আমার_বাহুডোরে_আবদ্ধ_তুমি #নুসাইবা_জান্নাত_আরহা #পর্ব ৭ (বোনাস)

0
180

#আমার_বাহুডোরে_আবদ্ধ_তুমি
#নুসাইবা_জান্নাত_আরহা
#পর্ব ৭ (বোনাস)

দেয়াল ঘড়িতে ঘন্টা মিনিটের কাঁটা টিকটিক করে আওয়াজ তুলে জানান দিচ্ছে এখনো রাত বারোটা বাজতে প্রায় মিনিট তিনেক মতো বাকি। বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। খানিক বাদেই বিজলি চমকাচ্ছে। সেই সাথে প্রচন্ড দমকা হাওয়া বইছে। আকাশে ঘন কালো মেঘ জমেছে। বাতাসের তান্ডবে কিছুক্ষণ পর পর জানালার পর্দাগুলো উড়ে চলেছে।

বিছানার পাশ ফিরতে মেহরুনের জায়গায় হাত পড়তেই অনুভব করে বিছানায় নেই মেহরুন। ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে আদ্রিশ। বাইরে থেকে আসা রোড লাইটের মৃদু আলোয় রুমের জমাট বাঁধা অন্ধকার ভাবটা মিলিয়েছে যেন কিছুটা। এদিক ওদিক চোখ বুলায়, কিন্তু কোথাও মেহরুনের ছায়াও মেলে না। ‘এতো রাতে মেয়েটা গেল কোথায় তবে?’ ভেবে চিন্তিত হয়ে পড়ে আদ্রিশ। বিছানা ছেড়ে উঠে যায় সে। বিদ্যুৎ না থাকায় বেড সাইড টেবিল হতে টর্চ লাইটটা হাতড়ে নেয় সে। আলো জালিয়ে বেলকনির পথে পা বাড়ায়। সেখানে গিয়েও হতাশ হতে হয়, ‘না মেহরুন নেই সেখানে।’ বাসার অন্যান্য ঘর গুলোতে খুঁজল কিন্তু পেল না কোথাও মেহরুনকে। এবার আদ্রিশ বেশ চিন্তিত হয়ে পড়ে।

হঠাৎ ছাদ থেকে কারো নুপুরের পদধ্বনির আওয়াজ শোনতে পায় আদ্রিশ। দেরি না করে তাই দ্রুত পদে ছাদের পথে পা বাড়ায়। ছাদের গিয়ে মেহরুনকে দেখে থমকে যায় আদ্রিশ। চোখের দৃষ্টি শীতল হয়ে যায় তার। সামনে আর এক পা-ও আগাতে পারে না সে। এতো রাতে কাওকে কিছু না বলে পাগলের মতো বৃষ্টিতে ভেজতে আসার কারণে যে মেহরুনকে বকবে বা কিছু বলবে, তা আর হলো কই। সেখানেই সে ঠায় দাঁড়িয়ে মন মুগ্ধকর রূপসী মানবীকে মুগ্ধ নয়নে দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

মেরুন রঙের একটি থ্রিপিস পরে বৃষ্টিতে ভিজচ্ছে মেহরুন। ফলে ভিজে যাওয়া জামাটা মেহরুনের গায়ের সাথে একদম লেপ্টে আছে। চোখে মুখে বৃষ্টির বড় বড় ফোটা পড়ছে অবিরত। ফলে তার সৌন্দর্য যেন বহুগুনে বৃদ্ধি পেয়েছে। চোখ বন্ধ করে আনন্দে হাত পা ছড়িয়ে বৃষ্টিতে সমানে ভিজেই চলেছে মেহরুন। কোমড় অবধি খোলা লম্বা ঘন চুলগুলো ভিজে টপটপ করে পানি ঝরছে। এক মনে বৃষ্টিতে ভেজার কারণে আদ্রিশকে খেয়াল করেনি মেহরুন। মেহরুন তো তার আপন মনে বৃষ্টিতে ভিজতেই ব্যস্ত।

এবার হুশ ফিরে আদ্রিশের। এতো রাত্রে যে বৃষ্টিতে ভেজার কারণে মেহরুনের ঠাণ্ডা লেগে অসুস্থ হয়ে পড়বে, সেই আশঙ্কায় আদ্রিশ মেহরুনকে ডাক দেয়। মেহরুন চমকে পেছনে তাকায়।

আদ্রিশ গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠল

-‘ অনেক তো ভিজেছো, এখন আর ভিজতে হবে না মেহরুন। যতোটুকু ভিজেছ তাতে করেই ঠান্ডা বসে যাবে। নিচে চলো এবার।

মেহরুন অনুনয়ের সুরে বলল

-‘ আরেকটু থাকি না? ভালোই তো লাগছে বৃষ্টিতে ভিজতে।

আদ্রিশ আপত্তি জানায়। মেহরুন ঠোঁট উলটে কাঁদো কাঁদো মুখ করে দাঁড়িয়ে থাকে। হঠাৎ গগন বিদারী মেঘ গর্জনে মেহরুন ভয়ে দৌড়ে চলে আসতে নিলেই পিছলে পড়ে যেতে নেয়, ধরে ফেলে আদ্রিশ। মেহরুন ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে, এই বুঝি পড়ে গেল সে। কিন্তু না সে পড়েনি। পিটপিট করে চোখ মেলতেই দেখল আদ্রিশ মেহরুনকে ধরে আছে। স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে মেহরুন। আদ্রিশ এবার কিছুটা ধমকের সুরে বলল

-‘ দেখেও চলতে পারে না মেয়ে। তাল সামলাতে না পেরে পিছলে যখন পড়েই যাও তাহলে বৃষ্টিতে ভিজতে আসো কেন? আমি না থাকলে তো আজ কোমর ভেঙে বসে থাকতে।

বলেই আদ্রিশ ছেড়ে দেয় মেহরুনকে। আদ্রিশের কথার কোনো পাত্তা না দিয়ে সুযোগ পেতেই আবারও দৌড়ে চলে যায় বৃষ্টিতে ভেজার জন্য মেহরুন। ততক্ষণে অবশ্য বৃষ্টির তোড় কমেছে কিছুটা। সাথে সাথে আদ্রিশও মেহরুনের পিছু পিছু ছুটে চলে। দৌড়াতে দৌড়াতে পিছন ফিরে আদ্রিশকে দেখে ফিক করে হেসে ফেলে মেহরুন।

হঠাৎ একজোড়া কালো হাত এসে মেহরুনকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নেয়। মেহরুন ভয়ে চিৎকার করে ওঠে। আদ্রিশ ছুটে চলে সেদিক পানে, কিন্তু পথ যেন ফুরচ্ছে না। আশ্চর্য মেহরুন হতে তার কয়েক কদমের ব্যবধান ছিল, তাহলে সে মেহরুনকে ধরতে পারছে না কেন?

মেহরুন চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে আদ্রিশকে বলল

-‘ আমায় বাঁচান আদ্রিশ। ওরা আমায় বাঁচতে দিবে না।

আদ্রিশ ছুটে চলে সেদিক। কিন্তু তার আগেই চোখের সামনে মেহরুনকে জমাট বাঁধা অন্ধকারের চাদরে মুরে নেয়। কোথাও কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায় না আর মেহরুনের। মেহরুন বলে চিৎকার করে ওঠে আদ্রিশ ।

ঘুমের মধ্যে চিৎকার করতে করতে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে আদ্রিশ। হালকা ঠান্ডার মধ্যেও সে অবিরত ঘেমে চলেছে আর সাথে সমানে হাঁপাচ্ছে। আদ্রিশের চিৎকার শুনে ঘুম ভেঙে যায় মেহরুনের। দ্রুত উঠে বসে সে। আদ্রিশকে এমন করতে দেখে মেহরুন চিন্তিত সুরে বলল

-‘ কি হয়েছে আপনার? মাঝরাতে এমন করে চিৎকার করছেন কেন?

নিজের পাশে মেহরুনকে সুস্থ স্বাভাবিক দেখে স্বস্তি ফিরে পায় আদ্রিশ। তাহলে একটু আগে যা হয়েছিল তা কি স্বপ্ন ছিল। কি সাংঘাতিক স্বপ্ন! আরেকটু হলেই তো প্রাণ পাখি উড়ে যেত। পর পর তিনবার থুথু দেয় বুকে। তবুও ভয়ের রেশটা যেন এখনো কাটেনি আদ্রিশের। এখনো সে যেন একটা ঘোরের মধ্যে আছে। ইতোমধ্যে চোখে পানি চলে এসেছে তার। মেহরুন বুঝতে পারে না কি হয়েছে আদ্রিশের। আদ্রিশের এমন অবস্থা দেখে মেহরুন আবারও বলল

-‘ আপনি এমন ঘামছেন কেন? পানি খাবেন? কি হয়েছে আপনার?

আদ্রিশ মেহরুনের দু গালে হাত রেখে উত্তেজিত কণ্ঠে বলল

-‘ তুমি ঠিক আছো তো, মেহরুন? কিছু হয়নি তো তোমার? আমি থাকতে তোমার কিছু হবে না। ভয় পেও না তুমি।

মেহরুন এবার বেশ বুঝতে পারেছে আদ্রিশ হয়তো কোনো দুষ্স্বপ্ন দেখেছে যে কারণে ভয় পেয়েছে ভীষন। বেচারার জন্য মায়া হয় মেহরুনের, কি ভয়টাই না পেয়েছে আদ্রিশ। তবুও আদ্রিশের কথার ভুল ধরতে চিন্তিত ভঙ্গিতে গালে হাত দিয়ে বলল

-‘ নিজে ভয় পেয়ে আমায় বলছেন আমি যেন ভয় না পাই।

আদ্রিশ কিছু বলে না। মেহরুন যে সুযোগ বুঝে তাকে নিয়ে মশকরা করছে তা বুঝতে অসুবিধা হয় না তার। মেহরুনের দিকে এক পলক তাকিয়ে শক্ত করে মেহরুনকে জড়িয়ে নেয় নিজের বুকে। মেহরুন বোকা বনে যায় আদ্রিশের এমন কান্ডে। না চাওয়া সত্ত্বেও আদ্রিশের পিঠে হাত বুলিয়ে দেয় মেহরুন। আদ্রিশকে অনেক কষ্টে শান্ত করে, পানি খাইয়ে শুইয়ে দেয় সে।

মাঝরাত্রে উঠে আদ্রিশের এমন পাগলামি দেখে মেহরুন কপাল চাপড়ে তাই মনে মনে বলল, ‘শেষমেষ কোন পাগলের পাল্লায় যে পড়লাম।’

.

সারারাত এপাশ ওপাশ করেও দু চোখের পাতা এক করতে পারছে না আলভি। মাথায় রাজ্যের চিন্তা থাকলে কি আর ঘুম আসে কারো চোখে। ছোটবেলার বন্ধুর এমন বিশ্বাসঘাতকতা মেনে নিতে পারছে না সে। মেহরুনের আবার কোনো ক্ষতি করে না বসে আদ্রিশ? এসব চিন্তা করতে করতে মাথা ধরে আসছে যেন আলভির। অালভিকে অরনী অনেকবার তাদের বাড়িতে থেকে যাওয়ার জন্য বলেছিল কিন্তু সে থাকেনি। সোজা বাড়ি এসে নিজের কক্ষে চলে আসে। রাতের খাবারটুকু মুখে তোলেনি পর্যন্ত। মেহরুন চলে যাওয়ার পর বাড়ির থমথমে পরিবেশটা কাটেনি এখনো। সব মিলিয়ে প্রচুর বিরক্ত সে। কপালে এক হাত ঠেকিয়ে তাই শুয়ে আছে বিছানায়।

এমন সময় রুমে প্রবেশ করে কেউ। অন্ধকারে ছায়ামূর্তির মুখ স্পষ্ট বোঝা যায় না। ছায়ামূর্তিটি ধীর পায়ে আলভির দিকে এসিয়ে আসতে থাকে…

#চলবে ~

দিন দিন আপনাদের রেসপন্স এতো কমে যাচ্ছে কেন? গল্প কি ভালো হচ্ছে না? এতো অসুস্থতার মাঝেও নিয়মিত গল্প দেওয়ার চেষ্টা করছি, তবুও এ অবস্থা কেন?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here