বেলী_ফুলের_সুবাস #পর্ব :২০ #মেঘকন্যা (ছদ্মনাম)

0
167

#বেলী_ফুলের_সুবাস
#পর্ব :২০
#মেঘকন্যা (ছদ্মনাম)

সুবাস বেলীকে বেডে বসিয়ে দিলো। টিস্যু দিয়ে বেলীর মেহেদী পরিষ্কার করে দিলো।আলমারি থেকে শাড়ি বের করে বেলীর হাতে ধরিয়ে দিলো।বেলীকে ওয়াশরুম পর্যন্ত এগিয়ে দিলো।বেলী ফ্রেশ হয়ে এলো।সুবাস নিজ হাতে বেলীকে খাইয়ে দিলো।বেলীকে শুয়ে দিয়ে ওয়ার্নিং দিয়ে গেলো যেনো এক পা ও রুমের থেকে বের না হয়।নাহলে তার থেকে খারাপ কেউ হবে না।

মেহেদির অনুষ্ঠান শেষ।রাতে বেলা সামিয়া,
সাজিয়া,রিদিতা,নিশি একসাথে সামিয়ার রূমে বসে আছে।রিদুতা এক পাশে বসে আছে তার কোলে চাঁদ ঘুমাচ্ছে।পাশে নিশি বসে ফোনে এফ বি স্ক্রল করছে আর কথা বলছে।নিশির উল্টো পাশে বসে আছে সাজিয়া।সামিয়া ডিভানে বসে যুএলারি গুলো খুলে নিচ্ছে।
-আপু আমরিন আপু কি আসলেই বেলী আপু কে ধাক্কা দিয়েছিল?(নিশি)
-আমি কয়েকবার দেখেছি ধাক্কা দিতে।একবার আমি বেলীকে সামলে নিয়েছি।পরের ঘটনা আমি দেখি নাই।রিদিতা)
-কিন্তু এমন করলো কেনো?(নিশি)
আরে সুবাস ভাইয়াকে না পেয়ে এমন করেছে(সাজিয়া)
-মানে?(নিশি)
-মানে হলো খালামনি সুবসকে দিকে আমরিনের বিয়ের কথা বলেছিল।সুবাস না বলে দিয়েছে।(রিদিতা)
-মামী কিছু বলে নি (নিশি)
– নাহ আম্মু কি বলবে।আম্মুর ও তাদের চাল চলন ভালো লাগে না।(রিদিতা)
-সব ঠিক আছে কিন্তু কি হলো?বেলীর মুড পুরা নষ্ট হলো।মেয়েটা কত খুশি ছিল।(সাজিয়া)
-হুম ব্যথাও পেল।তবে সুবাস ভাইয়া খুব ভালো কাজ করেছে।(সামিয়া)
-হুম ঘুমিয়ে পড় অনেক কাজ আছে কাল (রিদিতা)

আরো একটি নতুন দিনের আগমন ঘটলো।বেলীর ঘুমের মাঝে আগমন ঘটলো সূর্য মামার।চোখ মুখ কুচকে উঠে বসলো বেলী।এতক্ষণ ঘুমিয়েছে এবার উঠতে হবে।শরীর ভালো ছিলো না বলে একটু লেট করে উঠলো।বেলী ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখলো সুবাস ডিভানে বসে আছে। ঘেমেনেয়ে একাকার অবস্থা।সবুজ রঙের পাঞ্জাবিটা শরীর জুড়ে লেপ্টে আছে।কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম।পুরো ফেস জুড়ে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট।বেলী ধীর গতিতে সুবাসের পাশ কাটিয়ে নিচে চলে গেলো।এই মুহূর্তে লোকটাকে একটু লেবুর শরবত করে দিলে ভালো হবে।একটু আরাম লাগবে। যেই ভাবা সেই কাজ।বেলী কিচেনে গিয়ে লেবুর শরবত করে নিলো।কিচেনে প্রবেশ করলেন মনিরা বেগম।বেলীর দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বললেন
-আমাকে বলতি আমি তোকে লেবুর শরবত করে দিতাম।তুই কেনো নিচে এলি কষ্ট করে?
-আসলে চাচী শরবত টা…
-আরে মামী এই শরবত তো বেলী ভাবির জন্য না।শরবত হলো আমাদের শ্রদ্ধেয় ভাইয়ার জন্য।
বলেই হাসতে লাগলো নিশি।নিশির কথা শুনে রিদিতা ও মনিরা বেগম হেসে উঠেন।বেলীর দু গাল লজ্জায় লাল হয়ে যায়।
-এই তোরা আমার ছেলের বউকে লজ্জা দিচ্ছিস কেনো?
মনিরা বেগমের কথা আবার হাসির আওয়াজ শোনা যায়।বেলী দ্রুত পায়ে কিচেন থেকে রমের দিকে হাটা ধরে।এখানে থাকলে সবাই মিলে তাকে লজ্জা দিবে।

বেলী রূমে এসে দেখলো সুবাস ফ্রেশ হয়ে এসেছে।যে গরম ফ্রেশ না হলে কি থাকা যায়?বেলী দেরি না করে সুবাসের সামনে শরবতের গ্লাস ধরলো
-এই নিন শরবত টা খেয়ে নিন।ভালো লাগবে
সুবাস মুচকি হাসলো। এই শরবতের ভীষণ প্রয়োজন ছিল।সুবাস অর্ধেক শরবত খেয়ে বাকি অর্ধেক বেলীর সামনে ধরলো
-খেয়ে নাও মহব্বত বাড়বে।
বেলী মুচকি হেসে বাকি শরবত টুকু খেয়ে নিলো।

-বাহ বউ দেখি আমার ভীষণ খেয়াল রাখছে।ব্যাপার কি?
-কোনো ব্যাপার না মনে হলো এতো কাজ করছেন তাই একটু শরবত খেলে ভালো লাগবে।তাই আর কি….
– ওহ! যাক বউয়ের আদর যত্ন পাওয়ার সৌভাগ্য তাহলে আমার হলো।তবে তুমি চাইলে বলতে পরো অন্য কোনো ব্যাপার থাকলে।
– বললাম তো কোনো ব্যাপার নেই।আপনি শুধু শুধু বেশি বুঝছেন।
– তাহলে তো ভালোই।আসো, কাছে আসো।তুমি এতো কষ্ট করে আমার জন্য শরবত নিয়ে এলে।তোমাকে তো এর জন্য কিছু একটা দিতে হবে তাই না?
বলেই বাকা হাসলো সুবাস
– না, না আমার কিছু প্রয়োজন নেই।আমার কিছু লাগবে না।
বলেই রূমে থেকে বেরিয়ে গেলো বেলী।সুবাস হাসলো।

হলুদের সন্ধ্যা।সব কিছু সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।অতিথিরাও সব আসতে লাগলো।বেশ অনেক ক্ষন পরে বউ সহ সকলের আগমন ঘটলো।সামিয়াকে আজ ভীষণ সুন্দর লাগছে।হলুদ রঙের লেহেঙ্গা।সাথে ম্যাচিং করে স্টনের অলঙ্কার পড়ানো হয়েছে।সাথে চুল গুলো সুন্দর করে বেঁধে দু বাঁশ দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।সুন্দর করে মাথায় ওড়না দেয়া হয়েছে।এক কথা অসম্ভব সুন্দর লাগছে।সামিয়াকে স্টেজে বসানো হয়েছে।হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হলো একে একে সকলেই সামিয়া কে হলুদ দিয়ে দিলো।এক পাশে বসানো হয়েছে সামিয়াকে এর অন্য পাশে বসানো হয়েছে নিহালকে এক সাথেই অনুষ্ঠান করা হচ্ছে।ছেলেদের ড্রেস কোড হলো হলুদ পাঞ্জাবী।একে একে নিহালকে হলুদ লাগানো হলো। সব কিছুর মাঝে এক জোড়া চোখ বেলীকে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো।লাল পাড়ের বাসন্তী রঙের শাড়ি পরেছে বেলী।সাথে ম্যাচিং করা স্টনের অলংকার । ভারি সাজে আজ একটু অন্যরকম লাগছে।চুল গুলো সুন্দর করে সেট করেছে।নাকের নাক ফুল জল জল করছে।লিপস্টিক দেয়া ঠোটের হাসি যেনো আরো স্নিগ্ধ লাগছে।এর মাঝে সুবাস ডাক পড়ায় প্রেয়সীর দিকে তাকিয়ে হেসে চলে গেলো।

হলুদের পর্ব শেষ হতেই নাচ শুরু হলো।সায়েম এবং রিদিতা কাপল ড্যান্স করলো।সাজিয়া আর নিশি নাচ শেষে হলেই সুবাস এবং বেলীকে নাচের জন্য ডাক দেয় হলো।সুবাস তো নাচবেই না কত বার বলার পর রাজি হয়েছে। বেলী একবার বলার পড়ে রাজি হয়ে গেলো।সুন্দর একটা কাপল ড্যান্স করলো তারা।

ইয়াসিরের ড্রেস ড্রিংকস পরে যায় ভুল বসত তাই ড্রেস ক্লিন করার জন্য গেস্ট রুমের ওয়াশরুমে এসেছিল।সামিয়া তা দেখে ওয়াশরুম যাবে বলে উপরে চলে এলো।ইয়াসির ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখলো সামিয়া দাড়িয়ে আছে।

-ইয়াসির ভাই আপনার মনে কি আমার জন্য একটুও মায়া জন্মে নি?আমাকে কি একটুও ভালো লাগে না?আমি কি দেখতে এতোটাই খারাপ?আমার জন্য কি একটুও অনুভূতি কাজ করে না?
……
-চলুন না আমরা পালিয়ে যাই।আমি আপনাকে ছাড়া অন্যকেউকে কল্পনা করতে পারি না।
-এই মেয়ে আপনার মাথা ঠিক আছে? কি সব আজ বাজে কথা বলছেন?
-নাহ আমার মাথা ঠিক নেই।আমি ঠিক নেই ইয়াসির ভাই।আমি ঠিক নেই।আমার ভিতর ঝড় চলছে।সেই ঝড় আমাকে শেষ করে দিচ্ছে।আমি তলিয়ে যাচ্ছি ঝড়ের মধ্যে।আমার কষ্ট হচ্ছে।আমি নিতে পারছি না।আমার খুব বেশি কষ্ট হচ্ছে।আমার দম বন্ধ লাগছে।আমাকে নিজের করে নিন না?
-কাল আপনার বিয়ে আজ আপনি কি সব কথা বলছেন।আপনি আসলেই পাগল হয়ে গেছেন।
-হুম আমি পাগল হয়ে গেছি।আপনের ভালোবাসায় আমি পাগল হয়ে গেছি।আপনার ভালোবাসায় মাতোয়ারা হয়ে গেছি।আপনার ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে গেছি।
– দেখুন আপনি আপনার লিমিট ক্রস করছেন।আপনাকে আর আমাকে এক সাথে দেখলে মানুষ অন্যান্য কিছু ভাববে।
– ইয়াসির ভাই…..
এবার ঠান্ডা গলায় বললো সামিয়া
…….
-“আপনি আমার কাছে ফুলের মতো স্নিগ্ধ,পবিত্র, হলেও কেনো আমি আপনার কাছে কাটার মতো বিষাক্ত।”

-শুনুন সামিয়া আপনার কালকে বিয়ে।আপনি আর কোনো পাগলামো করবেন না।বিয়ে টা সুন্দর মতো করে নিবেন।আপনি ভালো থাকবেন।
– একটা লাস্ট চাওয়া পূরণ করবেন ইয়াসির ভাই….
– কি চাই?
– আমি আপনাকে জড়িয়ে ধরতে চাই ইয়াসির ভাই।কথা দিচ্ছি আর জীবনেও আপনার সামনে আসবো না।কথা বলবো না
বলেই সামিয়া ইয়াসিরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।যেনো ছেড়ে দিলেই উড়ে পালাবে। প্রথম কোনো মেয়ের এত কাছ থেকে স্পর্শ পেয়ে কেমন যেন শির শির অনুভব হলো ইয়াসিরের।স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে সামিয়া কাদছে।ইয়াসির সামিয়ার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে সোজা হাটা ধরলো।একবার পিছে তাকালো না পর্যন্ত।
(আসসালামুওয়ালাইকুম। আশা করি সবাই ভালো আছেন।ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা সুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন।ভালো লাগলে অবশ্যই কমেন্ট এবং শেয়ার করবেন।সবাই প্লীজ ছোট্ট হলেও মন্তব্য করে যাবেন। ধন্যবাদ)
চলবে…..?
হ্যাপি রিডিং

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here