#অষ্টপ্রহরে_পেয়েছি_তোমায়🥀
#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_১৩
গোসল করে এসে দুপুরের খাবার খেয়ে কিছুক্ষণ রেস্ট নিলাম।বিকালে আয়াজ রাদ ভাইয়াকে ফোন দিলেন।ভাইয়া ফোন রিসিভ করতেই বললেন,,,”ছোট আপুকে নিয়ে বের হয়ে ইশাদের বাড়ির সামনে আয়”
ওপাশ থেকে ভাইয়া কি বললেন শুনতে পায়নি কিন্তু বুঝতে পেরেছি যে ভাইয়ারা বের হচ্ছেন।আজকে আমি শখ করে শাড়ি পড়েছি।আম্মু পরিয়ে দিয়েছে।নীল রঙের একটা শাড়ি পরেছি আর আয়াজ একটা নীল রঙের টি-শার্ট আর কালো প্যান্ট পরেছেন।অসম্ভব সুন্দর লাগছে ওনাকে।আমি খেয়াল করলাম উনি আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন।
আমি উনার সামনে গিয়ে হাত নাড়িয়ে বললাম,,,,”হা করে তাকিয়ে আছেন কেনো?”
উনি স্বাভাবিক হয়ে বললেন,,,”তোমাকে পেত্নীর মতো লাগছে তাই দেখছিলাম”
আমি দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,,,”আমাকে তো পেত্নী লাগবে আর নশিনকে বিশ্ব সুন্দরী”
কথাটা বলেই আমি হনহন করে বাইরে চলে আসলাম।হাঁটতে একটু অসুবিধা হচ্ছে কিন্তু সামলে নিয়েছি।বাইরে এসে দেখি ফারিন আর রাদ ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছেন।ফারিনও শাড়ি পরেছে।
আমি ওর কাছে গিয়ে বলি,,,”আরে তুই ও শাড়ি পরেছিল।কুত্তি তোকে কিন্তু লাল শাড়িতে হেব্বি লাগছে।”
আমাদের কথার মাঝেই আয়াজ চলে আসল।আমরা এখান থেকে একটা ভ্যানে করে মেলায় যবো।আমরা ভ্যানে উঠে বসলাম।আমি আর আয়াজ পেছনে,রাদ ভাইয়া ফারিন সামনে বসল।আমি ফারিনের সাথে পিছনে বসতে চেয়েছিলাম।কিন্তু আয়াজ আমাকে টেনে নিয়ে নিজের সাথে বসালেন।আমি মুখ গোমড়া করে চারপাশ দেখছিলাম।আয়াজের দিক চোখ যেতেই দেখলাম উনি উনার গলায় ঝুলানো ক্যামেরাটা দিয়ে আশেপাশের ছবি তুলছেন।ফারিন আর রাদ ভাইয়া কি সুন্দর প্রেম করতে করতে যাচ্ছেন।আর এই ব্যাটা সালা আনরোমান্টিক কোথাকার।
বিরবির করে বললাম,,,”এরা কি সুন্দর গল্প করছে আর এই ব্যাটা প্রকৃতির ছবি তুলছে”
আয়াজ হয়তো আমার বিরবির করে বলা কথাগুলো শুনতে পেলেন।ছবি তোলা বাদ দিয়ে আমার দিকে চেপে এসে কোমড় জড়িয়ে ধরলেন।আমি কেঁপে উঠলাম।ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলাম।
কানের কাছে ফিসফিস করে বললেন,,,”আমি যদি তোমার সাথে রোমান্টিকতা দেখালে তোমাকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না”
আমি কেঁপে উঠলাম উনার ছোয়ায়।তুতলিয়ে বললাম,,,”ছাড়ুনন!”
আমায় ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে বসে বললেন,,,”ওসব চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো”
আমি ব্যাঙ্গ করে বললাম,,,”ওসব চিন্তা ঝেড়ে ফেলো!আরে ব্যাটা তুই তো একটু আমার সাথে ভালো ভাবে কথা বলতে পারিস হাতে হাত রেখে হাঁটতে পারিস।তুই শুধু এটা করবা না ওটা করবা না বলে চিল্লাস”
আমি রাগের মাথায় কি কি বলে ফেললাম।হুস এলো হায় আল্লাহ এখন তো আয়াজ আমায় চিবিয়ে খাবেন।এখন আমার কি হবে আয়াজ আমার কটমট চোখে তাকিয়ে আছেন।ফারিন আর রাদ ভাইয়াও তাকিয়ে আছেন।
আমি বোকার মতো হেসে বললাম,,,”আরে আপনারা এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো আমি কি সিরিয়াসলি বলেছি নাকি আমি তো মজা করছিলাম হে হে!”
রাদ ভাইয়া আর ফারিন মুচকি হেসে সামনে তাকালো আমি জানি আজকে আমার খবর আছে।আয়াজ আমাকে কি করবেন সেটা শুধু উনি আর আল্লাহই ভালো জানেন।মেলার সামনে আসতে ভ্যান থেকে নামলাম।আয়াজ ভাড়া দিলেন।আমরা মেলার ভিতরে ঢুকলাম।আয়াজ আমার হাত ধরলেন।ফারিন আর রাদ ভাইয়া নিজেদের মতো ঘুরতে লাগলেন।আয়াজ আমাকে নিয়ে মেলার বিভিন্ন দোকান ঘুরছেন।
ফুসকার দোকান দেখে আমি আয়াজকে বললাম,,,”আয়াজজজজ!”
আয়াজ হকচকিয়ে গেলেন।বললেন,,,”কি কি হয়েছে?”
আমার উনার রিয়াকশন প্রচুর হাসি পাচ্ছে। আমি হাসি চেপে বললাম,,,”ফুসকা খাবো”
আয়াজ বিরক্তি নিয়ে বলেন,,”তুমি ফুসকা খাওয়ার জন্য এভাবে ডাকছিলে!আমি তো ভেবেছিলাম কি না কি হয়েছে।”
আমি দাঁত কেলিয়ে বললাম,,,”হ্যাঁ চলুন না”
আয়াজ আমাকে নিয়ে ফুসকার দোকানে গেলেন ফুসকা খেয়ে আবার ঘুরতে লাগলাম।আমি আয়াজের থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে চুড়ির দোকানে ঢুকলাম।উনি ফোনে কথা বলছিলেন না হলে আমাকে ছাড়তেন না।আমি চুড়ি দেখতে লাগলাম।আয়াজ ফোনে কথা বলে পাশে তাকিয়ে দেখে আমি নেই।সামনে তাকিয়ে আমাকে চুড়ির দোকানে দেখে আমার কাছে চলে আসে।
আয়াজ ধমক দিয়ে বলে,,,”একা একা এখানে এসেছো কেনো!”
আমি ঠোঁট উল্টে বললাম,,”চুড়ি দেখতে আমার কাচের চুড়ি অনেক পছন্দ।”
উনি আমার কথা শুনে দোকানের একটা ছেলেকে ডেকে বলেন,,,”এখানে সব চুড়ির দাম কত হবে?”
আমি আয়াজের কথায় চমকে গেলাম।এতো চুড়ির দাম কেনো জিজ্ঞেস করছেন!দোকানের ছেলেটা হিসাব করে টাকা বলল।উনি সব চুড়ি দিয়ে দিতে বললেন।
আমি অবাক হয়ে বললাম,,,”এতো চুড়ি কার জন্য নিচ্ছেন?”
আয়াজ নিজের কপাল চাপড়ে বললেন,,,,”স্টুপিড আমার কি তুমি ছাড়া আর বউ আছে যে আমি তাদের জন্য কিনবো!আল্লাহ তুমি একে কি দিয়ে বানিয়েছো।”
“আপনার কি মাথা খারাপ হয়ে গেল নাকি আমি এতো চুড়ি দিয়ে কি করবো”
“মানুষ চুড়ি দিয়ে কি করে?পরে তো নিশ্চয়ই পরার জন্যই নিচ্ছি”
“আমার এতো চুড়ি লাগবে না”
আয়াজ ওখান থেকে এক ডজন নীল চুড়ি নিয়ে আমাকে পড়িয়ে দিয়ে বললেন,,,”চুপচাপ থাকো সব চুড়ি তোমার।এখানে সব রঙেরই চুড়ি আছে।আর তুমি তো চুড়ি পরতে অনেক ভালোবাসো”
হ্যাঁ আসলেই আমি জামার সাথে মিলিয়ে চুড়ি পরি।আমার অনেক পছন্দ এভাবে চুড়ি পরা।আমি আর কথা বাড়ালাম না।
আয়াজ ছেলেটাকে বলল,,,”এগুলো প্যাকেট করে রাখো আমরা যাওয়ার সময় এসে নিয়ে যাবো”
আয়াজ আমাকে নিয়ে আরও অনেক দোকান ঘুরলেন।আমাকে অনেক কিছু কিনে দিলেন।সন্ধ্যা হওয়ার কিছুক্ষণ আগে আমরা সবাই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলাম।আয়াজ বাজারের সামনে ভ্যান থামাতে বললেন।একটা লোক এসে উনার হাতে কতগুলো শপিংব্যাগ দিলেন।উনি ব্যাগগুলো নিয়ে ভ্যানে বসে পরেন।
আমি আর জিজ্ঞেস করিনি ব্যাগগুলোতে কি আছে।বাড়ির সামনে এসে আয়াজ ভ্যান ওয়ালাকে ভাড়া দিলেন।
তারপর ফারিনকে দুইটা শপিং ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে বললেন,,,”ছোট আপু এইটা তোমার আর রাদের”
ফারিন বলল,,,”ভাইয়া এসবের কি কোনো প্রয়োজন ছিল!”
“ছিল ছোট আপু”
ফারিন আর কথা না বলে ব্যাগগুলো নিয়ে আমাদের বিদায় জানালো।আমরা বাড়ি চলে আসলাম।আয়াজ রাতের খাবারের পর সেই শপিং ব্যাগগুলো আম্মু আব্বু আর আহিনকে দিলেন।আম্মু আব্বু আয়াজের কাজে অনেক খুশি হলেন।আমি নিজেও অনেক খুশি ভাবিনি উনি আমার আম্মু আব্বুকে এভাবে আপন করে নিবেন।উনি তো বড়লোক বাড়ির ছেলে।আমাদের মতো মধ্যবিত্তদের সাথে মানিয়ে নিয়েছেন এটাই অনেক।
রুমে এসে বসে আছি।আয়াজ এখনো রুমে আসেননি।আমি উনার জন্য অপেক্ষা করছি।আয়াজ এসেই ওয়াশরুমে গেলেন।ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসতেই আমি খুশির ঠেলায় উনাকে জড়িয়ে ধরি।উনিও মুচকি হেসে আমায় জড়িয়ে ধরলেন।
আমি আয়াজকে জড়িয়ে ধরে বললাম,,,”আপনি এতো ভালো কেনো বলুন তো!আমার মা-বাবাকে কতো আপন করে নিয়েছেন।ধন্যবাদ আপনাকে আজকের দিনটা আমাকে উপহার দেওয়ার জন্য।”
আমি উনাকে ছেড়ে দিলাম।খুশির ঠেলায় জড়িয়ে ধরেছিলাম।আয়াজ মুচকি হেসে আমায় পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলেন।আমি কেঁপে উঠলাম।উনি আমার চুলগুলো খুলে দিলেন।নাক ডুবিয়ে দিলেন চুলে।
ঘোর লাগা কন্ঠে বললেন,,,”তোমার শরীর থেকে এমন সুন্দর ঘ্রান আসে কেনো!আমার তো মনে হয় সারাক্ষণ তোমাকে জড়িয়ে ধরে বসে থাকি”
আয়াজের কথায় আমার অনেক লজ্জা লাগল।নিজেকে উনার থেকে ছাড়িয়ে বিছানার একপাশে শুয়ে পড়লাম।উনি কাছে আসলেই আমার বুক ধুকধুক করে।আমি বুকে হাত দিয়ে নিশ্বাস নিলাম।উনিও মুচকি হেসে আমার পাশে এসে শুয়ে পড়লেন।কিছুক্ষণ হয়ে যাওয়ার পরেও আমার ঘুম আসছে না।এই ক’দিন আয়াজকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে ঘুমাতে অভ্যাস টাই পাল্টে গেছে।জড়তা কাজ করছে উনাকে জড়িয়ে ধরার জন্য।উনি আমারই তাহলে এতো জড়তা কিসের।উনাকে জড়িয়ে ধরে উনার বুকে ঘাপটি মেরে থাকলাম।লজ্জা লাগছে এখন।উনিও আমায় জড়িয়ে ধরলেন।আমি আরো লজ্জা পেলাম।
উনি কানের কাছে ফিসফিস করে বললেন,,”তাহলে আমার পিচ্চি বউটা আমাকে ছেড়ে থাকতে পারছে না তাই তো”
আমি কোনো কথা না বলে ঘাপটি মেরে আয়াজের বুকের সাথে মিশে থাকলাম।উনি মুচকি হেসে আমায় শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়লেন।
আমি ভাবতে লাগলাম,কিছুদিন আগেও এই মানুষটাকে আমি চিনতাম না।আর আজ এই মানুষটাকে ছাড়া থাকতে পারিনা আমি।কষ্ট হয় উনি দূরে গেলে আমার থেকে।কাউকে না দেখলে যদি নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়,তাকে ছাড়া থাকতে কষ্ট হয়,সে পাশে থাকলে আর কিছু লাগে না যদি ভালোবাসার সঙ্গা এটা হয় তাহলে আমি আয়াজকে প্রচন্ড ভালোবাসি।
আয়াজকে ছাড়া একটা মূহুর্ত থাকতে পারিনা আমি।কল্পনাও করিনা উনাকে ছেড়ে থাকার।আমি থাকতে পারব না উনাকে ছাড়া কিন্তু উনি আমায় ছেড়ে দিলে।আমি আর কিছু ভাবলাম না ঘুমিয়ে পড়লাম।
|
|
আজকে আমরা ঢাকা চলে যাবো।এই ক’দিন অনেক মজা করেছি।আমার যেতে ইচ্ছা করছে না কিন্তু যেতে তো হবেই।আম্মু আব্বুকে বিদায় দিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা দিলাম।আমার মনটা খারাপ হয়ে গেল।আম্মু আব্বুকে ছেড়ে আসার জন্য।
আয়াজ হয়তো বুঝতে পারলো।গাড়ি চালাতে চালাতে বলল,,,”মন খারাপ করোনা পিচ্চি বউ তোমাকে আবার নিয়ে আসব”
আয়াজের কথায় ভালো লাগল।আমি আয়াজের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলাম।আয়াজ গাড়ি চালানোতে মনোযোগ দিলেন।আমরা বাসায় এসে পৌঁছালাম অনেক রাতে।আয়াজ আমাকে খাইয়ে দিলেন।আমি আজকে জিজ্ঞেস করব আজকে উনাকে বলতেই হবে!
চলবে,,,,,,?
(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন,ধন্যবাদ)