পারবোনা আমি ছাড়তে তোকে ❤❤ #লেখিকাঃ লামিয়া ইসলাম তন্নি ❤ #পর্বঃ ১২ (#Extra)❤ .

0
338

#পারবোনা আমি ছাড়তে তোকে ❤❤
#লেখিকাঃ লামিয়া ইসলাম তন্নি ❤
#পর্বঃ ১২ (#Extra)❤
.
.
🍁
.
বিকেল ৫ টা। একটু আগে কলেজ থেকে ফিরেছি। মাত্র ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই আমার বেদ্দপ মার্কা ফোনটা বেজে উঠল। মেজাজটাই বিগড়ে গেল। বিরক্তি নিয়ে ফোনের স্ক্রিনে তাকাতেই বড় বড় অক্ষরে লিখা “চুন্নি” নামটি চোখে পড়ল। নামটি দেখে নিজের মনেই হেসে উঠলাম। ফোনটা রিসিভ করে কিছু বলার আগেই ওপর পাশ থেকে উত্তেজিত কন্ঠে ভেসে এলো…..
.
—- আলো,,, আলো জানিস কি হইছে?
.
ফোনটা হেসে খুললেও ওর কথা শুনে মুহুর্তেই মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। দাঁতে দাঁত চেপে বললাম….
.
—- তুমি কি আমাকে বলেছো সোনা যে আমি জানবো?
.
—- আলো বাবু তুই কি রেগে যাচ্ছিস? (ভীত স্বরে)
.
—- নাহ.. রাগব কেন? আমি তো খুব আনন্দ পাচ্ছি। ( দাঁতে দাঁত চেপে)
.
—- রাগ করিস না প্লিজ!
.
—- বেদ্দপ ছেমরি,বান্দর মাইয়া,কুত্তার প্রেমিকা,বিলাইর ডার্লিং,পিচ্চি চুন্নি,গাধি, ডাফার আরো কিছু কমু? নাকি বলবি কি বলতে ফোন করছোস?
.
—- এইতো বলছি তো..
.
—- আবার বনিতা? তাড়াতাড়ি বল ডাফার! নয়তো ফোন রাখলাম বাই।
.
—- এই না না শুন বলছি তো… আজ না আমি একটা খুব সুন্দর, কিউট, ড্যাশিং ছেলে দেখছি। উফ! কি সুইট! হট! মাই গড!
.
—- এইতো শুরু হইছে তোর লুচ্চামি? কুত্তী তুই মাইয়া হইয়া এই অবস্থা। না জানি পোলা হলে কি করতি! ফোন রাখ ডাফার!
.
—- হ বুঝি তো। আমি তো আর তোমার মতো ড্যাশিং, ক্রাশিং, কিউট জামাই পাই নাই যে সারাদিন তারেই লইয়া থাকুম। তুমি বুঝবা কি?
.
—- চুপ কর ডাফার! ফোন রাখ।
.
ফোনটা কেটে চোখটা অফ করতেই উনার কন্ঠ ভেসে এলো কানে। কারো সাথে ফোনে কথা বলতে বলতে রুমে ঢুকলেন উনি। উনাকে দেখেই মুহূর্তেই মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল। কিন্তু কথা হচ্ছে উনি তো এসময় ফিরেন না। তাহলে আজ কেন? কিন্তু জিজ্ঞেস করে আজ আবার আরেকটা চড় খেয়ে অপমানিত হওয়ার কোনো প্রশ্নই হয় না। উনার প্রতি থাকা ভালোবাসাটাও ধীরে ধীরে বিরক্ত আর ঘৃণায় পরিণত হচ্ছে। এমুহূর্তে উনার সাথে কথা বলার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে আমার নেই। কিন্তু মনটা বারবার বলছে উনার সেই ফর্সা মুখটাকে একবার ছুঁয়ে দিই। বাট মনের কথা মাটি চাপা দিয়ে বিরক্তি আর রাগ নিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে আসতে নিলাম।
.
দরজা বরাবর আসতেই আচমকাই উনি পেছন থেকে আমার বা হাতটা ধরে হেঁচকা টানে আমাকে দেয়ালে চেপে ধরলেন। সাথে সাথে ব্যাথায় কুঁকড়িয়ে উঠলাম আমি। কোনো রকম নিজেকে সামলে নিয়ে চোখেমুখে রাগ ফুটিয়ে তুলে বললাম….
.
—- কি চায় হাত ধরেছেন কেন? হাত ছাড়ুন আমার লাগছে।
.
—- হ্যাঁ,, আমি ধরলেই তোর ব্যাথা লাগে। অন্য কেউ ধরলে তো আদর লাগে না? আমি ব্যাথা দিয়ে টাচ করি আর সবাই ভালোবাসে টাচ করে না? ( রাগে চোখ মুখ লাল করে)
.
—- মানেহ? কি বলতে চান আপনি?
.
—- একদম নেকামো করবি না আলো। আমি ধরেছি আর ছাড়তে বলছিস? মাহিদ ধরেছিল আর তো ছাড়তে বলিস নি? তাকিয়ে ছিলি। নাকি ওর ছোঁয়ায় ভালো লেগেছে?
.
—- দেখুন…
.
—- কি দেখব? হ্যাঁ,, কি দেখব? নিজের বউ কিভাবে পরপুরুষের সাথে মাখামাখি করে তাই দেখব? যা দেখার দেখে নিয়েছি। আর কিছু দেখার নেই।
.
—- মুখ সামলে কথা বলুন।
.
—- মুখ সামলে? আমি মুখ সামলেই কথা বলছি। কাজ করার সময় মনে থাকেনা? আমাকে দিয়ে হয় না তাই ওর কাছে গিয়েছিস তাই না? আমাদের ফ্যামিলির কেউ তো তোর মতো ক্যারেক্টরলেস নয়। ধীরে ধীরে বাজে মেয়েদের খাতায় নাম শিখাচ্ছিস? ছিহ আমার ভাবতেও ঘৃণা করছে মানুষ এতটা বাজে কি করে হয়? বাড়িতে স্বামী রেখে কলেজে পড়াশুনার নাম করে গিয়ে অন্য ছেলেদের সাথে ঢলাঢলি করতে লজ্জা করে না? বাবা- মা এই শিক্ষা দিয়েছে? এসব করতে কলেজে যাস? শুধু শুধু সবাইকে মিথ্যে বলে কলেজে না গিয়ে বাড়িতে বলে গেলেই তো হয় যে,, তোমাদের ছেলেকে দিয়ে আমার হয় না। আমি অন্যকারো কাছে যাচ্ছি। শুধু শুধু আমার লাইফটা কেন নষ্ট করলি?
.
এতোক্ষণ ব্যাথায় কুঁকড়াচ্ছিলাম আর নিরবে চোখের পানি ফেলছিলাম। কিন্তু উনার সেদিকে কোন পাত্তাই নেই। উনি আমাকে যা নয় তা বলে অপমান করছে। কিছু না করেও দোষী হওয়ার মানেই হয় না। আর না মানে হয় এমন চিপ মেন্টালিটির মানুষকে প্রশয় দেওযার। তাই আর চুপ থাকতে পারলাম না। উনাকে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে সড়িয়ে রক্তে ভেসে যাওয়া হাতে উনার কলার চেপে ধরলাম। হাতে কাঁচের চুরি ছিল৷ উনি দেয়ালে চেপে ধরায় চুরি ভেঙে হাত কেটে গিয়েছে। হাত থেকে রক্ত ঝড়ছে অর্নবল। সাথে ঝড়ে পড়ছে মনের জমানো কষ্ট গুলো চোখের জল হয়ে। ধরা গলায় বলতে লাগলাম….
.
—- মাইন্ড ইউর ল্যাঙ্গুয়েজ মি.সূর্য। আমি আপনার জীবন কখনোই নষ্ট করিনি। বরং আপনি আমার জীবন নষ্ট করেছেন। আপনি সেদিন সব দোষ আমার ঘাড়ে দিয়েছিলেন। কেন আমি বিয়েটা আটকালাম না? আরেহ এতোই যখন আপনার প্রবলেম ছিল তো আপনিই আটকাতেন। আপনি চাইলে যেকোনো মুহূর্তে বিয়েটা আটকাতে পারতেন। তাহলে কেন আটকালেন না? কে না করেছিল? আমি? নাকি শরীরের লোভ সামলাতে পারেন নি?
.
—- আলো…..
.
—- সাট আপ। চেচাচ্ছেন কেন? আপনি বলেছেন আমি শুনেছি। এখন আমি বলব আপনি শুনবেন। আপনি যেমন বাধ্য হয়ে বিয়েটা করেছেন। ঠিক তেমনি আমিও বাধ্যই ছিলাম। আপনারই শুধু বাবা মা নেই আমাদেরও বাবা মা আছে। শুধু মাত্র তাদের কথা রাখতেই আপনাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছি। নয়তো আপনার মতো চিপ মেন্টালিটির লো ক্লাস মানুষকে বিয়ে করার প্রশ্নই আসে না।
.
—- আলো….( দাঁতে দাঁত চেপে)
.
—- সাট আপ। আমার বলা শেষ হয়নি। বিয়ের প্রথম রাত থেকেই নানাভাবে ফিজিকালি,মেন্টালি টর্চার করে যাচ্ছেন। কিছু বলছিনা বলে ভাববেন না সবার মতো আমিও আপনাকে ভয় পাই। নো,, মি.সূর্য! আপনাকে ভয় পাওয়ার কোনো রিজনই নেই। এতোদিন জাস্ট মানবতার খাতিরে চুপ ছিলাম। ভেবেছিলাম আপনি শুধরোবেন। বাট! কি হলো আপনাকে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে আর আপনি আমাকে টর্চার করছেন। কিন্তু আর নয়! আপনার মতো লো মেন্টালিটি থার্ড ক্লাস মার্কা লোককে মাথায় তোলার মানেই হয় না। আপনি কি যেন বলছিলেন? আমি বাজে মেয়েদের খাতায় নাম লিখাচ্ছি? ফ্যামিলির ধারা পায়নি? ছেলেদের সাথে ঢলাঢলি করছি? আমি মোটেও নিজেকে বাজে মেয়েদের কাতারে সামিল করছি না। আর আমি আমার ফ্যামিলির ধারাই পেয়েছি। আর না আমি কোনো ছেলের সাথে ঢলাঢলি করছি। আর আমার মা বাবাও আমাকে ঠিক শিক্ষাই দিয়েছে। সো তা নিয়ে আপনাকে না ভাবলেও চলবে। আচ্ছা! ধরে নিলাম আমি ছেলেদের সাথে ঢলাঢলি করছি। তাতে আপনার কি? আপনার তো কিছু যাওয়া আসার কথা না। আর না আমি আপনার কোনো প্রবলেম দেখছি৷ আপনার তো আরও ভালো আপনা৷ রাস্তা ক্লিয়ার। আচ্ছা! বাদ দিন। সেদিন কি যেন বলছিলেন? ওহ্ হ্যাঁ,, আমি আপনার ভালোবাসাকে আপনার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছি? লাইক সিরিয়াসলি? আমি আপনার মতো এমন থার্ড ক্লাস মেন্টালিটি বহন করি না। আমি ভালোবাসার মানেটা বুঝি। সেদিন আরো কি যেন বলছিলেন? ওহ্ হ্যাঁ,, আমি যেন আপনাকে টাচ না করি আপনার থেকে দূরে থাকি! আজ আমি আপনাকে বলছি,, আপনার মতো চিপ মেন্টালিটির মানুষকে টাচ করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে আমার নেই। সো স্ট্যা এওয়ে ফর্ম মি। সেদিন আপনি আমায় বলেছিলেন আমায় ঘৃণা করেন। আজ আমি আপনাকে বলছি,, আপনার থেকেও হাজারগুন বেশি ঘৃণা আমি আপনাকে করি। সেদিন আপনি আমাকে বলেছেন,, আমি যেন কোনোদিন আপনার সামনে না আসি। আজ আমি আপনাকে বলছি,, আপনার সামনে না আসলে আমি মরে যাবো না। বরং ভালো থাকব। সো আমার পার্সোনাল ব্যাপারে নাক গলাবেন না।
.
—- আলো আমি তোর স্বামী!
.
—- স্বামী? লাইক সিরিয়াসলি? স্বামী কাকে বলে যানেন? সেদিন তো আপনিই বলেছিলেন,, তোকে বিয়ে করেছি বলে তোর সব কথা শুনতে হবে এমন কোনো কথা নেই। আজ আমি বলছি,, বিয়েটা করতে আপনার মতো আমিও বাধ্য ছিলাম। সো আপনার কথা শুনার প্রশ্নই আসে না ।
.
কথাগুলো একনিশ্বাসে বলে রুম থেকে বেড়িয়ে এলাম। উনি এখনো ওখানেই দাঁড়িয়ে আছেন। এখন অনেকটা হালকা লাগছে। কি ভাবছে উনি? উনিই পারে আমি পারি না? কিন্তু কপাল ভালো বেড়িয়ে এসেছি। নয়তো এমুহূর্তে উনার সামনে থাকলে মাথায় তুলে দিত এক আছার। কারণ উনার পছন্দের শার্টটা রক্তে লাল করে দিয়েছি। শার্টটা আপুর গিফট করা। এমুহূর্তে উনার রিয়াকশনটা দেখার বড্ড কৌতুহল জাগছে। কিন্তু কৌতুহলের থেকে বেশি কান্না পাচ্ছে। কষ্ট হচ্ছে ভীষণ। যদি সেই কালো রাতটাকে লাইফ থেকে মুছে ফেলার একটা চান্স পেতাম। শুধু একটা! কেন যে চলে যাওয়া সময় আর ফেরে না? বুকে চাপা কষ্ট নিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে ছাঁদের দিকে পা বাড়ালাম।
.
————
.
পশ্চিম দিকে ছাঁদের কার্নিশ ঘেঁষে বসে তাকিয়ে আছি ঐ দূর আকাশে। কিছুক্ষণ আগেই সন্ধ্যা নেমেছে৷ আকাশ এখনো হালকা রক্তিম বর্ণে ছেয়ে আছে। চারদিকে কেমন যেন এক অদ্ভুত নীরবতা। পিনপিনে ঠান্ডা বাতাস বইছে। বাতাসের সাথে সারা শরীর জুড়ে বয়ে যাচ্ছে অদ্ভুত এক শিহরণ! চোখটা বন্ধ করে নিলাম। আস্তে আস্তে তলিয়ে গেলাম সেই কালো অতীতে……

#চলবে……..

[ #বিঃদ্রঃ গাইস গল্প দিতে চাইনি। কযেকজন ইনবক্সে গল্প না দেওয়ার কারণ জানতে চাচ্ছিল। আর তাছাড়া ঈদ উপলক্ষে একটি বোনাস পার্ট দিলাম। হয়তো আগামী ২/৩ দিন গল্প দেওয়া হবে না তাই😥। কারণ আব্বু বাসায় থাকবে। আর তার সামনে আমার ফোন ধরা মানেই কানা হয়ে যাবো এই সেই অনেক কিছু😥। আম্মু বকে চুপ থাকে আর আব্বু ফোন নিয়ে নেয়🥺।তাও আমি চেষ্ট করব দেওয়ার। তবে না দিতে পারলে কেউ প্লিজ অধৈর্য হবেন না। একটু কষ্ট করে ধৈর্য ধরুন আশা করি ভালো কিছু পাবেন। আর হ্যাঁ,, রি-চেইক করা হয়নি ভুলক্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। সবাই ভালো থাকবেন। ধন্যবাদ ❤]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here