মোহ_মায়া #সানজিদা_বিনতে_সফি #পর্ব_৫

0
468

#মোহ_মায়া
#সানজিদা_বিনতে_সফি
#পর্ব_৫

আদওয়া তোকে ভালবাসে না ওহিদ। তুই শুধু শুধু নিজেকে কষ্ট দিচ্ছিস।
প্রিয়ার কথায় ওর দিকে করুন চোখে তাকালো ওহিদ।
– কিন্তু আমি তো ওকে খুব ভালবাসি।আমি জানি আমি ওদের মধ্যে তৃতীয় পক্ষ।তবু্ও নিজেকে মানাতে পারি না।

ওহিদের বেদনায় নীল হয়ে যাওয়া মুখের দিকে তাকিয়ে মায়া হলো প্রিয়ার।শত হোক এক সাথে বড় হয়েছে। নিজের প্রিয় বন্ধুর এই কষ্ট মেনে নিতে পারছে না।কিন্তু কিছু করার নেই।আদওয়া সম্রাট মামা কে ভালবাসে।আর কেও না জানলেও ও তো জানে,সম্রাট কতটা পাগল আদওয়ার জন্য। আদওয়ার জন্য জীবন দিতে ও ভাববে না আর নিতেও ভাববে না।ভাবতেই দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো প্রিয়ার।বন্ধুকে কিছুক্ষনের জন্য একা ছেড়ে দেয়াটাই সমুচিত মনে হল। নিরবে প্রস্থান করলো রুম থেকে।

প্রিয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে উঠে বারান্দায় চলে গেলো ওহিদ।জীবনকে বিষাক্ত মনে হচ্ছে। নিজের ভালবাসার মানুষকে অন্য কারো সাথে দেখা কতটা কষ্টের তা একমাত্র যারা একতরফা ভালবাসে তারাই বলতে পারবে।দূর আকাশে জ্বলজ্বল করা নক্ষত্রের দিকে তাকিয়ে দুফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পারল।

🍁🍁🍁🍁🍁🍁

ভার্সিটি ভর্তি পরীক্ষা শেষ হলো আজ।পরিক্ষা মোটামুটি ভালো হয়েছে। এখন রেজাল্ট দেখার পালা।
ওইদিন ওরকম কথা বলার পর সম্রাট ভাইয়ার সাথে আর দেখা হয় নি।শুনেছি তার বাবার ইলেকশন নিয়ে ব্যস্ত আছে। রাজনীতি খুব ভালোই করে সে।মাথার মধ্যে সব সময় কুটিল বুদ্ধি নিয়ে ঘুরে। তার এই রাজনৈতিক কাজকর্ম আমার একদম ভালো লাগে না।

পুকুর পারে বসে গাধা ফুলের বাগানটা দেখছি।অদ্ভুত সুন্দর ভাবে পুকুরের চারো পাড়ে পানি ঘেসে গাধা ফুলের গাছ লাগানো। বড় বড় গাধা ফুল ফুটে পুকুরের সৌন্দর্য কয়েক শ গুন বারিয়ে দিয়েছে। চাঁদের আলোয় এই পুকুর পার স্বপ্নের মতো সুন্দর মনে হয়।
পাশে কারো অস্তিত্ব অনুভব করতেই দেখি তানিয়া আমার পাশে বসেছ।

– কি ব্যাপার। এইখানে একা কেন বসে আছিস?মন খারাপ?

– না মন খারাপ না।এমনিই বসে আছি। তোর কি খবর?

– আরে ধুর। আমার আবার কি খবর। এই জীবনে একটা প্রেম করতে পারলাম না। তোদের ভালবাসা দেখে দেখে আমি ডিপ্রেশনে চলে যাচ্ছি।

– মানে?(অবাক হয়ে)

– সম্রাট ভাই তোকে যেতে বলেছে।আসার সময় দেখা হয়েছিল।তুই নাকি ফোন রিসিভ করছিস না?(চিন্তিত হয়ে)

– আমি কখন ফোন ধরলাম না?(অবাক হয়ে) আমাকে কল ই বা কবে দিল?

– আমি কি জানি?তোরা কি সব কিছু আমাকে জানিয়ে করিস।আজব।(বিরক্ত হয়ে)

আমি আর কথা বাড়ালাম না।যেতে যেহেতু বলেছে তাহলে তো যেতেই হবে।বসে থেকে লাভ নেই।

সম্রাট ভাইয়া দের বাসায় আসতেই তার আম্মুর সাথে দেখা হলো। আমাকে দেখে হাসি মুখেই এগিয়ে এলেন। আন্টি আমাকে খুব ভালবাসে। তবে আমাদের সম্পর্কের ব্যপারে কিছু জানে না।জানি না জানলে তার রিএকশন কেমন হবে।

– আরে আদওয়া যে।তোকে তো দেখাই যায় না।আমাদের ভুলে গেছিস নাকি?

– না আন্টি।আসলে এক্সাম এর চাপ ছিল। জানোই তো,মা এক্সামের সময় আমাকে একদম বেরুতে দেয় না।(মন খারাপ করে)

– এই জন্যই তো এতো ভালো রেজাল্ট করিস।দেখিস,তুই অবশ্যই চান্স পেয়ে যাবি।

– হুম।

আন্টির সাথে কথা বলে সম্রাট ভাইয়ার রুমে চলে এলাম।রুমে ঢুকে ঠোঁট জোড়া আপনা আপনি আলাদা হয়ে গেলো। এই লোক তো নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। তাহলে আমাকে ডাকলো কখন।

– ঘোড়ার মতো দাঁড়ায় না থেকে আমার পা টিপে দে।ইসস কি পা ব্যাথা।

– আপনি তো এতক্ষণ ভালোই ছিলেন।আমাকে দেখেই পা ব্যাথা শুরু হয়ে গেলো? (অবাক হয়ে)
আর আমি আপনার পা টিপে দিব কেন?আমি কি আপনার কাজের লোক নাকি?

বিদ্যুৎ গতিতে উঠে বসলেন তিনি।আমার দিকে কটমট করে তাকিয়ে বললেন,

– কি বললি?আবার বল?

– আরে পা টিপবো মানে।আপনি বললে আমি আপনার গলা ও টিপে দিব। (দাতে দাত চেপে)

– গলা টিপতে হবে না।আপাতত পা টিপ।আর তুই আমার ফোন রিসিভ করছিস না কেন?(ভ্রু কুচকে)

– আপনি কখন আমাকে ফোন দিলেন? (অবাক হয়ে)

– দেই নি?

– না।

-ওহ আচ্ছা।আমি ভাবলাম দিয়েছিলাম হয়তো।

একটা মানুষ কতটা বেহুদা হলে এমন ফালতু কথা বলতে পারে।

– দাড়িয়ে আছিস কেন? (ধমক দিয়ে)

চোখে মুখ কুচকে পা টেপা শুরু করতেই আবার বিপাকে পরলাম। কোন ভাবেই পা দু হাতের মধ্যে নিতে পারছি না। হাড্ডি কি আর টেপা যায়।

– আপনার পা কি লোহা দিয়ে বানানো ভাইয়া?

– নাহ।স্বর্ন দিয়ে বানানো।

ওনার ভাবলেশহীন কথা শুনতেই চুপ করে গেলাম।এর সাথে কথা বলে লাভ নেই। আস্ত সকিনার বাপ একটা।

কিছুক্ষণ যাওয়ার পর হাঠাৎ করে রুমে কেউ প্রবেশ করলো। সামনে তাকাতেই এক সুন্দরী রমনীকে চোখে পড়লো।
মেয়েটা আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে। আমার দিকে এভাবে তাকানোর কি হলো!

– এই মেয়ে, কে তুমি?আর এখানে কি করছো?

ভালো ভাবে তাকাতেই আমাকে পা টিপতে দেখে তাচ্ছিল্যের সাথে বললো,

– ওহ।তুমি নিশ্চয়ই এ বাড়ির মেড।

আমার চোয়াল আপনা আপনি ঝুলে গেল। কি বলে এই মেয়ে।আমাকে দেখে কোন এঙেল থেকে মেড মনে হয়। আমার ভাবনার মাঝেই কর্কশ গলায় বলে উঠলো,

– এখন যাও।আমাদের একা ছেড়ে দাও কিছুক্ষণের জন্য। আই ওয়ান্ট টু স্পেন্ড সাম কুয়ালিটি টাইম উইথ মাই উড বি হাবি।

চোখ বড়সড় করে আমি সম্রাট ভাইয়ার দিকে তাকালাম। সে আমার দিকেই তাকিয়ে আছে।তাকে চুপ করে থাকতে দেখে আমি নিশ্বব্দে চলে আসলাম।

আমার আর এই সব ভালো লাগছে না।একটার পরে একটা অপ্রিতিকর ঘটনা আমার মনকে বিক্ষিপ্ত করে তুলছে।

ড্রয়িং রুমে আংকেল আর আন্টিকে দেখতে পেলাম।সাথে দু জন মানুষ বসে আছে। নিশ্চিত ওই মেয়েটির বাবা মা হবে।

আমাকে দেখে দুজন ভ্রু কুচকে তাকালো।

আন্টি আমাদের পরিচয় করিয়ে দিতেই তারা বাকা চোখে চেয়ে রইলো। আমি সালাম দিয়ে চলে আসতে চাইতেই তাদের কথা শুনে থেমে গেলাম।

– আপা আমরা আর দেড়ি করতে চাইছি না।যতটা তারাতাড়ি সম্ভব বিয়েটা হয়ে গেলেই চিন্তা মুক্ত হতে পারবো।সম্রাট আমাদের আসতে বলাতেই আমার আজ চলে এলাম।আর ওদের সম্পর্ক তো অনেক দিনের।ঢাকায় তো দুজনকে আলাদাই করা যায় না।ছেলে তো বলেই দিয়েছে এবার মারিয়া কে ঘরে তুলতে চায়।

স্তব্ধ হয়ে কিছুক্ষন দাড়িয়ে থেকে ঘুরে দাড়ালাম তাদের দিকে।তখনই সম্রাটের সাথে মারিয়ার আগমন। দুই জন দুজনের হাত ধরে দাড়িয়ে আছে। সম্রাট ভাইয়া আমার দিকে একবার তাকিয়ে তার বাবার পাশে গিয়ে বসে পরলেন।

– বিয়ের ডেট ফিক্সড করে ফেলি কি বলো?

– জ্বি আংকেল। আগামী মাসেই আমাকে প্যারিস শিফট হতে হবে।যত তারাতাড়ি হয় ততই ভালো।

সম্রাট ভাইয়ার কথা শুনে আর দাড়ালাম না। মানুষ কতটা ভালো অভিনয় করতে পারে তা তাকে না দেখলে জানতেই পারতাম না।

আমি তো সব কিছু মেনেই নিয়েছিলাম।তাহলে কেন আবার আমাকে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে ফাসালো।কি চায় সে?
তবে আমি আর তার কথায় ভুলবো না।এইসব যদি মিথ্যা ও হয় তবু্ও আমি আর তার কাছে ফিরবো না। মন ভাংগার কষ্ট খুব ভয়ংকর হয়।হোক সেটা ক্ষনিকের জন্য। আমাকে মৃত্যু সমান কষ্ট দিয়ে সে ক্ষমা পেতে পারে না।
আমি জানতে চাই না সে এমন কেন করেছে। কিচ্ছু শুনতে ও চাই না। আমি শুধু দুরত্ব চাই।

সম্রাট অনুভূতিহিন চোখে তার বাবার দিকে তাকিয়ে থেকে উঠে রুমে চলে গেল।তাদের জিবনে যে ঝর উঠেছে তা সামলাতে একটু সময় লাগবে।তত দিনে না সে তার প্রেয়সীকে হারিয়ে ফেলে। কিন্তু পরিবার কে রক্ষা করতে হলে কিছুটা সময় তার চাই।

চলবে,,,
(কেউ অস্থির হবেন না প্লিজ।সব পরিস্কার হবে কয়েক পর্বের মধ্যেই।আমার এক আত্মিয় হসপিটাল ছিল, তাকে দেখতে গিয়েছিলাম আর নিজেও কিছুটা অসুস্থ তাই দু দিন গল্প দিতে পারি নি।এখন থেকে নিয়মিত পাবেন।বোনাস পেতে চাইলে কমেন্ট করে জানান।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here