পারবোনা আমি ছাড়তে তোকে ❤❤ #লেখিকাঃ লামিয়া ইসলাম তন্নি ❤ #পর্বঃ ১২

0
371

#পারবোনা আমি ছাড়তে তোকে ❤❤
#লেখিকাঃ লামিয়া ইসলাম তন্নি ❤
#পর্বঃ ১২❤
.
.
🍂
.
রুমে এসে দেখি উনি অফিসের জন্য তৈরি হচ্ছেন। আমি দেখেও না দেখার ভাব নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে যাই।

কিছুক্ষণ পর….
.
শাওয়ার নিয়ে বেড়িয়ে দেখি উনি এখনো তৈরি হচ্ছেন। মাই গড! ছেলেদের এতো টাইম লাগে তৈরি হতে জানা ছিল না। আমি যে মেয়ে মানুষ আমারও তো এতো টাইম লাগে না। এমনভাবে সাজছে দেখে তো মনে হচ্ছে অফিসে না বিয়ে করতে যাচ্ছে। যত্তসব আজাইরা পাবলিক! হুহ,, ঢং দেখলে সারা শরীর জ্বলে যায়। কিন্তু যাই বলি না কেন,, কলো জিন্স, নীল শার্ট ও কালো কোট বাম হাতে ব্রান্ডের ঘড়ি, কপালে এসে পড়েছে কতোগুলো সিল্কি চুল, ডার্ক রেড ঠোঁট, থুঁতনির নিচে ডার্ক কালো একটা তিল দেখতে কিন্তু সেই মারাত্মক লাগছে। পুরোই চকলেট বয়। ইচ্ছে তো করছে আইসক্রিমের মতো চেটেপুটে খাই😍। ইশশ! এতো কিউট কেন লোকটা? যদি কারো নজর লেগে যায় 🥺? তখন আমি কার উপর ক্রাশ খাবো🥺? আমার এতো সুন্দর ভাবনার মাঝে এক বালতি পানি ঢেলে দিলেন। সাথে ধমকের সুরে বললেন…..
.
—- কি হয়েছে? কি দেখছিস এমন করে? দেখে তো মনে হচ্ছে চোখ দিয়ে গিলে খাবি? ( রেগে)
.
—- গিলে না আইসক্রিমের মত চেটেপুটে খেতে চাই৷ একদম চকলেট আইসক্রিম। ( বিরবির করে)
.
—- কি বললি? ( ধমক দিয়ে)
.
—- কককই কিছুনা। আমি কলেজ যাবো।
.
কথাটা বলে কোনো রকম রুম থেকে বেড়িয়ে এলাম।
.
.
খাবার টেবিলে বসে আছি। সবাই সবার মতো খাচ্ছে। উনিও উনার মতো খেয়েই চলেছেন। কিন্তু আমি? একবার এর দিকে তো একবার ওর দিকে তাকাচ্ছি। তাকাচ্ছি বললে ভুল হবে খিচুড়ি পাকাচ্ছি আর বুঝার চেষ্টা করছি যদি আমি এখন খাবো না বলি তো কে কি বলবে। আমার একপাশে সূর্য অন্যপাশে ভাইয়া। ভাইয়া বেশ কিছুক্ষণ ধরে আমাকে লক্ষ করছিল। হঠাৎ করে বলে ওঠে….
.
—- বনু খাচ্ছিস না কেন?
.
ভাইয়ার কথার জবাবে কি বলব বুঝতে পারছি না। তাই চুপ করে আছি। ভাইয়া আবারও বলেন…..
.
—- আয় বনু আমি খাইয়ে দিই।
.
ভাইয়ার কথার উত্তরে কিছু বললাম না। শুধু মাথা নাড়ালাম। ভাইয়া আমাকে খাইয়ে দিতে গিয়ে হঠাৎ প্লেটটা টেবিলে রেখে আমার বা গাল উদ্দেশ্য করে বলে….
.
—- আলো তোর গাল লাল কেন? ( শক্ত গলায়)
.
এবার যেন আমার জান বেড়িয়ে আসার উপক্রম। এতক্ষণে সবাই খাওয়া রেখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। এখন আমি কি বলব? আমি কিছু বলার আগেই সবাই একই প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন আমায়। এখন কি বলব 🥺? আড় চোখে উনার দিকে তাকালাম। কি আশ্চর্য! উনি এখনো আগের মতোই খেয়ে যাচ্ছেন! দেখে মনে হচ্ছে এই মুহূর্তে খাওয়াটা উনার সবচেয়ে ইম্পর্টান্ট কাজ। খাবার থেকে চোখ সরালেই যেন মহাপ্রলয় সংঘটিত হবে। একবার তাকাচ্ছেনও না? কি অদ্ভূত পাবলিক রে বাবা😱! একবার তাকালে কি দুনিয়া ধ্বংস হয়ে যাবে রে🤔? ইচ্ছে তো করছে এক ধাক্কা দিয়ে চেয়ার থেকে ফেলে দিই। অসভ্য লোক কোথাকার😤! এখন সবার সামনে বলে দিই তুই আমারে মারছোস? বড় আব্বু একদম ১২ টা বাজায় দিব তোর। অসভ্য একটা, ডেভিল, বুইড়া খা খা খাইতে খাইতে শহীদ হো আমার কি? হুহ,,😏। আমি এহনই সবাইরে কমু তুই আমারে মারছোস। দেখ তোর কি হাল করি ফাজিল বুইড়া খাটাশ একটা। আমারে মারছোস না? আজকে তোর একদিন কি আমার একদিন। হুহ,, 😤 ভাবনার মাঝেই ভাবি ডেকে উঠলো….
.
—- আলো হোয়াট হ্যাপেন্ড? ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে কি ভাবছো? আর ইউ ওকে?
.
ভাবির কথায় থতমত খেয়ে গেলাম। কোনোরকম স্বাভাবিক হয়ে বললাম….
.
—- ইয়াহ আপু। কাল রাতে বারান্দায় গিয়েছিলাম তখন মুখে একটা মশা বসেছে আর সেটাকে মারতে গিয়েই আমার এই অবস্থা। ( নেকা কান্না করে) সালার মশা একবার খালি পাই তোরে তেল ছাড়া ভাজমু হুহ,,,
.
আমার কথা শুনে সবাই হুহা করে হেঁসে উঠলেন। কিন্তু ভাইয়ার মুখে হাসি নেই। সবাই আমার মিথ্যেটাকে সত্যি বলে মেনে নিলেও এই একমাত্র ব্যাক্তি যে আমার মুখ দেখে সবটা বুঝে যায। সবাই বলে মায়েরা নাকি সন্তানের মুখ দেখে মন পড়তে পারে বাট আমার ক্ষেত্রে তা উল্টো। আমার ভাইয়া সব বুঝে যায়।
.
ভাইয়া কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই আমি ভাইয়াকে থামিয়ে দিলাম। ভাইয়া কিছু না বলে আমার হাত থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে খাবার রেখে উঠে যায়। সবাই অবাক হয়ে ভাইয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি আড় চোখে উনাকে দেখে নিয়ে খাবারটা রেখে উঠে এলাম। ওখানে বসে বিরক্তি বাড়ানোর কোনো মানেই হয় না।
.
🍁
.
কলেজের গেটে পা রাখতেই সাড়া শরীর জুড়ে অদ্ভুত এক শিহরণ বলে গেল। আগে কলেজ ওয়ার্ডটাই ছিল এক ইনজয়ের ডিব্বা। কতো মজা করতাম। দুষ্টুমি করতাম,, টিফিন টাইমে ক্যান্টিনে বসে জমিয়ে আড্ডা দিতাম আরো কতো কি। কতোগুলো দিন হয়ে গেল সেসব কিচ্ছু হয় না। ভাবনার মাঝেই হুট করে পেছন থেকে কেউ একজন জড়িয়ে ধরল। পেছন ঘুরে তাকাতেই চমকে উঠলাম আমি। তন্নি! আমাকে কিছু বলতে না দিয়েই বলে….
.
—- কেমন আছিস? বিয়ে করে তো আমাদেরকে ভুলেই গেছিস! জানিস কতো মিস করেছি তোকে? তোর দেওয়া বকাগুলোকে, থাপ্পড়গুলোকে?তুই আমায় চুন্নি বলে ডাকিস না কতোগুলো দিন হয়েছে বলতো? কতো মিস করতাম তোর কোনো ধারণা আছে? এট লিস্ট একটাবার ফোন তো করতে পারতি?
.
আমি একদৃষ্টিতে তন্নির দিকে তাকিয়ে আছি। ওর কথাগুলো ছিল খুবই আবেগপ্রবণ। ওর বলা প্রতিটা কথায় প্রকাশ পেয়েছে আমার প্রতি ওর হাজারটা অভিযোগ। ও তো ঠিকই বলেছে,, এতোগুলো দিনে একটিবারের জন্যও ওর খবর নিই নি। পুরো কলেজে তো আমরা দুজনেই বেস্ট ফ্রেন্ড। যদিও মাঝে মাঝে তিথি আমাদের দলে যোগ দেয়। বাট দরকারের সময়। তন্নির কথায় ধ্যান ভাঙলো আমার….
.
—- কিরে কথা বলবি না? প্লিজ একটু কথা বল। কতোদিন তোর সাথে জমিয়ে আড্ডা দিই না বলতো? ( টলমল চোখে)
প্রয়োজনে আমাকে মার তাও একটু কথা বল আলো প্লিজ!
.
কথাগুলো বলতে বলতে তন্নির চোখ থেকে দু’ফোটা জল গড়িয়ে পড়ল। এবার আমি আর চুপ থাকতে পারলাম না। নিজের কষ্টটাকে বুকে চেপে রেখে ওকে জড়িয়ে ধরলাম। ধরা গলায় বললাম….
.
—- এই চুন্নি সেমরি কান্দস ক্যান? ঠাডায় লাগামু একটা।
.
আমার কথা শুনে তন্নি খিলখিল করে হেসে ওঠে। ওর সাথে সাথে আমিও হেসে উঠলাম। হাসলে কতো সুন্দর লাগে মেয়েটাকে! অদ্ভুত এক মায়া আছে ওর মুখে। তবুও যে কেন কাঁদে?
.
🍂
.
ব্রেকটাইমে আমি আর তন্নি ক্যান্টিনে বসে আছি। কিন্তু অদ্ভুত বিষয় হলো কারো মুখে হাসি নেই। না আছে আগের সেই অাড্ডা। তন্নি এটা ওটা নিয়ে বকবক করেই যাচ্ছে। কিন্তু আমার সেদিকে খেয়াল নেই। আমার স্থির দৃষ্টি ক্যান্টিন থেকে বেশখানিকটা দূরে জারুল গাছের হলদে দুটি পাখির দিকে। কতো সুন্দর লাগছে! মনে হচ্ছে একজন ওপর জনকে খুব ভালোবাসে। দেখে মনে হচ্ছে দু’জনে প্রেম করতে ব্যস্ত। নিজের মনেই হেসে উঠলাম। অদ্ভুত! কি ভাবছি এগুলো আমি?
.
গাছ থেকে চোখ ঘুড়িয়ে সামনে তাকাতেই আমি কিছুটা ঘাবড়ে যায়। আমার ঠিক সামনে বসে আছে মাহিদ। আমাকে ভয় পেতে দেখে বলল…
.
—- ভয় পেলে নাকি? আমি ডাকতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ডাকলে তো তোমার হাসিটা দেখতে পেতাম না। তাই ডাকিনি।
.
উনার কথায় রাগে আমার গা পিত্তি জ্বলে গেল। আমার হাসি দেখে তোর কি রে? যা না গিয়ে তোর বউর হাসি দেখ। অসহ্য!
.
মাহিদ কলেজের সবচেয়ে হ্যান্ডসাম ও সুন্দর ছেলে। পড়াশুনাও ভালো। কলেজের সব মেয়েরা মাহিদ বলতে পাগল। কিন্তু ও সেই প্রথম দিন থেকেই আমার পেছনে পড়ে আছে।
.
আমাকে কিছু না বলতে দেখে আবার বলে উঠে…..
.
—- হেই কিউট গার্ল কিছু তো বলো। কেমন আছো?
.
—- জ্বি ভালো ভাইয়া। আপনি? আর হ্যা,, আমার একটা নাম আছে। সো কিউট গার্ল না বললে খুশি হবো।
.
—- আরে আরে তুমি রেগে যাচ্ছো কেন? আচ্ছা তোমার নাম ধরেই ডাকবো। নাউ হ্যাপি?
.
—- ইয়াহ।
.
মাহিদকে আর কিছু না বলতে দিয়ে সেখান থেকে চলে আসতে নিলে মাহিদ পেছন থেকে আমার বামহাতটা চেপে ধরে…..
.
আমি কিছুটা রেগে তাকাতেই হাতটা ছেড়ে দেয়।
.
—- আম সরি আলীশা। একচুয়ালি আমি বুঝতে পারিনি তুমি রেগে যাবে।
.
মাহিদের কথার প্রতিত্তোরে আমি কিছু না বলে তন্নিকে নিয়ে ওখান থেকে চলে আসি। যদিও মাহিদ কয়েক সেকেন্ডের জন্য আমার হাত ধরেছিল। কিন্তু তার জন্য যে ভয়ঙ্কর কিছু অপেক্ষা করছে আমার জন্য তা আমি বুঝতেও পারিনি।

#চলবে…..

[ রি-চেইক করা হয়নি ভুলক্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। সবাই ভালো থাকবেন। ধন্যবাদ ❤]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here