বেলী_ফুলের_সুবাস #পর্ব :২১ #মেঘকন্যা (ছদ্মনাম)

0
430

#বেলী_ফুলের_সুবাস
#পর্ব :২১
#মেঘকন্যা (ছদ্মনাম)
রাত বাজে একটা।যে যার রুমে চলে গিয়েছে।সুবাস বেশ অনেক ক্ষণ আগে রূমে ঢুকে এসেছে।রূমে বসে বেলীর জন অপেক্ষা করছে।
বেশ কিছু ক্ষন পর বেলী রূমে প্রবেশ করলো।
বেলী দেখলো সুবাসের হাতে হলুদের বাটি।বেলীর আর বুঝতে বাকি রইলো না যে, লোকটা তার থেকে বদলা নিবে তখনকার ঘটনার জন্য।আসলে তখন বেলী দুষ্টুমি করে হলুদ দিয়ে সুবাসের পুরো মুখ লেপ্টে দিয়েছিলো।কি যে এক অবস্থা হয়েছিল।তবে এখন বেলী হারে হারে টের পাচ্ছে যে, তার এই কাজ করা ভুলেও ঠিক হয় নি।বেলীকে চুপ থাকতে দেখে সুবাস বেলীর দিকে এগিয়ে গেলো।
-“কি বউ এখন কোথায় পালাবে?”
– “আমি কেনো পালাবো? আমি কি কোনো চোর নাকি যে চুরি করেছি এর জন্য ধরা পড়ার ভয়ে পালাবো।”
– “ওহ তাই!বলতে হবে আমার বউয়ের সাহস আছে ।”
বলেই সুবাস বেলীর দিকে এগিয়ে গেলো।বেলীর সুবাসের পাশ কাটিয়ে যেতে নিলেই সুবাস বেলীর হাত ধরে ফেলে। বেলীকে হেঁচকা টানে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো।এক হাত বেলীর কোমরের স্লাইড করতে লাগলো অন্য হাত বেলীর গালে স্লাইড করতে লাগলো।বেলী নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করতে লাগলো।
-“কি বউ? তুমি কি ভয়ে পালাচ্ছো?”
-“আ আ আমি পালাবো কেন ?”
-“তাহলে পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে যেনো ?”
– “প্লীজ ছাড়ুন। ঘুমাবো।”
– “উ হু আজ কোনো ঘুমানোর বাহানা চলবে না।”

এবার সুবাস হলুদের বাটি থেকে কিছুটা হলুদ নিয়ে বেলীর পেটে এবং কোমরে লাগিয়ে দিল।বেলী কাপতে লাগলো।বেলী ঘন ঘন শ্বাস নিতে লাগলো।বেলীকে ভরকে দিতে সুবাস অন্যহাতে বেলীর গলায় কিছুটা হলুদ লাগিয়ে দিলো।শেষে নিজের গালে হলুদ লাগিয়ে তা ছুঁয়ে দিলো বেলীর গালে।বেলী দু হাতে সুবাসের পাঞ্জাবির কলার খামচে ধরলো। সুবাসের দাড়ি গুলো বেলীর গালে লাগছে।বেলী আর নিতে পারছে না।হাত পা অবশ হয়ে যাচ্ছে।দু চোখ পিট পিট করতে লাগলো বেলীর অবস্থা দেখে সুবাস হেসে ফেললো।বেলীর ঠোটের ভাঁজে নিজের ঠোঁট গুঁজে দিলো।বেলী আবেশে সুবাসের চুল খামচে ধরলো।মিনিট পাঁচেক পর সুবাস বেলীর কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে বললো।

-“এটা তোমার শাস্তি বউ।আজ হলুদের পর্ব শেষ করলাম। কাল বাসর রাতের কাজ শেষ করবো।আমার ভালোবাসায় তোমাকে ছটফট করাবো। ভালোবাসার সাগরে ডুবাবো।এটাই তোমার শাস্তি।আমাকে হলুদ লাগানোর শাস্তি।”

কথা গুলো বলেই সুবাস বেলীকে ছেড়ে দিয়ে ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াশরুমের দিকে হাটা ধরলো।বেলী সুবাসের কথার অর্থ বুজতে কয়েক সেকান্ড অতিবাহিত করলো।

-“বি রেডি বউ!লিটল বেলীকে আনতে হবে তো।
লিটল বেলীকে আনার জন্য কি কি করতে হবে তা তো তোমার জানারই কথা।তাই না?”

পিছন ফিরে বেলীর দিকে তাকিয়ে কথা গুলো বলে চোখ টিপুনি কাটলো সুবাস।বেলীর সুবাসের কথার অর্থ বুঝতে পেরে লজ্জায় লাল হয়ে গেলো।সুবাস ফ্রেশ হয়ে এলে বেলী সুবাসের দিকে এক পলক তাকিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।বেলী এবার ফ্রেশ হয়ে এসে দেখলো সুবাস ঘুমায় নি।কোথায় ভাবলো লোকটা হয়তো ঘুমিয়ে গেছে কিন্তু হলো উল্টো। এই লোক তাকে লজ্জা দেয়ার জন্য এখনো ঘুমায় নি।
বেলী ভাবনার মাঝে শুনতে পেলো।

-” কি হলো? কি ভাবছো? তুমি কি চাচ্ছো লিটল বেলীকে আনার প্রোসেসিং এখনই শুরু করে করতে?

-“কি সব বলছেন আপনি?”

-“আমি কি বললাম।তুমি ঘুমোতে আসছো না।তাই আমি ভাবলাম তুমি হয়তো লিটল বেলীকে আনার প্রোসেসিং শুরু করতে চাইছো।”

-“আপনার মুখে কি কিছু আটকায় না? কি সব উল্টো পাল্টা কথা বলেছেন আপনি।”

-“আরে বউ সরম পেও না।তোমার স্বামী লাগি। আমাকে সব কথা ফ্রি ভাবে বলতে পারো।”

– “আপনি কি চুপ করবেন কি না? আপনি চুপ না করলে আমি ডিভানে ঘুমাতে চলে যাবো।”

-“আরে বউ রেগে যাচ্ছো কেনো?তুমি আমার একটা মাত্র বউ।তোমার কথা না শুনে কি থাকতে পারি বলো?প্লীজ! আমাকে ছেড়ে অন্য জায়গায় ঘুমিও না।এভাবেই বউ থাকতে এখনো কুমার আছি।এখন বউ থাকতে সিঙ্গেল মানুষের মতো একা বেডে শুয়ে চাই না।”

-“আপনার আজে বাজে কথা বন্ধ করুন নয়তো আমি সত্যি সত্যি ডিভানে শুয়ে পড়বো।”

-“বউ না আমার ভালো। এসো আমার বুকে এসো।আমার বুকে আসলে তোমার সব রাগ উধাও হয়ে যাবে।স্বামীর বুকে ঘুমালে বউয়ের আরামে ঘুম হয় আর রাগও শেষ হয়ে যায়।
এসো বউ এসো রাগ করে না আমার জান পাখি টা।”
বলেই সুবাস নিজের দু হাত দু দিক করে বেলীকে কাছে আসতে ইশারা করলো।

-আপনের কথা স্টাইল দিন দিন এমন হচ্ছে কেনো?আমি ঘমাবো না আপনের সাথে।

– “ওহ বুঝেছি বউ।তুমি চাচ্ছো তোমাকে চু’মু দিয়ে তোমার রাগ ভাঙাই তাই না বউ? এসো কাছে এসো দুটো চু’মু দিয়ে তোমার রাগ ভেঙে দেই।আরেকটা কথা কি জানো?

-“কি ?”
বেলী মুখ কুচকে ছোট করে বললো।

– “চু’মুতে ভিটামিন অন্তর্ভুক্ত ।চু’মু খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।চু’মু খেলে স্বামী স্ত্রীর রোগ কম হয়।বিয়ের পর যে কোনো রোগের প্রাথমিক চিকিৎসা হলো চু’মু। যতবেশী চু’মু খাবে তত বেশি সুস্থ থাকবে।চু’মু খেলে মহব্বত বারে।”

বেলী সুবাসের কথা শুনে নিশ্বাস ছাড়লো
-“আরো একটা মজার দিক কি জনো ?”

-“আমি জানতে চাই না।”
বেলী বিরক্তির সুরে বললো।

– “আরে শুনো না।মজার ব্যাপার হচ্ছে তুমি একবার চু’মুর টেস্ট পেয়ে গেলে দিনে একশোবার চুমু খেতে মন চাবে।”

– “দিন দিন যে কি হচ্ছে আপনার।”
বলেই বেলী ভিভানের দিকে পা বাড়ালো। দু কদম বাড়ানোর পর ঠিক পিছন থেকে সুবাস বেলীকে কোলে তুলে নিলো
-“আমার ভীষণ ঘুম আসছে।আমার ঘুমে ডিস্টার্ব করলে কিন্তু একটা আছাড় মারবো মাটিতে।”
বেলীকে বেডে শুইয়ে নিজে বেলীকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পরলো সুবাস।

রাত বাজে একটা ত্রিশ।সামিয়া ফ্রেশ হয়ে নিলো।ফ্রেশ হয়ে বারন্দায় দাড়িয়ে আকাশের পানে তাকিয়ে রইলো।আজ আকাশের অবস্থাও ভালো নয়।যে কোনো সময় হয়তো আকাশ ফেটে বৃষ্টির কনা গুলো ধরনীতে আছড়ে পড়বে।ঠিক সামিয়ার মনের মতো।যে কোনো সময় দু চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়বে।আচ্ছা পৃথিবীতে সব চেয়ে শুদ্ধ,পবিত্র, স্নিগ্ধ জিনিস হলো ভালোবাসা।তবে কেনো ভালোবাসতে এত কাতরতা? কেনো এতো বেশি না পাওয়ার যন্ত্রণা?কেনো প্রিয় মানুষকে কাছে পাওয়ার জন্য এতো কষ্ট পেতে হয়?কেনো চাইলেও ভালবাসার মানুষকে কাছে পাওয়া যায় না?কেনো বুকে জড়িয়ে নেয়া যায় না?কথা গুলো ভাবতে ভাবতে দু চোখ দিয়ে নোনা জল গড়িয়ে পড়লো।ঠিক সেই সময় তার সাথে তাল মিলিয়ে আকাশ টাও কেঁদে দিলো।আজ এই আকাশকে খুব আপন মনে হচ্ছে সামিয়ার।মনে হচ্ছে সামিয়ার কষ্ট কে ভাগাভাগি করে নিয়ে আকাশটাও তার মতো করে কেঁদে দিলো।ঠিক সেই সময় রিদিতা সামিয়ার কাধে হাত রাখলো।সামিয়া রীদিতার দিকে এক পলক তাকিয়ে রিদিতাকে জরিয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠলো।
-“আরে মেয়ে কাদছিস কেনো?তুই কি আমাদের থেকে দূরে যাচ্ছিস নাকি?তুই তো ফুপির কাছে থাকবি।”
– “আমার কষ্ট হচ্ছে আপু।”
– “আমি জানি কষ্ট হবেই।যে বাড়িতে বড় হই,খেলা করি, ছোট থেকে বড় হওয়ার সৃতি থাকে,যে বাড়ির থেকে জীবনের পথ চলা শুরু হয় সেই বাড়ি ছেড়ে যাওয়া কি এতোটা সহজ? কাছের মানুষ গুলোকে কি এত সহজে ছেড়ে যাওয়া যায়? যায় না।তবে এটাই নিয়তি।পৃথিবীর সৃষ্টির শুরু থেকে এই ধারা শুরু হয়ে আগামী পর্যন্ত চলমান থাকবে। আর তুই তো ফুপির কাছেই থাকবি।কান্না অফ কর।”

রিদিতার কথা গুলো সঠিক।তবে সামিয়ার কষ্ট আর এই কষ্ট এক না। রিদিতা হয়তো কখনো বুঝতে পারবে না যে,এ কোন কষ্টের কথা সামিয়া বলছে।কিছু কিছু কষ্ট মানুষকে আজীবন নিজের মনে পুষে রাখতে হয়।এই কষ্টও সামিয়াকে আজীবন নিজের মনে পুষে রাখতে হবে।
(আসসালামুআলাইকুম।কেমন আছেন সবাই?আজকে কিন্তু বড় পর্ব দিয়েছি।সবাই প্লিজ একটু কমেন্ট করবেন।ছোট করে হলেও নিজের মন্তব্য প্রকাশ করবেন। মনে রাখবেন আপনাদের একটা ছোট কমেন্ট আমার লিখার আগ্রহ আরো বাড়িয়ে দেয়)
চলবে….?
হ্যাপি রিডিং

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here