পারবোনা আমি ছাড়তে তোকে ❤❤ #লেখিকাঃ লামিয়া ইসলাম তন্নি ❤ #পর্বঃ ১১❤ .

0
344

#পারবোনা আমি ছাড়তে তোকে ❤❤
#লেখিকাঃ লামিয়া ইসলাম তন্নি ❤
#পর্বঃ ১১❤
.
.
🍁
.
রাত ৮ টা বেজে ১৫ মিনিট বাসায় এসে একবার কলিং বেল বাজাতেই দরজা খুলে গেল। ভালো হয়েছে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি। খুব টায়ার্ড লাগছে। দরজা খোলার পর সবাইকে দেখতে পেলাম দুটি মানুষকে ছাড়া। তাহলে কি আমার ধারণাই ঠিক? যাক এট লিস্ট ওরা তো ভালো আছে এটাই অনেক। রুমে গিয়ে আপুর সাথে একটু কথা বলব দেখি।
.
কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই ভাইয়া আমাকে রুমের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। যাওয়ার সময় চোখ পড়ল সূর্য ভাইয়ার রুমের দিকে। একি ওটা কে শুয়ে আছে উনার রুমে? তাও এই অসময়? আচ্ছা,, উনি তো কাউকেই উনার রুমে এলাউ করে না তাহলে? উনার কথা মাথায় আসকেই বুকের ভেতর কেঁপে উঠল আমার। উনি শুয়ে আছেন? তাও এসময়? বাট হুয়াই?? আর কিছু বোঝার আগেই ভাইয়া আমাকে রুমে নিয়ে গেলেন।
.
.
রাত ১ টা বেজে ১০ মিনিট। এতক্ষণে নিশ্চয়ই সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। অনেক কষ্টে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ালাম। এখনো ঠিক করে হাঁটতে পারছিনা। উনার রুমটা আমার রুমের পাশে হওয়ায় তেমন একটা হাঁটতে হয়নি আমার। রুমের সামনে গিয়ে আপুকে কয়েকবার ডাক দিলাম। কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে দরজা ঠেলে ভেতরে ভিতরে ঢুকেই থমকে গেলাম। অবাকের ধাপটা এতোটাই বেড়ে গেছে যে নিজের অজান্তেই মুখ থেকে বেড়িয়ে এলো…..
.
—- সূর্য ভাইয়া!
.
অবাকের পরিমানটা রাগে পরিণত করে নার্সের উদ্দেশ্যে বললাম….
.
—- ইক্সকিউজ মি!! শুনছেন? (চেঁচিয়ে)
.
আমারে চিৎকার শুনে নার্সটা লাফিয়ে উঠে বসলেন। সোফায় গা এলিয়ে শুয়ে ছিলেন। দেখে মনে হচ্ছে মাত্রই চোখে ঘুম এসে ভর করেছিল। এভাবে ঘুমটা ভাঙায় বেশ ভয় পেয়েছে বলে মনে হচ্ছে। কোনো রকম নিজেকে সামলে নিয়ে বলে….
.
—- জ…জ্বী ম্যাম কিছু বলবেন?
.
—- উনি এভাবে শুয়ে আছেন কেন? উনার মাথায় ব্যান্ডেজ কেন? আর এসবই বা কি? হোয়াট দ্যা হেল? ( চেঁচিয়ে)
.
—- আসলে ম্যাম উনি তো কোমায় চলে গেছেন। আপনি জানেন না? আপনারও তো শরীর তেমন ভালো না এভাবে দাড়িয়ে না থেকে বসুন।
.
নার্সের কোনো কথাই যেন আমার কানে ঢুকছেনা। বারবার ” উনি কোমায় ” কথাটাই কানে বাজছে। হঠাৎই চোখের সামনে সব ঝাপসা হয়ে এলো কিছুক্ষণের ভিতরই লুটিয়ে পড়লাম মাটিতে।
.
🍂
.
চোখ মেলতেই ভাইয়ার সেই চিন্তিত শুকনো মুখটা দেখতে পেলাম। আম্মু, বাবা, বড় আব্বু, বড় আম্মু সবার মুখে চিন্তার ছাপ আম্মুর চোখে পানি। আমি ভাঙা গলায় বললাম….
.
— ভাইয়া! উনার কি হয়েছে বল না? কিভাবে হলো বলনা প্লিজ! ( মিনতির স্বরে)
.
—- তেমন কিছুই না। সামান্য…
.
ভাইয়া কথা শেষ করার আগেই বললাম…
.
—- ভাইয়া! কিছু লুকোনোর চেষ্টা করবেনা একদমই। তেমন কিছুই না হলে কেউ কোমায় চলে যায় না ভাইয়া। ( চেঁচিয়ে)
.
—- বনু প্লিজ চেঁচাস না প্লিজ!! তোর মাথায় আবার আঘাত পেলে আবার সেন্সলেস হয়ে যাবি তো। প্লিজ…
.
—- আচ্ছা চেঁচাবো না। আপু কই?
.
—- নিশ্চুপ…
.
—- কি হলো বল আপু কই? আপু কই বলো? ( চিৎকার করে) আপু তো উনাকে খুব ভালোবাসতো তাহলে? তাহলে কে উনি এই অবস্থায় একা? হুয়াই? ( রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে)
.
—- বনু আগে শান্ত হো সব বলব।
.
—- তোমাদেরকে কিছুই বলতে হবে না। সব আমি জেনে নিব। সড়ো এখান থেকে।
.
ভাইয়াকে সড়িয়ে খুড়িয়ে খুড়িয়ে উনার রুমে যাই। উনার রুমে গিয়েই শুরু হয় আমার পাগলামো। পেছন থেকে সবাই ডাকছে কিন্তু কে শুনে কার কথা?
.
—- সূর্য ভাইয়া? এই সূর্য ভাইয়া শুনছেন? এই সূর্য… সূর্য( চিৎকার দিয়ে) তুই শুনতে পাচ্ছিস না আমি ডাকছি? আপু কই? এই সূর্য ভাইয়া আপনার বউ কই বলুন না? (উনাকে ধাক্কা দিয়ে) ভাইয়া প্লিজ বলুন না। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। ভীষণ কান্না পাচ্ছে! আমি কিন্তু কাঁদব! আপনারা না বলতেন আমাকে কখনো কাঁদতে দিবেন না? তাহলে আজ কেন চুপ? দেখুন আমি কাঁদছি। আমার চোখের পানি তো আপনাদের সহ্য হয় না। তাহলে আজ কীভাবে সহ্য করছেন বলুন? সূর্য…. চুপ করে আছিস কেন? আমার ভীষণ রাগ লাগছে। তোর চুপ থাকা সহ্য হচ্ছে না। প্লিজ…. একটু কথা বল না।
.
সবাই এতক্ষণ দাঁড়িয়ে আমার পাগলামো দেখছিলেন। ভাইয়া এবার এসে আমার পাশে দাঁড়ালেন। আম্মু এখনো কেঁদে চলেছে। ভাইয়া কাঁপা গলায় বললেন….
.
—- ব.. বনু প্লিজ একটু শান্ত হো।
.
ভাইয়াকে পাশ কাটিয়ে গিয়ে আম্মুর উদ্দেশ্য বললাম….
.
—- কি হইছে তোমার? এভাবে মরা কান্না জুড়ে দিলা কেন? কেউ মরে নি। চুপ করো। নয়তো এখান থেকে যাও। দেখতে পাচ্ছ না উনি ঘুমাচ্ছে? ( প্রচন্ড রেগে)
.
আম্মু কিছু বলল না কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল। আমি আবার সূর্যর কাছে গিয়ে পাগলামো শুরু করলাম।
.
—- সূর্য ভাইয়া ও সূর্য ভাইয়া প্লিজ উঠুন না। ( করুণ স্বরে) একটাবার কথা বলুন। আমি না আর পারছিনা। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। সত্যি আর নিতে পারছিনা। খুব কষ্ট হচ্ছে আমার। জাস্ট একটাবার আলো বলে ডাকুন না প্লিজ… ( কাঁদতে কাঁদতে)
.
—- আলো শান্ত হো প্লিজ! তুই এখনো অসুস্থ বনু। ( আমার কাঁধে হাত রেখে)
.
—- ভাইয়া প্লিজ উনাকে বলো না একটু কথা বলতে। আপু কই তা বলতে। প্লিজ বলো ভাইয়া! ভাইযা আপু কি ওয়াশরুমে? না.. ওয়াশরুমে থাকলে তো এতোক্ষণে বেড়িয়ে আসতো। তাহলে কই ওর রুমে? না… সেখানেও তো নেই। তাহলে কই? সবাই চুপ কেন? ( চিৎকার করে) কেউ তো বলো প্লিজ আপু কই? ( কাঁদতে কাঁদতে) আমি আর নিতে পারছিনা।
.
বাবার সামনে গিয়ে দাঁড়াই। বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলি….
.
—- বাবা আমি তো তোমার প্রিন্সেস তাই না? আমি কাঁদছি দেখ বাবা। তোমার প্রিন্সেস কাঁদে। প্লিজ.. বাবা বলো না আপু কই? ( কাঁদতে কাঁদতে)
.
কেউ কিছু বলছে না। সবাই নীরবে চোখের পানি ফেলছে। নীরবতা ভেঙে রহিমা বলে উঠে…..
.
—- ছোড আফামনি আপনে থামেন আমি কইতাছি।
.
এতোক্ষণে আমি রহিমার সামনে গিয়ে দাঁড়াই। রহিমা শুকনো ঢোক গিলে বলতে শুরু করে….
.
—- বড় আফামনি আর নাই। আপনে একটু শান্ত হোন। ( রহিমা আমাদের বাড়িতে কাজ করে। মেয়েটা খুবই ভালো। সবার সাথে খুব সুন্দর করে কথা বলে।)
.
—- নাই মানে? কোথায় গেছে আপু? তাও উনাকে এই অবস্থায় রেখে?
.
ভাইয়া ওকে থামানোর আগেই ও বলে ফেলে। আর ওর কথা শুনে আমার পায়ের নিচের মাটি সড়ে যায় ।
.
—- বড় আফামনি না ফেরার দেশে চলে গেছে আফামনি। আপনার যেদিন এক্সিডেন্ট হইছে তার দুইদিন পরেই।
.
এইটুক বলেই রহিমা কান্নায় ভেঙে পড়ে।
.
কথাটা শুনে আমি থমকে যাই। কিছুক্ষনের বাদে কিছু একটা ভেবে ঘুরে দাঁড়াই। উনার পাশে গিয়ে বসে.. …
.
—- সূর্য ভাইয়া আপনি শুনেছেন ওরা কি বলছে? দেখুন না ওরা বলছে আপনার চাঁদ নাকি আর নেই। আর কখনোই ফিরবেনা। কিছু বলবেন না? প্লিজ কিছু বলুন না প্লিজ…..
.
আর কিছু বলতে পারলাম না। তার আগেই ঢলে পড়লাম উনার বুকে।
.
🍁
.
রহিমার ডাকে ভাবনার ছেঁদ হলো। চোখের কোণে জমে থাকা বিন্দু বিন্দু জল মুছে পেছন ফিরে তাকালাম।
.
—– ছোড আফা বড় মায় আফনানারে ডাহে। কইছে তাড়াতাড়ি আইতে। আফনে নাহি কলেজ যাইবেন। ৮:২০ বাইজা গেছে তো।
.
—- তুমি যাও আমি আসছি।
.
কীভাবে এতো লেট হলো বুঝতেই পারলাম না। দেখতে দেখতে কতো সময় কেটে গেল। বুঝতেই পারলাম না। কি আশ্চর্য!! বদলে গেল কতো কিছু! সবাই দিব্বি আছে। কিন্তু আমি? চোখ খুব জ্বলছে। হয়তো ভীষণ কান্না পাচ্ছে। বুকের ভেতর জমে থাকা চাপা কষ্ট আর দীর্ঘশ্বাস নিয়ে নিচে নেমে গেলাম।
.
—- বড় আম্মু ডেকেছো আমায়?
.
—- হ্যাঁ,, ডেকেছি তো। এখন কেমন আছে আমার সোনা মেয়েটা? ( গালে হাত রেখে)
.
—- আলহামদুলিল্লাহ। ( হালকা হেসে)
.
—- চোখমুখ এমন লাগছে কেন? রাতে ঘুমাস নি মা?
.
—- না… মানে
.
—- কি মানে মানে করছিস? কি হয়েছে বলতো?
.
—- না বড় আম্মু তেমন কিছুই না। ঘুম আসছিল না। আপুকে খুব মিস করছিলাম।
.
এইটুকু বলেই বড় আম্মুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলাম।
.
—– কাঁদিস না মা। সবাই তো চিরকাল থাকবে না। আমার মেয়েটার চোখের পানি সহ্য হয়না আমার।
.
বড় আম্মু আমাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে আমার ডান গালটা লক্ষ করে বলে….
.
—- আলো তোর গালে এটা কিসের দাগ?
.
আমি কি বলব খুঁজে পাচ্ছি না । পেছন থেকে ভাবি বলে ওঠে ও ভার্সিটিতে যাবে। এই সুযোগে আমি কথা ঘুড়িয়ে রুমে চলে আসি। কারণ মিথ্যা বলতে আমি পারতাম না।

#চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here