আমার_বাহুডোরে_আবদ্ধ_তুমি #নুসাইবা_জান্নাত_আরহা #পর্ব ৮

0
170

#আমার_বাহুডোরে_আবদ্ধ_তুমি
#নুসাইবা_জান্নাত_আরহা
#পর্ব ৮

সারারাত এপাশ ওপাশ করেও দু চোখের পাতা এক করতে পারেনি আলভি। মাথায় রাজ্যের চিন্তা থাকলে কি আর ঘুম আসে কারো চোখে। ছোটবেলার বন্ধুর এমন বেইমানি, কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না সে। মেহরুনের আবার কোনো ক্ষতি না করে বসে আদ্রিশ? এসব চিন্তা করতে করতে মাথা ধরে আসছে যেন আলভির। অালভিকে অরনী অনেকবার তাদের বাড়িতে থেকে যাওয়ার জন্য বলেছিল কিন্তু সে থাকেনি। সোজা বাড়ি এসে নিজের কক্ষে চলে আসে। রাতের খাবারটুক পর্যন্তু মুখে তোলেনি। মেহরুন চলে যাওয়ার পর বাড়ির থমথমে পরিবেশটা কাটেনি এখনো। সব মিলিয়ে প্রচুর বিরক্ত সে। কপালে এক হাত ঠেকিয়ে তাই শুয়ে আছে বিছানায়।

এমন সময় রুমে প্রবেশ করে কেউ। অন্ধকারে ছায়ামূর্তির মুখ স্পষ্ট বোঝা যায় না ঠিক। ছায়ামূর্তিটি ধীর পায়ে আলভির দিকে এসিয়ে আসতে থাকে। রুমে কারো উপস্থিতি টের পেতেই চোখ মেলে সেই দিকে তাকায় আলভি। এই অসময়ে মেহনত আকবরের আগমনে আলভি কিছুটা অবাক হয়ে উঠে বসে। চিন্তিত গলায় সুধায়

-‘ কোনো কি সমস্যা হয়েছে, বাবা?

মেহনত আকবর মাথা নাড়ালেন। ছেলের পাশে বসতে বসতে তিনি বললেন

-‘ কখন এলে তুমি? টেরও তো পেলাম না।

-‘ এসেছি তা প্রায় ঘন্টা খানিক হবে বোধ হয়।

-‘ খেয়েছো?

কিছু খায়নি বললে হয়তো বাবা চিন্তায় পড়তে পারে, এজন্য আলভি মাথা নাড়িয়ে সায় জানায়। কথা ঘুরাতে তাই প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে বলে

-‘ আচ্ছা বাবা, আমার কিছু জানার ছিল।

-‘ কি বলো?

-‘ হঠাৎ এভাবে তাড়াহুড়ো করে আদ্রিশের সাথে মেহুর বিয়ে দিলে, এমনকি আমাকে জানানোর প্রয়োজনও মনে করলে না। কিন্তু কেন?

মেহনত আকবর কিছু সময় চুপ করে রইলেন। ফোস করে নিশ্বাস ছেড়ে বললেন

-‘ ওরা দুজন দুজনকে ভালোবাসে। তবে মেহরুন আমায় এ বিষয়ে কোনো কথা বলেনি । ও যদি আমায় আগে থেকে বলত তাহলে তো আর জল এতো দূর গড়াত না। শুধু শুধু অশান্তি ডেকে আনার কি কোনো মানে ছিল?

আলভি বিষ্ময়কর চাহনিতে তাকায় মেহনত আকবরের দিকে। কণ্ঠে অবাকতা এনে বলল

-‘ কি বলছো এসব? ওরা একে অপরকে ভালোবাসত? ইম্পসিবল। আদ্রিশ বলেছে তোমায় এসব?

মেহনত আকবর মাথা নেড়ে সায় জানায়। আলভি গম্ভীর কণ্ঠে বলল

-‘ আদ্রিশ একটা বেইমান, মিথ্যাবাদী। ওর কথা কেন বিশ্বাস করলে তুমি? ও আমার না থাকার সুযোগ নিয়েছে। আমি থাকলে এমন কিছুই হতো না। খুব শীগ্রই মেহু আর আদ্রিশের ডিভোর্সের ব্যবস্থা করে ঘরের মেয়েকে ঘরে ফিরিয়ে আনব আমি। দরকার পড়লে ওর অনেক বড় জায়গায় ধুমধাম করে বিয়ে দিব আমি।

মেহনত আকবর চটে গেলেন। ঝাড়ি দিয়ে বললেন

-‘ ভুলেও যেও না আমি এখনও বেঁচে আছি। আমার থেকে বেশি বুঝতে যেও না। আমি যা করেছি ভেবে চিন্তেই করেছি। আদ্রিশের সাথে মেহরুন ভালো থাকবে।

আলভি চুপচাপ করে বসে থাকে। মেহনত আকবর নিজেকে স্বাভাবিক করে বললেন

-‘ হ্যাঁ আদ্রিশ অবশ্যই অন্যায় করেছে। কিন্তু তবুও বলছি আদ্রিশকে ভুল বুঝো না। ও যা করেছে তা তোমাদের ভালোর জন্যেই করেছে। ও বলেছে আমায় সব।

-‘ বাহ্ এতো কিছুর পরও ওকে ভুল বুঝবো না, চমৎকার। আসলে তোমরা কি করতে চাইছো? আমার বোনের জীবনটাকে একেবারে শেষ করে দিতে, কি তাই তো?

মেহনত আকবর আলভির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। আলভির কথার উত্তর না দিয়ে তিনু নিজের মতো করেই বললেন

-‘ আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল কি ছিল, জানো? জারা আর নাজিয়াকে এ বাড়িতে ঠাঁই দেওয়া।

আলভি বিস্ময় নিয়ে তাকায় মেহনত আকবরের দিকে। তার বাবা কিসব আবোল তাবোল বলছেন। গাম্ভীর্যতা ঠিক রেখে তিনি আবারও বললেন

-‘ আমার ছোট ভাইটা হঠাৎ মারা যাওয়ায় মা মেয়ে সম্পূর্ণ একা হয়ে পড়ে। তাদের থাকা খাওয়ারও কোনো জো ছিল না। কারো দুয়ারেও তাদের ঠাঁই মেলেনি। শেষমেশ এসব দেখে তোমার মায়ের মনে ভীষণ মায়া হয়। তখন তাদের আমাদের বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছিলাম। কিন্তু কে জানত, তারাই আমাদের উপকারের প্রতিদান সরূপ পেছন থেকে ছুরি বসাবে।

আলভি অবাক হয়ে বলল,

-‘ মানে? আমি তোমার কথার কিছু বুঝতে পারছি না, বাবা।

-‘ দাঁড়াও সব বুঝিয়ে বলছি। মেহরুনের সাথে আদ্রিশের বিয়েটা আমি এমনি এমনি দেইনি। দিতে বাধ্য হয়েছি এক প্রকার। প্রথমে মেহরুনকে ভুল বুঝলেও, আসলে দোষটা মেহরুনের নয়। আদ্রিশের প্ল্যান ছিল সব।

আলভি চটে যায়। মাঝ পথে মেহনত আকবরকে থামিয়ে বলল

-‘ দেখছো আমি বলেছিলাম না, ও একটা লম্পট। আমার বোনের নামে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে ও।

-‘ ওটাতো ওর অভিনয় ছিল।

আলভি রেগে বলে ওঠে

-‘ ও তো মস্ত বড় এক অভিনেতা। নইলে আমার বিশ্বাস নিয়ে ও ছিনিমিনি খেলত না।

-‘ আমার পুরো কথা তো আগে শেষ করতে দাও, তারপর কথা বলো।

মেহনত আকবর কিছু বলার জন্য উদ্যত হতেই দরজার অপারে কারো ছায়ামূর্তি নজরে আসে তার। থেমে যান তিনি। উঠে সে পথেই পা বাড়ান। আলভি শুধু অবাকের উপর অবাক হচ্ছে। সব তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।

দরজা খুলতেই ভুত দেখার মতো চমকে ওঠে জারা। মেহনত আকবর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন জারার দিকে। ধমকের সুরে বলেন

-‘ এতো রাতে এখানে কি করছো তুমি?

ভয়ে কেঁপে ওঠে জারা। আমতা আমতা করে বলল

-‘ না মানে আসলে আলভি ভাইয়াকে একটু দেখতে এসেছিলাম।

-‘ এতো রাতে আলভিকে দেখে তুমি কি করবে?

জারা কি উত্তর দিবে ভেবে পায় না। দাঁত দিয়ে সমানে নখ কামড়াতে থাকে সে।

মেহনত আকবর এবার ঘাড় ফিরিয়ে আলভির দিকে তাকিয়ে বললেন

-‘ তুমি কি জারা ডেকেছিলে?

আলভি ভ্রু কুচকে বলল

-‘ কই না তো? ওকে কেন আমি ডাকতে যাব?

জারা আরও বেশি ঘাবড়ে যায়। এবার সে কি করবে। জারাকে ঘামতে দেখে মেহনত আকবর বললেন

-‘ এই ঠান্ডায় এতো ঘামছো কেন তুমি?

-‘ না মানে কিছু না। আমি এখন যাই তবে।

জারা ভয়ে আমতা আমতা করে কোনো মতে কথাটা বলে। মায়ের কথামতোই তাকে আলভির রুমের সামনে আসতে হয়েছে। কিন্তু তার চাচাতো ভাইয়ের রুমে যে তার চাচাও থাকবে তা জানা ছিল না জারার। আর কোনো উপায় খুঁজে না পেয়ে তাই দৌড়ে চলে যায় নিজের রুমে।

জারার চলে যাওয়ার দিকে মেহনত আকবর ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলেন কিছুক্ষণ। ওকে থামাতে চাইলেও পরে কি মনে করে আর থামালেন না। আলভির পাশে গিয়ে পুনরায় বসলেন তিনি।

আলভি জিজ্ঞেস করল

-‘ কি হয়েছে বাবা?

-‘ জারা এতো রাতে তোমার রুমের সামনে কি করতে এসেছিল, সেটাই ভীষণ ভাবে ভাবিয়ে তুলছে আমাকে।

-‘ হয়তো কিছু বলতে এসেছিল, তুমিও না। সামান্য একটা বিষয় নিয়ে কেন এতো ভাবো?

-‘ যদি কিছু বলারই থাকত তাহলে ও ভয়ে দৌড়ে কেন চলে গেল? আর আমাকে ভুত দেখার মতো চমকেই বা উঠল কেন?

-‘ হয়তো তোমায় দেখে ভয় পেয়েছে ও। এমনিতেও ও বেশ ভয় পায় তোমাকে। তাছাড়াও আমি, মেহু আর জারা আমরা তিন মিলে কত গল্প করে রাত পার করেছি। এতো আর নতুন কিছু না। আর রইল ভয় পাওয়া, এতো রাতে সাদা পাঞ্জাবি পরে আছো, এটা দেখলে তো যে কেউ-ই ভুত ভেবে চমকাবে। এটাই তো স্বাভাবিক। তুমিও না খামোখা কিসব আবোল তাবোল বকছো। ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো। রাত হয়েছে অনেক।

কথাটা বলেই হেসে ওঠে আলভি। মেহনত আকবর চুপচাপ তাকিয়ে থাকেন আলভির দিকে। চলে যেতে যেতে তিনি বললেন

-‘ চোখ কান খোলা রেখে, সাবধানে থেকো। নিজের খেয়াল নিজে রেখো। মানুষের বিপদ কিন্তু বলে কয়ে আসে না। যার ভুক্তভোগী মেহরুন। তুমিও ওর পথে পা বাড়িও না।

আলভি বুঝতে পারেনা বাবার কথার মর্মার্থ। ফ্যাল ফ্যাল করে তাই চেয়ে থাকে বাবার মুখের দিকে। মনে মনে সে বলল, ‘বাবার নির্ঘাত প্রেসার বেড়েছে, নয়তো পেট খারাপ। তা না হলে এমন উদ্ভট কথা কেন বলল? যেসব কথার আগামাথা কিছু নেই।’

মেহনত আকবর দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চলে এলেন।মনে মনে বলেন,
‘তোমার কপালে শনি আছে, আলভি। এতোটা অবুঝ হলে চলবে কিভাবে?’ তার ছেলে মেয়ে দুটো কতোটা বোকা, সহজ সরল, তাদের পক্ষে তো এদের এসব ছলচাতুরী ধরাও সম্ভব নয়, এই ভেবেই তিনি চিন্তায় নিষ্পেষিত হচ্ছেন। তার এখন সত্যি সত্যি জারা আর নাজিয়া সুলতানাকে সন্দেহ হচ্ছে। তবে কি আদ্রিশ-ই সত্যি? মেহরুনের জন্য তো তা-ও আদ্রিশ ছিল।আলভির কি হবে তবে?

#চলবে ~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here