বেলী_ফুলের_সুবাস #পর্ব :২৬ #মেঘকন্যা (ছদ্মনাম)

0
151

#বেলী_ফুলের_সুবাস
#পর্ব :২৬
#মেঘকন্যা (ছদ্মনাম)
বেশ কিছুক্ষন কথা বলে ক্যান্টিন থেকে বের হয়ে গেলো বেলী ও রিদিতা।সাথে সায়েম এবং ইয়াসিরের জন্য কফি নিলো।কফি খেলে একটু হলেও ক্লান্তি ভাব দূর হবে।হসপিটালে করিডোরে বসে কথা বলছিলো চারজন।নার্স এসে খবর দিয়ে গেলো সামিয়ার জ্ঞান ফিরেছে।সামিয়ার সাথে দেখা করতে গেলো বেলী।সাথে গেলো রিদিতা।দুজনকে দেখেই কেঁদে উঠলো সামিয়া।
-“কিছু হয় নি সামিয়া।তুই ভয় পাশ না।আমরা আছি তোর সাথে।”
সামিয়াকে জরিরে ধরে বললো রিদিতা।

-“দেখ বোন আমার সাথে আছি।এই যে আমি আর রিদিতা আপু আছি তর সাথে।কিছু হবে না তোর।”

– “আপু তারা আমার হাত, গলা ,পিঠ সব জায়গায় ছুঁয়েছে।আমার সব শেষ।কিছু বাকি নেই আপু।আমি শেষ।আমার কিছু বাকি নেই।আমার মান সম্মান, ইজ্জত সব শেষ।আমি ম*রে যাবো আপু।”

সামিয়ার কন্যার বেগ আরো বেড়ে গেলো।হাত পা কাঁপতে লাগলো সামিয়ার।বেলী তাড়াতাড়ি করে ডক্টর ডেকে আনলো।

-“আপনারা প্লিজ বাইরে ওয়েট করুন।সামিয়ার রেস্ট এর প্রয়োজন।সামিয়ার হয়তো তার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা মনে পড়েছে তাই এমন হয়েছে।আপনারা ওকে রেস্ট করতে দিন।”

ডক্টর মিতালীর কথা মতো তারা বেরিয়ে গেলো।ডক্টর মিতালী সামিয়াকে চেক আপ করে ঘুমের ওষধ দিয়ে দিলেন যেনো একটু শান্তিতে ঘুমোতে পারে।

এতক্ষণ ইয়াসির বাইরে থেকে সামিয়াকে দেখছিলো।সে চাইলেও কিছু করতে পারছে না।যদি সম্ভব হতো তাহলে সামিয়ার সকল কষ্ট দুর করে দিতো।সামিয়ার মস্তিষ্ক থেকে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা মুছে দিতো।সামিয়াকে আবার আগের সামিয়ার রূপে নিয়ে আসতো।কিন্তু চাইলেও টা সম্ভব নয়।

নতুন আরো একটি দিনের সূচনা হলো।ইয়াসির বেলী কে নিয়ে বাসায় গিয়েছে।ফ্রেশ হয়ে বেলী চলে আসলে রিদিতা যাবে ফ্রেশ হতে।বাসায় এসেই ফ্রেশ হয়ে একটু কিছু খেয়ে নিলো বেলী। রুমে বসে প্রয়োজনীয় জিনিস গুছিয়ে নিচ্ছিলো তখন রুমে আসে রিদিতা বেগম।

-“বেলী তুই নাহলে এখন বাসায় থাক।আমি আর তোর আব্বু হসপিটালে যাচ্ছি।”

– “নাহ আম্মু আমি যাবো।আমার বাসায় মন টিকবে না।”

– “আমি বলছিলাম যে ,তুই সারাদিন কালকে হসপিটালে ছিলি।আজকে তুই বাসায় রেস্ট কর।”

– “নাহ আম্মু আমি বাসায় থাকলে আরো খারাপ লাগবে।আমি টেনশনে শেষ হয়ে যাবো।উনার যতক্ষণ পর্যন্ত জ্ঞান না ফিরবে আমার শান্তি লাগবে না।”

– “বউ মা বেলীরে যাইতে দাও।বউ লাগে উই সুবাসের।সুবাসে পাশে থাকা ওর দায়িত্ব ও কর্তব্য।”
বিলকিস বেগম বেলীর কাছে এসে বললে

-“জ্বী আম্মা।আমি শুধু বেলীর জন্য বলেছি।বেলী যেতে চাইলে আমার কোনো অসুবিধা নেই।”

– “আমি খুশি হইলাম বইন তুমি সুবাসের জন্য চিন্তা করো।এটাই স্বামীর প্রতি ভালোবাসা ।তুমি স্বামীর খারাপ সময়ে পাশে থাকবা দেখবা আল্লাহ সংসারে সুখ শান্তি ও বরকত দিবো। মহোব্বত বাড়বো।”

– “হুম দাদী। দোয়া করো।”

– “তুই ইয়াসিরের সাথে যা।আমি এর তোর বড়ো চাচী একটি পর আসছি।”

– “আচ্ছা আম্মু।আমি যাই।ছোট চাচী কে দেখে রেখো।”
বলেই বেলী চলে গেলো।

বেশি কিছু ক্ষন আগে সুবাসের জ্ঞান ফিরেছে। সুবাসের কেবিনে একে একে সবাই প্রবেশ করে দেখে নিলো।মনিরা বেগম তো কেঁদেই দিলেন।

-“আম্মু দেখো আমি আল্লাহর রহমতে ঠিক আছে।তুমি কান্না থামাও।”

-“বাবা তুই ঠিক মতো বাইক চালাবি না।দেখতো কি অবস্থা ।আমি শুধু আল্লাহ কাছে দোয়া করেছি যেনো আল্লাহ তোরে সুস্থতা দান করে।”

-“আম্মু আমি আলহামদুলিল্লাহ এখন সুস্থ আছি।দেখে নিও সামনে আরো সুস্থ হয়ে যাবো।”

একে একে সবার সাথে হালকা পাতলা কথা বলে নিলো সুবাস।ডক্টর বারণ করেছে বেশি কথা বলতে।সকলের সাথে কথা বললেও কথা হয় নি বেলীর সাথে।মেয়েটার মুখ কেমন শুকিয়ে আছে।
সবাই তাদের স্পেস দিয়ে বাইরে চলে গেলো।
-“কাছে এসো বেলী!”
সুবাসের ডাকে কাছে গিয়ে বসলো বেলী।টুপ টুপ করে চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।শুধু নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।

-“আরে তুমি কান্না করছো কেনো?”

– “এমনি!আমার অন্য একটা স্বামী আছে না তার জন্য কান্না করছি।”
খানিকটা রাগী গলায় বললো বেলী।

– “তাহলে আমার ম*রে গেলেই ভালো হতো।তুমি তোমার ঐ…..
সুবাসের কথা শেষ হওয়ার আগে বেলী সুবাসের বুকে মাথা রেখে কেঁদে উঠলো।সুবাস ব্যাথা পেলো কিন্তু আওয়াজ করলো না।

-“আরে তোমার কান্নার গতি দেখি বেড়ে গেলো।কান্না থামাও দেখো আমি ঠিক আছি।”
বেলীর কান্না তো থামলোই না উল্টো বেড়ে গেলো।সুবাস আর কিছু বললো না।বেলীকে নিজের হাতে জড়িয়ে নিলো।বেশ কিছু ক্ষন পর বেলী মুখ তুললো।সুবাসের হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে চু’মু খেল।কপালে নিজের ঠোঁট ছোয়ালো।সুবাস মুচকি হাসলো বেলীর কাণ্ড দেখে।

-“আজ দেখি বউ আমাকে আদর করছে।বউ মনে হয় আজ রোমান্টিক মুডে আছে।”

– “আপনি চুপ করুন।অসুস্থ তাও মুখ থেকে এমন কথা যায় না।”

– “আচ্ছা বেশি কথা বলবো না।তোমার এই অবস্থা কেনো পুরো ফেস শুকিয়ে গেছে।”

– “আপনার চিন্তায় এমন হয়েছে।”

– “সাধারণ অ্যাকসিডেন্ট হওয়ায় নিজের এমন করেছি না জানি ম*রে গেলে কি হতো?”

– “আপনি চুপ করুন দয়া করে।আপনি জনেন আমার কতো কষ্ট হয়েছে যখন শুনেছি আপনার অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে।মনে হচ্ছিলো আমি সব কিছু হারিয়ে ফেলবো।আমার মনে হয়েছে পুরো দুনিয়া থমকে দিয়েছে।আপনাকে যখন নিস্তেজ অবস্থা দেখেছি তখন শুধু আপনাকে হারানোর ভয় হচ্ছিলো।মনে হচ্ছিলো সব শেষ আমার।আপনি প্লিজ আর এভাবে বাইক চালাবেন না।আজ আপনার যদি কিছু হয়ে যেত তখন বড় চাচী, চাচ্চুর কি হতো ভেবেছেন একবার?”

– “আর তোমার কিছু হতো না?”

সুবাসের প্রশ্নে বেলী চুপ হয়ে গেলো।সুবাসের বুকে মাথা রেখে সুবাসকে জড়িয়ে ধরলো একদম শক্ত করে।

সামিয়ার জ্ঞান ফিরেছে।এখন খানিকটা সুস্থ তবে চুপ হয়ে আছে। কেমন যেনো নিস্তব্ধ।মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না।শুধু চোখ দিয়ে গর গর করে পানি পড়ছে।নিজেকে ধরে রাখা কষ্টে হয়ে যাচ্ছে।মনে হচ্ছে চিৎকার করে কাদতে পারলে হয়তো ভালো হতো।যেহুতু সামিয়ার কিডন্যাপ হয়েছিল তাই এটা পুলিশ কেস হয়েছে।সামিয়ার সামনে বসে আছে সিনিয়র অফিসার সিরাজ আহমেদ এবং সুস্মিতা সিনহা।

-“আপনি কি আমাদের একটু সাহায্য করতে পারবেন মিস সামিয়া?”
……..
-“দেখুন আপনি একটু আমাদের সাহায্য করলে আমাদের জন্য সুবিধা হবে অপরাধীকে চিহ্নিত করতে।একটু আমাদের সাথে নরমাল হওয়ার চেষ্টা করুন।”

– “ঐই দিন আমি বউ সেজে বের হই। তারপর তা তা রা

কথা বলতে বলতে আরো হাইপার হয়ে গেলো সামিয়া।সাথে সাথে রাজিয়া বেগম সামিয়াকে জড়িয়ে ধরলেন
– “কুল ডাউন মিস সামিয়া। টেক আ ডিপ ব্রিথ।আপনি শান্ত হন।”
এবার সামিয়া একটু শান্ত হলো।

-“দেখুন মিস সামিয়া আপনি একটু সাহস করে তাদের পরিচয় বললে আমাদের জন্য সুবিধা হতো। আজ তারা আপনার সাথে এরকম করেছে কাল অন্য মেয়ের সাথে করবে।আমরা আপনার পাশে আছি।আপনি আমাদের একটু সাহায্য করুন।আপনি সাহায্য করলে আমরা তাকে ধরতে পারবো।আপনি আমাদের উপর বিশ্বাস রেখে একটু তাদের ব্যাপারে বলুন”
এবার সামিয়া ঠান্ডা মাথায় তাদের সব কিছু বলতে লাগলো।
(আসসালামুআলাইকুম। আশা করি সবাই ভালো আছেন।আজকের পর্ব কিন্তু বড় করে দিয়েছি।ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা সুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন।ভালো লাগল প্লিজ একটা কমেন্ট এবং শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ)
চলবে………?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here