কাছে তুমি পর্ব-০৮ #রোকসানা আক্তার

0
127

#কাছে তুমি
পর্ব-০৮
#রোকসানা আক্তার

সকালবেলায় মোবাইলের শব্দে ঘুম ভাঙ্গে রিয়াশের।ঘুমা ঘুমা চোখে মোবাইল নিতে পেছনে ফিরতেই হাত বরাবর ঘাড়ে একটা টান পড়ে।তাকিয়ে সানা তার ডান হাতের উপর গুটিসুুটি মেরে শুয়ে আছে।তার ডাগর চোখজোড়ার পাপড়িগুলো একত্রে সোঁজা হয়ে ফ্যানের বাতাসে নড়ছে।পেছনের কিছু চুল মুখের উপর এলোপাতাড়ি পড়ে আছে।গোলাপী ঠোঁট দুটো লাভ লাভ হয়ে আছে!কী সুন্দর দেখাচ্ছে মেয়েটাকে এই মুহূর্তে!খুবই অদ্ভুত ধরণের সুন্দর!রিয়াশ টানা চোখে সানার দিকে দীর্ঘক্ষণ সময় নিয়ে তাকিয়ে থাকে।তাকিয়ে থাকার মাঝেই কলটা কেঁটে যেয়ে আবার বেঁজে উঠে।এবার রিয়াশ কিছুটা বিব্রত হয়ে বালিশের নিচে হাতরে ফোনটা হাতে নেয়। স্ক্রিনে তাঁকিয়ে দেখে “মাই ফাদার”।এত্ত সকালে বাবার কল দেখে রিয়াশ কিছুটা ভড়কে যায়।তবে মনে মনে মোটামুটি গেইজ করে নেয় তার বিয়ের ব্যাপারটা জানতেই বাবা কল করেছে।নাহলে এত্ত সকালে উনার কল করার কোনো কারণ নেই।রিয়াশ খুব সন্তপর্ণে সানার মাথাটা বালিশের উপর রেখে দিয়ে বিছানা থেকে নেমে তড়িৎ পায়ে ফোন হাতে বেলকনিতে যায়!নিজের মাঝে দৃঢ়তা বজায় রেখে কলটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে,

“কংগ্রাচুলেশনস, মাই সান!ইউ হ্যাভ গট ট্যালেন্টেড আ ওয়ার্ক!আমি এতদিন এটাই চেয়েছিলাম।”

বাবার কথা শুনতেই রিয়াশ কয়েক সেকেন্ডের মতো চুপ হয়ে যায়।সে হয়তো ভাবতেও পারেনি তার বাবা এত তাড়াতাড়ি তাদের সম্পর্কটা মেনে নিবে তাও সানার সাথে।ভাবনার মাঝেই,
“রিয়াশ?সানাকে আমার মেয়ে হিসেবে বেশ পছন্দ।সে কাজে যেমন পটু তেমনি তার সুশ্রী ব্যবহারও আর রূপে গুণে ত মাশাল্লাহ!তোর ওই মাম্মিটার মতো বদ না!সারাক্ষণ খালি কানের কাছে ঘেউঘেউ করে অন্তত পাগল বানাবে না।মেয়েটা তোকে খুব বুঝবে!খুব ভালো একটা কাজ করেছিস সানাকে বিয়ে করে।আমি কিছুদিনের মধ্যেই বাসায় আসতেছি।এসেই বাসার সব কেলেংকারি উৎপাটন করবো।”
“বাবা তোমাকে কী বলে যে ধন্যবাদ দিব সেই ভাষা এই মুহূর্তে আমার জানা নেই।আমি সত্যি ভাবতেও পারিনি তুমি এত সহজে সম্পর্ক মেনে নিবে।”
“এত ভাবতে হবে না।বউকে নিয়ে সুন্দর মতো সংসার কর।তোর মা ঝামেলা করলে তা মাথায় নিবি না।বউকে শান্ত থাকতে বলবি।আমি দেশে ফিরি আমার অপেক্ষা কর।”
“ওকে বাবা।”
“ওকে মাই চাইল্ড।তাহলে রাখছি।”

বাবার কলটা রেখেই রিয়াশ সেই কি খুশি!উফস খুশিতে একেবারে নাচতে ইচ্ছে করছে তার।তারপর খুশিটাকে কিছুক্ষণ এভাবে একা একা নিজেই উপভোগ করে ভেতরে যায়।সানার দিকে এগিয়ে যেয়ে তার কপালে আলতো একটা চুম্বন এঁকে দেয়।তারপর হাতের ফোনটা এক সপাটে বালিশের উপর রেখে দিয়ে মুখে শিষ বাঁজাতে বাঁজাতে টাওয়াল হাতে বাথরুমে ঢুকে যায়।রিয়াশ বাথরুম থেকে বেরুতে বেরুতে ততক্ষণে সানার ঘুম ভেঙ্গে যায়।সানা চোখজোড়া মেলতেই প্রথম চোখ পড়ে রিয়াশের দিকে।টাওয়াল পেঁচানো আধ ভেঁজা গাঁয়ে রিয়াশের লোমগুলো লম্বা লম্বাভাবে শরীরের বিভিন্ন অংশে পরিপাটি গেঁথে আছে।আর তার থেকে টপটপ করে পানি বেয়ে পড়ছে।গাঁয়ের রং ফর্সা হওয়ায় তা আরো ধরুণ সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করেছে।সানা সেদিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকতেই ভেতরটা হু হু করে কেঁপে উঠে।তার নিজের কাছে নিজেরই অণুশোচনা হচ্ছে,এমন একজন সুঠাম দেহের টকটকে সাদা ছেলে তার মতো সাধারণ একটা মেয়েকে কীভাবে বিয়ে করতে পারলো!সে ত রিয়াশের কোনোদিক দিয়েই যোগ্য না!সানার ভাবনার মাঝেই রিয়াশ পেছনে ফিরে।বলে,

“কখন জেগেছো সানা?”

সানা থতমত খাওয়ার মতো একটু ভাণ করে ফেলে!থেমে থেমে বলে,
“এ-এই তো কিছুক্ষণ হলো!”
“যাও এবার ফ্রেশ হয়ে আসো।”

সানা এ কথায় নৈঃশব্দে মেনে নিয়ে নিচে নামতে যাবে।ওমনি সে মোচড়ে উঠে।রিয়াশ ভ্রু কুঁচকে বলে,

“কি হয়েছে?”

সানা কি উত্তর দিবে নিজেই ভেবে উঠতে পারছে না।তার পড়নের শাড়িটা শরীরের সাথে খুব আলগাভাবে লেগে আছে।উঠতে নিলেই ধপধপ করে তা নিচে পড়ে যাবে।আর রিয়াশ তাকে এক টুকরো ব্লাউজ আর এক টুকরো পেটিকোট অবস্থায় দেখে ফেললে তখন কেমন বিশ্রী একটা ব্যাপার হবে ভাবা যায়..!!?আর রিয়াশ ত তা জানে না!মুহূর্তে সানার মুখটা কেমন অসহায় অসহায় হয়ে ওঠে।সে এদিক ওদিক তাকাতে থাকে।কি করবে?কি করবে?কীভাবে এখান থেকে বাথরুমে যাবে?রিয়াশ যদি এখান থেকে বাইরে যেত তাহলে একটা গতি হত কিন্তু রামছাগল টা খুঁটির মতো দাঁড়িয়ে আছে। ভাবনার মাঝেই রিয়াশ আবারো বলে,

“আজ সারাক্ষণ এখানে বসেই কাঁটিয়ে দিবে নাকি? ”
“নাহ মানে..একটা প্রবলেম হয়ে গেছে!”
“কী প্রবলেম!”

উফফ আমিও না একটা গর্দভ!কেমন খাপছাড়া কথা বলে ফেললাম “প্রবলেম হয়েছে!”এখন এর কী উত্তর করবো?(মনে মনে)।
” কি হলো বলছো না কেন কী প্রবলেম?”
“আপনি একটু বাইরে যান তো।”
“বাইরে যাবো কেম?”
” বাইরে যেয়ে আমার জন্যে একটা সেন্ডেল জুতো নিয়ে আসতেন তাহলে ভালো হত।আসলে আমি হিল জুতো তেমন পড়তে পারি না।পড়লে পা বেঁকে নিচে পড়ে যাই!”
“এই টুকুর পথ!বাথরুমের কাছে যেয়েই খুলে নিও।বাথরুমে ত অন্য জুতো আছেই তাও সেন্ডেল!”
“উফফস!আমি বাসায় পরার জন্য বলছি। বাথরুমে পড়ার জন্যে বলছি না।”
“এখন কোথায় পাবো সেন্ডেল!”(ইতস্ততা করে)
“মিনা আপার কাছে থাকতে পারে।উনার কাছে যেয়ে খোঁজ নিন।”
“সেন্ডেলের জন্যে এখন মিনা আপার কাছে যেতে হবে!!!!”
“বউয়ের এইটুকু আবদার রাখতে পারবেন না?কেমন পুুরুষ আপনি?”

“বউ” শব্দটা শুনামাত্রই রিয়াশের ভেতর ঢাকুমঢুকুম বেঁজে উঠে।অবশেষে সানা নিজমুখেই শিকার করলো সে তার বউ!আহা জীবনে এরচেয়ে সুখকর কথা আর কি হতে পারে।আবদার একটা কেন এরজন্যে হাজারটা আবদার রাখতেও রাজি সোনা!রিয়াশ আর দেরী করলো না।সানাকে অপেক্ষা করতে বলে হুড়মুড় রুম থেকে বেরিয়ে যায়।সানা যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচে।সে তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে নেমে বাথরুমের দরজার হাতলে হাত রাখতেই রিয়াশ পেছন থেকে,

“সানা শুনো?সেন্ডেল যদি না….”
বাকি কথা রিয়াশের আর বলা হলো না!সে সানাকে এহেন অবস্থায় দেখে তার চোখজোড়া চড়কগাছ হয়ে গেল!আর সানার অবস্থা ত যায় যায় অবস্থা।সে তরহর করে বুকের কাছে কাপড়টা জবুথবুভাবে ধরে পেছনে ঘুরে।রাগ স্বরে বলে উঠে,

“আপনি আবার আসলেন কেন?লজ্জাসরম নেই?”
“আ-আমি আসলে ও-ওই সেন্ডেলের কথা জিজ্ঞেস করতে এসেছি!”
“কিসের স্যান্ডেল!কোনো স্যান্ডেল টেন্ডেল লাগবে না আমার! যান এখান থেকে!”
“কিছুক্ষণ আগেই ত বললে সেন্ডেল লাগবে!”
“বলছি না লাগবে না!যান!”
সানার রাগ রাগ মুখ দেখে রিয়াশ একটা মুঁচকি হাসি দিল।তার সেই হাসিতে কিছু একটা লুকানো ছিলো।তারপর রিয়াশ চলে যেতে পা বাড়ায় হঠাৎ কি ভেবে যেন আবার এক পা পিছু হটে।গলাটা ছেড়ে দিয়ে বলে,

“তবে ইউ’র লুকিং সো হট!”
বলেই রিয়াশ চোখ টিপে।বলার উদ্দেশ্য ছিল সানাকে রাগী লুকে আরো রাগিয়ে দেওয়া।আর সানা কি চুপ থাকার মতো মেয়ে!?সে ত তেলেবেগুনে জ্বলে যেই তার সবথেকে বিশ্রী কথাটা রিয়াশকে শুনাবে ওমনি রিয়াশ তার মান বাঁচাতে দিল এক ছুট!আর কি… বেচারী সানা ব্যর্থ মুখে বাথরুমে ঢুকে গেল!তবে এর প্রতিশোধ নেওয়ার গরম গরম জাল চোখমুখে স্পষ্ট হয়ে রইলো।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here