বেলী_ফুলের_সুবাস #পর্ব :২৫ #মেঘকন্যা (ছদ্মনাম)

0
142

#বেলী_ফুলের_সুবাস
#পর্ব :২৫
#মেঘকন্যা (ছদ্মনাম)
রাজিয়া বেগমের জ্ঞান ফিরেছে।মেয়ের সাথে এতো কিছু হয়ে গেলো তিনি তা কল্পনাও করতে পারছেন না।তিনি যেনো কয়েক মিনিটের জন্য নিস্তব্ধ হয়ে গেলেন।শুধু কেদেই চললেন।তিনি বেড থেকে উঠে মোর্শেদ হোসেনর সামনে গিয়ে বললেন

-”সব দোষ আপনার।আগেই বলেছিলাম মেয়েকে এখন বিয়ে দিবো না। মেয়ে আমার ছোট।আজ যদি বিয়ে না ঠিক হতো তাহলে আমার মেয়ের পার্লারে যাওয়া লাগতো না।না এতো বড়ো দুর্ঘটনা হতো আমার বাচ্চা মেয়েটার সাথে।নাহ দোষ আপনাকে দিবো না।দোষ তো আমার ভাগ্যের।কেনো যে আমি বিয়েতে রাজি হলাম।প্রথমে নিহাল না বলে দিলো।আর এখন আমার মেয়েটার উপর এতো বড় ঝড় গেলো।না জানি আমার বাচ্চা মেয়েটার কত কষ্ট হয়েছে।কত বড় তুফান গিয়েছে আমার মেয়েটার উপর।”

-”শান্ত হও বোন আমার।”
রিতা বেগম রাজিয়া বেগমের কাছে গিয়ে বললেন।

-”ভবি আমি কিভাবে শান্ত হবো বলেন?আমার মেয়েটার সব শেষ।একেতো বিয়ে টা ভেঙে গেলো তার উপর আবার এতো কিছু।আমার মেয়ের সব সম্মান শেষ।কি হবে আমার মেয়েটার?”

-”তুমি শান্ত হও রাজিয়া।দেখো আমাদের সামিয়ার সাথে কিছু হয় নি।তার সম্মান আল্লাহ রক্ষা করেছেন।”

-”হুম আল্লাহর রহমতে আমার মেয়ের সাথে খারাপ কিছু হয় নি।কিন্তু সমাজের মানুষ কি তা এতো সহজ ভাবে মেনে নিবে? তারা তো আমার মেয়ের সম্মানের উপর প্রশ্ন তুলবে।”

-”শুনো আগে আমাদের সামিয়ার কথা ভাবতে হবে।তাকে সাপোর্ট করতে হবে।সমাজের চিন্তা বাদ দিতে হবে।”

-“কিভাবে চিন্তা বাদ দিবো ভাবি?এমনি তো বিয়ের আসর থেকে বিয়ে ভেঙে গেলে মেয়েদের কতো কথা শুনতে হয়।তার উপর আবার এতো কিছু।কে করবে আমার মেয়ে কে বিয়ে?
বলেই অঝোরে কাদতে লাগলেন রাজিয়া বেগম।”

-”শুনো এখন এতো কিছু ভাবলে হবে না।তোমাকে শক্ত থাকতে হবে।তুমি ভেঙে গেলে সামিয়াকে কে সামলাবে?শুনো! যে কোনো জায়গায় মায়েদের শক্ত থাকতে হয়।তুমি যদি নিজেকে শক্ত না রাখতে পরো তবে সামিয়া আরো ভেঙে যাবে।আর রইলো বিয়ের কথা। আমাদের মেয়ে পচে গলে যায় নি যে বিয়ের জন্য টেনশন করতে হবে।যার সাথে আল্লাহ জোড়া লিখে রেখেছেন তার সাথেই হবে।তুমি নিজেকে সামলাও।”

-”তবুও ভাবি মা তো আমি ।চিন্তা হয় আমার।কেনো আমার মেয়ের সাথে এমন হলো?কি দোষ আমার এই বাচ্চা মেয়েটার?আমার মেয়েটা এতো কিছু কিভাবে নিবে?”

-”তুমি ধৈর্য্য ধরো।নিজেকে সামলাও। ধৈর্য্য হারা হলে হবে না।আমাদের সবাইকে মিলে সামিয়াকে আগলে নিতে হবে।তাকে সাহস দিতে হবে।
বলেই রিতা বেগম রাজিয়া বেগমকে বেডে শুইয়ে দিলেন।এখনো তিনি অসুস্থ।হাতে স্লাইন চলছে।”
____________

সারাদিন কেটে গেছে। সুবাসের জ্ঞান ফিরে নি।সামিয়ার জ্ঞান ফিরেছিল কিন্তু কিছু ক্ষন পর আবার সেন্স লেস হয়ে যায় ।হসপিটালে আছে বেলী,ইয়াসির,রিদিতা আর সায়েম।বাকি সবাইকে বাসায় পাঠানো হয়েছে।সবার উপর খুব বেশি ধকোল গেছে।একটু বিশ্রাম প্রয়োজন।বেলীকে অনেক বার বলা হয়েছে বাড়ি যেতে কিন্তু সে যাবে না। কেউ তার স্বামীকে রেখে এভাবে বাসায় যেতে পারবে?নাহ,পারবে না। তাই বেলীও পারে নি।এক প্রকার যুদ্ধ করে হসপিটালে থেকেছে।রিদিতা ডক্টর থেকে পারমিশন নিয়ে বেলীকে পাঠালো সুবাসের কাছে।রিদিতা বুঝতে পেরেছে বেলীর মন ছটফট করছে সুবাসকে দেখার জন্য।বেলী রিদিতাকে জড়িয়ে ধরে সুবাসের কেবিনে ঢুকলো।সুবাসের পাশে চেয়ারে বসলো।সুবাসে কপালে নিজের ঠোঁট ছোঁয়ালো।সুবাসের হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে চু’মু খেলো।সুবাসের হাত নিজের গালের সাথে ছোঁয়ালো।গর গর করে চোখ দিয়ে পানি পড়ছে বেলীর।গলার কাছে কথা গুলো কেমন আটকে যাচ্ছে।কেমন যেনো বুকে ব্যাথা হচ্ছে।সুবাসের দিকে তাকে রইলো বেলী।কেমন নিস্তেজ হয়ে আছে।মাথায় আর হাতে ব্যান্ডেজ করা।এক হাতে স্লাইন চলছে অন হাতে রক্ত পুস করা হচ্ছে।পুরো ফেস কেমন হয়ে আছে।বেলী আবারও সুবাসে হাতে চুমু খেলো। সুবাসের হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো।

-“আপনি আমার সাথে কথা বলুন ,না?আমার ভালো লাগছে না।আপনি কবে আমার সাথে কথা বলবেন?আমি সত্যি বলছি আমি আর কখনো আপনার কথার অবাধ্য হবো না।আপনি শুধু একবার বেলী করে ডাক দিন।আপনার সব কথা মেনে চলবো তাও আপনি এভাবে চুপ থাকবেন না।আপনাকে এভাবে আমি দেখতে পারছি না।জানেন কত কষ্ট হয়েছিল আমার যখন শুনেছি আপনার অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে।পুরো মস্তিষ্ক ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল।মনে হচ্ছিল দম বন্ধ হয়ে মা*রা যাবো। মনে হচ্ছিলো বুকের মাঝে রক্ত ক্ষরণ হচ্ছে।আমার মনে হচ্ছিলো পুরো দুনিয়া অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে।মনে হচ্ছে শরীর থেকে কোনো অঙ্গকে কে*টে আলাদা করা হচ্ছে।আপনি জানেন আপনাকে এভাবে দেখে আমার বুক ফেটে যাচ্ছে।আমি না নিতে পারছি না এগুলো।আপনি আমার সাথে কথা বলুন।একবার বেলী বলে ডাকুন ।আপনি খুব নিষ্ঠুর।আপনি খুব পাষাণ।আপনার বেলী ফুল কান্না করছে তাও আপনি কথা বলছে না।আপনার কি আমাকে কান্না করতে দেখে ভালো লাগছে?এই যে ,আপনার বেলী ফুলের যে শ্বাস নিতে ভীষন কষ্টও হচ্ছে তা কি আপনি উপলব্ধি করতে পারছেন না?প্লিজ একবার চোখ খুলুন।দেখুন আপনার বেলী ফুল তার সুবাসকে ছাড়া ভালো নেই।ভালো নেই তার সুবাসকে ছাড়া।সুবাসকে
ছাড়া এই বেলী একদম নিঃস্ব।ভীষণ ভাবে প্রয়োজন এই সুবাসকে তার বেলীর।”

রাত ১২ টা সুবাসের কেবিন থেকে বেলীকে নিয়ে সোজা ক্যান্টিনে এসেছে রিদিতা।সকাল থেকে কিছু খায় নি বেলী।একে তো কাল রাতে সেন্স লেস হয়ে গিয়েছিল তার উপর আবার সকাল থেকে না খাওয়া।কিন্তু কি হলো এই মেয়ে খাবার না খেয়ে কান্না করেই চলছে।

-”বেলী চুপ চাপ রাইস গুলো শেষ কর।”

– “আমি খাবো না রিদিতা আপু।”

– “তাড়াতাড়ি শেষ কর!তুই কান্না থামা।দেখিস কালকেই সুবাসের জ্ঞান ফিরবে।তখন যদি তোর এই অবস্থা দেখে সবচেয়ে বেশি ও কষ্ট পাবে।”

– “আপু আমি সত্যি খেতে পারবো না।”

– “প্লীজ বোন একটু করে খেয়ে নে।দেখ তুই অসুস্থ হয়ে গেলে সুবাসকে কে সেবা করবে?তুই একটু করে খেয়ে নিজের জন্য শক্তি তৈরি কর।দেখবি সুবাসকে সেবা করতে পারবি।আর তোর এমন শুকনো ফেস দেখলে তখন তোর বর আমাকে কোথা শুনাবে।”

রিদিটার সাথে কোথায় না পেরে একটু রাইস খেলো বেলী।
-”সুবাসকে খুব ভালোবাসিস তাই না?”

রীদিটার প্রশ্নে হকচকিয়ে গেল বেলী।পর পর ঢোক গিললো।খাবার গলায় আটকে গেলো।

-”আরে পানি খা।এতো হাইপার হওয়ার কি আছে?সুবাস তোর স্বামী ভালোবাসতেই পারিস। স্বামীকে ভালোবাসা কোনো গুনাহের কাজ না।
……

পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর, পবিত্র,স্নিগ্ধ, মধুর সম্পর্ক হলো স্বামী – স্ত্রীর সম্পর্ক।তাই এই সম্পর্কে ভালোবাসাও পবিত্র।স্বামীর প্রতি স্ত্রীর এবং স্ত্রীর প্রতি স্বামীর ভালোবাসা থাকবে এটাই তো নিয়ম।জানিস একবার তোর ভাইয়ার বাইক অ্যাকসিডেন্ট হয়েছিল আমি তোর মতো কেঁদে কেটে একাকার হয়ে গিয়েছিলাম যদিও তার ছোটো একটা দূঘটনা হয়েছিল।পুরো তোর মত অবস্থা হয়েছিল আমার। তাই তোকে জিজ্ঞাস করলাম।আর তুই মানিস কি না তবে আমি শিওর করে বলতে পারি যে সুবাসকে তুই নিজের থেকেও বেশি ভালবাসিস।

হুম এটা ঠিক যে,বেলীর মনে সুবাসের জন্য অন্যরকম অনুভূতি হয়।তবে কি সেই অনুভূতির নাম ভালোবাসা?
বেলী ভাবতে লাগলো – তবে কি সত্যিই বেলী সুবাসকে ভালোবাসে?সত্যি কি সে সুবাসকে মন দিয়ে ফেলেছে? সত্যি কি সে সুবাসে আবদ্ধ হয়ে গিয়েছে?

(আসসালামুআলাইকুম।কেমন আছেন সবাই?ধন্যবাদ সবাইকে এতো সাপোর্ট করার জন্য।ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা সুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন।ভালো লাগলে অবশ্যই কমেন্ট এবং শেয়ার করবেন। ভালোবাসা নিবেন সবাই)
চলবে…….?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here