প্রেমকুঞ্জ 💓 #মিমি_মুসকান ( লেখনিতে ) | দ্বাদশ পর্ব |

0
73

#প্রেমকুঞ্জ 💓
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
| দ্বাদশ পর্ব |

পূর্ণা গ্রামে চলে এলো আজ দুদিন। তিহাশ কে দেখার অজুহাতেই হুমাশা’র বাড়িতে যাওয়া। সেখান থেকে আবরারের বাড়িতে। আবরারের সাথে তার বিয়ের কথাটা সে জানত। আবরার না বলে দিয়েছে সেটাও জানত। তবুও তার প্রতি একটা মায়া জন্মে গেছিল তার। এই মায়ার টানেই আবারো তার কাছে ফেরা!

আবরার কে বরাবরই ভালো লাগতো কিন্তু কখনো বলা হয়ে উঠেনি। দীর্ঘশ্বাস ফেলল পূর্ণা! আচারের বাটি হাতে বাগানের কাছে গেল। সেখানে বড় গাছটার সাথে একটা বিশাল দোলনা ঝুলানো। সেখানে বসেই দোল খেতে লাগল সে। মনে পড়ছে আবরার কে! কেন তার প্রতি এতো মায়া আজ অবদি সেটা বুঝতে পারল না! আবরারের বাড়িতে আবরার তাকে অবহেলা করেছে প্রতি নিয়ত তবুও তার কাছে তার ছুটে যাওয়া বেহায়াপনা মনে হয় নি! কিন্তু কেন? আবরার আর তার মায়ের কথা আড়াল থেকে শুনেছিল সে। আড়িপাতা ভালো না, তবুও কিছু কথা শোনার জন্য তার মন ব্যাকুল ছিল। কথা গুলো এমন ছিল, আবরারের মা বলছিলেন —

“তুই পূর্ণা কে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যা‌। মেয়েটা বড্ড, ভালো, লক্ষ্মীমন্তর মেয়ে! বিয়ে করে সুখে থাকবি। দেখলি না বাড়িতে পা রাখতে না রাখতেই রাখতেই তোর চাকরি টা কেমন হয়ে গেল।

“মা বন্ধ করো তো তোমার এসব কথা, এটা শুধুমাত্র কুসংস্কার আর কিছু না!

“সে যাই হোক, পূর্ণা মেয়েটা খারাপ কোথায় বল তুই।

“বলছি না সে খারাপ। খুব ভালো মেয়ে!

“এমন একটা ভালো মেয়ে আমার ছেলের বউ হবার যোগ্য।

“এটা যোগ্যতার কথা না মা, আমি অন্য কাউকে বিয়ে করতে চাই!

তখন’ই রোহানা বেগমের গলায় কেমন তিক্ততা এসে জড়ো হলো বলে মনে হলো। তিনি বোধহয় রেগে গেছেন। হুট করেই বলে উঠেন,

“বিয়ে করতে চাইলেই কি হবে নাকি। দেখি মেয়ের নাম বল, কি করে তার বাপ। বংশপরিচয় কি দেখতে হবে না। এভাবে তো আর বিয়ে হয়ে যাবে না। পূর্ণার বাবা’র দুটো মেয়ে। একটার বিয়ে হয়ে গেছে আর রইল এই পূর্ণা! কোন অভাব আছে তাঁদের শুনেছিস। গ্রামের বাড়িতে কতো বড় বাড়ি। সেটার ভাগিদার পূর্ণা আর তার বোন ছাড়া কে হবে বলতে পারিস ‌

“মা! আমার দরকার নেই এসব বাড়ি ঘরের। যাকে আমি বিয়ে করতে চাই তার হয়তো এতো কিছু নেই , যা আছে সামান্য। তবুও তাকেই বিয়ে করতে চাই।

“এই দিনটার জন্য আমি বেঁচে ছিলাম। শেষমেষ ছেলের মুখে এই কথা শুনবো বলে ‌

“মা দয়া করো। তুমি এখন শুরু করে দিয়ো না!

“কেন শুরু করবো না। আমার ছেলের বিয়ে,
শখ আহ্লাদ কি থাকবে না আমার। তার উপর আমাদের কমতি কোথায়? শোন আবরার ওই মেয়েকে বিয়ে করলে আনলে আমি কিন্তু ঘরে উঠাবো না।

“উঠানো লাগবে না তোমার, আমিই চলে যাবো!

বলেই আবরার বের হতে নিল। তখন ভেতর থেকে রোহানা বেগমের গলা শোনা গেল!

“তাহলে সেটাই কর তুই। কিন্তু মনে রাখিস এরপর আমি বিষ খেয়ে ম*রে যাবো। আমার ম*রা মুখে মাটি দিতে আসিস না!

আবরার কিছু বলে না। রেগে হন হন করে বের হয়ে যায়। তখন’ই বাইরে পূর্ণা কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। কিন্তু কিছু বলে না সে। পূর্ণার পাশ দিয়ে চলে যায় সে। পূর্ণার তখন ইচ্ছে করছিল গলায় দ*ড়ি দিতে। ছিঃ! শেষমেষ নিজে নিজেই এলো সে অপমান হতে! না আর না, সেদিন বিকেল বেলায় চলে এলো সেই বাড়ি থেকে। আর কখনো ফিরবে না সেই বাড়িতে!

ঠিক দু’দিন পর তার বাড়িতে হইচই লেগে গেল। তার বোন, আবরারের বোন হুমাশা সবাই হুট করেই এসে হাজির। তখনো সে কিছুই বুঝতে পারে নি। অতঃপর যখন তাকে সাজানো হচ্ছিল তখন বুঝল তাকে দেখতে আসছে। কিন্তু কারা? আবরার! নাম নিতেই তার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম! এরকম আরো কয়েকবার হয়েছে কিন্তু কেন এমন হয় আজ অবদি বুঝল না সে!

তাকে আজ হালকা সবুজ রঙের একটা শাড়ি পড়ানো হয়েছে। হাত অবদি কাঁচের চুড়ি, কানে দুল! সবকিছুই হুমাশা পড়িয়ে দিচ্ছে‌। আয়নায় নিজেকে দেখছে পূর্ণা! হুমাশা তার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে। জিজ্ঞেস করতেও লজ্জা করছে কারা এসেছে!

কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই পূর্ণা কে এনে হাজির করা হলো পাত্র পক্ষের সামনে। চোখ তুলে তাকাল পূর্ণা! আবরার মুখটাই দেখতে পেল সে। সাথে সাথেই তার চোখ স্থির হয়ে থাকল তার দিকে। রোহানা বেগম পূর্ণাকে বসালেন তার পাশে। কথা বলাবলি শুরু হলো। এতো লোকের মাঝেও পূর্ণার চঞ্চল চোখজোড়া বার বার আবরার কে দেখছে। এদিকে আবরার নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে।‌ তার চোখ দুটি স্থির হয়ে আছে ঘরের কোনের দিকে। কোন কিছুতেই আগ্রহ নেই তার।‌ শুধু বার বার মনে পড়ছে নিলুফারের কথা। ইচ্ছে করছে এখান থেকে ছুটে চলে যেতে। কিন্তু পারছে না। হঠাৎ করেই তার ঘাড়ে হাত রাখল কেউ। আবরারের বোধ হলো। পাত্র আর পাত্রিকে আলাদা ভাবে কথা বলা দরকার বলছে সবাই!

পূর্ণার ঘরে বেতের চেয়ারে বসা আবরার! পূর্ণা বিছানার কোনে বসা। প্রায় অনেকক্ষণ হয়ে গেল কেউই কিছু বলছে না। আবরার হালকা কাশল। পূর্ণা বলে উঠল,

“আপনার কিছু জিজ্ঞেস করার থাকলে করতে পারেন?

“কিছু জিজ্ঞেস করার নেই আমার!

“তবে আমার আছে!

আবরার মুখ তুলে তাকাল পূর্ণার দিকে। পূর্ণা সহজ সরল গলায় বলল,
“আপনি না অন্য একজন কে বিয়ে করতে চেয়ে ছিলেন নাহলে আমাকে কেন দেখতে এলেন!

“আমার মায়ের কারণে!

“পরিবারের জন্য ভালোবাসাকে বিসর্জন দিলেন। সে জানে আপনি এসেছেন এখানে!

“হুম!

পূর্ণা হাসল। দাঁড়িয়ে বলল, আর কিছু জিজ্ঞেস করার নেই আমার। আপনি চাইলে আসতে পারেন।

আবরার উঠে দাঁড়াল। পূর্ণার দিকে ফিরে বলল, “বিয়ে টা কি তুমি ভেঙে দিতে চাইছো!

পূর্ণা হাসল। পূর্ণার মুখ দেখে মনে হচ্ছে সে কিছু বলবে না। আবরার দাঁড়াল না। হেঁটে চলে এলো। আপাতত সেদিন সিদ্ধান্ত পরে জানানো হবে বলে তাদের বিদায় করা হলো। আবরারের মনে হচ্ছিল পূর্ণা হয়তো বিয়েতে রাজি না। কারণ পূর্ণা জানে আবরার অন্য কাউকে ভালোবাসে। টেলিফোন হাতে নিয়ে কয়েক বার নাম্বার ডায়াল করে রেখে দিয়েছে আবরার। ফোন করেনি, কোথায় যেনো আটকে যাচ্ছিল সবকিছু। মনে হচ্ছে সবকিছুই এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে!

আবরার কে চমকে দিয়ে পূর্ণা রাজি হলো বিয়েতে। আবরার শুধু অবাক চোখে তাকিয়ে রইল মায়ের দিকে। কিছুই বলল না সে! কেন জানি খুব কষ্ট হচ্ছিল তখন। কোথাও পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে। আজ পর্যন্ত নিজেকে এরকম নিরুপায় কখনো মনে হয় নি তার। এদিকে বিয়ের খুশিতে রোহানা বেগম তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছে!

——

চায়ের দোকানে বসে চায়ের কাপে চুমুক দিল তিতির! আজ এক সপ্তাহ হতে চলল ইরার দেখা পায় নি সে। সেদিনের পর দেখা হয় নি বললে চলে। আয়াত তার কাঁধে হাত রেখে বলল,

“কার কথা ভাবছিস? ইরার!

“ওর কথা কেন ভাবতে যাবো।

“মিথ্যে কেন বলছিস? তোর মুখ দেখেই সবকিছু বোঝা যাচ্ছে।

তিতির ফিরে তাকাল আয়াতের দিকে‌। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে কাপ শেষ করল সে। আয়াত বলে উঠল,

“বাঁধা টা কোথায়?

“পার্থক্যের! আমাদের অবস্থা ওদের মতো নয়। বাড়ি ভাড়ার টাকা আর দোকানের ভাড়া টাকায় কোনমতে দিন চলে যাচ্ছ আর ওরা..

বলেই হাসল তিতির। আয়াত দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, তুই বোধহয় একটু বেশিই ভাবছিস!

“বাস্তব’ই ভাবছি!

“দেখ! এখনো অনেকদিন পরে আছে। সবকিছু বদলে যেতে পারে।

তিতির হেসে উঠে দাঁড়াল। আয়াতের দিকে তাকিয়ে বলল, “তাহলে বদলাক। তখন বোধহয় ভাববো এসব নিয়ে!

অতঃপর তার পথের দিকে হাঁটা ধরল সে!

#চলবে….

[ ভুল গুলো ক্ষমার চোখে দেখার অনুরোধ রইল ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here