অষ্টপ্রহরে_পেয়েছি_তোমায়🥀 #ইশা_আহমেদ #পর্ব_১৪

0
139

#অষ্টপ্রহরে_পেয়েছি_তোমায়🥀
#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_১৪

আমি আয়াজের রুমে আসলাম।উনি ওয়াশরুম থেকে মাত্রই বের হলেন।আমার রাগ লাগছে জানি না কেনো!উনি আমায় দেখে বললেন,,,”কি হয়েছে তোমার এমন লাগছে কেনো তোমায়?”

“আপনি কি আমাকে বলবেন আমায় ভালোবাসেন কিনা। যদি ভালোবাসেন তাহলে বলে দেন”

আমি হাঁটু মুড়ে বসে পড়লাম ফ্লোরে।কাঁদতে লাগলাম আমি।উনি আমায় কোলে তুলে নিলেন।আমি উনার বুকের সাথে মিশে কাঁদতে লাগলাম।

উনি আমায় নিয়ে বারান্দার দোলনায় গিয়ে বসলেন।আমাকে নিজের কোলে বসালেন।উনি গম্ভীর কন্ঠে বললেন,,,”আগে কান্না থামাও”

আমি কান্না থামাতে পারলাম না।আয়াজ আমার মুখটা উঁচু করে আমার ঠোঁট জোড়া দখল করে নিলেন।আমার কান্না আপনাআপনিই বন্ধ হয়ে গেল।উনি কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দিলেন তারপর বললেন,,,”বলো কি জানতে চাও”

আমি নাক টেনে বললাম,,,”আপনি আমায় ভালোবাসেন না মোটেও”

উনি মুচকি হেসে বললেন,,,”কে বলেছে আমি তোমায় ভালোবাসি না”

“আপনি ভালেবাসলে তো বলতেন কিন্তু আপনি বলেননি”

আয়াজ আবারও হাসলেন।আমি মুগ্ধ হয়ে উনার হাসির দিকে তাকিয়ে আছি।উনি বললেন,,”ভালোবাসলে কি মুখেই বলতে হবে!”

“হ্যাঁ বলতে হবে এবার বলুন”

“শুনো তাহলে আমি তোমাকে ভালোবাসি জানপাখি।তুমি তো আমার মনে সেই দু’বছর আগে থেকেই বসে আছো।তুমি তো আমার রানী জানপাখি,খুব খুব বেশি ভালোবাসি তোমায়।”

আয়াজের কথায় আমি আজকে অবাক হলাম আমি জানতাম উনি আমায় আমায় আগে থেকে চিনেন কিন্তু ভালোবাসেন তা জানতাম না।আমি বললাম,,,”আপনি আমায় দু’বছর আগে থেকে ভালোবাসেন?”

“হ্যাঁ জানপাখি”

“কিন্তুু কিভাবে”

“সে আজকে না পড়ে একদিন বলবো”

আমি জেদ করে বললাম,,”আমি আজকেই শুনবো”

উনি আমায় আবার কোলে তুলে বিছানায় শুইয়ে দিলেন।লাইট অফ করে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লেন।আমি ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলাম।

আয়াজ বলল,,,”চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়ো জানো তো এখন ভালোবাসি!আর না হয় পরে জেনো একবারে সবকিছু জানতে হয় না”

আমি আর কথা বাড়ালাম না।ঘুমিয়ে পরলাম।
|
|
দেখতে দেখতে আমাদের বিয়ের দু’মাস হয়ে গেলো।সময় কিভাবে চলে যায়।উনি এই দু’মাসে আমাকে একা কোথাও ছাড়েননি।কলেজে দিয়ে আসা থেকে নিয়ে আসা উনিই করেছেন।পরে কলেজে গিয়ে জানতে পেরেছিলাম,সাইফ নামের ছেলেটাকে কেউ ইচ্ছামতো মেরেছে।আমি বুঝতে পেরেছিলাম আয়াজ করেছে।সেদিন আমি বুঝেছিলাম উনি কেনো চুপ ছিলেন।আয়াজ যে আমায় প্রচন্ড ভালোবাসেন তা আমি এতোদিনে খুব ভালো করে বুঝতে পেরেছি।

আমার কপালে কি এতো সুখ সবে আদেও।আমাদের ভালোবাসায় যেনো কারো নজর না লাগে।কথাগুলো ভাবতে ভাবতে কেউ আমায় পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল।আমি জানি মানুষটা কে!মানুষটা একান্তই আমার।আমি মুচকি হাসলাম।

“কখন এসেছেন আপনি!আমায় ডাকলেন না কেনো?”

“এসেছি তো অনেক সময়।যদি তোমায় ডাকতাম তাহলে এই খোলা চুলের চন্দ্রবিলাসীকে দেখতে পারতাম নাকি”

আমি মুখ ভেংচি দিয়ে বললাম,,,”হইছে ঢং করতে হবে না চলুন খেতে হবে তো নাকি”

“শুনো না জান পাখি আমার না মিষ্টি খেতে ইচ্ছা করছে”

“ফ্রিজে আছে খেয়ে নিন”

“আমি তো ওই মিষ্টি খাবো না অন্য মিষ্টি খাবো”

“তো খান না আমাকে ছাড়ুন”

উনি আমার ঠোঁট জোড়া দখল করে নিলেন কিছুক্ষণ পরে ছেড়ে দিয়ে বললেন,,,”আমার এই মিষ্টির দরকার ছিল”

আমি আয়াজের বুকে কিল বসিয়ে দিয়ে বললাম,,”অসভ্য কোথাকার!আপনি না একটা হনুমান”

আয়াজ আমায় কোমড় জড়িয়ে নিজের কাছে টেনে নিলেন।আমি তার নিশ্বাসের শব্দ শুনতে পারছি।আমাকে বললেন,,,”আমি যদি হনুমান হই তাহলে তুমি তো সেই হনুমানেরই বউ”

আমি আয়াজের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলি,,,”ধূর আপনার সাথে কথা বলাই বেকার।”

কথাটা বলেই আমি হনহন করে আমাদের রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম।পিছন থেকে উনার হাসির শব্দ শুনতে পেয়েছি আমি।আমি খাবার গরম করতে লাগলাম।খাবার গরম করে আয়াজকে ডাক দিতে গেলাম।উনি ল্যাপটপে কি কাজ করছেন।

“চলুন খাবেন খাবার গরম করা হয়ে গিয়েছে”

উনি ল্যাপটপে চোখ রেখেই বললেন,,”আর একটু কাজ আছে ওয়েট করো।”

আমি ও বিছানায় বসে পড়লাম।আয়াজের কাজ শেষ হতেই আমরা খেয়ে নিলাম।এখনও উনি আমায় রান্না করতে দেননা।নিজে রান্না করে রেখে যান।
|
|
সকালে আমিই আজ আগে উঠেছি।তাই ফ্রেশ হয়ে রান্না করে নিলাম।উনি কালকে রাতে একটু বেশিই কাজ করেছিলেন তাই আজকে উঠতে দেরি হচ্ছে।আমি আয়াজকে আস্তে আস্তে ডাকতে লাগলাম।উনি চোখ খুলে আমাকে দেখলেন।আমি সরে আসতে চাইলেই উনি আমায় নিজের উপর ফেলে দেন।আমি উঠতে নিলে উনি আমায় জড়িয়ে ধরে বলে,,,”থাকো না একটু জানপাখি”

উনার ঘুম ঘুম কন্ঠে বলা কথাটা দরুন লেগেছে আমার কাছে।আমি তাও উনাকে জোর করে উঠিয়ে দিলাম।উনি যে বিরক্ত হয়েছেন আমি তা বুঝতে পেরেছি কিন্তু কিছু করার নেই।ওনাকে ঠেলেঠুলে ওয়াশরুমে পাঠালাম।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুলগুলো আঁচড়াতে লাগলাম।চলগুলো সুন্দরবকরে বেঁধে আমি রান্না ঘরে চলে আসলাম।খাবারগুলো নিয়ে টেবিলে রাখলাম।

“আয়াজ কই আপনি তাড়াতাড়ি আসুন”

ডাক দেওয়ার সাথে সাথেই উনি চলে আসলেন।আমি উনাকে বসতে বললাম।উনি খাবার দেখে বলে,,,”তোমাকে না বারণ করেছিলাম রান্না করতে।রান্না করার অনেক টাইম পাবা এখন পড়াশোনা করার সময় তাই মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করো”

আমি ঠোঁট উল্টে বললাম,,,”আপনি এমন করেন কেনো আমার সাথে!একটু রান্নাই তো করেছি।প্রতিদিনতো আপনিই করেন একদিন করলে কিছু হবে না”

উনি আমাকে নিজের কোলে বসিয়ে খাইয়ে দিলেন।উনি মাঝে মাঝেই এমন পাগলামি করেন। আমার খুব ভালো লাগে আয়াজের এসব পাগলামি,কেয়ার গুলো।উনি যে আমায় প্রচন্ড রকমের ভালোবাসেন,আমি ও বাসি কিন্তু উনার মতো না।এইতো সেদিন হাত কেটে গেছিল।উনার অস্থিরতা দেখে মনে হচ্ছিল আমার না উনার হাত কেটেছে।আমি অনেক ভাগ্যবতী।নাহলে হলে কি আয়াজের মতো জীবন সঙ্গীপাই।

প্রতিদিনের মতো আজকেও কলেজের সামনে আমাকে নামিয়ে দিয়ে বললেন,,,”সাবধানে থেকো জানপাখি!নিতে আসব আমি।”

আমি মুচকি হেসে বললাম,,,”হুম টাটা”

ভিতরে ঢুকে দেখি লামিসা আমার জন্য দাঁড়িয়ে আছে।আমি ওর কাছে যেতেই পিঠে কিল মে’রে বলে,,,”এতো দেরি হলো কেনো কুত্তি?”

আমি ও থা’প্পড় মে’রে বললাম,,,”তোর ভাইয়ার জন্য”

“তুই আমায় মা’রলি কেনো?”

আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললাম,,”আগে তুই মে*রেছিস তাই আমিও মা*রলাম”

ছুটিরপর কলেজ থেকে বের হতেই দেখি আয়াজ দাঁড়িয়ে আছেন।আমি গিয়ে গাড়িতে বসে পড়লাম।গরমে ক্লাস করে কষ্ট হয়ে গেছে।সিটে মাথা এলিয়ে দিলাম।আয়াজও গাড়িতে উঠলেন।আমাকে ওভাবে দেখে বললেন,,,
“তোমার কি বেশি খারাপ লাগছে জান।ডক্টরের কাছে যাবা।”

“উহু না আপনি বাসায় চলুন”

উনি আমায় নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে এক হাতে জড়িয়ে ধরে গাড়ি চালাচ্ছেন।আমি নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে চাইলে উনি শক্ত করে ধরেন।আমি জানি এখন কিছু বললেও কাজ হবে না।প্রচন্ড খারাপ লাগছে তাই চুপটি করে উনার বুকে চুপচাপ মাথা ঠেকিয়ে আছি।

বাসার সামনে আসতেই উনি আমায় নিজের বুক থেকে তুলে বললেন,,,”তুমি কি হেঁটে যেতে পারবে”

খারাপ লাগছে তাও উনাকে হেসে বললাম,,,”হুম পারব”

গাড়িতে থেকে নেমে হাঁটতে লাগলাম।মাথাটা প্রচুর ঘুরছে।পরে যেতে নিলে আয়াজ আমায় আগলে নেয়।কোলে তুলে নিয়ে আবার গাড়িতে বসায়।
আমি অবাক হয়ে বললাম,,,”কোথায় যাচ্ছি আমরা আবার?”

উনি উত্তর না দিয়ে গাড়ি চালাতে লাগলেন।কিছুক্ষন পরে হাসপাতালের সামনে গাড়ি থামালেন।নিজে বের হয়ে আমাকে কোলে করে নিয়ে ডাক্তারের রুমে গেলেন।

আমি বিরক্তি নিয়ে বললাম,,,”মাথা ঘোরানোর জন্য কি কেউ ডাক্তারের কাছে আসে”

উনি কোনো কথা না বলে ডাক্তারকে বললেন,,”দেখুন তো আঙ্কেল কি হয়েছে ওর।কিছুক্ষণ আগে মাথা ঘুরে পরে গেছিল।”

ডাক্তার আঙ্কেলকে হয়তো আয়াজ আগে থেকেই চিনেন। ডাক্তার আঙ্কেল চেকআপ করার পর বলেন,,,”ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া না করার জন্য এমন হয়েছে।বাসায় নিয়ে বেশি বেশি খাওয়াবে।”

ডাক্তার আঙ্কেলের কথায় মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়ল।এমনিতেও জোর করে এতো এতো খাওয়ান।আজকের পর থেকে আমাকে যে খাওয়াতে খাওয়াতে মেরে ফেলবেন তা আমি খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি।

বাসায় এসে উনি আমায় ইচ্ছামতো বকেছেন।এখনও আমাকে ঠেসেঠুসে খাওয়াতে আছেন।আমি না পেরে বললাম,,,”আর না আয়াজ একটুও জায়গা নেই পেটে আমি খেতে পারছি না”

উনি ধমক দিয়ে বললেন,,,”চুপ ফাজিল মেয়ে!না খেয়ে খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছ।”

থেমে আমার গালে হাত দিয়ে বললেন,,,”তোমার কিছু হলে আমি কি নিয়ে বাঁচব জান!বুঝো না কেন”

আমি চুপচাপ খেয়ে নিলাম।কালকে শুক্রবার কি মজা।কালকে আয়াজকে বলব ঘুরতে নিয়ে যেতে।
|
|
সকালে উঠেই উনি আমায় রেডি হতে বলছেন।আমিও চুপচাপ করে রেডি হয়ে নিলাম।রেডি হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আয়াজের কাছে গিয়ে বললাম,,,”কোথায় যাচ্ছি আমরা?”

চলবে,,,,,?

(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন,ধন্যবাদ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here