শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে #নুরুন্নাহার_তিথী #পর্ব_৩১

0
453

#copyrightalert❌🚫
#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৩১
ইটালিতে এখন প্রায় গভীর রাত। বাহিরে বেশ হাওয়া বইছে। মনে হচ্ছে বৃষ্টি নামবে। বারান্দার দরজা খোলা রেখে আর্শি বিছানার সাথে গা এলিয়ে শ্রাবণের ফোনের অপেক্ষা করতে করতে কখন যে তার চোখ লেগে গেছে খবর নেই। শ্রাবণকে কল করেছিল একবার, রিং বেজেছে কিন্তু রিসিভ হয়নি। আর্শি জানে, শ্রাবণ ফোন সাইলেন্ট করে রাখে। তাই বারবার কল করেনি। দেখলে নিজেই কলব্যাক করবে। ঘুমের মধ্যে হঠাৎ ফোন বেজে উঠলে ঘুম ছুটে যায় আর্শির। তড়িঘড়ি করে ফোন হাতে নিয়ে দেখে শ্রাবণে ভিডিও কল। আর্শি বিছানা ছেড়ে ডাইনিং রুমে এসে কল রিসিভ করে। ফোন রিসিভ করতে দেরি শ্রাবণের হড়বড়িয়ে বলা কথাগুলো কানে আসতে দেরি হয় না আর্শির! শ্রাবণ বলে,

“ইজ ইট ট্রু? তুমি রিয়েলি প্রেগন্যান্ট? আর ইউ ট্রায়িং টু প্র্যাংক উইথ মি?”

শেষোক্ত কথাটা আর্শির মন খারাপ করে দেয়। কণ্ঠস্বরে মন খারাপের রেশ ধরেই বলে,
“আপনার কেন মনে হয় আমি আপনার সাথে প্র্যাংক করব? আমি কি এটুকু বুঝি না, কোনটা সিরিয়াস ম্যাটার আর কোনটা ফানি ম্যাটার? টেস্টের রিপোর্ট সহ আপনাকে দিলাম, তারপরও যদি আপনার কাছে এটা ফানি মনে হয়! দ্যান আই হ্যাভ নো ওয়ার্ড টু সে ইউ। যখন বিশ্বাস হবে তখন কল করবেন। বায়!”

শ্রাবণ তাড়াহুড়া করে বলে,
“আরে শুনো তো! রাগ করছো কেন? আমার সত্যি বিশ্বাস হচ্ছিলো না। তাছাড়া তুমি আমি দুজনেই এখন পড়ালেখা, জব নিয়ে বিজি। বাট দ্যা মেইন ফ্যাক্ট ইজ, বর্তমানে আমরা দুইজন দুটি ভিন্ন দেশে থাকি। এমনকি আমাদের সাথে আমাদের পরিবারও নেই। তুমি আমার কনসার্নটা বুঝতে পারছ না।”

“বুঝতে পারছি। কিন্তু আমি তো আর ইচ্ছে করে বেবি নেইনি।”

শ্রাবণ মুখে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে ক্লান্তিকর স্বরে বলে,
“ফরগেট ইট! কী করবে এখন?”

শ্রাবণের প্রশ্নের বিপরীতে আর্শিও পালটা প্রশ্ন করে,
“আপনি কী করতে বলছেন? এমন কোন কথা বলে বসবেন না, যেটার পর আমি আপনার সাথে কথা বলাই বন্ধ করে দিব!”

শ্রাবণ বিস্মিত স্বরে বলে ওঠলো,
“আমার কথা শুনলে তুমি আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিবে? তুমি এটা বলতে পারলে?”

“হ্যাঁ পারলাম। শ্রাবণ, আপনার কি মনে হচ্ছে না আপনি দিনকে দিন বদলে যাচ্ছেন? আপনি বাবা হতে চলেছেন, শ্রাবণ! কিন্তু আপনার মধ্যে সেটার কোনো উচ্ছাসতা নেই। আমি প্রথম থেকেই একটা বিষয়ে লক্ষ্য করেছি, আপনার মন মতো সবকিছু হলে সব ভালো। আপনার মন মতো একটা কিছু না হলে, কিছুই ভালো না। ইটস আওয়ার বেবি। আমি যদি সাহস করতে পারি, নিজের খেয়াল রাখতে পারি। তাহলে আপনি কেন ভয় পাচ্ছেন?”

“তুমি বুঝতে পারছ না…”

শ্রাবণকে কথা শেষ করতে দিলো না। ফোন কেটে আর্শি ইন্টারনেট অফ করে সেখানেই নিঃশব্দে কাঁদতে লাগলো। নিজে নিজেই স্বগোতক্তি করছে,
“বেবিতো আমিও এতো জলদি চাইনি। তাই বলে কি এখন…! উনি এটা মিন না করলেও পারতো। আরিয়াও তো প্রেগন্যান্ট। আশিক তো কতো খুশি। উনি কেন খুশি হতে পারলো না?”

কিছুক্ষণ নিরবে মন খারাপ করে থেকে পানি খেয়ে রুমে চলে গেলো। সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, শ্রাবণ বেবি না চাইলেও সে মানবে না। সকালে শ্রাবণের বাবা-মাকে কল করবে। যা বলার উনারাই বলুক।

________

পরেরদিন, শ্রাবণ অফিসে চিন্তিত হয়ে বসে আছে। নিজের ডেস্ক থেকে ইরিনা ব্যাপারটা লক্ষ্য করেছে। তারা একসাথে কয়েকজন একটক প্রজেক্টে আছে। প্রজেক্টের কাজ শেষই প্রায়। ফাইনাল রিপোর্টটা জমা দিবে। প্রজেক্টটাতে তাদের প্রায় বিশ দিনের মতো লেগেছে। এই কয়েকদিনের ভিতর শ্রাবণকে কখনো আজকের মতো উদাস ও চিন্তিত দেখেনি ইরিনা। ইরিনা শ্রাবণের কাছে গিয়ে তার কাঁধে হাত রেখে বলে,

“হেই শ্রাবণ, হোয়াট হ্যাপেন্ড? ইউ লুকিং টেনসড। এনিথিং রং?”

শ্রাবণ ইরিনার দিকে একবার তাকিয়ে কম্পিউটারে স্থির ডাটাবেজের শিটটার দিকে চেয়ে বলে,
“নো, আই অ্যাম ফাইন।”

“ডোন্ট হেজিটেট। প্লিজ টেল মি, হোয়াট হ্যাপেন্ড? ইউ নো? শেয়ারিং ইজ কেয়ারিং? হোয়েন ইউ শেয়ার ইউর প্রবলেম, ইউ উইল ফিল বেটার।”

শ্রাবণ উঠে দাঁড়ালো। তারপর বলল,
“কফি?”

“ইয়াহ শিউর।”

দুজনে অফিস থেকে বেরিয়ে একটা কফিশপে যায়।

_____

এদিকে শ্রাবণের বাবা-মা বেজায় খুশি। তাঁরা দাদা-দাদী হবেন। উনারা তো চাইছেন, ইটালি গিয়ে আর্শির সাথে কিছুদিন থেকে আসবেন। কিন্তু শ্রাবণের অসন্তুষ্টির কথা শুনে মিসেস সন্ধ্যা বললেন,

“শোনো, তুমি একদম শ্রাবণের কথায় মন খারাপ করবে না। ও হয়তো টেনশনে আছে। দুইদিন ওর সাথে কথা না বলে দেখো, একদম লাইনে চলে আসবে। আর তুমি কিন্তু ঠিক মতো খাওয়া-দাওয়া করবে। হেলদি খাবার খাবে। যদিও জানি, তুমি হেলদি খাবারই খাও। আর রাত জাগবে না। আমার ফা*জিল ছেলের জন্যও রাত জাগবে না।”

আর্শি মৃদু হেসে বলে,
“জি মা। আমি নিজের খেয়াল রাখব। তাছাড়া আমার তিনজন রুমমেটও অনেক কেয়ারিং। তাছাড়া হেলেনা আন্টি, মানে আমার ফ্রেন্ড হ্যারির মা আজ সকালেই আমাকে দেখতে এসেছিলেন। সাথে করে নিজে রান্না করে কতোকিছু নিয়ে এসেছেন। তাই আপনারা চিন্তা করবেন না।”

শ্রাবণের বাবা বলেন,
“আমার ছেলেকে নিয়ে চিন্তা করবে না। ওর জন্য ওর বাপই যথেষ্ট। দিনকে দিন একরোখা হয়ে গেছে। ফোন করে ওকে ধো*লাই দিতে হবে।”

মিসেস সন্ধ্যা ফোড়ন কে*টে বললেন,
“তুমি কিছুই বলতে পারবে না! তোমার মুখ দিয়ে কথা বেরোয়? নিজে একরোখা কম? ও-কে তো আমি শায়েস্তা করব। আর আর্শি মা, তুমি খালি নিজের খেয়াল রেখো। পড়াশোনাটাও মন দিয়ে করো।”

“জি মা।”

“তাহলে রাখি এখন। তোমার তো ক্লাস আছে।’

“আজ আর নেই। এখন অ্যাপার্টমেন্টে ফিরব।”

“সাবধানে যাও।”

অতঃপর সালাম বিনিময় করে ফোন কা*টে আর্শি। পাশে বসা সোহা বলে,
“এখানকার এক রেস্টুরেন্টে ফুচকা পাওয়া যায়। যদিও টেস্টে বাংলাদেশের ফুচকার মতো হবে না। দই ফুচকা, মিষ্টি টকের ফুচকা। খেয়ে আসি চল। শুনেছি নতুন আইটেম হিসেবে ফুচকাটা যুক্ত হয়েছে। বাংলাদেশি ওয়েটারও বেশি সেখানে। যাবি?”

আর্শি ভেবে দেখলো, প্রস্তাবটা মন্দ না। অতঃপর মোনা, লিসা, হ্যারি ও পিটারকেও জানালো। তারপর ছয় জন মিলে সেখানে গেলো।

_______

রাত থেকে ইরিনা খুব ভয়ে আছে। তার কাছে একটা মেইল এসেছে। যদিও মেইল আইডিটা সে ট্র্যাক করতে ব্যার্থ হয়েছে। মেইলটাতে এমন লিখা ছিল যে, সে যদি শ্রাবণকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করে ফাঁ*সাতে পারে, তবে বিনিময়ে সে পঞ্চাশ হাজার কানাডিয়ান ডলার পাবে। ইরিনা তাই খু্ব ভয়ে আছে। টাকার প্রতি তার লোভ নেই। কারণ সে জব থেকে যা বেতন পায় তা দিয়ে তার বেশ ভালো ভাবেই চলে যায়। তার উপর পরিবারেরও টেনশন নেই। সে এতিম। ইতোমধ্যে কিছুদিন আগে সে এনগেইজড হয়েছে। ছয় মাস পর তার বিয়ে। তাহলে তাকে কেন এরকম বাজে কাজের অফার দেওয়া হচ্ছে? নাকি চাকরিক্ষেত্রে নতুন এমপ্লয়ি হিসেবে কেউ তার সাকসেসে ঈর্ষান্বিত? এজন্য তাকে ফাঁ*সাতে জাল পেতেছে? কথাটা সে তার ফিয়ন্সেকে শেয়ার করলে তার ফিয়ন্সেও তাকে একই কথা বলেছে এবং এসব থেকে দূরে থাকতে বলেছে।
ভয় থেকে ইরিনা কাজে একটা ভুলও করে ফেলেছে। তখন ইরিনার ফিয়ন্সে ওর কাছে এগিয়ে আসে। ইরিনার ফিয়ন্সে ইরিনার কলিগ। সে এসে বলে,

“রিল্যাক্স ইরিনা, কনসানট্রেট ইন ইউর জব। স্টপ ওভারথিংকিং। ফোকাস ইন ইউর ওয়ার্ক।”

ইরিনা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয়।

অপরদিকে নাহিদ ইরিনার উত্তরের অপেক্ষা করছে। যদি রাজি না হয় তবে টাকার এমাউন্ট আরও বাড়িয়ে দিবে। কিন্তু কাজটা তার করাতেই হবে। আর্শির প্রেগনেন্সির খবরটাতে নাহিদকে আরও ক্ষে*পিয়ে তুলেছে। সবাই নিজেদের লাইফে খুশি, শুধুমাত্র সে ছাড়া। এটাই সে কোনো ভাবে মেনে নিতে পারছে না।

চলবে ইন শা আল্লাহ,
আমি দুইদিন অসুস্থ ছিলাম। যেহেতু লিখি সন্ধ্যার পর।
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ। রিচেক করা হয়নি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here