বেলী_ফুলের_সুবাস #পর্ব ২৪ #মেঘকন্যা (ছদ্মনাম)

0
157

#বেলী_ফুলের_সুবাস
#পর্ব ২৪
#মেঘকন্যা (ছদ্মনাম)

বেলীর এক চিৎকারে রিদিতা উঠে যায়।বাড়ির সকলকে ডাক দেয়।বেলী সেন্স লেস হয়ে যায়।রিদিতা সুবাসের নম্বর কাল দিয়ে জানতে পরে সুবাসের অ্যাকসিডেন্ট হয়ে খুব গুরুতর আহত হয়েছে। তাকে হসপিটালে নেয়া হয়েছে।সকলেই দ্রুত হসপিটালে চলে যায় ।এক দিকে মনিরা বেগম কান্না করছেন অন্য দিকে রাজিয়া বেগম।বাড়ির সকলে একদম ভেঙে পড়েছে।এক বাড়ির দুই দুই টা ছেলে মেয়ে আজ বেহাল অবস্থা।হুম সামিয়াকে পাওয়া গিয়েছে।সাজিয়া আর ইয়াসির যখন বাড়ি ফিরছিল ঠিক তখন তাদের গাড়িতে কারো ধাক্কা লাগে।ইয়াসির বের হয়ে দেখতে পায় সামিয়া।তখন সুবাসকে কল করে হসপিটালে আসতে বলে।তার পরেই সুবাসের সাথে দুর্ঘটনা হয়।

_______

হসপিটালে অপরেশন থেটারে অপরেশন চলছে সুবাসের।মাথায় খুব বেশি আঘাত পেয়েছে।অতিরিক্ত রক্ত খরণের ফলে অবস্থা খুব ক্রিটিক্যাল।বাইরে থেকে বেলী দাড়িয়ে মনে মনে ভাবছে কি থেকে কি হয়ে গেল।ভাবনার মাঝে শুনতে পায়।

-”বেলী তুই ভেঙে পড়িস না।দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে।”

বেলীর কাধে হাত রেখে বলে উঠে সাজিয়া।বেলী সাজিয়াকে জড়িয়ে ডুকরে কেঁদে উঠলো।সুবাসের এই অবস্থা দেখে বেলীর দিন দুনিয়া সব কিছু উল্টো পাল্টা লাগছে।মনে হচ্ছে তার দম বন্ধ হয়ে যাবে। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।মনে হচ্ছে হার্ট অ্যাটাক করে মা*রা যাবে।এক দিনে বেলীর দুই দুই টা প্রিয় মানুষ হসপিটালের বেডে নিস্তেজ হয়ে আছে।হুম সুবাসের এক দিকে অপরেশন চলছে অন্য দিকে সামিয়ার স্লাইন চলছে।বেশ অনেক ক্ষন পর ডক্টর অপরেশন থিয়েটার থেকে বের হয়।বেলী ডক্টর কে দেখেই বলে।

-”ডক্টর উনি কেমন আছে?উনি ঠিক হয়ে যাবে তো?অপরেশন ঠিক মত হয়েছে তো?আমি তার সাথে দেখা করতে পারবো তো?”

-”আপনি আগে শান্ত হোন।আল্লাহর রহমতে অপরেশন সাকসেস হয়েছে।চব্বিশ ঘণ্টা সময় লাগবে উনার জ্ঞান ফিরতে।”
ডক্টর ফারদিন বলেন

-”আমি উনাকে দেখতে পারবো?”

-”জ্ঞান ফিরলে দেখতে পারবেন।এখন সুবাসকে আইসিইউ তে রাখা হয়েছে।”
বলেই ডক্টর ফারদিন চলে গেলেন।ডক্টর ফারদিন হলো আমজাদ হোসেনের বন্ধুর ছেলে।

বেলী আর দেরি করলো না।চলে গেলো নামাজ পড়তে।এই সময়ে আল্লাহর রহমতের অনেক প্রয়োজন ছিল।আল্লাহর কাছে অনেক শুকরিয়া যে অপারেশন ঠিক ভাবে হয়েছে।নামাজের ঘরে নামাজ পরে নিলো বেলী।

ডক্টর মিতালীর কেবিনে বসে আছেন মোর্শেদ হোসেন এবং মিতা বেগম। ডক্টর মিতালী একজন গাইনোকলজিস্ট।তিনি মূলত সামিয়ার চেক আপ করেছেন।রাজিয়া বেগমের অবস্থা অনেক খারাপ।প্রেসার একদম লো।কথা বলতে পারছেন না।তিনি অতিরিক্ত টেনশনে সেন্স লেস হয়ে গেছে ।তাকে স্লাইন দেয়া হচ্ছে।তাই ডক্টর কেবিনে দুই জন এসেছে।

-”দেখুন আমি সামিয়ার চেক আপ করেছি।আমি যা যা বলবো মন দিয়ে শুনবেন।”

-”কি হয়েছে আমার মেয়ের ডক্টর?সে ঠিক হয়ে যাবে তো?”(চিন্তিত সুরে বললেন মোর্শেদ হোসেন)

-আমার কথা আগে শুনুন।সামিয়ার সাথে অনেক খারাপ কিছু হয়ে যেতো কিন্তু আল্লাহর রহমতে তেমন কিছুই হয় নি।তার সাথে অনেক জড়াজড়ি করা হয়েছে কিন্তু ভাগ্য ভালো তেমন কিছু হয়নি।তার পুরো শরীর জুড়ে বিভিন্ন চিন্হ। তবে হতে পারে এই বিষয় গুলো তার মস্তিষ্কে অনেক প্রভাব ফেলবে।সামিয়া সহজে এই বিষয় গুলো হয়তো সাভাবিক ভাবে নিতে পড়বে না আমি মনে করি তবে আল্লাহ চাইলে সব সম্ভব।আপনাদের তাকে সাহায্য করতে হবে।তাকে এই ট্রমা থেকে বের করে আনতে হবে।তাকে কোনো প্রেসার দেয়া যাবে না।তাকে ফুল সাপোর্ট করতে হবে। আশা করি বঝতে পেরেছেন।”

-”জ্বী ডক্টর।আমরা খেয়াল রাখবো।আপনারা শুধু আমার বাচ্চা টাকে সুস্থ করে তোলার জন্য যা যা করার করবেন।”(মোর্শেদ হোসেন)

-”জ্বী আমরা আমাদের বেস্ট দিবো কিন্তু ফ্যামিলি সাপোর্ট ফার্স্ট।”

মিতা আর মোর্শেদ হোসেন দুজনেই কাবিন থেকে বের হলেন।সকলকে সব কিছু জানালেন।তবে এই বিষয় খেয়াল রাখতে বললেন যেনো সামিয়ার সামনে এমন কিছু যেনো না বলা হয় যা তার উপর প্রেসার তৈরি করবে।

_________

হসপিটালে বাইরে চেয়ারে বসে আছে ইয়াসির।পর পর দু ফোঁটা চোখের জল গড়িয়ে পড়লো।হুম, ছেলে মানুষের কাদতে হয় না।কিন্তু সে কি করবে?গভীর রাতে যখন সে ও সাজিয়া বাসায় ফিরছিলো তখন তার গাড়ি চালানোর সময় কেউ একজন চলে আসে গাড়ির মাজখানে ।।গাড়ির ব্রেক করতে যেয়েও গায়ে লেগে যায় সেই মানব ছায়ার উপর।বের হয়ে দেখতে পায় সামিয়া।সাজিয়া তো সামিয়ার এই অবস্থা দেখে কেঁদে দেয়।ইয়াসিরের চোখ যখন সামিয়ার উপর পড়ে তখন দেখতে পায় এক বিদ্ধস্ত সামিয়াকে।ব্লাউজ ছেরা। গলায়,পিঠে ,হাতে,খামছির দাক।লিপস্টিক লেপ্টে আছে।চোখের নিচে কাজল লেপ্টে একদম বাজে অবস্থা।হাত দিয়ে রক্ত ঝরছে।পা দিয়েও রক্ত পরছে। ছেড়া শাড়ি কোনো রকম গায়ে জড়ানো।কোনো কথা পর্যন্ত বের হচ্ছে না সামিয়ার মুখ দিয়ে।কেমন অপলক ফেলে ইয়াসিরের দিকে তাকিয়ে ছিলো।কয়েক সেকেন্ড পর দু চোখ বন্ধ করে ফেলে সামিয়া।সামিয়াকে কোলে নিতে গেলেই শাড়ি সরে গিয়ে পেতে নখের খামচির ডাক দৃশ্যমান হয়।ইয়াসিরের ভিতর ধক করে উঠে।মনে হচ্ছে ইয়াসিরের বুকে বা পাশে কেউ হাতুড়ি দিয়ে ইচ্ছা মতো এলো পাথারি ভাবে পেটাচ্ছে।বুকের মাঝে রক্ত ক্ষরণ হচ্ছে। চোখ মুখ সব কিছু ঘোলা হয়ে যাচ্ছে।হাত পা বেসামাল ভাবে কাপছে।সামিয়াকে গড়িতে বসিয়ে সুবাসকে কল দিয়ে হসপিটালে আসতে বলে। কারো পক্ষে কি সম্ভব নিজের ভালোবাসার মানুষকে এইভাবে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন ভাবে দেখা?ইয়াসির এর পক্ষেও সম্ভব ছিল না সামিয়াকে এভাবে দেখা।তাই তো টুপ টুপ করে চোখের জল গুলো গড়িয়ে পড়ছে।এই প্রথম ইয়াসির এতো বছর পর কান্না করছে।শেষ মনে হয় বাবা মা* রা যাওয়ার সময় কেঁদেছে। আর আজ এত গুলো বছর পর কাদঁছে।এতো বছরে গড়ে তোলা শক্ত মন আজ হার মেনেছে। মনও আজ কাদতে চাইছে।চোখের জল গুলো আটকিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে না।

-”ইয়াসির তুই ঠিক আছিস তো বাবা?”

মিতু চৌধুরী পাশে বসতে বসতে বললেন।
ইয়াসির মা কে দেখে চোখের জল মুছে বললো
-”হুম মা আমি ঠিক আছি। জাস্ট সুবাসের চিন্তা হচ্ছে।”
-”আর সামিয়ার?”
……..
-”দেখ বাবা আমি জানি তুই সামিয়াকে ভালোবাসিস।আর কতো নিজেকে কষ্ট দিবি?আমি মেয়েটার চোখেও তোর জন্য ভালোবাসা দেখেছি।কেনো নিজে কষ্ট পাচ্ছিস আর মেয়েটাকে দিচ্ছিস ?”

-”সব সময় চাইলেই সব কিছু পাওয়া যায় না।”

– “ভুল!আমরা চাইলে অনেক কিছু পেতে পারি।নিজেকে চেষ্টা করতে হবে।এবার আমি ভেবে রেখেছি সামিয়া সুস্থ হলে তোমার জন্য সামিয়ার হাত চাইবো।”

-”মা দেখো….

-”শুনো এখানে আর কিছু বলার নেই।সামিয়া সুস্থ হলেই তোমার আর সামিয়ার বিয়ে কথা আমি বলবো।সামিয়াকে নিজের বউ করে নিয়ে আসবো।”

-”তবে আমার একটা শর্ত আছে।”

-”কি শর্ত?”

-”তুমি এখন কেউকে কিছু বলবে না।সামিয়া সুস্থ হওয়ার পর যা বলার বলবে।”

-”আচ্ছা ঠিক আছে।”
(আসসালামুআলাইকুম।কেমন আছেন সবাই? সবাইকে ধন্যবাদ আপনাদের সাপোর্টের জন্য। সবাই প্লিজ আমার এই ছোট্ট পেজ টাকে বড় করতে সাহায্য করবেন।ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা সুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন। ভালো লাগলে অবশ্যই কমেন্ট এবং শেয়ার করবেন।)
চলবে…….?
হ্যাপি রিডিং

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here