কাছে তুমি সমাপ্তি পর্ব #রোকসানা আক্তার

0
169

#কাছে তুমি
সমাপ্তি পর্ব
#রোকসানা আক্তার

সানা ফ্রেশ হয়ে গাঁয়ে জলপাই কালারের একটা শাড়ি পড়ে বাথরুম থেকে বের হয়।রিয়াশ রুমেই ছিলো।সে সানাকে শাড়ি পরিহিতা অবস্থায় দেখে চোখজোড়া কপালে তুলে ফেলে।ঘোর মাখা গলায় বলে উঠে,

“পরী!”
“মানে?”
“পরী!”
“কই পরী?”
“আমার সামনেই।জলপাই রঙ্গা শাড়িতে জলপাই পরী!”

রিয়াশ যে তাকেই উদ্দেশ্য করে কথাটা বলেছে সানা বুঝতে পেরে গাঢ় একটা হাসি দেয়।তারপর ভ্রু যুগল কুঁচকে বলে,
“এত পরী পরী করা লাগবে না।কিছুক্ষণ আগে কি বলেছেন মনে আছে?”
“হট?”
“লজ্জাসরম নেই আপনার?”

রিয়াশ ঠোঁটের কোণে একটা মিষ্টি হাসি টেনে হাটি হাটি পায়ে সানার দিকে এগিয়ে আসে।সানা ছোট্ট একটা ঢোকর গিলে কিছুটা পিছু হঁটে যায়।কারণ রিয়াশের উদ্দেশ্য এই মুহূর্তে ভালো ঠেকছে না।নিশ্চয়ই সোহাগ খুঁজবে!সত্যি সত্যিই তাই হলো!সানাকে হেঁচকা একটা টান মেরে খুব কাছে টেনে নিয়ে তার মুখের সামনে আসা এলোপাতাড়ি চুলগুলো খুব সযত্নে কানের পেছনে গুঁজে দেয়।আর তপ্ত একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,

“লাভ ইউ!একটা কিস করি?”

সানা রিয়াশকে এক ঝটাকে সরিয়ে দিয়ে বলে,
“জানতাম এমনটাই হবে!আমি কত্ত কষ্ট করে শাড়িটা পড়েছি এখন চাই না শাড়িটা আবার অগোছালো হোক।”
“তো কি হয়েছে?আমি আবার পড়িয়ে দিব!”
“উফফ!রাগ উঠতাছে এখন!এমনিতেই মনটা ভালো নেই মা-বাবা আর ফুপীর জন্যে আপনি আসছেন নাটক করতে।পথ ছাড়ুন!নিচে যাবো!”
“য়ু হু..নিচে যেতে এখন দিব না।এখন তুমি নিচে গেলে আমার আক্রোশ টা জলপাই পরীর উপর থেকে দমাতে পারবো না!”

বলেই রিয়াশ আবার সানার দিকে এগিয়ে সানার ভেঁজা চুলে মুখ ডুবিয়ে দেয় ওমনি মিনা খাতুন ভেতরে ঢুকে বলে,

“সানা আপা খালাম্মা-খালু,সফি এবং রিধি বাসায় কেউউ নাই!কোথায় যেন চইলা…!”

আর কথা শেষ করতে পারলো না বেচারী!সে যে বে টাইমে রুমে ঢুকে পড়েছে এখন বুঝতে পেরে নিজের কাছে নিজেই লজ্জা পেয়ে যায়।মাথাটা নিচু করে বলে,

“সরি আপা-ভাইজা!”

রিয়াশ একটা হাসি দিয়ে সানাকে ছেড়ে দেয়।সানার তা ভাবান্তরে নেই।যেই শুনেছে তার মা-বাবা এবং ভাইবোন বাসায় নেই ওমনি রিয়াশ এবং মিনাকে পাস কেঁটে নিচে আসে।তার মা-বাবা, সফি এবং রিধির রুমে ঢুকে দেখে তারা কেউ সত্যিই নেই,তাদের ভারী ভারী জিনিসপত্র গুলো ছাড়া সাথে করে সব নিয়ে গেছে।সানা ধপ করে নিচে বসে পড়ে!আর ব্যথিত মনে কান্না কর দেয়। অনবরত পড়তে থাকে তার চোখের অশ্রু।রিয়াশ সানার কাছে এসে বসে।সানা কান্না মাখা কন্ঠে বলে উঠে,

“রিয়াশ,আমার মা-বাবা,ভাই-বোন আমার সাথে অভিমান করে চলে গেছে।আমি তাদের মনে খুব কষ্ট দিয়ে ফেলেছি!খুব!”

“রাগ হলে এরকম হয়ই। বাবা কিছুদিনের মধ্যেই দেশে ফিরতেছে সানা।বাবা এসে সব ঠিক কর দিবেন!

———————————————————————————————————————

এরমাঝে অনেকদিন কেঁটে যায়।এই চার-পাঁচদিনের মতো।সানা তার মা-বাবার আর খোঁজ পায়নি।মোবাইলে কল দেয় নাম্বার বারবার বন্ধ পায়।মিসেস রিমা বেগম সানাকেও এরমাঝে আর কিছু বলেননি।এমনিতে মেয়েটির পরিবার চল যাওয়ায় মুখটা কেমন শুকনো শুকনো হয়ে গেছে সেকারণে রাগ প্রকাশ করার প্রয়োজন বোধ হয়নি।তবে তিনি সানাকে যে খুব সহজে মেনে নিবেন তা না!সেদিন সন্ধেই মিস্টার সৈকত হোসাইন বাসায় এসে হাজির হোন।চোখমুখ কেমন উনার ঝলকা ঝলকা।আগ্রহ ছেলের বউকে দেখা ইচ্ছা!সানা মাথায় আঁচল তুলে তার শ্বশুরের সামনে এসে স্বসম্মানে সালাম করে।মিস্টার সৈকত হোসাইন সালামের জবাব নিয়ে দুজনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে তাদের দোয়া করেন!রিমা তা দেখে রাগে গজগজ করে চলে যায় সামনে থেকে।সেদিকে তাকিয়ে সৈকত হোসাইন হেসে হেসে বলেন,

” তোমাদের মা কে টাইট দেওয়ার দায়িত্ব আমার।সো নো টেনশন!”

সানা হেসে ফেলে।সে আগেও তার ফুপাকে খুব ইন্টারেস্টিং পার্সোন ভাবতো।লোকটি আসলেই খুব চমৎকার। মনে কোনো রাগ,অহংকার নেই,দেমাক নেই।খুবই সাদামাটা!অথচ তিনি কিনা দেশের অনেক বড় একজন বিজনেসম্যান।যে কেউ দেখলেই উনাকে এ নজরে ভালো লেগে যাবে।সানা তার শ্বশুরকে তার মা-বাবা, সফি এবং রিধির সম্পূর্ণ ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলে।মিস্টার সৈকত হোসাইন এখানেও জবাব দেন,

“ডিয়ার নো টেনশন!আমি জানি এখন উনারা কোথায় আছেন!”

তিনি সত্যিই সত্যি সানার পরিবারকে খুঁজে পায়।উনারা উনাদের গ্রামের বাড়িতে চলে যান।আর সৈকত হোসাইন ওখানে গিয়েই হাজির হোন।তারপর উনাদের সব রাগ-অভিমানের কথা একে একে শুনেন।লিয়াকত আলী বলেন,

“আমি হাফ সাপোর্টে ওই বাসায় থাকি।আপনারা আমাদের সাপোর্ট না করলে আমাদের দৈনন্দিন জীবন অতিবাহিত করতে খুব কষ্ট হয়ে যায় সেখানে মেয়ে আপনার ছেলেকে বিয়ে করে ফেলেছে।বলেন ভাইজান এটা মানা যায়?ও যে এই কাজটা করে আমাদের কতটা অকৃতজ্ঞার পরিচয় দিলে ভেবেছে একবারও?ভাবে নি!তাই লাজ-লজ্জায় চলে আসলাম গ্রামে!”

লিয়াকত আলীর কথা শুনে মিস্টার সৈকত হোসাইন হো হো হো করে হেসে দেন।হাসি থামিয়ে তারপর বলেন,

“ছেলে যে সানাকে বিয়ে করেছে।এতে আমিই ত বড্ড খুশি!”

মিস্টার সৈকত হোসাইনের কথা শুনে প্রথমে লিয়াকত আলী ধাঁধায় পড়া অবস্থা।তারপর বিষয়টি সৈকত হোসাইন ক্লিয়ার করে দেন,

“ভালোবাসা,প্রেম এসবে স্ট্যাটাস,অহংকার,সৌন্দর্য্য,গৌরব তুলনা করলে হয় না ভাই।কারণ ভালোবাসার অর্থ শুধুই ভালোবাসা।ভালোবাসার কাছে জাগতিক সব তুচ্ছ!”

তারপর লিয়াকত আলী নিজের ভুল বুঝতে পারেন।তবে তিনি নিজের আত্মসম্মানের কথা ভেবে আর মেয়ের জামাইর বাড়িতে থাকেন নি।সৈকত হোসাইনকে বহু কষ্টে বুঝিয়ে টুঝিয়ে অন্য জায়গায় বাসা নেন।সেখানেই পরিবারকে নিয়ে বসবাস শুরু করে দেন।তার ভাষ্যমতে সারাক্ষণ আত্মীয়দের মাথায় চড়ে থাকলে তারা কখনো মর্যাদা পায় না।তারা হয়ে যায় তুই তুচ্ছকার!লিয়াকত আলীর যুক্তিসঙ্গত কথা সৈকত হোসাইন মেনে নেন।তারপর মিসেস রিমাও আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যান।নিজের ভুল বুঝতে পারেন!সুন্দর মতো চলতে থাকে দুটো পরিবারের সংসার!

সমাপ্তি।

(শেষ করলাম আজ।যদিও এত তাড়াতাড়ি করার ইচ্ছে ছিল না।বাএ কেনজানি করে ফেললাম।নেক্সট গল্পের সূচনা পর্ব লিখা শেষ।কিছুক্ষণের মধ্যেই পোস্ট করবো।আশা করি পাশে থাকবেন।ভালোবাসা নিবেন সবাই,❤❤❤)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here