তোমাকে_চাই_নিরবধি(৮) লেখনীতেঃ #সুমাইয়া_আফরিন_ঐশী

0
130

#তোমাকে_চাই_নিরবধি(৮)
লেখনীতেঃ #সুমাইয়া_আফরিন_ঐশী
Story Link-গল্পের লিংক (রিভিউ+আলোচনা)💓

বাড়ির গেইটের কাছে ব্যাপক শোরগোল অনুসরণ করে সেদিকে একসাথে এগিয়ে গেলো, জমিদার শাহজালাল ও জাবেদ মল্লিক। কি হয়েছে, কে এসেছে? জানার জন্য উশখুশ করছে তারা। এমন সময় হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসলো জমিদারের সবচেয়ে বিশ্বস্ত দাস, সমীর আলী। সমীর আলী জমিদার শাহজালালের সকল ফরমায়েশ পূরণ করেন, সবসময় সাথে-সাথে থাকেন। গ্রামের সকল গোপন বা গুরুত্বপূর্ণ খবরা-খবরও এনে দেন জমিদার’কে। এই লোকটাকে জমিদার মশাই চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করেন। লোকটা যথেষ্ট বুদ্ধিমান ও বিচক্ষণ পুরুষ।
অন্ধ’র মহলের সামনেই কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিটিকে দেখে সমীর আলী থামলো। ততক্ষণৎ মাথা নিচু করে উচ্ছাসিত কণ্ঠে শুধালো,

“জমিদার হুজুর! সংবাদ আছে, একখানা। ”

“কি সংবাদ নিয়া আসিয়াছো, সমীর আলী?”

“ছোট শাহজাদী পুত্র-কন্যা সহিত শ্বশুর বাড়ি থাকিয়া আসিয়াছে। ওইতো, গাড়ি থাকিয়া নামিলো মাত্র।”

জমিদার পিতা আকবরের দুই কন্যা। বড় কন্যা, কোহিনূর। ছোট কন্যা, জাহানারা।
মহলের সবাই তাদের ছোট শাহাজাদী ও বড় শাহাজাদী বলে সম্মোধন করেন।
কোহিনূর সপরিবার নিয়ে কলিকাতা শহরে থাকেন। তার বর উকিল টুকিল কিছু একটা হবে বোধহয়। খুবই শিক্ষিত লোক। সেখানে দামী বাড়ি-গাড়ি রয়েছে। খুব একটা বাবা’র বাড়িতে আসে না সে।

জাহানারা তিন পাড়া গ্রামে থাকেন। তারাও বনেদী ঘরের লোক। জমিদার বাড়ি থেকে সে গ্রামের দূরত্ব, বেশ! ঘোড়া’র গাড়িতে ঘন্টা পাঁচেক সময় লাগে।সেও সচারাচর বাপের বাড়িতে আসেন না। কোনো চিঠিপত্র ছাড়াই হঠাৎ বোনের আগমন। বড়ই বিস্মিত হলেন, জাবেদ। ভাই প্রত্যুত্তর করার আগেই উনি বললো,

“কিহ্! সত্যি বলছো তুমি, সমীর আলী ? আমাদের ছোট বোন জাহানারা, আসিয়াছে?”

“আমি সত্যই বলিয়াছি, ছোট হুজুর। চলুন আমার সাথে। নিজ চোক্ষে দেখিবেন।”

“কই, দেখি। চলো যাই।”

দুই ভাই হন্তদন্ত পায়ে আবারও সামনে এগোলো। তার পিছনে পিছনে সমীর আলী।
বোন দু’টো তাদের ছোট। বোনদের বড়ই স্নেহ করে তারা। এরিমধ্যে গেইটে’র কাছে সত্যি সত্যি বোনকে দেখে চমকে উঠলো তারা। পরমুহূর্তে, দুই ভাই হাসলেন। ভাইদের দেখে বোনও মৃদু হাসলেন। এগিয়ে এসে মাথা নত করে সালাম দিলেন।

“আসসালামু আলাইকুম! ভালো আছেন, বড় ভাইজান, ছোট ভাইজান?”

“জ্বি ভালো। তোমরা ভালো তো?”

জাবেদ বললো। জাহানারা পূর্বের ন্যায় উওর দিলো, “জ্বি ভালো।”

পরমুহূর্তেই জমিদার শাহজালাল বললো, “কোনো তলব ছাড়াই চলিয়া আসিয়াছো যে,বোন। কোনো অসুবিধা হয়নি তো?”

“জ্বি না, বড় ভাইজান। আব্বা-আম্মা, আপনাদের খুব দেখতে ইচ্ছে করছিলো। তাই না বলেই চলে এলাম।”

“আসিয়াছো খুবই ভালো করিয়াছো। আমরা বড়ই খুশী হইয়াছি বোন।”

এরিমধ্যে জাহানারা’র পুত্র-কন্যারা এগিয়ে আসলো মামাদের নিকটে। তার তিন ছেলে-মেয়ে। বড় পুত্র, সীমান্ত। তারপর একমাত্র কন্যা, বকুল। ছোট পুত্র,সবুজ। ভাগ্না-ভাগ্নে দেখে শাহজালাল মুচকি হেসে শুধালো, “তোমাদের কি সংবাদ? ভালো?”

ওরা একসাথে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানালো। তারপর
অতী আদবের সহিত মামাদের পা ছুঁয়ে সালাম করলো তারা। শাহজালাল ও জাবেদ মল্লিক ততক্ষণাৎ মাথায় হাত বুলিয়ে তাদের আর্শীবাদ করলো,

“দীর্ঘজীবি হও, দীর্ঘজীবী হও!”

এরপর জাবেদ সবাইকে তাড়া দিয়ে বললো, “বহুপথ পাড়ি দিয়ে আসিয়াছো তোমরা। চলো মহলে’র ভিতরে চলো। বাকি কথা ওখানেই হবে।”

সবাই সম্মতি জানিয়ে সামনে এগোল। জাহানারা সঙ্গে করে তার দু’জন খাস দাসী নিয়ে এসেছে। উনি যেতে যেতে তাদেরকে বলে গেলো,

“গাড়িতে থাকা ব্যাগ-পত্র গুলো গোছগাছ করে ভেতরে নিয়া আসো। একটাও যেন রয়ে না যায়।”

দাসী দু’জন মাথা নিচু করে বললো, “আইচ্ছা আম্মা।”

সবাই’কে নিয়ে অন্ধর মহলে পা রাখতেই জাবেদ উচ্চ স্বরে বলিলো,

“কই গো, আম্মাজান! দেখিয়া যান মহলে কারা আসিয়াছে।”

সঙ্গে সঙ্গে মহলে একটা ছোটমোটো হট্টগোল বেঁধে গেলো। বাড়ির গিন্নিরা, দাদাজান -দাদিজানসহ বাচ্চারা একে একে এগিয়ে আসলেন। জমিদার মাতা মেয়ে’কে দেখে জড়িয়ে ধরে ম’রা কান্না জুড়ে দিলো।
কতদিন পর দেখলো তার অতী আদরের ছোট কন্যাকে। অনাঙ্ক্ষিত ভাবে মেয়ে’কে দেখে আনন্দে কাঁদল মা-মেয়ে। আম্মাজান আহ্লাদী হয়ে ভেজা কণ্ঠে শুধালো,

“আম্মাজান, তুমি আসিয়াছো?”

“জ্বি, আম্মা। আপনার শরীর ভালো?”

“তুমি আসিয়াছো, এহন আমি বড়ই সুস্থবোধ করছি আম্মা। তা জামাই আসেনায়?”

“না, আম্মাজান। উনি এখন বাড়িতেই আছেন। আমরা এবার বেশ কিছুদিন থাকবো এখানে। তাই উনি বাড়ি-ঘর পাহারা দিবেন। যাওয়ার দিন আমাদের আসিয়া নিয়া যাবেন।”

মহলে নতুন নতুন কণ্ঠে শুনে, মহলের দাস-দাসীরা ফাঁকফোকড় থেকে উঁকিঝুঁকি দিয়ে অতিথিদের দেখছে। বসার ঘরে সবাই উপস্থিত থাকলেও, আসেনি কুহেলিকা, ফারহান। কুহেলিকা নিজ কক্ষে, ফারহান এখনো আরাম করে ভোজন কক্ষে খাচ্ছেন। তার ভিতরে এতো হা-হুতাশ কিংবা আনন্দ উওেজনা নেই। তিনি এমন ভাবে খাচ্ছেন, যেন খাওয়া ছাড়া তার কোনো কাজ নেই।

জাহানারা’র উপস্থিতি’তে বাড়ির গিন্নিরা, বাচ্চারা সবাই বড্ড আনন্দিত।
মিনিট দশেক মা মেয়ের কান্নাকাটি সাধারণ কথাবার্তা পর্ব শেষ হলো। তবেই বাকি সবাই সবার সাথে কুশল বিনিময় করলো।

টুকটাক কথাবার্তা সেড়ে বাড়ির কর্তারা নিজেদের বিশ্রাম কক্ষে চলে গেলেন। গিন্নিরা ওদের অতিথি কক্ষ নিয়ে গেলেন। সবার মাঝে থেকেও জাহানারা নিজের বড় পুত্র’কে আশেপাশে কোথাও দেখছে না। পরমুহূর্তে বড় ভাবির কাছে জানতে চাইলো,

“সীমান্ত কোথায় ভাবিজান? আমার পুত্র’কে মহলে দেখছি না যে।”

পিছন থেকে ফারহান বললো, “সীমান্ত বানিজ্যিক কাজে শহরে গিয়াছে ফুফুজান। গতকালই গেলো। আপনারা তো কোনো সংবাদ দিয়া আসেন নাই, ওর ফিরতে দেরী হবে বোধহয়। তা আপনি ভালো আছেন ফুফুজান?”

মাত্রই সে খাওয়া শেষ করে অতিথি কক্ষে এসেছেন, ফুফুজানের সাথে দেখা করতে। এরিমধ্যেই ফুফুজানের কথা কর্ণকুহরে পৌঁছাতেই কাউকে প্রত্যুত্তর করতে দিলো না। চাপা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কক্ষের দরজার ওপাশে দাঁড়িয়েই জবাব দিলো।

যা শুনে মন খারাপ হলো, মায়ের। তবে প্রকাশ করলো না। ভাইপো’কে দেখে সহসা হাসলো। বললো,

“আমি ভালো আছি। তুমি ভালো আছো, আব্বাজান?”

“জ্বি ভালো।”

বলতে বলতে ফারহান কক্ষের ভেতরে প্রবেশ করলো। ফুফুর কাছাকাছি পালঙ্কে’র এক পাশে বসে আরো টুকটাক কথা বলছে দু’জন।
ফারহান’কে আলগোছে চোরা দৃষ্টিতে বারবার পর্যবেক্ষণ করছে, বকুল। মানুষটাকে দেখে যুবতী কন্যা’র বুক ধড়ফড় করছে। এই লোকটা তার স্বপ্নে’র পুরুষ! মনের পুরুষ! অতী যত্ন করে মনের মাঝে যাকে দীর্ঘদিন পুষেছে বক্ষে, যাকে নিয়ে দিনরাত স্বপ্ন বুনে বকুল। সেই পুরুষটিই হলো, জমিদার পুত্র ফারহান মল্লিক। লোকটা কি জানে, বুঝেছে কখনো সে অনুভূতি? এক যুবতী কন্যা যে তাকে বড্ড ভালোবাসে। তার ছবি মনের ক্যানভাসে অতী যত্ন করে এঁকেছে সে। তার জন্য দিওয়ানা, বকুল! শুধুমাত্র তাকে এক নজর দেখবে বলে, ছুটে এসেছে মায়ের সাথে।

কে জানে সেসব। হয়তো বুঝেনি পুরুষটি তার তীব্র এই অনুভূতি। তার ভাবভঙ্গিতে সে কথা ধরা দেয়নি কখনো। এই যে একনাগাড়ে ফুফুর সাথেই কথা বলেই যাচ্ছে, লোকটি। অথচ তার দিকে একবার তাকালো না অবধি। জানতে চাইলো না, সে কেমন আছে? তীব্র মন খারাপ হলো বকুলের। তবুও আগ বাড়িয়ে মেয়েটা রিনরিন কণ্ঠে শুধালো,

“কেমন আছেন, ফারহান ভাই?”

সুরেলা মেয়েলী কণ্ঠ শুনে তার দিকে তাকালো ফারহান মল্লিক। শাড়ী পরিহিত লম্বা গড়নের একটা মেয়ে জড়সড় হয়ে বসে আছেন, পালঙ্কেের এক কোণায়। মেয়েটাকে চিনতে অসুবিধা হলো না, ফারহান মল্লিকের। এতক্ষণ সে তাকে লক্ষ্য করেনি। কবুল’কে দেখে ফারহান স্বাভাবিক কণ্ঠে শুধালো,

“আরেহ্! বকুল যে! তুমি তো দেখছি অনেকটা বড় হয়ে গিয়েছো। তা, ভালো আছে?”

এতটুকুতেই লজ্জায় কুঁকড়ে গেলো, বকুল। অথচ লজ্জা পাওয়ার মতো কিছুই ঘটেনি এখানে। তবুও সে অত্যন্ত লাজুক ভঙ্গিতে বললো,

“জ্বি, ভালো আছি।”

ফারহান আর কিচ্ছুটি বললো না। তান্মধ্যে বাড়ির গিন্নিরা অতিথিদের জন্য হাতে হাতে খাবার নিয়ে আসলো কক্ষে। সবাই ভীষণ ক্লান্ত। তাই এ বেলার খাবারটা কক্ষেই দিতে বললো, জমিদার মাতা।
উঠে দাঁড়ালো ফারহান মল্লিক। ভদ্রতা সহিত ফুফুকে বললো,

“আমি এখন যাই। আপনারা খেয়ে আরাম করুন, ফুফুজান। অনেক দূর থেকে এসেছেন।”

“আচ্ছা।”

ফারহান আর এক মুহূর্ত সময় ব্যায় করলো না। বড় বড় পা ফেলে, দোতলা সিঁড়ি বেয়ে নিজের কক্ষে প্রবেশ করলো। কুহেলিকা ক্লান্ত ভঙ্গিতে পালঙ্কে পা ঝুলিয়ে এতক্ষণ বসে ছিলো। ফারহান’কে দেখে মাথা নিচু করে আরো কাচুমাচু হয়ে বসেছেন। ফারহান একবার সূক্ষ্ম ভাবে মেয়েটাকে পর্যবেক্ষণ করে নিলো।
সারাদিন একবারও কক্ষ থেকে বের হয়নি সে। অথচ দরজা আজ খোলাই ছিলো। কেন বের হয়নি সে? স্বামি’র ভয়ে না-কি তার বের হতে ইচ্ছে হয়নি। কে জানে। সেসব ঘাঁটল না, ফারহান মল্লিক। নিজের একসেট পোশাক হাতে নিয়ে মেয়েটির দিকে না তাকিয়েই অত্যন্ত গম্ভীর কণ্ঠে শুধালো,

“খেয়েছো?”

কুহেলিকা ভীত কণ্ঠে বললো,

“জ্বি, জ্বি। বড়আম্মা খাইয়ে দিয়েছে।”

ফারহান আর কিছু বলার প্রয়োজন বোধ করলো না। হেলেদুলে হাম্মাম খানায় ঢুকলো। সারাদিন অনেক ধকল গিয়েছে। এখন লম্বা একটা স্নান না করলেই নয়!
____________

সোনালী রৌদ্রজ্বলে ঝলমলে একটি গ্রামীন বিকেল।
নৌপথ দিয়ে পালতোলা নৌকা দ্রুত গতিতে চলছে। দুইপাশে দুই মাঝি কায়দা করে বৈঠা চালাচ্ছে।
অস্থির চিত্তে নৌকার পাটাতনে বসে আশপাশ করছে, মাহাদ মল্লিক। তার মনটা অকারণেই বড্ড ছটফট করছে। বারবার জলতেষ্টা পাচ্ছে। অদ্ভুত এক কারণে যন্ত্রণা হচ্ছে, বুকে!
নিজের এহেন অবস্থায় নিজেই বড় বিরক্ত পুরুষটি। নিজেকে স্থির করার জন্য আশেপাশে প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখার জন্য মন দিলো। তান্মধ্যে, তার চোখ আঁটকে যায় কিছুদূর জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়ানো একঝাঁক নর-নারীর দিকে। চারপাশ দিয়ে দলবেঁধে বেঁধে বিভিন্ন বয়সের নর-নারী’রা ছোটাছুটি করছে। কারণ কি? ভালো করে লক্ষ্য করলো, মাহাদ মল্লিক। কারণ এবার স্পষ্ট।
নৌকা একটু সামনে এগোতেই দেখা গেলো, একদল বাউলরা একতারা নিয়ে বটবৃক্ষ’কে কেন্দ্র করে গানের আসর জমিয়ে।
বিশাল বটবৃক্ষের ছায়াতলে এই পঞ্চগড় গ্রামে আজ মেলা বসেছে।
চারপাশে পাটি বিছিয়ে হরেকরকমের খাবারের দোকান নিয়ে বসেছে ভাসমান দোকানদার’রা। অন্য পাশে লেজফিতা ওয়ালারা শাড়ী চুড়ি নিয়ে বসেছে। সেখানে মেয়েদের বড় ভীড়। হঠাৎ করেই মাহাদের ইচ্ছে হলো, তার প্রিয় নারীটির জন্য গুচ্ছ গুচ্ছ লাল চুড়ি কিনবে। নিজ হাতে এই চুড়ি পড়িয়ে দিবার শখও জাগলে বক্ষ কোণে। মেয়েটা নিশ্চয়ই খুশী হবে। আনন্দে কান্নাকাটি করে ভাসিয়ে দিবে তার বুক। মেয়েটা ভীষণ কাঁদতে পারে। আনমনে খানিকটা হাসলো যুবকটি। পরমুহূর্তে মাঝিকে বললো,

“ওহে্ মাঝি? জলদি তোমার নৌকা ভিড়াও ঘাটে। গঞ্জে থাকিয়া মোর সখির লাগিয়া কিনবো আমি, লাল-শাড়ী, চুড়ি। এই শাড়ী-চুড়ি দিয়েই এবার তাকে করবো নিজের বধূ।”

মাঝি অনুমতি পেয়ে ততক্ষণাৎ নৌকা ভিড়াল পাড়ে। প্রত্যুত্তরে মাঝি দু’জন হাসলো কেবল।
মাহাদ মল্লিক এক লাফ দিয়ে কূলে উঠে গেলো। দোকান থেকে বেছে বেছে কয়েক জোড়া লাল কাঁচের চুড়ি, শাড়ী, চুলের ফিতা আর আলতা কিনলো। সেগুলো নিয়ে আবারও নৌকায় চড়লো। আবারও নৌকার বৈঠা চালাতে শুরু করলো মাঝি।

নিজ গ্রামে’র ঘাটে পৌঁছাতে তাদের সন্ধ্যা হয়ে গেলো। মাহাদ মল্লিক, অতি আনন্দের সহিত নদীর তীরের আঁকাবাকা সরু মাটির রাস্তা দিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে হেঁটে চলছে। নদীর ঘাট থেকে গ্রামের গৃহবধূর ও বালিকারা মাটির কলসি ভরে পানি নিচ্ছে। জমিদারের বড় পুত্র’কে নদীর পাড়ে দেখে যুবতী কন্যারা আঢ় চোখে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছে তাকে। বড়ই সুদর্শন যুবক! অনেক নারীর স্বপ্নের পুরুষ সে। জমিদার পুত্র বলে তাকে সরাসরি প্রেমনিবেদন করার সাহস তাদের কারো নেই। তবুও যুবতী মেয়েরা একজন আরেকজনকে আফসোস করে বলে,

“ইশশশ! এই যুবকটি যদি আমার হতো।জীবন ধন্য হয়ে যেতো।”

মাহাদকে লক্ষ্য করে সেখানে ছুটে আসলো, বীণা। এই নদীর পাড়েই তাদের ছোট্ট একটা ঘর। দূর থেকেই মাহাদ’কে ডাকলো সে,

“মাহাদ ভাই, ও মাহাদ ভাই? ”

সে জমিদার পুত্র, বীণা সামান্য মাঝির মেয়ে। আকাশ-পাতাল ব্যবধান তাদের! তবুও বীণা’কে সে বড়ই স্নেহ করে। কুহেলিকা’র সখি বলেই, এই স্নেহ। সচারাচর দেখা হলেই কথা হয় তাদের। আজও হলো। মাহাদ মল্লিক দাঁড়িয়ে গেলো। মৃদু হেসে শুধালো,

“আরেহ্! বীণা যে? ভালো আছো?”

বীণা সেসবের উওর দিলো না। হাঁপাতে হাঁপাতে মাহাদ ভাইয়ের পাশে দাঁড়ালো। কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে শুধালো,

“স’র্ব’না’শ হইয়া গেছে গো, মাহাদ ভাই! আপনি এতোদিন কই আছিলেন?”

“কি হইয়াছে বীণা? কার স’র্ব’না’শ ঘটিলো?”

“আপনি জানেন, মাহাদ ভাই? কুহেলিকার বিবাহ হইয়া গিয়াছে।”

“তুমি আমার সাথে ঠাট্টা করছো বীণা?”

কঠিন স্বরে ধমক দিয়ে বললো, মাহাদ মল্লিক। যা শুনে ভয়ে ডুকরে কেঁদে উঠলো বীণা। ভেজা কণ্ঠে শুধালো,

“আমি মিথ্যে বলছি না গো, জমিদার পুত্র! আপনার সাথে আমি মোটেও ঠাট্টা করছি না! গতকালই আপনার ছোট ভাইয়ের সাথে কুহেলিকার বিয়ে হয়ে গেলো। সত্যি বলছি আমি। আজ ভোরেই আপনাদের মহল থেকে নিজ চোক্ষে সেসব দেখে এসেছি আমি। আমার সখি বড্ড কষ্ট পাচ্ছে, মাহাদ ভাই। খুব কেঁদেছে সখি! আপনার ছোট ভাই বড় খারাপ লোক, মাহাদ ভাই! উনি সখিকে আঘাত করেছে, মে’রে’ছে।”

বীণা যে সত্যি বলছে, তা তার কথা বলার ধরণ দেখেই বুঝে গিয়েছে মাহাদ মল্লিক।
তার হাত থেকে সঙ্গেসঙ্গে শাড়ী-চুড়ি রাখা পাটের ব্যাগটা মাটিতে পড়ে গেলো। ঝনঝন আওয়াজে কাঁচের চুড়ি গুলো ভেঙে গিয়েছে বোধহয়। সেই সাথে ভেঙেছে তার মন। আলতার কৌটাও গড়াগড়ি খাচ্ছে মাটিতে।
তার মাথা ভনভন করছে! মনে হচ্ছে তার মাথার উপর বিশাল আকাশটা ভেঙে পড়ছে। নড়াচড়া করতে পারছে না। হতবিহ্বল হয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে মাহাদ মল্লিক। আহারে! জমিদার পুত্রকে কতটা অসহায় লাগছে! এই অসহায়ত্ব কি জমিদার পুত্রকে শোভা পায়?

চলবে…..

[অসুস্থতার জন্য কয়েকদিন গল্প দিতে পারিনি। তার জন্য আমি দুঃখিত! অনেক বড় পর্ব দিয়েছি, সবাই রেসপন্স করবেন। ]
#কালেক্ট_গল্প_কথা
Story Link-গল্পের লিংক (রিভিউ+আলোচনা)💓https://facebook.com/groups/329590663119170/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here