#বৃষ্টিস্নাত প্রেমের গল্প
#পর্ব-৩৬
#লেখনীতে-আসমিতা আক্তার ( পাখি )
“ব্যাগ প্যাকিং করে রাখবে!রাতে আমাদের ফ্লাইট।
নাস্তা করে রুমে আসতেই রুদ্ধের কথা শুনে দাঁড়িয়ে পড়ে হুর। প্রশ্নবোধক চাহনি নিয়ে জিজ্ঞেস করে,
“রাতে আমাদের ফ্লাইট মানে?কোথায় যাব আমরা?
রুদ্ধ চোখ স্থির করে রেখেছে ল্যাপটপের ওপর। আঙ্গুল চালিয়ে কিছু টাইপ করছে। কাজ করতে করতেই উত্তর দিল,
“সুইজারল্যান্ড যাব।
বিস্মিত হুর। আদৌ ঠিক শুনেছি কিনা তা সিওর হওয়ার জন্য আবার বলে,
“সুইজারল্যান্ড ?
রুদ্ধের কোন ভাব গতি নেই। সে টাইপিং করতে করতে আবার বলে,
” হ্যাঁ, সুইজারল্যান্ড।
খুশিতে উত্তেজিত হয়ে পড়ে হুর। এক দৌড়ে বিছানার উপর উঠে বসে। পরক্ষণে আবার দাঁড়িয়ে পড়ে। লাফাতে লাফাতে বলে,
“সত্যি! সত্যি আমরা সুইজারল্যান্ড যাব?ইয়ে অনেক মজা হবে।আচ্ছা, কি কি প্যাকিং করবো? ওখানে তো অনেক ঠান্ডা। গরম কাপড় নিয়ে যেতে হবে। আচ্ছা, আপনার জন্য কি কি প্যাক করব?উম..আপনার হুডি নিব নাকি জ্যাকেট?আর আমি! আমি কি নিয়ে যাব?আমাকেও তো জ্যাকেট নিতে হবে তাই না?
হুরের এতগুলো প্রশ্ন শুনে ল্যাপটপ থেকে চোখে সরিয়ে হুরের দিকে চোখ রাখল রুদ্ধ। হুরের চোখ মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে আনন্দে আটখানা হয়ে আছে।বউকে খুশি হতে দেখতে পেরে খুশি হলো রুদ্ধ।হুরের হাত ধরে বসিয়ে বলল,
“বেশি কিছু নিতে হবে না।তোমার আর আমার কয়েকটি গরম কাপড় নিলেই হবে। বাকিগুলো সেখানে গিয়ে কিনে নিব।
দাঁত কেলিয়ে হাসে হুর।গভীর এক চিন্তা মস্তিষ্কে আসে। প্রশ্ন করে,
“আচ্ছা, হঠাৎ সুইজারল্যান্ড যাওয়ার প্ল্যান করলেন যে?এনিথিং স্পেশাল?
হুরের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসলো রুদ্ধ।কোলের ওপর থেকে ল্যাপটপ সরিয়ে হুরকে নিজের কোলের ওপর বসালো। গলায় মুখে ডুবিয়ে ফিসফিস করে বলল,
“অফকোর্স! স্পেশাল তো হবেই!কজ্ উই আর গোয়িং অন আওয়ার হানিমুন।
ফ্যালফ্যাল করে এর উত্তর দিকে তাকালো হুর।রুদ্ধর কথাগুলো হজম করতে পারছে না।আতঙ্কিত হয়ে রুদ্ধকে বলে,
“হানিমুন?
” ইয়েস বেইবি হানিমুন । বিয়ের পর তো অনেক মুন এসেছে। কিন্তু হানি টাইপ কিছুই হয় নি। তাই ভাবলাম সুইজারল্যান্ড গিয়ে মহৎ কাজটা সেড়ে ফেলব। একজন পুরুষ মানুষ হয়ে এতদিন নিজের তামান্নায় পানি ঢেলে এসেছি। এখন আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে ইচ্ছে করছে না। বিয়ে হলো মাসের উপর । আর বউকে যদি গভীর ভাবে ছুঁতেই না পারি,তাহলে কেমন পুরুষ আমি?
কিংকর্তব্যবিমূঢ় হুর ।অসার হয়ে আসছে শরীর।কম্পন ও হচ্ছে। ঢিপঢিপ করছে তার বক্ষ পিঞ্জর। কম্পিত গলায় বলার চেষ্টা করল।
“আপনি…
হুরের খোলা চুল আঙ্গুলে পেঁচাতে পেচাতে রুদ্ধ বলল,
” হুম আমি…
“সত্যি হানিমুন….
” ইয়েস ডার্লিং।
ছিটকে সরে আসতে চাইল রুদ্ধর কাছ থেকে।তার আগেই রুদ্ধ তাকে আঁকড়ে ধরল।হুরের ফেইস রিঅ্যাকশন দেখে হো হো করে হেসে দিল।রুদ্ধকে আকস্মিক হাসতে দেখে হুর ভ্যাবলার মতো তার দিকে তাকিয়ে রইল।হাসার রহস্য বের করতে পারল।বুঝল রুদ্ধ তার সাথে মজা করছে।তা দেখে হুর মুখ ফোলালো।হুরের মুখের সামনে নিজের মুখ এনে ঘোর লাগা কন্ঠে বললো,
“অফিসের একটা কাজের জন্য সেখানে যাচ্ছি।তবে প্রিপেইর থাকবে!হুটহাট ছুয়ে দিতে পারি তোমায়। তখন কোনো বাঁধা শুনব না।
————————————
রাত ৮ঃ৩০ মিনিট!রুদ্ধ আর হুর রেডি হয়ে নিচে নেমে আসল। রুদ্ধর হাতের মুঠোয় মাঝারি সাইজের এক ট্রলি ব্যাগের হ্যান্ডেল।ড্রাইভার এসে ব্যাগটি নিয়ে গেল।হুর সবাইকে বিদায় জানাচ্ছে।অনেক এক্সাইটেড আছে।আরো বেশি এক্সাইটেড এই ভেবে যে আজ প্রথম বিমানে ভ্রমন করবে।ফায়াজ হুরের উত্তেজনা দেখে বলে,
“আই উইশ,আমি তোমার সাথে যেতে পারতাম।কতই না মজা করতাম একসাথে!
রুদ্ধের কঠিন চাহনি নজরে আসতেই ফায়াজের কথার সুর চেঞ্জ হয়। বলে,
“তবে ভাইয়ার সাথে যাচ্ছো দেখে আমি অনেক খুশি।
হুরের কাছে এসে তাকে ফিসফিস করে বলে,
” এটা একদমই আমার মনের কথা না।বিগ ব্রো এর জায়গায় আমি থাকলে কতই না ভালো হতো!অনেক অনেক জায়গায় ঘুরতে পারতাম।
হুর নিজেও তার গলার স্বর নিচু রাখে।
“সেখানে আমরা ঘুরতে যাচ্ছি না। উনার অফিসের কাজের জন্য যাচ্ছি।
ফায়াজ এবার তীক্ষ্ণ চোখে রুদ্ধের দিকে তাকায়।কোনো কিছু বিবেচনা না করে বলে,
” ব্রো তুমি অফিসের কাজে গেলে ভাবি কে কেন নিয়ে যাচ্ছো?ভাবির যাওয়ার দরকার নেই। তুমি একাই যাও। ভাবি সেখানে গেলে বোর হয়ে যাবে। তার চেয়ে ভালো বাড়িতে আমার সাথে থেকে ইনজয় করবে।হুর..ধুরু ভাবি যাও,রুমে যাও। ভাইয়ার সাথে যেয়ে ঝাড়ি,ধমক ছাড়া কিছুই পাবে না।দেখেছো তো আমি কত মিষ্টি একটা মানুষ! সারাক্ষণ শুধু হাসি।আমার সাথে তুমি থাকলে আমার মত তুমিও হাসবে।
ফায়াজের দিকে তাকিয়ে দু হাত বু’কে গুজে নেয় রুদ্ধ।রাগী লুক।কন্ঠস্বর ভারী রেখে বলে,
“আমার বউকে কোথায় নিয়ে যাব,না যাব, তা অবশ্য কেউকে জিজ্ঞেস করে নিয়ে যাব না। আর না কারো মতামত নিব। আমার বউকে যেখানে খুশি সেখানে নিয়ে যাব।এবং আমি যেমনই হই না কেন! তাকে আমার সাথেই থাকতে হবে।বেশি বাড়াবাড়ি করলে যেই মুখ দিয়ে এত হাসি বের হয়,সেই মুখ সেলাই করে দিব।
নির্বোধ ভাবে হুরের দিকে তাকালো ফায়াজ।হুর মুখ কাচুমাচু করে দৃষ্টি সরিয়ে নিল।সবার থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে বসল দুজন।হুরের ঠোঁটে হাসি দেখে হাসল রুদ্ধ।হুরকে নিজের কাছে এনে মাফলার ভালো ভাবে গলায় পেচিয়ে দিল।দাঁত বের করে একটা হাসি দিল হুর। বড় হাসি।তা দেখে রুদ্ধ বলে,
“অনেক এক্সাইটেড তাইনা?
হুর নিজের আনন্দ প্রকাশ করল।
“হ্যাঁ, খুব।
৪০ মিনিটের মধ্যে এয়ারপোর্টে পৌঁছে গেল তারা। রুদ্ধ আলগোছে হুরের হাত ধরল। এগোতে লাগল সামনে। পিছনে দুজন গার্ড আসছে।ফ্লাইট চলে যাওয়ার পর তারা চলে যাবে। তার আগে সিকিউরিটি স্বরূপ রুদ্ধর সাথে এসেছে।রুদ্ধ কাউন্টারে গিয়ে হুর এবং তার পাসপোর্ট আর টিকিট দেখালো।সেখানে সব ফর্মালিটিজ পূরণ করে চলে আসলো বিমানের ভেতর। জানালার সিটে বসে আছে হুর। তার পাশে আছে রুদ্ধ। বিমান আকাশে উড়তে এখনো কিছু সময় বাকি আছে।আঁখিদ্বয় বড় বড় করে হুর সবকিছু দেখছে। বিমানের ভেতর এবং কি বাহিরের দৃশ্য দেখছে।উপচে পড়ছে তার খুশি। বিমানটাও তার মনে ধরেছে। অনেক বড় এবং সুন্দর। সবকিছু পরিষ্কার, সাদা ফকফকে।কোন কিছু সাহায্যের প্রয়োজন কিনা জানার জন্য এয়ার হোস্টেস জিজ্ঞেস করলেন। বিপরীতে রুদ্ধ তাদের বলেছে “যখন প্রয়োজন হবে তখন নিজ থেকেই ডাক দিবে”
এয়ার হোস্টেস ও সম্মতি প্রকাশ করে চলে যান।বিমান চলতে শুরু করে। উত্তেজনায় হুরের হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। খামচে ধরে আছে রুদ্ধর বাম হাত। রুদ্ধ ও আঁকড়ে ধরে হুরের কোমল হাত। এক সময় বিমান আকাশে উড়তে থাকে জানালার বাহির থেকে আকাশের দৃশ্য অন্ধকারের জন্য আর না দেখতে পেলেও নিচের দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। অতুলনীয় সুন্দর দৃশ্য। ঝলমল করছে বাতিগুলো। এক ঝাঁক জোনাকির দল মনে হচ্ছে। জোনাকি পোকা যেমন রাতের আঁধারে নিজেকে ঝলমলো করে তুলে,তেমনভাবেই আকাশ থেকে জমিনের দৃশ্যটা তেমনই মনে হচ্ছে। ক্ষুদ্র আকারে দেখা যাচ্ছে সবকিছু। বিমোহিত হয়ে সবকিছু হুর দেখছিল।
“কতক্ষন লাগবে আমাদের সুইজারল্যান্ড যেতে?
” প্রথমে সিঙ্গাপুর ল্যান্ড করব।তারপর সেখানে রাতটুকু কাটিয়ে সকালে সুইজারল্যান্ড এর উদ্দেশ্যে রওনা দিব।
“কিন্তু সিঙ্গাপুর কেন যাব?
” আমরা ডিরেক্ট সুইজারল্যান্ড যেতে পারব না। রুল’স এর মধ্যে নেই।তাই অন্য বিমান থেকে যেতে হবে।তবে আমি চাইলে এক বিমান দিয়েই যেতে পারতাম৷ নিজ পাওয়ার দেখিয়ে। কিন্তু আমি কোনো ঝামেলা চাচ্ছি না। তাই ভাবলাম সিঙ্গাপুর হয়ে সুইজারল্যান্ড যাব।
————————————
সব মিলিয়ে ৫ ঘন্টার রাস্তার সফর করে মাত্র হোটেলে উঠল রুদ্ধ আর হুর। “ফিউরামা রিভারফ্রন্ট ” হোটেলে তারা উঠেছে।বিশাল বড় হোটেল।রুমে ঢুকে সময় দেখে নিল।৪ঃ১২ বাজে। বিমানে হালকা করে খাবার খেয়েছিল। তাই আর এখন কেউ ই খাবে না। রুদ্ধ ফ্রেশ হয়ে আসল। হুর ও গেল। অনেক ক্লান্ত লাগছে হুরের শরীর।প্রথম বার বিমানে ট্রাভেল করল।চোখে ঘুমের রেশ দেখা যাচ্ছে৷তা দেখে রুদ্ধ বলে,
“ঘুমিয়ে পড়ো!কাল আবার সকালে উঠতে হবে।
” হুম।
বলে ঢুলুঢুলু শরীর নিয়ে বিছানায় ধপ করে শুয়ে পড়ল।উল্টো হয়ে পড়ে রইলো।রুদ্ধ ট্রলি ব্যাগ সোফার কোণে রেখে রুমের বাতি বন্ধ করে দিল।বিছানায় এসে হুরকে সোজা করে শুইয়ে দিল।আরামে নিজেও শোয়। হুরকে নিজের উপর নিয়ে কম্বল নিজের এবং হুরের গায়ে জড়িয়ে নেয়।ঘুম কন্ঠে হুর অস্পষ্ট ভাবে বলে,
“গুড নাইট।
আলতো হেসে হুরের চুলের ওপর অধর ছুয়ে রুদ্ধ বলে,
” গুড নাইট।
কিছুক্ষন হল সুইজারল্যান্ডে আগমন ঘটলো রুদ্ধ, হুরের।বিকেল হল প্রায়!”Villa honegg”বিশাল হোটেলের একটি রুম বুক করেছে।রুমটা মাঝারি সাইজের।আসবাব পত্র বলতে,বড় একটি বেড,একটি টেবিল তার সাথে দুটো চেয়ার।মাঝারি সাইজের একটি আলমারি।এবং দুজনের মতো বসার সোফা।সিম্পলি রুমটা ডেকোর করা হয়েছে।রুমটা মোটামুটি ভালো লাগলো হুরের কাছে। আঁখিদ্বয়ে ভেসে আসলো ব্যালকনি।ব্যালকনিতে দাঁড়া হয়ে মনোমুগ্ধকর পরিবেশ উপভোগ করতে লাগল। কিছুটা খোলামেলা জায়গায় হোটেলটি বানানো হয়েছে।ভিলার পাশে ” মাউন্ট বুরজেন্সটক” এর উপর দাঁড়িয়ে বিখ্যাত লেক লুসার্ন এর অত্যাশ্চর্য দৃশ্য নজরে পড়বে।হুরদের রুম পিছন সাইজ হওয়ার কারণে লেক দৃষ্টিগোচরে আসল।
ব্যালকনিতে এসে পিছন থেকে হুরকে জড়িয়ে ধরে রুদ্ধ জিজ্ঞেস করে,
“কেমন লাগলো জায়গাটা?
সামনের দিকে তাকিয়ে থেকেই মোহগ্রস্থ সুরে হুর বলে,
“অমায়িক।
হুর কে সামনের দিকে ঘোরায় রুদ্ধ।কপালে অবহেলিত হয়ে পড়ে থাকা ছোট চুলগুলো কানের পিছে গুছে দেয়। আবার জিজ্ঞেস করে,
“রেস্ট করবে নাকি শপিং এর জন্য বের হবে?
হুর কিছুক্ষণ ভেবে বলল,
“এক ঘন্টা রেস্ট নিলে ভালো হয়। পরে বের হয়ে শপিং করে একবারে ডিনার সেরে রুমে আসবো। কেমন হবে?
“আইডিয়াটা ভালো।তুমি তাহলে রেস্ট নাও আমি আসছি।
“কেন, আপনি কোথায় যাচ্ছেন?
“আমি হোটেলের ম্যানেজারের সাথে একটু কথা বলে আসছি।সুইজারল্যান্ডে এই প্রথম আমার আসা। এখানে পরিবেশ এবং এখানের জায়গার সাথে আমি পরিচিত না।তাই একটু তথ্য তাদের কাছ থেকে জানতে চাইছিলাম।
ক্লান্ত ভঙ্গিতে হুর বলে,
“কোন প্রয়োজন নেই এখন যাওয়ার। খুব ঘুম পাচ্ছে আমার আমি কিছুক্ষণ ঘুমাবো। আপনি রুমেই থাকেন। আর কোন কিছু না চিনলে ব্যাপার না। প্রয়োজন হলে হারিয়ে যাবো সুইজারল্যান্ড নামক শীতল শহরে।
হুরের লুকায়িত অনুভূতির কথা ঝট করে বুঝে ফেলল রুদ্ধ। হুর যে তাকে একা ছাড়তে চাইছে না তা ঢের বুঝতে পারল তার কথায়। তবে মেয়েটা স্বীকার করতে চাইছে না। স্বীকার তো সেও করেনা। সে ও তো দমিয়ে রাখে নিজের মধ্যে।একই ধাঁচের দুইজন মানুষ। কম্পিটিশনে লেগে আছে কে আগে নিজের অনুরক্তির কথা আর স্বীকার করবে।দেড় ঘন্টা অবদি দুজন ঘুমিয়েছে।পেটে ক্ষুধায় চুঁচুঁ করে শব্দ তুলছে। খাদক হুর বাংলাদেশ ছাড়ার পর থেকে ভালোভাবে ভাত খেতে পারছে না। ভাতের ক্ষুধা প্রখরভাবে লেগেছে তার।
হুরের বেশ ক্ষুধা লেগেছে দেখে রুদ্ধ প্রথমে হুরকে স্যান্ডউইচ আর হট কফি খাইয়ে দেয়।নিজে শুধু একটা কফি খায়। তারপর বেরিয়ে পড়ে শপিং এর উদ্দেশ্যে। কিছুটা দূরেই শপিংমল ছিল। দুজনের গায়েই শীতের পোশাক। রুদ্ধ হুর কে হাত পা মোজা পরিয়ে দিয়েছে। গলায় ভালোভাবে মাফলারও পেঁচিয়ে দিয়েছে। মাথা ছাড়া সব কিছুই এটা ঢাকা। ভুলবশত আসার সময় টুপি আনতে ভুলে গেছে। তাই এখন টুপি মাস্টবি কেনা প্রয়োজন।
শপিংমলে হুর এবং তার জন্য সেম ডিজাইনের সেম কালারের শীতের জন্য লং কোট কিনলো। সাথে প্যান্টও।হুরের জন্য কয়েকটা টুপি আর হাত পা মোজা কিনে নিল। কেনাকাটা শেষ করে চলে গেল ওর রেস্টুরেন্টে।রেস্টুরেন্টটি সীফুড রেস্টুরেন্ট নামে খুবই বিখ্যাত। তবে সীফুড ব্যতীত ও অনেক আইটেম পাওয়া যায়। মাঝের একটি টেবিলে রুদ্ধ হুরকে নিয়ে বসলো। মানুষের সংখ্যা মোটামুটি ভালই আছে। তবে কোন কোলাহল নেই। নিরবতার সহিত সবাই খাবার খাচ্ছে। টেবিলে বসতেই ওয়েটার তাদের কাছে আসলো। ইংলিশে জিজ্ঞেস করল,
“আমি আপনাদের কি সাহায্য করতে পারি ম্যাম,স্যার?
রুদ্ধ ও ইংলিশে জবাব দিল,
“আমরা আমাদের মেনু এখনো ডিসাইড করিনি।ডিসাইড করে আপনাকে জানাচ্ছি।
“ঠিক আছে স্যার, আপনারা সময় নিন!
ওয়েটার যেরেই রুদ্ধ হুরকে প্রশ্ন করল,
“বলো কি খাবে?
হুরের অসহায় চাহনি,অসহায় কণ্ঠস্বর।
“আমি ভাত খাব।
“আমার মনে হয় এসব হোটেলে ভাত পাওয়া যায় না।
“কাল থেকে আমি ভাত না খেয়ে আছি। এখন আর ভাত না খেলে আমি টিকতে পারবো না। যেভাবে হোক আমায় ভাত এরেঞ্জ করে দিন।
রুদ্ধ কিছুক্ষণ ভেবে ওয়েটারকে ডাক দিল। আসলে রুদ্ধ তাকে জিজ্ঞাসা করল,
“আপনাদের কাছে ভাত হবে?
ওয়েটার দুঃখ প্রকাশ করে বলল,
“দুঃখিত স্যার আমাদের মেনুতে ভাতের আইটেম নেই।তবে হ্যাঁ আমি আপনার জন্য বিশেষভাবে ফ্রাইড রাইস তৈরি করে দিতে পারি।
রুদ্ধ হুরের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,
“চলবে?
” না।
রুদ্ধ কিছুক্ষণ ভেবে ওয়েদার কে বললো,
“ফ্রাইড রাইসের প্রয়োজন নেই তবে একটা উপকার করে দিতে পারলে খুবই ভালো হতো।
“জি স্যার, বলুন।
“আপনি ফ্রাইড রাইসের জায়গায় রাইস বয়েল করে দিন আমাদের। তাহলেই হবে। পারবেন তো?
হাসিমুখে বইটার উত্তর দেয়,
“ইয়েস স্যার অফ কোর্স।
হুরের জন্য সবজি এবং মাছের কারি অর্ডার করে দিল। এবং নিজের জন্য কিছু সীফুড অর্ডার করলো।ওয়েটার যেতেই হুর চোখ মুখ কুঁচকে রুদ্ধকে বলল,
“ওয়েটারটা খুবই বো/কা।ফ্রাইড রাইস যদি দিতে পারে তাহলে ভাত কেন দিতে পারবে না?
রুদ্ধ বলে,
“কারণ তারা আমাদের মত করে ফ্রাইড রাইস তৈরি করেনা।আমরা যেমন রাইস বয়েল করে ফ্রাই করি তারা সেভাবে করে না।তারা একেবারে মসলা দিয়ে ফ্রাই করে।ওদের ট্রিক টা খুবই অন্যরকম।
ভাবুক হয়ে হুর বলে,
” ও…
টেবিলে খাবার আসতেই হুরের চোখ যায় ভাতের দিকে। সদ্য ধোয়া ওঠা সাদা ভাতের দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। ভাত দেখতে পেয়ে পরান তার জুড়িয়ে যাচ্ছে। তর চলছে না খাওয়ার জন্য। রুদ্ধ বুঝলো। ওয়েটার চলে যেতেই রুদ্ধ হুরকে খাবার সার্ভ করে দিল। হুর হামলে পড়লো খাবারে।গরম ভাতে ফু দিয়ে দিয়ে খাচ্ছে। গরম ভাত এত দ্রুত খেতে দেখে রুদ্ধ বলে,
“আস্তে খাও!না, হলে মুখ পুড়ে যাবে।
আমলে নিল না হুর। সে নিজের মতো করে খেতে ব্যস্ত। অন্যদিকে কি হচ্ছে না হচ্ছে,সেটা তার দেখার বিষয় না।রুদ্ধ আর কিছু বলল না হুরকে। সে নিজের খাবার খেতে লাগলো।
ভরপুর খাবার খেয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে আসলো দুজন। উদ্দেশ্য এখন হোটেলে ফিরে যাওয়া। কাল ঘুরার জন্য বের হবে। রেস্টুরেন্টে থাকা অবস্থাতেই রুদ্ধ ক্যাব বুক করে নিয়েছিল। ক্যাব আসতেই তারা ক্যাবের ভেতর ঢুকে পড়ে। বাহিরে ঠান্ডা পড়েছে। ঠান্ডায় কনকনে অবস্থা। রুদ্ধর সাথে ঘেঁষে বসে আছে হুর। একটু উষ্ণতা পাওয়ার লোভ। রুদ্ধ ড্রাইভারের দিকে একবার চোখ বুলালো। তার দৃষ্টি সোজা সামনে,রাস্তায়।আলগোছে বাম হাত হুরের পিঠে রেখে কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিসিয়ে বলল,
“রেডি হয়ে থাকো আমাদের ফার্স্ট নাইটের জন্য।
বিঃদ্রঃ মিলন কি করায় দিমু?🫤