১ম_পর্ব #বেলী_ফুলের_সুবাস #মেঘকন্যা (ছদ্মনাম)

0
478

সুবাস ভাইয়ার বিয়ে হবে তাও আবার আমার সাথে কথা টা শুনে আকাশ থেকে মাটিতে পড়লাম।অন্য জন কে বাঁশ দিতে গিয়ে যে নিজে বাঁশ খাবো টা কখনো ভাবি নি ,না না শুধু বাঁশ না আইঠা আলা বাঁশ। আর বাঁশ হিসেবে খেতে হয়েছে সুবাস ভাইয়ার সাথে বিয়ে।বিয়েটাও হয়ে গেলো শুধু মাত্র আমার ভুলের কারণে।
ছোট থেকেই সুবাস ভাইয়া সব সময় আমার উপর নজির দাড়ি করেন ,চুন থেকে নুন খসলেই উনার বকা খেতে হয় ।এই তো সেদিন টেস্ট এক্সাম এর রেজাল্ট এ দুই সাবজেক্টে ফেইল আসছে,আমি তো ভয়ে বাসায় কেউ কে কিছু বলি নি কিন্তু উনি সবার সামনে এসে আম্মু কে বললেন

-চাচী , বেলী টেস্ট এক্সামে কি রেজাল্ট করেছে তা কি জানো ?
আম্মু উনার কথা শুনে আমাকে বললো ,কি রে তোর রেজাল্ট যে দিসে আমাকে তো বলিস নি ,আমি চোরের মত আম্মুর দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললাম ,কিভাবে বলবো যে দুই সাবজেক্টে ফাইল করেছি ,ভাবনার মাঝে সুবাস ভাইয়া বলে উঠলেন
-চাচী বলবে কি করে ,যে ব্যাক্তির সামনে এইচএসসি, সে নাকি দুই সাবজেক্টে ফাইল করেছে ,তাও আবার আইসিটি আর ইংলিশ।
মাথা মোটা একটা । চাচী তাকে বলে দেও , পড়া লিখা করতে না ভালো লাগল বলতে পারে,আমরা তার বিবাহের ব্যাবস্থা করে দিবো ।

কথা টা বলেই চলে গেলেন
তার পর আম্মু আমাকে ইচ্ছা মত কথা শুনলেন ,আব্বু কিছু বলেনি। কারণ বলার সুযোগ বড় চাচী দেই নি ,বড় চাচী অনেক জড়িয়ে ধরে বললো
-সামনে থেকে ভালো করে পড়িস কেমন ,আমার মেয়েকে কেউ কিছু বলবে না আর,
বলেই তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরলেন ।
সেদিন ভাইয়া কে ইচ্ছা মত মনে মনে বকা দিলাম ,বেটা বজ্জাত সব সময় আমার সাথে এমন করে ,কি দরকার ছিল আম্মু কে বলার ,কেনো যে এই বেটার আমার পিছে পরে থাকে বুঝি না।

তারও কিছু দিন আগে ,কলেজ থেকে একটা প্রজেক্ট করতে বলে কিন্তু আমার তো ল্যাপটপ নেই ,আর ভাইয়ার কাছে চাইলে পাওয়াও যাবে না ,তাই ভাইয়াকে না জানিয়ে তার ল্যাপটপ নেই ,তবে ভাগ্য ভালো যে পাসওয়ার্ড দেয়া ছিল না । ল্যাপটপে প্রজেক্ট করতে যেয়ে ভুলবশত ভাইয়ার প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট ডিলেট করে ফেলি ,আমি তো ভয়ে শেষ ,ভাইয়া জানতে পেরে বললো

-অন্যের জিনিস নেয়ার আগে যে পারমিশন নিতে হয় তাকি জানো না ?নিয়েছ বেশ ভালো ,তাও আবার আমার ইম্পর্টেন্ট ডকুমেন্ট ডিলেট করে দিয়েছো ,মাথা মোটা একটা ।

তারপর থেকে প্রতিজ্ঞা করলাম এই বদ লোকের জিনিস এ জীবনে ধরবো না , হূহ। সব সময় ঝারাঝারি করতে থাকে , আর এই লোকের সামনে যাওয়া যাবে না ।

বেশ কয়েক দিন পর তার থেকে প্রতিশোধ নেয়ার একটা সুযোগ পেলাম ,এর সেই প্রতিশোধ আমার জীবনে বাঁশ হয়ে দাঁড়ায় ।সেদিন কলেজ থেকে ফেরার পথে সুবাস ভাইয়ার সাথে দেখলাম একটা মেয়ে কে ,বেশ হেসে হেসে কথা বলে দুজন এগোচ্ছেন ,আমিও তো কম না , ফটাফট কত গুলো ছবি তুলে নিলাম । বেটা প্রেমও করে দেখি ,ইস্ মেয়েটার জিন্দেগি শেষ ,এবার বেটাকে উচিত শিক্ষা দিব ,সব সময় আমার সাথে ঝাড়া ঝাড়ি করার মজা আজ বুঝাবো , হূহ, কথা গুলো বলেই একটা শয়তানি হাসি দিলাম ।বাসায় এসেই বড় চাচ্চুকে জলদি করে ছবি গুলা দেখলাম ,চাচ্চু তো রেগে শেষ ,তবে বড় চাচী কিছু বললেন না ।
কিছুক্ষন পরেই ভাইয়া তার সাথে মেয়েটিকে নিয়ে বাসায় আসলেন ,দেখলাম চাচী মেয়েটির সাথে হেসে কথা বলছে ,আমি তো পুরা তাজ্জ্যব বনে গেলাম ,বেশ কিছু ক্ষন পরে বুঝতে পারলাম মেয়েটি আর কেউ না ভাইয়ার কলেজ লাইফের বন্ধু , মেঘা আপু।আমিও আপুর সাথে কথা বললাম ,বেশ মজার মানুষ আপু ।ভাইয়া আমার কাছে এসে বললেন –
আমার ছবি আব্বুর কাছে দেখিয়েছ,কাজ টা ভালো করো নি ,না জেনে ,না বুঝে করো সম্পর্কে বাজে মন্তব্য করা উচিত নয় ।
আমি বেশ লজ্জা পেয়ে ভাইয়াকে বললাম –
সরি ভাইয়া।আমাকে মাফ করে দিন ।
ভাইয়া কিছু না বলে চলে গেলেন

রাতে খাবার টেবিলে বসে খাবার খাচ্ছি তখন ভাইয়া বলে উঠলো
-এই ছেলেটা কে তোর পাশে ?হেসে হেসে কথা বলছিস ।
-আমি তো পুরা অবাক,ভাইয়ার কাছে আমার আর ফাহিমের ছবি এলো কথা থেকে ,আজ আমি শেষ । ফাহিমের সাথে আমার পরিচয় হয় ফেসবুকে, তার সাথে আমার দেখা হয় নি ,তার সাথে আমার প্রণয়ের সম্পর্ক, ভালোবাসি আমি তাকে তাইতো আজ তার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম ,কিন্তু ভাইয়ার কাছে আমার আর ফাহিমের ছবি এলো কথা থেকে মাথায় আসছে না।আমাকে চুপ থাকতে দেখে আম্মু বললো
-কথা বলিস না কেনো ? বল এই ছেলে কে ?

আব্বু রেগে বললেন ,আমার মান সম্মান সব শেষ আজ ,বলো কে এই ছেলে ?
আমি চুপ থাকলাম
আম্মু আমার গালে চর বসিয়ে দিলেন
আমি কাদতে লাগলাম ,কি থেকে কি হয়ে গেল ,আম্মু বলতে লাগলো
-এই দিন দেখার জন্য তোকে বড় করলাম ,আজ কিনা আমার মেয়ে একটা অন্য ছেলের সাথে হেসে খেলে কথা বলছে তাও আবার রাস্তায় ।
-আম্মু তোমার যেমন টা ভাবছো তেমন কিছু নয় ,
আমাকে বিশ্বাস করো,সে শুধু আমার বন্ধু এর বেশি কিছু না ।
– মেয়ে মাইনষের ছেলে মানুষ বন্ধু হয় কেমনে?
দাদী বলে উঠলো
বড় চাচী সবাইকে শান্ত হতে বললো
-বাচ্চা মানুষ ভুল করেছে ,মাফ করে দিন এমন ভুল আর করো না কেমন ,এর পর থেকে যে কোনো ছেলের সাথে রাস্তায় বা অন্য কোথাও কথা বলো না ।
-হের লেগেই কই মাইয়া মানুষ ঠিক সময়ে বিয়া না দিলে বিপথে যায় ,বিয়া দিয়া দে মাইয়া রে আমিন
দাদী বলে উঠলো।

-হুম আম্মা ঠিক বলেছেন ,ওকে বিয়ে দিতে হবে ,নাহলে কোন দিন জানি আমার সম্মান নষ্ট করে ।

আম্মু বলে উঠলো ,আপনারা থামেন ,আমার মেয়ে হয়তো ভুল করেছে মানলাম ,তাই বলে তাকে এখন বিয়ে দিয়ে দিব ,না আমি আমার মেয়ে কে এখন বিয়ে দিবো না

তোমার কথায় তো সব হইবো না বউ মা ,মাইয়া রে বিয়ে দিতে হবে । দিনকাল ভালো না।

দাদী কোথায় আমি তো অবাকের শেষ পর্যায় ,বেশ রাগ লাগছে সুবাস ভাইয়ার উপর ,কেনো উনি এমন করলো, সেদিন আমি আমি তার ছবি তুলেছি বলেই কি আজ সে আমার সাথে এমন করলো ।

-কেনো করলেন সুভাস ভাই এমন ?
আমি তো সেদিন শুধু ছবি তুলেছি বলে আজ আপনি এমন করলেন আমার সাথে ?
-চুপ চাপ গিয়ে ঘুমাও,এত কথা ভাবতে হবে না ।
-কেনো ভাববো না বলেন ,আজ আপনার এই কাজের জন্য সবাই আমাকে বিয়ে দিতে চাচ্ছে, এই কাজ টা আপনি ভালো করেন নি সুবাস ভাই
-কি সম্পর্ক ওই ছেলের সাথে তোমার ?
-আমরা বন্ধু।
চলবে…?

#১ম_পর্ব
#বেলী_ফুলের_সুবাস
#মেঘকন্যা (ছদ্মনাম)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here