্রেয়া। দ্রুত পায়ে হেঁটে যেতে লাগল। কয়েকদিন ধরেই কিছু ছেলে বিরক্ত করছে তাকে। প্রতিদিন এখান দিয়ে যেতে নিলেই তাকে নিয়ে বিভ্রান্ত কিন্তু উক্তি করে। শ্রেয়া আজ অবদি জবাব দেয় নি এসবের। আজ ছেলে গুলো আসে নি দেখে ভালোই লাগছে।
শ্রেয়ার পছন্দ লম্বা ছিল। এর কারণ সে একটু বাটু! তার বান্ধবী কানিজের ভাই টা কিন্তু অনেক লম্বা। খুব ভালো লাগে তাকে দেখতে। দেখতেও খুব সুন্দর! মাঝে মাঝে কানিজ কে দিতে স্কুলে আসে। আবার নিয়েও যায়! গতকাল যাবার পথে দেখা হয়েছিল। কানিজের ভাই তাকে দেখে জিজ্ঞেস করল, কেমন আছো শ্রেয়া? পড়ালেখার কি খবর!
শ্রেয়া মাথা নেড়ে জবাব দিল ভালো। হাত পা কাপাকাপি শুরু হয়ে গেল। শ্রেয়ার খুব বলতে ইচ্ছে করল, ভাইয়া আপনি এতো লম্বা কেন? আপনি জানেন লম্বা ছেলে আমার খুব পছন্দ! কিন্তু বলা হলো না। তার কথা শুনেই লজ্জায় তার মুখ লাল হয়ে গেল!
বাড়ির কাছে সরু গলিতে ঢুকতেই মুখ মোচড় দিয়ে উঠল শ্রেয়ার। দুই হাত দিয়ে কাঁধের ব্যাগ শক্ত করে ধরল। তার সামনে দাঁড়ানো মামুন! মামুন আর ওর বন্ধুরা মিলেই উত্যক্ত করতো শ্রেয়া কে। আজ একেবারে বাড়ির কাছে দেখেই শ্রেয়ার গলা শুকিয়ে যেতে লাগলো। মামুনের হাতে লাল একটা গোলাপ। মা’র কথা মনে পড়ছে। তিনি বলতেন, কোন ছেলে কিছু বললে তাকে জবাব না দিয়ে মাথা নিচু করে এসে পড়বে। যা বলার বাসায় এসে আমাকে বলবে। শ্রেয়াও তাই করল। মাথা নিচু করে গলির পাশ দিয়ে যেতে নিল। তবে শেষ রক্ষা হলো না।
মামুন এসে তার সামনেই দাঁড়াল। ভয়ে তার আত্মা কেঁপে উঠলো। কি হবে এখন যদি তিতির ভাই এখান দিয়ে যায়। এখন’ই তার বাসায় যাবার সময়। যদি এই ছেলের সাথে দেখে নেয় রক্ষা থাকতে না। শ্রেয়া পা বাড়াল পাশ দিয়ে যাবার জন্য। তখনই মামুন দিল এক ধমক। কেঁপে উঠলো শ্রেয়া। মামুন তার চেয়ে বড় তবে তিতিরের চেয়ে ছোট’ই হবে বলে মনে হচ্ছে। হাত বাড়িয়ে গোলাপ দিল শ্রেয়ার হাতে। শুরুতে ধরছে না বলে ধার গলায় বলল,
“ধরো এটা!
শ্রেয়া কাঁপা কাঁপা হাতে ধরে নিল। মামুন কিছু না বলেই পাশ দিয়ে চলে গেল। মামুনের নামে অনেক কথা শুনেছে সে। এলাকার কেউই তাকে ভালো বলে না। সারাদিন বাজে ছেলেদের সাথে তার আড্ডা! শ্রেয়ার ভয় এ কারণেই বেশি। গোলাপ টা হাতে মুঠ করে নিল। মায়ের কথা সে শুনেছে। কিছু বলে নি ছেলে টাকে। কিন্তু বাসায় এসে ফুল দেবার কথাটা মা কে বলতে সাহস জোগাল না শ্রেয়ার। তার বাংলা বইয়ের ভেতর রেখে দিল ফুলটা!
#চলবে….
[ রি চেক করা হয়নি। ভুল গুলো ক্ষমার চোখে দেখার অনুরোধ রইল! ]