#অষ্টপ্রহরে_পেয়েছি_তোমায়🥀
#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_১৫
আয়াজ গাড়ি চালিয়েই যাচ্ছেন।বিরক্তি নিয়ে আয়াজকে বললাম,,,”বলবেন তো কোথায় যাচ্ছি!এতো সকালে কেউ বাড়ি থেকে বের হয় নাকি?”
“আমার কাছে আট’টা মানে অনেক বুজেছো।আর গেলেই দেখতে পাবে আমরা কোথায় যাচ্ছি।”
আমি বিরক্তি নিয়ে ফোন ঘাটতে লাগলাম।আধঘন্টা পর একটা ৭ তলা বিল্ডিংয়ের নিচে গাড়ি থামালেন।গাড়ি থেকে বের হয়ে আমাকেও নিয়ে ৬ তলার একটা ফ্ল্যাট এর সামনে এসে কলিংবেল বাজালেন।কলিংবেল বাজাতেই ফারিন এসে দরজা খুলল।আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি।
আয়াজ আমাকে বললেন,,,”এভাবে তাকিয়ে না থেকে ভিতরে চলো”
আয়াজের কথায় ঘোর কাটল।ভিতরে ঢুকে ফারিনকে জড়িয়ে ধরলাম।রাদ ভাইয়াও রুম থেকে বের হয়ে এসেছেন।আয়াজ আর রাদ ভাইয়া গল্প করছেন।আমি আর ফারিন রান্নাঘরে সকালের নাস্তা বানাতে লাগলাম।ফারিন তো আমাকে কাজ করতে দেবে না।আমি জোর করে টুকিটাকি কাজ করে দিচ্ছি।
রান্নাকরা শেষ হতেই আমরা খেতে বসে পড়লাম।খাওয়া দাওয়া শেষ হতেই আমরা চারজন আড্ডা দিতে বসলাম।
আয়াজ বললেন,,,”আজকে তাহলে দুপুরে আমরা রেস্টুরেন্টে খাবো।তারপরে সারা বিকেল নিজেদের বউয়ের সাথে কাটাবো”
আয়াজের শেষের কথায় আমার অনেক লজ্জা লাাগলো। আমি কোনো মতে ফারিনকে বললাম,,,”তোদের ছাদটা আমাকে ঘুরিয়ে দেখাবি?”
ফারিন বললো,,,”হ্যাঁ চল”
আমি আর ফারিন ছাদে চলে আসলাম।আকাশে মেঘের আনাগোনা।পরিবেশটা এতো সুন্দর।দক্ষিণা হাওয়া বইছে।ফারিন আমায় চেপে ধরে বলে,,,”ইশা তোর বরের সাথে তোর সবকিছু হইছে”
আমি না বুঝে বললাম,,”কি বলছি কিছুই বুঝতেছিনা”
ফারিন বললো,,”আর ঢং করতে হবে না রাতে তোদের কিছু হয় না”
আমি এবার ওর কথার মানে বুঝতে পারলাম।লজ্জা লাগছে তাও বললাম,,”উহু উনি শুধু আমায় জড়িয়ে ধরেই ঘুমান আর চু’মু দিয়েছিলেন”
ফারিন বললো,,,,”কোথায় চু’মু দিয়েছে তোর!ঠোঁটে”
আমি মাথা নাড়ালাম।ও মুখ ভেংচি দিয়ে বললো,,,”অতো লজ্জা পেতে হবে না।আমার আর ওর সব হয়ে গেছে”
আমি বললাম,,,”এগুলো বলার দরকার নেই চুপ থাক।তুই তো এমন ছিলি না ঠোঁট কাটা স্বভাবের কবে হলি”
ফারিনকে আর কিছু বলতে দিলাম না নিচে চলে আসলাম।এসে দেখি ওনারা এখনও গল্প করছেন।আমি আয়াজের পাশে গিয়ে বসলাম।এখন ১২ টা বাজে।
আমি হুট করে বললাম,,,
“লুডু আছে!আমার লুডু খেলতে ইচ্ছা করছে”
আয়াজ আর রাদ ভাইয়াও আমার কথায় সমথর্ন করলেন।ফারিন লুডুর কোট নিয়ে আসল।জোড়ে খেলা হবে।আমি আর আয়াজ, ফারিন আর রাদ ভাইয়া।কেলায় এখন টান টান মূহুর্ত।আমি আর আয়াজ অনেক কষ্টে জিতেছি।উত্তেজনার ঠলায় সবার সামনেই আয়াজকে জড়িয়ে ধরেছি।রাদ ভাইয়া কাশি দিতেই আমি ছেড়ে দিলাম আয়াজকে।কাচুমাচু হয়ে মাথা নিচু করে বসে রইলাম।
রাদ ভাইয়া বলল,,,”তোরা থাক আমি আমার বউকে নিয়ে গেলাম।আর তোরা পাশের রুমে গিয়ে রেস্ট কর”
লজ্জায় আমি কথা বলতে পারছি না।দ্রুত পাশের রুমটায় চলে আসলাম।আয়াজ যে পেছনে পেছনে আসছেন সেটা বুঝতে পেরেছি।আয়াজ এসেই পিছন থেকে আমায় জড়িয়ে ধরলেন।
আমি সামনে ফিরে উনাকে জড়িয়ে ধরলাম শক্ত করে।আয়াজ আমায় জড়িয়ে ঊরে বললেন,,,”বউ শুনো না”
“হুম বলুন”
“আমার আদর খেতে ইচ্ছা করছে,দাও না আদর জান”
বলেই উনি আমায় পাগলের মতো চুমু খেতে লাগলেন।আমি উনার শার্টের কলার চেপে ধরলাম।কিছুক্ষণ পরে ছেড়ে দিলেন আমায়।আমি লজ্জায় উনার বুকে মুখ লুকাই।
|
|
আমরা বের হয়েছি অনেক সময়।এখন আমরা একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছি।খাবার ওর্ডার দিয়েছেন ওনারা।খেয়েদেয়ে আমরা যার যার মতো বেরিয়ে পড়লাম।আমি আর আয়াজ এখন রিকশা করে ঘুরবো।
আয়াজ একটা রিকশা ডাকলেন।আমি আর উনি উঠে বসলাম।আমি আয়াজের কাঁধে মাথা রেখে ব্যাস্ত নগরী দেখছি।আর উনি আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।
সারা বিকেল আমরা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেরিয়েছি।উনি আমায় অনেকগুলো গোলাপ কিনে দিয়েছেন।একটা বেলি ফুলের মালাও কিনে দিয়েছেন।
সন্ধ্যা হতে চলল।আমরা এখন একটা নদীর পাশের রাস্তায় হাঁটছি।হুট করে বৃষ্টি নেমে পড়ল।আশে পাশের সবাই দৌড়ে চলে যাচ্ছে বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য।
আয়াজ আমায় বললেন,,,”চলো জানপাখি বৃষ্টি আরো জোরে পরবে”
আমি করুন চোখে তাকিয়ে বললাম,,,”ভিজি না একটু”
“এখন ভিজলে জ্বর আসবে তো”
“কিছু হবে না ভিজুন না”
আমি আর আয়াজ বৃষ্টিতে ভিজে ফুটপাত দিয়ে হেটে হেটে অনেক দূর পর্যন্ত গিয়েছি।এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।প্রিয় মানুষের সাথে বৃষ্টির ভিতরে হাতে হাত রেখে হাঁটার অনুভূতিটা আসলেই অনেক সুন্দর।
রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে আছি আমরা।উনি আমায় নিজের শার্টটা খুলে পরিয়ে দিয়ে বললেন,,,”এমন পাতলা জামা কেউ পরে ভাগ্যিস আমি দেখেছিলাম।আর টি-শার্ট এর উপর শার্টটা পরেছিলাম।”
রিকশা পেতে অনেক দেরি হলো।ঠান্ডা লাগছে আমার।বৃষ্টির জন্য আশেপাশের কিছুই দেখা যাচ্ছে না।রিকশাওয়ালা মামা হুড দিয়ে পলিথিন দিয়ে দিলেন।আমি উনার শরীরের সাথে মিশে রইলাম।উনিও আমায় একহাতে জড়িয়ে ধরলেন।
বাসায় এসে আমাকে তাড়াতাড়ি চেঞ্জ ফেলতে বললেন।আর নিজেও চেঞ্জ করতে চলে গেলেন।আমি একটা টপ’স পরে বেরিয়ে এলাম।কারেন্টও চলে গেছে।আমি ফোনের ফ্ল্যাশ জ্বালিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল মুচছিলাম।
আয়াজও তখন রুমে ঢুকলেন।উনি আমার কাছ থেকে তোয়ালেটা নিয়ে আমার চুল মুছে দিচ্ছেন।আমি আয়নার ভিতর দিয়ে উনাকে দেখতে লাগলাম।
“হাঁচিচচচচ”
“হাঁচিচচচ”
দু’জন দুই জনের দিকে তাকিয়ে হেসে দিলাম।আয়াজ নুডলস রান্না করে আনলেন।দু’জন মিলে খেয়ে নিলাম।নাপা ঔষধ খাইয়ে দিলেন আমায় নিজেও খেলেন।কিন্তু রাতে আমার প্রচন্ড জ্বর আসলো।অনেক সময় ধরে বৃষ্টিতে ভিজেছি আরও রাতে।আয়াজ সারারাত আমার পাশে বসে আমার সেবা করেছেন।আমাকে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরেছেন।
সকালে উঠে আয়াজের বুকে নিজেকে আবিষ্কার করলাম।একটু নড়াচড়া করতেই উনি উঠে গেলেন।আমি উঠে বসলাম।ওয়াশরুমের যেতে চাইলাম কিন্তু দুর্বলের জন্য হাটতে কষ্ট হচ্ছে।
উনি আমায় ধরে ওয়াশরুম দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে বললেন,,,,
“পারবে তুমি”
মাথা নাড়িয়ে ভিতরে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে বের হলাম।আয়াজ আমায় নিয়ে বিছানায় বসিয়ে দিলেন।রুম থেকে বের হয়ে গেলেন।আমি ফোন নিয়ে গেম খেলতে লাগলাম।কিছুক্ষণ বাদে একটা বাটি নিয়ে রুমে ঢুকলেন।আমার সামনে বসে এক চামচ আমার মুখে পুরে দিলেন।বহু কষ্টে গিললাম।
নাক-মুখ কুচকে বললাম,,,”আমি সুপ খাই না”
উনি ধমক দিয়ে বললেন,,,”যেমন জ্বর বাঁধিয়েছ তেমনি এখন খেতে হবে”
নাক মুখ কুচকে খেতে হলো।এরপর আমায় বসিয়ে দিয়ে চুলে তেল দিতে গেলেন।আমি কিছুটা দূরে সরে গিয়ে বলি,,,”আমি তেল লাগাই না”
উনি আমায় টেনে নিজের কাছে নিয়ে তেল দিতে লাগলেন।আমি আজকে উনার কাজ কর্মে অনেক বিরক্ত।
দুপুরে আমার আবার জ্বর আসে।জ্বরের ঘোরে আমি পাগলামি করতে থাকি আয়াজের সাথে।আমি উনার গলা জড়িয়ে ধরে পাগলামি করে বলি,,,
“আপনি আমায় মোটেও আদর করেন না!রাদ ভাই ফারিনকে কতো আদর করে।সেদিন আমাকে ফারিন বলছিল!একটু বেশি আদর করেন না”
আয়াজ আমায় ঠিক মতো শুইয়ে দিয়ে বলে,,,,”তোমার এখনো বেশি আদর খাওয়ার বয়স হয়নি বুঝেছো”
“না না আমি এখনি বেশি আদর খাবো”
উনি আমার জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে আমাকে বিছানার সাথে চেপে ধরে ঠোঁট জোড়া দখল করে নেন।আমিও শান্ত হয়ে যাই।
কিছুক্ষণ পর আমায় ছেড়ে দিয়ে বলেন,,,”আরো লাগবে তোমার আদর”
উনি আমায় ছেড়ে উঠতে গেলেই আমি উনার গলা জড়িয়ে ধরে বলি,,,”আরো পাঁচবার লাগবে”
আয়াজ আমায় জড়িয়ে ধরে বলেন,,,”ঘুমিয়ে পড়ো জান তুমি সুস্থ হও তারপরে তোমাকে অনেক আদর দিবো”
আমি ভদ্র মেয়ের মতো আয়াজের বুকের সাথে লেপ্টে থাকলাম।
সকালে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলাম।জ্বর কমে গেছে।মাথাটা এখনো ভার ভার লাগছে।কালকের কথাগুলো মনে করে নিজেই হাসতেছি।বেচারা গোমড়ামুখো আমার,কালকে প্রচুর জ্বালিয়েছি।এখন ঘুমাচ্ছেন জনাব।
আমি উনার মুখের কাছে মুখ নিয়ে বলি,,,
“ভালোবাসি আপনায় গোমড়ামুখো!”
উনি মুচকি হেসে বললেন,,,”তাই নাকি জানপাখি”
আমি দ্রুত উনার কাছ থেকে সরে আসলাম।রুম থেকে বের হয়ে সেই পেইন্টিং এর রুমটায় ঢুকলাম।
চলবে,,,,,,?
(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন,ধন্যবাদ)