#অপ্রিয়_রঙ্গনা
#লেখনীতে -ইসরাত জাহান ফারিয়া
#পর্ব-১১
আচমকা এমন কান্ডে ঝুমুর পুরোপুরি চিন্তাশক্তি
যেন হারিয়ে ফেলে। আজকের দিনটা এত অদ্ভুত আর অবিশ্বাস্য কেন? সবকিছু কেমন ঘোর লাগা, স্বপ্নের মতো! ও নিচু গলায় শুধু বলে, “একদম না।”
সময়টা কতক্ষণ থমকে ছিলো জানে না দু’জন!
শান্ত বাতাসে লুটোপুটি করা ঝুমুরের চুলগুলো তাখলিফ কানের পেছনে গুঁজে দিয়ে ওর নাকে নাক ঠেকিয়ে দাঁড়ায়। তপ্ত নিঃশ্বাস পুড়িয়ে দিচ্ছিলো ঝুমুরের ভেতরকার অনুভূতি। এরপর আচমকাই ওষ্ঠাধরে সামান্য ছোঁয়া! ঝুমুর তখন যেন এই পৃথিবীতেই নেই। এতটা ঘনিষ্ঠতা আশা করেনি সে। হতবিহ্বলতা কাটতেই দেখতে পায় তাখলিফ ওকে ধাক্কা দিয়ে মেঝেতে ফেলে চলে গেছে। ঝুমুর এমন কান্ডে
দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ে। কি হলো এটা? মানুষটার আচানক আবার মন পালটে গেলো কেন? ও কাপড় নেয়ার কথা বেমালুম ভুলে দোতলায় নেমে আসে। একটা ঘোরের ভেতর আছে সে!
______
সানওয়ার সাহেব আজ বাড়িতেই আছেন। দরজায়
নক হতেই খুলে দেখলেন তাখলিফ দাঁড়িয়ে আছে। চোখমুখ কেমন গম্ভীর, উদাসীন। অফিসের পোশাকে ভীষণ ক্লান্তিকর দেখাচ্ছিলো। বাবাকে দেখে মৃদু হাসলো। চুলগুলো ফ্লিপ করে পেছনে ঠেলে দিয়ে জিজ্ঞেস করল, “অনেকদিন পর, এইসময় তো বাসায় থাকো না। আজ কি হলো?”
সানওয়ার হক হেসে বললেন, “এইতো সবসময়
ব্যস্তই থাকি। তাই আজ কাজ থেকে ছুটি নিলাম।”
“মন একটু বেশিই ভালো নাকি?”
সানওয়ার হক বললেন,
“যে ডিলটার জন্য খাটাখাটুনি করছিলাম, তা পেয়ে গেছি। সেজন্যই মনটা ভালো। যাইহোক, তুই ফ্রেশ হো গিয়ে, আমি চা করছি।”
তাখলিফ হেসে বাবার কাঁধের ওপর হাত রেখে বলল, “কংগ্রাচুলেশনস। ট্রিট হিসেবে আজ তোমাকেই আমি চা করে খাওয়াবো। তুমি বসো।”
সানওয়ার সাহেবও হাসলেন প্রতিত্তোরে। তাখলিফ অফিসের পোশাক ছাড়ার জন্য নিজের ঘরের দিকে গেলো। তাখলিফের যাওয়ার পানে তাকিয়ে সানওয়ার হকের চোখ ভিজে ওঠে। এ কেমন টান অনুভব করেন এই ছেলের প্রতি? ইচ্ছে করে পুরো পৃথিবীর সবকিছু এই ছেলের নামে লিখে দিতে! স্ত্রীর ছবির দিকে তাকিয়ে তিনি শুধু বিড়বিড় করে বলেন, “আমাদের ছেলেটা ভালো থাকুক তমালিকা। ওর একটা গতি করে দিতে না পারলে তোমার কাছে গিয়েও শান্তি পাবো না৷ তোমাকে দেওয়া এই কথা তো আমাকে রাখতেই হবে।”
তাখলিফ ফ্রেশ হয়ে রান্নাঘরে গিয়ে চা বানাতে থাকে। তার বাবা কফি খেতে পারে না। চা’য়ে বেশি চিনি আর দুধ মিশিয়ে খায়। বাবার এই বাচ্চাদের মতো স্বভাব অবশ্য তাখলিফ পায়নি। সে তেতো, মিষ্টি যেটাই হোক না কেন খেতে পারে। বলা যায় বাবার কোনোকিছুই সে পায়নি। না চেহারা, উচ্চতা, গায়ের রঙ! তবুও বাবাকে সে ভালোবাসে। দু-কাপ চা বানিয়ে বসার ঘরে এসে দেখে সানওয়ার হক স্ত্রীর ছবির দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন, বিড়বিড় করে কিছু একটা বলছেন। বাবার অবস্থা দেখে ওর ভাবনাগুলো কেমন থমকে যায়। মায়ের ছবির দিকে তাকালেই ওর চোখ জ্বলে যায়, সেজন্য ছবিতে কখনো তাকায় না সে। আস্তে করে শুধু ডাকে,
“বাবা?”
সানওয়ার হক পেছন ফিরে ছেলেকে দেখে স্থির হয়ে যান। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য হাসার প্রচেষ্টা করেন। তাখলিফ তাকে চায়ের কাপ এগিয়ে দেয়। সোফায় বসে চায়ে চুমুক দিয়েই তার মুখটা জ্বলজ্বল করে ওঠে, “বুঝলি তাখলিফ! তুই চা-টা ভালোই বানাস। কয়েকদিন ধরেই একটা কথা ভাবছি… ”
তাখলিফ চা খেতে খেতে বলে,
“কী কথা?”
সানওয়ার হক বিজ্ঞের ন্যায় বলেন,
“ভাবছি বয়স তো অনেক হলো। তুইও চাকরি-বাকরি করছিস, না করলেও সমস্যা নেই৷ আমার অঢেল টাকার মালিক তো তুই-ই হবি, ব্যবসার ভাগ পাবি। আম্মার সাথে সেদিন কথা হলো, ভাবছি এবার তোকে একটা বিয়ে করাবো, ঘরে মেয়েমানুষ না থাকলে ঘরই মনে হয় না।”
বাবার কথায় মুখের রঙ পালটে যায় ওর। পরক্ষণেই ঝুমুরের মুখটা ভেসে ওঠে মানসপটে। গম্ভীর গলায় বলে, “আমি বিয়েটিয়ে করতে পারবো না। এসব বাদ দাও।”
সানওয়ার হক খ্যাঁকিয়ে ওঠেন এবার, “কেন পারবি না? তোর ছোটটা বাড়িতে বিয়ে করে বউ নিয়ে এসেছে আর তুই কুমার থাকার প্রতিজ্ঞা করছিস? এই যে আমার এতবড় একটা ফ্ল্যাট! এটা আদতে একটা বয়েজ হোস্টেল। যেখানে বাপ-ছেলে দু’জনেই সকালে রান্না করে খেয়ে এরপর কাজে বেরুয় আর কাজ থেকে ফিরে রান্না করে আবার খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। এখানে কোনো প্রাণ নেই, উচ্ছলতা নেই, জীবনের মানে নেই। এটাকে এবারে আমি সংসারে রুপান্তরিত করবো…”
“সংসারে রুপান্তরিত করবে মানে?”
“তোর মতো এলোমেলো ছেলেকে ঠিক করার জন্য একটা বউ আনবো। যে তোকে পুরো সংসারী বানিয়ে দেবে। আমার আর ক’দিন? এই আছি, এই নেই। যাওয়ার আগে তোকেই তো সব গুছিয়ে নিতে হবে…”
তাখলিফ রাগে এবার চেঁচিয়ে ওঠে, “এসব কি বলছো? তুমি নেই মানে কি?”
সানওয়ার হক নিজের ভুলটা ধরতে পারলেন। দুপাশে মাথা নাড়িয়ে বললেন, “আরে ঐটা কথার কথা…”
তাখলিফ বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকে ফেলে,
“কথার কথা মাই ফুট। আর কখনো এসব বলবে না।”
সানওয়াক হক বলেন,
“ওকে ওকে। কিন্তু যাই হোক না কেন তোকে আমি এবার বিয়ে করাবোই। সংসারী বানাবো। না করতে পারবি না। বউয়ের যত্ন, আদর, ভালোবাসা পাওয়ার অধিকার তো তোরও আছে…”
তাখলিফ বুঝলো বাবার সাথে তর্ক করা আর নিজের পায়ে কুড়োল মারা একই কথা। সেজন্য ও চুপ করে গেলো। হতাশ নিঃশ্বাস ফেলে সোফায় গা এলিয়ে দিতেই সন্ধ্যার ঘটনাটি মস্তিষ্কে হানা দিলো। সেই মোহ ছন্নতা, ঘোর লাগা, গোধূলির আলোয় কি মিষ্টি লাগছিলো ঝুমুরটাকে! তাখলিফ নিজেকে সামলাতে পারেনি। উফ, কীভাবে এতোটা দুর্বল হয়ে পড়লো সে? ঝুমুরটা তো আরও আস্কারা পেয়ে যাবে। একবার ওর মন টের পেয়ে গেলে এই মেয়ে ওর পিছু ছাড়বে না। তখন এটা কি করে ফেললো সে? একদম উচিৎ হয়নি, একদম না। তবে বাবার বকবকানি শুনে এটাও মনে হলো, এই ঝুমুরটাও মন্দ নয়। একদম পাকা, পতিভক্ত, সংসারী নারী হওয়ার সকল গুণ বিদ্যমান আছে ওর মধ্যে। কিন্তু তাখলিফের কপাল খুব খারাপ বলেই এই একটা ঘটনা ওর জীবনে মারাত্মক কাল হয়ে দাঁড়াবে এটা সে বুঝতে পারছে। অবশ্য ফুলের দিকে হাত বাড়ালে কাঁটার আঘাত তো পেতেই হবে। আচ্ছা, কাঁটার আঘাতে সে সহ্য করে নেবে। কিন্তু কোনোদিন এই ঝুমুর রাণীকে কি ও সত্যিই পাবে? কে জানে!
______________
সন্ধ্যার চায়ের আড্ডায় সকলেই অংশ নিয়েছে। তবে তুসিকে দেখে পাখি বেগম মুখ কালো করে চলে গেছেন। শ্বাশুড়ির এরকম আচরণ কষ্ট দেয় তুসিকে৷ তবুও ইয়াসিফের কথা ভেবেই সে চোখের জল আড়ালে মুছে নেয়। ওর জন্য কতকিছু করছে ছেলেটা! চাকুরির জন্য হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তুসির মন খারাপ লাগে ভীষণ! ছেলেটাকে বিপদে ফেলে দিয়েছে সে। কিন্তু ও কি আর করতো? ইয়াসিফকে ছেড়ে অন্যের গলায় সে ঝুলে পড়তে চায় নি একদম। ছেলেটা কত কেয়ার করে ওর, বড্ড ভালোবাসে! কেমন পাগলামো করে হুট করে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলো ভেবেই হাসি ফুটে ওঠে। ইয়াসিফের জন্য হলেও সব কষ্ট সয়ে নিতে রাজি সে!
চায়ের আড্ডায় গল্পগুজব শেষে যে যার মতো ঘরে চলে গেলো। ইয়াসিফ বাইরে থেকে ফিরেছে বিধায় তুসিও গেলো। পাখি বেগম ছেলের জন্য পানি নিয়ে আসতেই দেখে তুসি ওর জন্য শরবত নিয়ে গেছে আর ইয়াসিফ তৃপ্তি নিয়ে সেটা খাচ্ছে। পাখি বেগম জ্বলে ওঠলেন একদম। রাগে, দুঃখে তার চোখ ফেটে জল বেরুতে চাইলো। ছেলেকে বুঝি কেড়েই নিলো তার থেকে এই কাল-নাগিনী। কি ছলা-কলা দিয়ে বশ করছে কে জানে! ছেলেকে হারিয়েই ফেললেন বোধহয়! এসব চিন্তা করে রাগে ফুঁসতে লাগলেন পাখি বেগম। ইয়াসিফ অবশ্য মা’কে আগেই লক্ষ্য করেছে। শরবত খাওয়া শেষ করে সে মায়ের কাছে গেলো। তার হাতে থাকা পানির গ্লাসটা নিয়ে ঢকঢক করে গ্লাস খালি করে দিয়ে বলল, “পানিটা না খেলে যেন হচ্ছিলোই না৷ আজকের পানিটা এত সুস্বাদু কেন বলেন তো আম্মা।”
পাখি বেগম হেসে ফেললেন আচমকা। পরক্ষণেই
মুখ কঠিন করে বললেন, “সারাদিন কাজ খুঁজে হয়রান যে হয়ে আছিস, কেউ তোকে খেতে দিয়েছে? খালি পেটে আমার পোলাডারে শরবত খাওয়ায়, কত্তবড় সাহস!”
ইয়াসিফ হাসতে হাসতে নিচু স্বরে বলল, “আরে
একদিন খেলে কিছু হবে না। আর নতুন বউ কেন আনলাম? আমার সেবা-যত্ন করার জন্যই তো। তার কাজই তো আমার জন্য হাতে করে শরবত নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা, পানি তো আমার আম্মা আনবে। তাই না?”
পাখি বেগম বললেন, “আয়, তোকে খেতে দিই। ছোট মাছের চচ্চড়ি করেছি নিজ হাতে। তোর তো পছন্দ।”
ইয়াসিফ ক্ষুধা পেয়েছে এমন ভান করে বলল,
“তাই নাকি? তাড়াতাড়ি ভাত বাড়েন। আমি হাতমুখ ধুয়েই আসছি।”
পাখি বেগম রান্নাঘরে চলে গেলেন। ইয়াসিফ তুসির দিকে তাকিয়ে ঘরে যাওয়ার ইশারা দিয়ে চলে গেলো। তুসি এবার হেসে ফেললো। ঝুমুর পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলো। ও বলল, “ভাইয়ার কি বুদ্ধি! দু’দিকেই
ব্যালেন্স রাখার চেষ্টা করছে।”
তুসি হেসে বলল, “ও আজীবনই এমন ফাজিল।”
“তবে বড্ড কাজের, অকাজের না।”
“ভুল বলো নি।”
_____________
এরপরের দু’দিন তাখলিফকে কোথাও দেখতে পেলো না ঝুমুর। পরে অনেক খোঁজটোজ নিয়ে জানলো অফিসের কাজেই সপ্তাহ খানিকের জন্য শহরের বাইরে পাঠানো হয়েছে ওকে টিমের লিডার করে। ঝুমুরের ভীষণ কান্না পেলো। একবার বলে গেলে কি হতো ওকে? অবশ্য কার কাছে আশা করে এসব? মানুষটা সেদিন ওকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে চলে গেছে। যাওয়ার পর একটা খোঁজ অবধি নেয়নি। এই যে ওর ধাক্কায় পড়ে গিয়ে হাত কেটে গিয়েছিলো ঝুমুরের, জানেও না তাখলিফ! ওর বড় অভিমান হলো। তাখলিফ বিহীন একেকটা দিন ওর কাছে মাসের ন্যায় বড় মনে হলো। এরমধ্যে একদিন ঝিনুকের শ্বশুরবাড়ির পরিবারকে দাওয়াত করা হয়েছিলো ইয়াসিফের বিয়ে কেন্দ্র করে। সারাদিন গাধার খাটুনি খেটে ঝুমুরও তাদের আপ্যায়ন করেছে। অথচ পরে শুনে সেই বাড়ির ছোট ছেলের সাথে আবারও বিয়ের ব্যাপারটা তুলেছে তারা। শুনে ঝুমুরের কি রাগ, কান্নাকাটি! ইয়াসিফ রাগারাগি করে বাবা-মাকে বুঝিয়ে সাময়িক শান্ত করলেও ব্যাপারটার পুরোপুরি নিষ্পত্তি ঘটাতে পারলো না। তাছাড়া ছেলেকে মনমতো বিয়ে দিতে পারেন নি। তাই এবার ইয়াসিফের রাগ-জেদ কাজ হলো না। ছোট মেয়েকে নিজেদের পছন্দে বিয়ে দেবে এটা পাখি বেগমের একটা শপথ। শামসুল হক আর তার দু’জনেরই ভীষণ পছন্দ ঝিনুকের ছোট দেবরকে। তাদেরও একশো শতাংশ মত আছে। এছাড়া বিষয়, প্রতিপত্তি, শিক্ষা সবই আছে। এছাড়া ঝুমুরকে ওরা পড়তে দিবে বলেছে। কিন্তু চাকরি করতে দেবে না৷ এটা তেমন বড় কোনো সমস্যা না। সবদিকে যখন ব্যাটে-বলে মিলেই গেছে তবে কেন নয়?
এরপর দীর্ঘ অফিসের কাজকর্ম গুছিয়ে যেদিন তাখলিফ বাড়ি ফিরলো, জানতে পেরেই ঝুমুর ঘরে বসে উসখুস করতে লাগলো। সুযোগ খুঁজতে লাগলো কি করে ওর সাথে দেখা করবে। বিকেলে যখন পাখি বেগম প্রমিলাকে নিয়ে বোনের বাড়ি গেলো, তখন সুযোগ পেয়ে ও চলে এলো তিন তলায়। বড় চাচা বাড়িতে নেই জানে ঝুমুর। কলিংবেল চেপে কান্না আটকে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো ও। দরজা খোলামাত্রই তাখলিফের বুকে আছড়ে পড়ে ফুঁপিয়ে ওঠলো ঝুমুর। ঘুম থেকে ওঠে আকস্মিক এমন একটা অবস্থা দেখে হতভম্ব তাখলিফ হন্তদন্ত হয়ে দরজা লাগিয়ে ওকে সরানোর চেষ্টা করতে থাকলে ঝুমুর আরো শক্ত করে ধরে বলে ওঠে, “আপনি বাড়িতে বলে দিন, নয়তো আমাকে ওরা বিয়ে দিয়ে ফেলনে। দূরে করে দিবে আপনার থেকে। প্লিজ প্লিজ বলে দিন। আমি নাহলে ম’রে যাবো।”
তাখলিফ ওর কথা শুনে শান্ত হয়ে যায়। ইচ্ছে করে মেরে ওর গাল লাল করে দিতে। কিন্তু নিজেকে সংযত করে ওর মাথায় চিবুক রেখে এরপর বলে, “একটা বিয়েই তো করবি, এমন নাটকের কি আছে? ষোলো বছরে একবার করেছিস, আঠারোতে আবার করবি!”
ঝুমুর ভার গলায় বলল,
“আমার বয়স ঊনিশ। আমার একটাই বিয়ে আর একটাই বর। আরকিছু লাগবে না। গাছতলায় থাকবো দরকার হলে।”
তাখলিফ ঠোঁট টিপে হাসি আটকায়, “সে তো আবেগের কথা। দেখলাম তো ছেলেটাকে। ভালো-ভদ্র, শিক্ষিত, সরকারি চাকুরীজীবি। তোকে খুব ভালো রাখবে।”
“আমি আপনাকে ছাড়া একটুও ভালো থাকবো না। আপনি সবাইকে বলে দিন। না মানলে আমরা চলে যাবো।”
“কোথায় যাবি?”
ঝুমুর এবার ওর বুক থেকে মুখ তুলে। চোখের জলে পুরো মুখ ভিজে লাল হয়ে আছে। মাথায় ওড়না টেনে দেওয়া নেই পর্যন্ত। রুক্ষ, রুগ্ন দেখাচ্ছে মেয়েটাকে। তাখলিফের বুকের ভেতরটা কেমন কেঁপে ওঠলো। ওর মানসিক যন্ত্রণাটা যে অত্যাধিক বুঝতে পারলো। ঝুমুর আবারও ওর বুকে মুখ লুকিয়ে বলল, “আপনি যেখানে নিয়ে যাবেন।”
তাখলিফ মূর্তিমান হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। এখন কি করা উচিৎ ওর? এই যে এতদূর পর্যন্ত ভেবে মেয়েটা ওর কাছে এসেছে, ফিরিয়ে দিতে পারবে না ও। কিন্তু কি করবে? মাথা কাজ করছে না ওর। বাবার সাথে কথা বলবে কি একবার? সব শুনে বাবা কি রিয়েকশন দেবে, কে জানে? ওকে আবার ভুল বুঝবে না তো?
ঝুমুর ওকে কিছু বলতে না দেখে পিঠে চিমটি দেয়। ভাবনার মাঝে এমন আঘাত পেয়ে মৃদু আর্তনাদ করে ওঠে তাখলিফ। ধমকে বলে, “একটুও ভয় পাস না আমাকে, তাই না? মেরে যেদিন গাল ফাটিয়ে দেবো তখন কেঁদেও কূল পাবি না।”
ঝুমুর করুণ স্বরে বলে, “বলবেন কি-না বলুন না? মা-বাবা খুব জোরে এবার আমাকে বিয়ে দিতে চাইছে। আপনি কি আটকাবেন না? আপনার বউ তো আমি, একজনের বউ হয়ে অন্য আরেকজনকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করা যায় না। আমি চাই না এমন কোনো কলঙ্ক মাথায় নিতে। তাই ব্যাপারটা যাতে আর না এগোয় আপনি দয়া করে দেখুন। এমনিতেই অনেক কথা হয়ে গেছে। ওটা তো আপুর শ্বশুরবাড়ি। কিছু হলে আপুকে ওরা কথা শোনাবে।”
তাখলিফকে কিছু বলতে না দেখে ঝুমুর আবারও উদগ্রীব কন্ঠে বলে, “আপনি এমন নির্লিপ্ত কেন? দেখুন আ আমি কিন্তু কিছু একটা করে ফেলবো।
ম’রে যা….”
আরকিছু বলার আগেই তাখলিফ ওর ঠোঁট দখল করে কথা আটকে দেয়। খানিকক্ষণ পর শান্ত হয়ে এলে ঝুমুরকে ছেড়ে দিয়ে দূরে গিয়ে দাঁড়ায়। অন্যদিকে ফিরে এরপর গম্ভীর কণ্ঠে বলে, “তুই কিছুই করবি না, আমাকে কথা দিতে হবে। এরপর বাকিটা আমি দেখবো…”
কথাটা বলার সময় তাখলিফের গলা কেঁপে যায়। ঝুমুরের চোখ থেকে দু-ফোঁটা জল গাল বেয়ে টুপ করে কার্পেটের ওপর পড়ে যায়। পেছন থেকে তাখলিফকে
জড়িয়ে ধরে বলে, “ভালোবাসি।”
’
____________
[ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ইচ্ছে করে দেরি করছি না।]
চলবে…..