#বৃষ্টিস্নাত প্রেমের গল্প
#পর্ব-৪০
#লেখনীতে-আসমিতা আক্তার ( পাখি )
যত দিন এগোচ্ছে ততই সন্দেহর পাহাড় তৈরি হচ্ছে হুরের মনে। সন্দেহ করতে না চাইলেও হুটহাট মনের মধ্যে সন্দেহের বাসা বাঁধছে।দেখতে দেখতে হুরের এক্সাম-ও চলে গেল। মনে মনে ধরে নিল পাবলিক ভার্সিটিতে চান্স হওয়া খুবই মুশকিল। তাই আগে থেকেই হাল ছেড়ে দিল। রুদ্ধকে আজকাল সন্দেহ নজরে দেখে হুর। আর দেখবেই বা না কেন? হুটহাট অসময়ে বাহিরে যাওয়া,বিধ্বস্ত অবস্থা নিয়ে বাড়িতে ফেরা।কোন কিছু জিজ্ঞেস করতে চাইলে সঠিক উত্তর না দেয়া। সবকিছুই সন্দেহর কাতারে পড়ে। তাইতো দিনকে দিন সন্দেহ বেড়েই যাচ্ছে।মানসিক দিক থেকে একটু ভেঙ্গে পড়েছে হুর ।না, পারছে কাউকে বলতে না পারছে নিজের মধ্যে চেপে রাখতে। যখন এসব সহ্য করতে না পারে তখন চোখ বেয়ে পানি গড়াতে থাকে। কান্না করা অবস্থাতেও মনে হয় রুদ্ধ তাকে কোনদিন ধোকা দিবে না। রুদ্ধ তাকে ভালবাসে। এসব বলে নিজেকে নিজেই সান্ত্বনা দেয়।
রাত বারোটা পনেরো।রুদ্ধকে নিয়ে নানান চিন্তা ঘুরছে মস্তিষ্কে।রুদ্ধর কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে চোখ লেগে গেল ঠেরই পেল না।হুরের পাশে আধশোয়া হয়ে পায়ের ওপর ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করছে রুদ্ধ। জরুরী কিছু ফাইল চেক করছে। ফাইল চেক করার ফাঁকে হুরকে এক নজর দেখে নিল। মেয়েটা ঘুমিয়ে গেছে। বাম হাত তার হাটুর উপর দিয়ে রেখেছে। অগোছালো রমণী। অগোছালো বউ। হাসি পেল রুদ্ধোর। গোছানো মানুষের জীবনে অগোছালো বউ জুটেছে। সেদিনের ঝগড়ার পর বউটা তার গোটা একদিন তার সাথে কথা বলেনি।রুদ্ধ যে মানানোর চেষ্টা করেনি তাও না। যথেষ্ট চেষ্টা করেছিল তার বউকে মানানোর। কিন্তু অভিমানী বউ কোন মতেই স্বামীর কথাকে প্রাধান্য দিচ্ছিল না। এ কথা ও কথা বলেও হুরের মন গলছিল না। তবে সময়ের সাথে সাথে এবং রুদ্ধর করা আ/দরে গলে গিয়েছিল সে।হুটহাট জড়িয়ে ধরা, কি/স করা, ঘন্টার পর ঘন্টা নিজের সাথে মিশিয়ে রাখলে কে-ই-বা রাগ করে থাকতে পারে!হুর পারেনি রুদ্ধ সাথে বেশিদিন রাগ করে থাকতে।
সময়টা এখন প্রায় মধ্যরাত। বড্ড পানি পিপাসা লেগেছে হুরের। ঘুমের মাঝে শুকিয়ে যাওয়া গলা নিয়ে কয়েকবার কাশিও দিয়েছে। ঘুমের ঘোরে যখন মনে হচ্ছিল পানি না খেলে তার চলবে না তখন উঠে বসে পড়ল। ডান পাশে তাকিয়ে দেখল রুদ্ধর জায়গা খালি।ভ্রু কিঞ্চিৎ কুঁচকে আসলো হুরের। রুমের প্রতিটা কোনায় চোখ বুলালো। কোথাও রুদ্ধকে দেখতে পেল না। চোখ রাখল বাথরুমের দরজার দিকে। বাথরুমের বাতি বন্ধ। বোঝা গেল রুদ্ধ বাথরুমে নেই। বিছানা থেকে উঠে ব্যালকনির দিকে অগ্রসর হল। ব্যালকনিতে গিয়ে আবারো আশাহত হয়ে ফিরে আসতে হল। এই মধ্যরাতে রুদ্ধ কোথায় যেতে পারে ঠাহর করতে পারল না হুর।কপালে চিন্তার ভাঁজ নিয়ে রুম থেকে বের হল।সিঁড়ির কাছে এসে সব জায়গায় চোখ ঘুরিয়ে রুদ্ধর তালাশ করলো।সিঁড়ি দিয়ে নামছে আর মাথা ঘুরিয়ে রুদ্ধকে খোঁজার চেষ্টা করছে।গেস্ট রুমের দিকে দিয়ে রান্নাঘরে যাওয়া ধরলে গেস্টরুমের ভেতর থেকে ফিসফিসানোর শব্দ কানে ভেসে আসলো।সেখানেই দাঁড়িয়ে পড়ল সে ।কান খাড়া করে শোনার চেষ্টা করতে লাগলো।মনোযোগ দিয়ে শোনার পর বুঝতে পারল এটা রিফার কন্ঠ। আগ্রহ বাড়লো। রিফা কার সাথে কথা বলছে জানার জন্য জানালার পাশে গেল।জানালার পাশে আসতেই স্পষ্টভাবে রিফার কথা হুর শুনতে পারলো।
“ওহ ডার্লিং! এত প্যানিক হচ্ছো কেন বলতো?উম..এটাকে প্যানিক বলে না। রীতিমতো তুমি ভয় পাচ্ছো। ভয় পাচ্ছ এটা ভেবেছে যদি তোমার বউ তোমার রহস্যর কথা জেনে যায় তখন কি হবে!ছেড়ে যাবে না তো!এসব ভেবে ভয়ে লাগছে, তাই না?ওহ্ রুদ্ধ ডার্লিং কুল্!আমি তোমার বউকে কোন কিছুই জানাবো না। তবে একটা জিনিস দেখে খুবই মজা লাগছে। যে রুদ্ধকে গোটা দুনিয়া ভয় পায় সে রুদ্ধ তার বউকে ভয় পাচ্ছে। ব্যাপারটা খুবই হাস্যকর।
থেমে রুদ্ধর দু কাঁধে হাত রেখে খুব কাছে চলে আসলো। খিল খিল করে হাসতে লাগলো। বলল,
“ভয় পেয়ো না। তোমার আর আমার মাঝে কি হচ্ছে সেটা আমি কখনো হুরকে জানতে দিব না। তুমি যে কত বড় প্লেয়ার সেটা আমি ভালো করেই জানি। নিজের বউয়ের সামনে সাধু হয়ে থাকো।বউয়ের সামনে এক রূপ ,আর বউ ব্যতীত সবার জন্য আরেক রূপ।
ব্যাস আর কিছু দেখতে পারলো না হুর। দৌড়ে সেখান থেকে চলে আসলো নিজের রুমে। চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় পানি পড়ছে।চিৎকার করে কান্না করতে মন চাচ্ছে। কিন্তু করতে পারছে না। সঠিক জায়গায় এবং সঠিক সময়ে কোনটাই এখন না।তাইতো শব্দহীন কান্না কাঁদছে।বিছানায় উল্টো পাশ হয়ে শুয়ে আছে সে ।মুখে দুই হাতে চেপে ফুপিয়ে কাঁদছে। যেই না মুখ থেকে হাত সরাতে যাবে অকস্মাৎ মনে হল রুমে কেউ আসছে। তাই আগের মত করে শুয়ে রইলো।রুদ্ধ রুমে এসে দরজা লাগালো। বিছানায় হুরের দিকে একবার নজর বুলালো। মেয়েটা উলটো হয়ে শুয়ে আছে। ধীর গতিতে বিছানায় এসে নিজের জায়গায় শুয়ে পড়লো। তার এবং হুরের মাঝে অনেক দূরত্ব রয়েছে। দূরত্ব ঘুচিয়ে নিযেই হুরের কাছে গেল। একহাত কোমরে দিল। সাথে সাথে হুর কেঁপে উঠল। ফোপানো কান্না বন্ধ করে দিল। ফুপিয়ে কাঁদলে হয়তো রুদ্ধ টের পেয়ে যাবে। তাই মুখ থেকে হাত সরিয়ে নরমাল থাকার চেষ্টা করল। অনবরত চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। ভিজে যাচ্ছে বালিশ।
নিজের স্বামীকে মাঝরাতে অন্য একটি মেয়ের কক্ষে দেখা ভয়ঙ্কর একটি ব্যাপার। এবং মেয়েটি যদি তার শরীরের সাথে মিশে থাকে তাহলে তো আর কোন কথাই নেই।ছারখার হয়ে যাচ্ছে হুরের ভেতরটা।মনে হচ্ছে বক্ষ স্থলে কেউ আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে।বারবার কানে গুজছে রিফার বলা কথাগুলো।মনে মনে আওড়ায়,
“ধোকা! ধোকা দিয়েছেন আপনি আমায়। পৃথিবীতে একমাত্র আপনি যাকে আমি চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করি। সেই বিশ্বাসের মর্যাদা আপনি দিতে পারেননি।ঠকিয়েছেন আপনি আমায় ।আচ্ছা, আপনাকে ঠকিয়েছি বলে কি আপনি আমাকে ঠকিয়েছেন?হয়তো ।প্রতিশোধ নিলেন তাই না?কেন করলেন আমার সাথে এমনটা? আমার মনে ভালোবাসার ফুল ফুটিয়ে কেন আমার সাথে ঠকবাজি করলেন?আপনার চোখে সর্বদা আমি আমার জন্য অনুভূতি দেখতে পেয়েছি।তাহলে কি সে সব মিথ্যা ছিল? সবকিছুই আপনার অভিনয় ছিল?
ঠোঁট কামড়ে নিজের কষ্ট কমানোর প্রচেষ্টায় লেগে আছে হুর। তবে এই বিষাক্ত অনুভূতিকে কোন মতেই ধামাচাপা দিতে পারছে না। অনুভূতিটা এত বাজে না হলেও পারতো। রুদ্ধ তার হলেও পারতো।আপন হয়েও পর হয়ে গেল হুর। কাছে থেকেও দূর হয়ে গেল সে।কান্না করলো অনেকক্ষন। ঘুমাতে চেয়েও কোনমতে ঘুম হানা দিচ্ছে না চোখে। আজানের ধ্বনি কানে গুজতেই হুর বিছানা থেকে উঠলো।হঠাৎ করেই তীব্র ইচ্ছা জাগলো আল্লাহর দরবারে ভিক্ষা চাইতে।আল্লাহর জন্য ইবাদত করতে মন চাচ্ছে। বিছানা থেকে উঠে অজু করে জায়নামাজে দাঁড়া হল।চার রাকাত নামাজ আদায় করে কিছুক্ষণ জিকির করল। লম্বা এক দোয়া ধরল। দোয়ার সময় অনর্গল চোখ দিয়ে বেয়ে বেয়ে পানি পড়ছিল।নামাজের শেষে জায়নামাজ গুছিয়ে রুদ্ধর দিকে তাকালো।স্বার্থপর পুরুষটির দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে রইল। সূরা পড়ে তাকে ফুকে দিল। অনেকদিন পর নামাজ পড়ে শান্তি লাগছে।
———————————–
মুখোমুখি হয়ে বসে আছে রুদ্ধ আর হুর। অবস্থান তাদের ডাইনিং টেবিলে। সবাই একত্রে বসে নাস্তা করছে। হুরের মন নাস্তার দিকে নেই।নাড়াচাড়া করছে খাবার।হুরের খাবারের প্রতি মনোযোগ নেই দেখে সোহেল শেখ বললেন,
“কি হয়েছে হুর মা? তুমি খাবা না খেয়ে নাড়াচ্ছ কেন?
ঘোর কেটে যায় হুরের। সোহেল শেখের দিকে তাকিয়ে ইতস্তত বোধ করে বলে,
“কিছুনা আংকেল। খাবার খেতে ভালো লাগছে না।
“কষ্ট করে হলেও একটু খেয়ে নাও। খালি পেটে থাকতে নেই।
মাথা ঝাঁকালো হুর। চোখ পড়ল রুদ্ধের চোখে। রুদ্ধতার দিকেই তাকিয়ে ছিল। রুদ্ধ শীতল দৃষ্টি নিয়ে হুরকে দেখতে লাগলো। মেয়েটার চোখ মুখ শুকানো । চোখে রয়েছে একরাশ বেদনা। এ বেদনার উৎস খুঁজে পেল না রুদ্ধ।হুরের কি হয়েছে জানতে বড্ড ইচ্ছে জাগলো তার।তবে পরিস্থিতিটা অন্যরকম হওয়ায় আর জিজ্ঞেস করতে পারল না।বেদনা ভরা আঁখি নিয়ে রুদ্ধর দিকে তাকিয়ে হুর ভাবছিল।
“আমার সাথে এভাবে না খেললে কি হত না?কি হতো সারা জীবনের জন্য আমাকে আগলে রাখলে?আমি কি আপনার জীবনে অগাছা?হয়তো তাই। না, হলে তো আপনার জীবনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা আমার থাকতো।রাতের আঁধারে নিজের স্ত্রীকে একা রুমে ফেলে অন্য নারীর সাথে….
আর কিছু ভাবতে পারল না হুর।টেবিলের নিচে বাম হাতের মুঠো করে চেপে ধরে রইল। মাঝে একবার নখ কাটলেও কয়েক সপ্তাহ ধরে কাটছে না।বড় নখে হাত সুন্দর লাগে বিদায় নখ কখনো কাটতে চায় না হুর। সব সময় সাইজ করে রাখে। বড় নখ পাতলা চামড়া ভেদ করার সাথে সাথে ছিলে গেল।পরপর কয়েকবার একই কাজ করল সে। হাতের আঁচড় কতটুকু লেগেছে তাও দেখল না। হাত মুঠো করে শরীর টান টান রেখে শক্ত হয়ে বসে রইল।খাবার শেষ করে রিফার দিকে প্রথমে এক পলক তাকালো রুদ্ধ।তা দৃষ্টিগোচরে আসলো হুরের।তৎক্ষণাৎ রুদ্ধর দিক থেকে দৃষ্টি সরালো।মুহূর্তেই মনে হলো শিরা-উপশিরা রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।বড্ড দুর্বল মনে হচ্ছে। বু/কে আলাদা এক ব্যথা অনুভব করতে পারছে।পতনোন্মুখ হয়ে আসল নেত্র যুগল।মাথা নিচু রেখে আঁখিদ্বয় সন্তর্পণে সবার আড়ালে রাখল। যতক্ষণ না অবদি হুরের মুখশ্রী কেউ দেখবে ততক্ষণ পর্যন্ত কেউ তার ভেতরের অবস্থা বুঝতে পারবে না। হুর ভান করছে সে স্বাভাবিক আছে।চোখের পলক ফেলছে না ভয়ে, যদি নেত্রকোনা দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে ! ভেঙ্গে গুড়িয়ে যাওয়া হুর আকস্মিক বড় হয়ে গেছে। বড় তাকে হতে হয়েছে। না, হলে বু/কে এত কষ্ট থাকার পরও মানুষ স্বাভাবিক কিভাবে থাকে? আপন মানুষদের কাছ থেকে ধোঁকা পেলে বুঝি এমনই কঠিন হয়ে পড়ে মানুষরা?
যেদিন বাবা-মায়ের ছায়া তার মাথার উপর থেকে উঠে গিয়েছিল সেদিন থেকে নিজেকে ধাতস্থ করতে খুবই কষ্ট হয়েছিল তার। মনে করেছিল দুনিয়াতে আপন বলতে কেউ নেই। তখন আসার আলো জ্বালিয়ে রুদ্ধ এলো তার জীবনে।এই রাগি বদমেজাজি লোকটা যে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে তার জীবনের সাথে জড়িয়ে পড়বে ঘূনাক্ষরেও কল্পনা করেনি।কখনো ভাবেনি মা-বাবার পর রুদ্ধ হয়ে যাবে তার আপন মানুষ। একমাত্র বিশ্বস্ত মানুষ। আর সেই মানুষটাই তাকে ঠকালো?নিজেকে আর ধাতস্থ করতে পারলো না হুর। বু/ক চিড়ে ঠেলে ঠুলে কান্না আসতে চাইছে। দমিয়ে রাখতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। তাই খাবার টেবিল থেকে ঝট করে উঠে দাঁড়ালো। দৃষ্টি নিচু রেখে দুর্বল স্বরে শুধাল,
“আমার খাওয়া হয়ে গেছে।আমি রুমে যাচ্ছি। মাথা প্রচন্ড ব্যথা,কিছুক্ষণ ঘুমাবো। আমায় যেন কেউ ডিস্টার্ব না করে।
এক মুহূর্ত সেখানে অপেক্ষা না করে নিজের রুমে চলে আসলো হুর। দু ভ্রুয়ের মাঝ বরাবর ভাজ পড়ল রুদ্ধের। মেয়েটাকে কয়েকদিন ধরেই উদাসীন মনে হচ্ছে। উদাসীনতার কারণ এখন তরিও সে জানতে পারেনি।এমন না যে সে জানার চেষ্টা করেনি। যতবারই সে হুরের কাছে প্রশ্ন করেছে ততবারই হুর কথা এড়িয়ে গেছে। তবে আজকের বিষয়টা ভালো ঠেকলো না রুদ্ধর কাছে। পেট পুরে সেও খাবার খেলো না। চেয়ার থেকে উঠে হুরের পিছে যাওয়া ধরল।রুমে এসে দেখল হুর এক কাত হয়ে উল্টো দিকে শুয়ে আছে। চিন্তিত হল রুদ্ধ। মনে করল সত্যি সত্যি হুরের মাথা ব্যথা করছে। ড্রয়ার থেকে ঔষধের বাক্স বের করল। সেখান থেকে একটি মাথা ব্যথার ঔষধ নিয়ে হুরকে ডাক লাগালো।ঘুমের ভান করে শুয়ে রইল হুর। কয়েকবার ডাকার পরও যখন হুর উঠল না তখন রুদ্ধ বিছানার কাছে এগিয়ে এসে হুরের বাহু ধরে ঝাঁকাতে লাগলো।চোখের পানি মুছে রুদ্ধের দিকে তাকালো হুর।হুরের মুখশ্রী দেখে আঁতকে উঠলো রুদ্ধ।হুরের গালে হাত দিয়ে বিচলিত কন্ঠে বলল,
“হুর.. কি হয়েছে তোমার? কান্না কেন করছিলে? মাথা কি বেশি ব্যথা?ওঠো আমি ওষুধ নিয়ে এসেছি খেয়ে নাও মাথা ব্যথা কমে যাবে।
দুর্বল শরীর নিয়ে উঠে বসলো হুর।মুখ থেকে কোন শব্দ বের না করে রুদ্ধর হাত থেকে ঔষধ নিয়ে খেয়ে নিল।সরল চোখে রুদ্ধের দিকে তাকিয়ে রইল অল্প সময়। নিমিষেই নেত্রকোনায় ভেসে আসলো পানির জোয়ার।হুরকে আবার কান্না করতে দেখে উতলা হয়ে গেল রুদ্ধ।দুই হাতে গার্ল স্পর্শ করে ব্যস্ত ভঙ্গিতে অধর ছোঁয়াতে লাগল সারা মুখশ্রীতে। রুদ্ধর কার্যকলাপে বোঝাই যাচ্ছে সে কতটা বিচলিত!হুরের নির্বিকার চাহনি।নিষ্পলক দৃষ্টিতে দৃষ্টিপাত করছে।রুদ্ধর আ/দর সাদরে গ্রহণ করতে লাগল সে।মনে হল এই মুহুর্তে আ/দরের ভীষণ কমতি ছিল তার। রুদ্ধর দিকে চেয়ে থাকতে থাকতে কখন আ/দরের স্বাদ গ্রহণ করতে করতে চোখ বুজে আসলো তার চেতনা পেল না।চক্ষুদ্বয় বুজার পরমুহুর্তে কার্নিশ বেয়ে উষ্ণ তরল পানি পড়তে লাগলো। বরংবার বিচলিত হচ্ছে রুদ্ধ। বউটা আজ হুট করে এত কান্না করছে কেন?এত কান্না করার নিশ্চয়ই কোন কারণ আছে।ভেজা চোখে ভেজা অধর ছোঁয়াল রুদ্ধ। ব্যথাতুর কণ্ঠে বললো,
“কেঁদো না বউ।কি হয়েছে আমায় বলো? কেউ তোমার কোন কিছু বলেছে?এত কান্না কেন করছো? মাথা কি ভীষণ ব্যথা? চলো ডাক্তারের কাছে যাই!
বিছানা থেকে নেমে হুরকে ওঠাতে নিলেই হুর তাকে আটকে দেয়। রুদ্ধকে পুনরায় বিছানায় বসায়।রুদ্ধর কোলে চুপটি করে বসে তার বু/কে মুখ গুঁজে।ছোট উল্টে ফুঁপিয়ে উঠে।ভাঙ্গা গলায় বলে,
“মা-বাবার কথা ভীষণ মনে পড়ছে।
আলিঙ্গনের দৃঢ়তা বাড়লো।এক হাতে দিয়ে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে অপর হাত হুরের মাথায় বোলাতে লাগলো। কন্ঠে আ/দর ঢেলে বলল,
“তার জন্য বুঝি এত কাঁদতে হয়?দেখতো কান্না করতে করতে পুরো চেহারার অবস্থা কি করেছ।হুশ,এখন আর নো কান্নাকাটি।আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছি তুমি চুপচাপ ঘুমাও।
বু/কে থুতনি ঠেকিয়ে রুদ্ধর মুখের দিকে তাকালো হুর।অসহায় মুখশ্রী। মায়া লাগলো রুদ্ধর। মিইয়ে যাওয়া কাঁদো স্বরে হুর তার কন্ঠ ছাড়ে,
“আপনি আমায় ছেড়ে কোনদিন যাবেন না তো!
দপদপ করে স্নায়ুতন্ত্রে রাগের লক্ষণ দেখা গেল।হুরকে কয়েকটা কঠিন বাণী শুনিয়ে দিতে মন চাইলো। তবে বউয়ের কান্না,কাতর কন্ঠ এবং তার অসহায়ত্ব দেখে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ রাখল। লাল হয়ে যাওয়া নাকে অধর স্পর্শ করে ঠোঁটে হাসির রেখা ফুটিয়ে শুধালো,
“কখনো না।
হুর পুনরায় রুদ্ধর বু/কে নিজের মুখ গুঁজে দিল।কাতর কণ্ঠে বললো,
“আপনি ছাড়া আমার আর কেউ নেই।আমার জীবন আপনাতেই শুরু এবং আপনিতেই শেষ।কোনদিন যদি মনে হয় আপনি আমার না,সেদিন পৃথিবী থেকে বিলীন হয়ে যাব আমি।সবকিছু হারিয়ে আমি আপনাকে পেয়েছি। এখন আর কিছু হারানোর মতো শক্তি আমার মধ্যে নেই। আপনাকে আমি হারিয়ে ফেললে,হারিয়ে যাব আমি এই মনোহর ধরণী থেকে।
বিঃদ্রঃরাত বারোটার মধ্যে যদি ৩০০+ রিয়েক্ট হয়। তাহলে ১২ টার পরপরই আরেকটি পর্ব আপলোড করব।