বেলী_ফুলের_সুবাস #পর্ব :১৯ #মেঘকন্যা (ছদ্মনাম)

0
184

#বেলী_ফুলের_সুবাস
#পর্ব :১৯
#মেঘকন্যা (ছদ্মনাম)

পুরো বাড়ি সাজানো হয়েছে ফুল দিয়ে আর লাইটিং দিয়ে।চারপাশে শুধু হাসির আওয়াজ।সকলে মুখে খুশির ছাপ।তুমুল বেগে বাড়ির বড়রা কাজ করছে।রান্না চলছে এক পাশে। বাড়ি ভর্তি লোকের আনাগোনা।বাচ্চারা দৌড়াদৌড়ি করছে।আজ সামিয়ার মেহেদি অনুষ্ঠান।মেয়েরা পড়েছে মেহেদী পাতা রঙের শাড়ি আর ছেলেরা পড়েছে পাঞ্জাবি।সামিয়াকে পড়ানো হয়েছে সবুজ রঙের স্টনের কাজ করা লেহেঙ্গা।সাজানো হয়েছে সুন্দর করে।মেহেদী পড়ানোর জন্য মেহেদী আর্টিস্ট আনা হয়েছে।এক পাশে বউ কে মেহেদী পড়ানো হচ্ছে।আরেকপাশে রিদিতা,সাজিয়া আর নিশি মেহেদী পড়ছে।বেলী ও পড়বে তবে সে এখনো রেডি হয় নি।

বসার ঘরে উপস্থিত হল সুবাস।দু চোখে বেলীকে খুঁজলো।কাজের চাপে আজ একবারও বেলীর দেখা মিলে নি।
-বেলীকে যে দুই চোখ খানা খুঁজছে সেই চোখকে বলতে চাই বেলী এখনো রেডি হয় নি।

রিদিতা সাজিয়াকে কথাটা বলেই হাসলো।সাজিয়ার কয়েক সেকেন্ড লাগলো বুঝতে।বুঝতে পেরে সেও হেসে দিল।সুবাস বুঝতে পারলো কথাটা তাকে উদ্দেশ্য করেই বলা হয়েছে। সে নিজের রুমের দিকে হাটা ধরলো।

-বেলী তোমার এখনও হয় নাই?
– হুম রেডি আমি। চলেন যাই।
-এভাবেই যাবে?
-কেনো কি সমস্যা ?
– চুল গুলো বেঁধে নাও।মেহেদী পড়ার সময় অসুবিধা হবে চুল খোলা থাকলে।
– হুম চলেন.
বেলী চুল গুলো খোঁপা করে সামনে দিকে পা বাড়ালো।
-দাড়াও
-আবার কি?
সুবাস বেলীর দিকে এগিয়ে আসলো।বেলীর খোঁপা করা চুলে বেলী ফুলের মালা গুজে দিলো।বেলী কপালে চু’মু খেয়ে বললো
-এখন পরিপূর্ণ লাগছে।
– আপনার মনে হয় বেলী ফুল অনেক প্রিয়।তাই না?
– কিভাবে বুঝলে?
– এই যে আপনি আমার জন্য প্রতিদিন অফিসে থেকে ফেরার সময় ফুল নিয়ে আসেন। খোঁপায় গুজে দেন।
– পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে সুন্দরতম জিনিস গুলোর মধ্যে একটি হলো ফুল।ভালোবাসা প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম বলা চলে।আমার কাছে ভালোবাসার পর সবচেয়ে শুদ্ধ জিনিস হলো ফুল।আর ফুল আমরা আমাদের প্রিয় মানুষ গুলোকে দেই।তাই আমিও আমার বউয়ের জন্য, আমার বেলীর জন্য, বেলী ফুল নিয়ে আসি।

বলেই সুবাস বেলীর হাত ধরে বসার ঘরের দিকে হাটা ধরলো।বসার ঘরে মেয়েরা একদিকে নাচছে অন্য দিকে মেহেদী পড়ানো হয়েছে।বেলী ও সবার সাথে বসে পড়লো।

-বুজলা আপু বেলীর হাতে সুন্দর করে বউ দের মতো করে মেহেদী দিয়ে দাও।সাথে সুন্দর করে সুবাসের বউ লিখে দিবা।
মেহেদী আর্টিস্টের দিকে তাকিয়ে কথাটা বললো সাজিয়া।সাজিয়ার মুখে এই কথা শুনে লজ্জায় লাল হয়ে গেলো বেলী।এক পলক সুবাসের যাওয়ার দিকে তাকালো।এই লোক কোনো কিছু শুনছে বলে মনে হয় না।
-হুম বেলী আমাদের বংশের বড় বউ।তার হাতে সুন্দর করে লাগিয়ে দিয়ো কেমন!
রিদিতা বলে উঠলো।
-আপু তুমিও আমাকে লজ্জা দিয়ে যাচ্ছো।(বেলী)
– এই তোরা কেউ আমার ছেলের বউকে লজ্জা দিবি না বলে দিলাম।
রান্না ঘর থেকে এগিয়ে আসতে আসতে বললেন মনিরা বেগম।

তখন বসার ঘিরে প্রবেশ করলো সুবাসের খালামণি এবং তার দুই মেয়ে।আমরিন ও নূপুর ।দুজনেই মনিরা বেগমের গোলা জড়িয়ে ধরলো।
-এতো লেট হলো কেনো আসতে?(মনিরা বেগম)
-আসলে খালামণি রাস্তায় অনেক জ্যাম ছিল।আর এতো গরম দেখো না ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গেছি।। (আমরিন)
-আচ্ছা একটু রেস্ট করে তোমরা মেহেদী দিতে বসে পরো।

-রিদিতা আপু দেখেছো কত ঢং করে কথা বলে এই মেয়ে( নিশি)
-এভাবে বলিস না নিশি কেউ শুনতে পেলে খারাপ ভাববে(সাজিয়া)
-হুম কি আর করার বল।খালাতো বোন হয়।কিছু বলাও যায় না।আমার নিজেরও তাদেরকে ভালো লাগে না। (রিদিতা)
-হুম সুবাস ভাইয়া ভালো করেছে এই ঢঙ্গি কে বিয়ে না করে আমাদের লক্ষী বেলীকে করেছে(সাজিয়া)

তাদের কথার মাঝে আমরিন আসে রিদিতাকে জড়িয়ে ধরলো।
-কেমন আছো আপু?তোমরা কেমন আছো ?
-ভালো আছি আমরা সবাই। তুমি কেমন আছো?
হালকা হেসে বললো রিদিতা।
-ভালো। তবে সুবাস ভাইয়ার বিয়েতে আমাদের কেনো বলো নি?
তাদের কথার মাঝে নূপুর প্রশ্ন করে বসলো রিদিতাকে।
-আসলে সব তাড়াতাড়ি হয়ে গেছে তো তাই আরকি।কথা পরেও হবে যাও তোমরা মেহেদী লাগিয়ে নাও (রিদিতা)

সামিয়ার মন ভালো করার জন্য সকলে মিলে সামিয়াকে নিয়ে নাচতে শুরু করলো। সকলে মিলে প্রথমে ভালো ভাবেই নাচ’তে লাগলো।কিন্তু বেশ কয়েক বার আমরিন বেলীকে ধাক্কা দিয়েছে।একবার রিদিতা সামলে নিয়েছিল নাহলে পরে যেতো। বেলী যেদিক যাচ্ছে আমরিন সে দিকেই যাচ্ছে।তাই বেলী এবার নাচ শেষে পানি খাওয়ার উদ্দেশে টেবিলের দিকে পা বাড়ালো। বেলী পা বাড়াতেই তার সামনে আমরিন নিজের পা রাখতে বেলী উল্টে গিয়ে পড়লো মাটিতে। কাচের টি টেবিলের সাথে ধাক্কা লাগায় হাত কেটে গেলো।পুরো মেহেদী লেপ্টে গেলো শাড়িতে।পায়ে এবং কোমরেও বেশ জোড়ে ব্যথা পেলো।বেলী কান্না করে দিলো।ঠিক সেই সময় এক জোড়া পুরুষালি হাত বেলীকে কোলে তুলে চেয়ারে বসিয়ে দিলো।
-বেশি ব্যথা করছে?আম্মু ফার্ষ্ট এইড বক্স টা নিয়ে এসো তাড়াতাড়ি।
মনিরা বেগমকে উদ্দেশ্য করে বললো সুবাস।
বেলীর হাতে রক্ত পরিষ্কার করে দিলো।বেলী কান্না
করতে লাগলো।সুবাস একেবারে আমরিন দিকে এগিয়ে গেলো
-তুমি কেনো ইচ্ছা করে বেলীর সামনে নিজের পা দিয়েছো?
রাগী গলায় বললো সুবাস।
…….
-আমি কিছু আস্ক করেছি।আনসার মি ডেমন ইট।
টেবিলে থাকা কাচের গ্লাসকে ছুঁড়ে ফেললো সুবাস।সুবাসের দু চোখ লাল হয়ে আছে। এতোটা রাগতে কখনো দেখা যায় নি সুবাসকে।উপস্থিত সকলে স্তব্ধ হয়ে গেলো।

-আমি ইচ্ছা করে করি নি সুবাস ভাইয়া।বেলী নিজের বেখেয়ালি জন্য পরে গিয়েছে।(নেকা কান্না করতে করতে বলল আমরিন)
-আবার মিথ্যা কথা বলছো তুমি।আমি নিজের চোখে দেখেছি বেলী পা বাড়াতেই তুই নিজের পা রাখো যার ফলে বেলী পা বেজে পড়ে গিয়েছে।

বেলী পড়ে যাওয়ার মুহূর্তে সুবাস বসার ঘিরে আসে এবং দেখে ফেলে যে আমরিন ইচ্ছা করে এগুলো করছে।

-ভাইয়া সরি।তুমি হয়তো ভুল দেখেছো।আমি বেলীর সাথে এমন করি নি
-বেলী কি হুম?বেলীকে ভাবি না ডেকে নাম ধরে ডাকছো কেনো?
– ভাইয়া বেলী তো আমার থেকে ছোট।তাকে নাম ধরে ডাকবো না তো কি করবো?
– আমি কি তোমার ছোট না বড়?
– বড় ভাইয়া।
– হুম। মনে রাখবে আমি তোমার বড়।বেলী আমার ওয়াইফ।সেই হিসেবে বেলী সম্পর্কে তোমার বড় হয়।তাই আজ থেকে বেলী ভাবি বলবে। আম আই ক্লিয়ার

খানিকটা উচু আওয়াজে কথা গুলো বললো সুবাস।বেলীকে কোলে তুলে নিজের রুমের দিকে হাতে ধরলো সুবাস।সুবাস যেতেই নেকা কান্না শুরু করলো আমরিন। সে নাকি কিছু করে নি। আরো কত কিছু।

(আসসালামুওয়ালাইকুম।কেমন আছেন সবাই?আপনারা এতো সুন্দর ভাবে আমাকে সাপোর্ট করেন।ভীষণ ভালো লাগে আমার।ধন্যবাদ সবাইকে।ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা সুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন।ভালো লাগলে অবশ্যই কমেন্ট এবং শেয়ার করবেন)
চলবে….?
হ্যাপি রিডিং

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here