সুখের_ঠিকানা #শারমিন_হোসেন #পর্ব০৮

0
109

#সুখের_ঠিকানা
#শারমিন_হোসেন
#পর্ব০৮

তাসনিমের নম্বরে কল দেয় জারিফ। রিং হয়ে বেজে কে”টে যায়।জারিফ কোনো রেসপন্স না পেয়ে বি’র’ক্ত হয়।একজন গেস্ট আসায় জারিফ ফোন পকেটে পুরে কুশলাদি বিনিময় করতে থাকে।জারা সেজেগুজে এসে নাতাশাকে উদ্দেশ্য করে বলে,,”নাতাশা চলো তো আমরা এগিয়ে গিয়ে দেখি তোমার মামীরা আসছে কিনা।”

কথাটা শেষ করে জারা নাতাশার হাত ধরে সামনে অগ্রসর হতে যাবে।সেই মুহূর্তে নিরুপমা বেগম লিয়াদেরকে সাথে করে ড্রয়িংরুমে নিয়ে আসে। মিষ্টি হেসে বলেন,,”তোমাদের আসতে এতো দেরি হলো যে।আর তোমাদের বাবা মা আসলেন না?”

তুষার অমায়িক হেসে নম্রভাবে বলে,,”আসলে আন্টি আব্বু একটু অসুস্থ।আর মেজো চাচ্চু ডিউটিতে আছেন।আর ছোটো চাচ্চুর কথা তো জানেনই।”

নিরুপমা বেগম ঘাড় নাড়িয়ে হাসিমুখে বললেন,,”ওহ্। আচ্ছা তোমরা বসো।আমি ভাবীকে ডেকে দেই।”

তুষারের কল আসায় ফোন রিসিভ করে বাইরে যায়।রাহবার সোফায় বসে পড়ে।লিয়া আর তুলি দাঁড়িয়ে আছে।নতুন জায়গায় ওদের দুজনের কেমন জানি আনইজি লাগছিলো।এরমধ্যে জারা নিরুপমা বেগমের কথাগুলো শ্রবণ করে এগিয়ে আসে।নাতাশাকে উদ্দেশ্য করে বলে,,ঐতো আমাদের নতুন অতিথিরা বোধহয় চলে এসেছে।”

নাতাশার নজর যায় জলপাই রঙের থ্রি পিস পরিহিত লিয়ার দিকে।লিয়াকে এখানে দেখে নাতাশা অবাক হয়।নাতাশা এক দৌড়ে লিয়ার কাছে ছুটে যায়।মাথা উঁচু করে লিয়ার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বলে উঠলো,,”মিষ্টি আন্টি তুমি?”

লিয়া নাতাশার দিকে কিছুটা ঝুঁকে একহাতে নরম তুলতুলে গাল স্পর্শ করে বলে,,”হুম ,সোনা আমি।কেমন আছো তুমি?।হ্যাপি বার্থডে কিউটিপাই।ম্যানি ম্যানি হ্যাপি রিটার্নস অফ দ্যা ডে”

নাতাশা হাসিমুখে বলে,,”থেংকিউ।”

এমনসময় কিছু স্মরণ হতেই নাতাশা ভ্রু যুগল কুঁচকে কন্ঠে চঞ্চলতা নিয়ে ফের বলতে থাকে,,”ওহ্!এবার বুঝতে পেরেছি।তুমিই তাহলে আমার মামী হবে।তুমিই আমার মামার বউ হবে।তারমানে মিষ্টি আন্টি হলো আমার মামী।এইজন্য মামা বলছিলো আমি মামীকে আগে থেকেই চিনি।”

নাতাশার কথা শুনে লিয়া আশ্চর্য হয়।জারিফ ড্রয়িংরুমে আসতে গিয়ে নাতাশার সব কথা শুনতে পায়।লিয়া নাতাশার ভুল ভাঙ্গাতে ঠোঁট মেলে কিছু বলবে।সেইসময় পুরুষালী মোটা স্বরে বলে উঠলো,,”হেই মিস প্যারাডাইস কেমন আছেন?”

এই কন্ঠের মালিক কে?এই সম্মোধনটা কে করে তা লিয়ার ভালো করেই জানা।লিয়া সামনে তাকায়। প্রথমে জারিফের সাথে চোখাচোখি হয়।সাথে সাথেই লিয়া দৃষ্টি সরিয়ে নেয়।জারিফের পিছন হতে নীল সামনে এগিয়ে আসতে থাকে। নাতাশার কথাশুনে জারাও ভাবে লিয়াই হয়তো জারিফের উডবি।জারা লিয়াকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত স্ক্যান করে। অতঃপর নীলের দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে বলে উঠলো,,

“এ কেমন সম্মোধন নীল ভাইয়া।শুনেছি লম্বা মানুষের বুদ্ধি থাকে হাঁটুতে।তোকে দেখে সেটা বারংবার প্রুভ হয়। বাঁশের মতো লম্বা।অথচ বুদ্ধি শুদ্ধি খুবই পোর।বড় ভাইয়ের উডবিকে কেউ কখনো এরকম করে ডাকে? আশ্চর্য!বড় ভাইয়ের হবু বউ রেসপেক্ট দিয়ে কথা বলবি।ওয়েট,আমি ছোটোমাকে বলে তোকে ব”কা শুনাবো,হুম।আর সেদিন তুই কি বলেছিলি?উমম!মনে পড়েছে।আমার বর্ণনার মেয়ে ভাইয়ার বউ হিসেবে পেতে গেলে অর্ডার দেওয়া লাগবে।ওয়াও!আমার তো নিজের চোখকেই বিশ্বাস হচ্ছে না।সেইম আমার কল্পনার মেয়েকেই আমি ভাবী হিসেবে পেতে যাচ্ছি। টানাটানা হরিণী চোখ,দীঘল কালো চুল,ধবধবে ফর্সা গায়ের রঙ।সো নাইচ।একদম মিলে যাচ্ছে সব।”

জারা এক্সাইটেড হয়ে একনাগাড়ে গড়গড় করে কথাগুলো বলে।নীল জারাকে ধমক দিয়ে বলে,,”থামবি তুই।সেই তখন থেকে ছা”গ’লের তৃতীয় বাচ্চার মতো লাফাচ্ছে।আর উল্টাপাল্টা বকছে।”

এখানে আসাতে যে পরিমাণ অস্বস্তি ছিলো।তা যেনো হুরহুর করে দশগুণ বেড়ে গেলো লিয়ার।লিয়া ছোট করে শ্বাস টেনে নিয়ে ক্ষীন আওয়াজে বলতে থাকে,,”সরি।তোমার বুঝতে ভুল হচ্ছে। প্লিজ ডোন্ট মাইন্ড।তুমি করেই বললাম। আমি লিয়া।তোমার হবু ভাবী আমার আপু।”

এরমধ্যে নাতাশা জারিফকে দেখতে পেয়ে ছুটে গিয়ে একহাত ধরে টেনে লিয়ার সামনা-সামনি আনে। অতঃপর জারিফের এক আঙ্গুল ধরে ঘাড়টা উঁচিয়ে এক্সাইটেড হয়ে বলতে থাকে,,”মামা মিষ্টি আন্টিই হলো আমার সারপ্রাইজ। মিষ্টি আন্টি মামী।তুমি তাই বলছিলে না তখন?”

প্রথম থেকেই লিয়ার আসার বিন্দু পরিমাণ ইচ্ছে ছিলো না।সবার বলাবলিতে ফর্মালিটিজ মেইনটেইন করতে আসছে।এসে আবার এরকম একটা বা”জে পরিস্থিতি ক্রিয়েট হবে।তা কল্পনাও করেনি লিয়া।লিয়া আড়ালে তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে। এরমধ্যে জারিফ গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো,,”নাতাশা।আমি তোমার মিষ্টি আন্টির কথা বলিনি।তোমার ভালো আন্টির কথা বলেছিলাম।আমারই বলায় ভুল ছিলো।তোমাকে পরিষ্কার করে বলা উচিত ছিলো।কারন তুমি তো তোমার ভালো আন্টিকেও চেনো।আমি সেটা ভেবেই বলেছিলাম।”

নাতাশা ভারী মুখশ্রী করে ঠোঁট উল্টে বলে,,”ওহ্!”

এরমধ্যে জাহানারা বেগম এসে লিয়া আর তুলির সাথে ভালোমন্দ কথা বলেন। অতঃপর জারিফকে উদ্দেশ্য করে শুধালেন,,”কি ব্যাপার জারিফ? তাসনিম এখনো আসছে না যে।তুই না বললি ও মেডিকেলে আছে।ওখান থেকেই আসবে।কই এখনো আসছে না ।আর তুই গিয়ে নিয়ে আসতে পারতি তো।”

ফোন দিয়েছিলো রিসিভ করেনি।জারিফ সরাসরি মাকে এটা না বলে।কথাটা চেপে গিয়ে বললো,,”উম!চলে আসবে হয়তো।”

জারিফ বাইরে গিয়ে আবার তাসনিমের নম্বরে ডায়াল করে।এদিকে জারা ম্লানস্বরে বলে,,”সরি। মিস্টেক হয়েছে।তুমি কিছু মনে করোনা, প্লিজ।”

লিয়া জোর করে মুখে হাসির রেখা টেনে এনে বলে,,”ইটস্ ওকে।ব্যাপার না।”

নীলের দিকে দাঁত কটমট করে তাকিয়ে জারা ফের অভিযোগের সুরে বলে,,”আর এরা গিয়েছিলো মেয়ে দেখতে।নিজেরা দেখেই চলে আসছে।একটা ছবিও তুলে আনেনি। ভাইয়াকে জিগ্গেস করেছি,কোনো ছবি আছে কিনা?সেখানেও ভাইয়ার নেগেটিভ উত্তর। ভাইয়ার কাছে নাকি কোনো ছবি টবিও নেই। উফ্! অদ্ভুত!”

নীল সিঙ্গেল সোফায় বসে। ফোন স্ক্রল করতে করতে বলতে থাকে,,”মিস প্যারাডাইস।দিনকাল কেমন চলছে?ভালো নাকি খা”রা’প?”

লিয়া স্মিত হেসে কোমল গলায় বলে,,”আলহামদুলিল্লাহ ভালো।কেনো খা’রাপ চলার কথাছিলো নাকি?আর না কোনো কারন আছে? মিষ্টার লালনীল?”

নীল টানটান হয়ে বসে। শান্ত চাহনিতে লিয়ার দিকে একপলক তাকায়। অতঃপর ঠোঁট কামড়ে ধরে কিছু নিয়ে গভীর ভাবনায় নিমজ্জিত হয়। প্রায় মিনিট খানেক পড়ে ছোট করে নিঃশ্বাস ছেড়ে সিরিয়াস ভঙ্গিমায় বলতে থাকে,,”নাহ্।আসলে মানুষের মুখ হলো মনের দর্পণ।মুখ দেখে অনায়াসেই মনের কথা বলে দেওয়া যায়।আর আমার যতটুকু সাইকোলজি সম্পর্কে জ্ঞান আছে।তাতে আপনার ফেসটা নিয়ে গবেষণা করে বোঝা যাচ্ছে ”

নীলের কথা শেষ করতে না দিয়ে জারা ফোড়ন কে’টে বলে উঠলো,,”আহ্!নীল ভাইয়া তুই কিসব শুরু করলি বলতো। তোর এই সাইক্লিং এখন রাখ।যতোসব আজগুবি কথাবার্তা বলবি।একদম লজিক ছাড়া। উফ্!জাস্ট অসয্য!”

নীল বিদ্রুপের সুরে বলে উঠলো,,”খুব তো লজিকাল হয়েছিস। ভাই একজন উদ্ভিদের ডক্টর,বউ আনতে যাচ্ছে মানুষের ডক্টর।আর তার বোন হবে ইন্জিনিয়ার।এমন ভাবসাব।”

তুলি ঠোঁট চেপে মিটমিট করে হাসছে।লিয়া নির্বিকার আছে।জারা রাগান্বিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে নীলের দিকে।নীলকে আচ্ছামত ব”কার অদম্য ইচ্ছা থাকলেও নতুন মেহমানদের জন্য ইচ্ছেটাকে দমিয়ে রাখে জারা।নীল ভাবলেশহীনভাবে ফোন স্ক্রল করছে আর এটাসেটা বকবক করছে।
.
.
মেডিকেলের ক্যান্টিনে ডক্টরদের জন্য রাখা আলাদা স্পেসে একপাশের নিরিবিলি কর্নারের একটা টেবিলে বসে আছে তাসনিম।আর তাসনিমের সামনাসামনি চেয়ারে বসে ধোঁয়া উঠা কফির মগে আলতোকরে ঠোঁট ছোঁয়ায় ডক্টর আলিফ। তাসনিম বারবার হাতে থাকা রিচওয়াচে সময় দেখছিলো।আলিফ মুখে থাকা কফিটুকু গলাধঃকরণ করে। অতঃপর তাসনিমের শ্যামবর্ণ মুখশ্রীতে শীতল দৃষ্টি নিক্ষেপ করে গাম্ভীর্য বজায় রেখে বললো,,

“তাবাসসুম তাসনিম।আপনি কি কোনো কিছু নিয়ে চিন্তিত?আপনাকে অন্যমনস্ক লাগছে।”

তাসনিম তৎক্ষনাৎ নম্র স্বরে বলে উঠলো,,”নাহ্।তেমন কিছু নয়।”

জারিফের বাসায় যাওয়ার কথা।আজকে তাসনিমের নাইট শিফট আছে।স্যারকে বলে আপাতত দুই থেকে তিন ঘন্টার ছুটি নিয়ে যাওয়ার কথা ছিলো।স্যারকে বলার আগেই ডক্টর আলিফের আ্যসিস্ট্যান্ট গিয়ে বলে,আলিফ স্যার নাকি তাসনিমকে দেখা করতে বলেছেন। ক্যান্টিনে ওয়েট করছেন।সেই সময় তাসনিমের মনেহয়,যতটুকু স্যারকে চিনি।এই কয়মাসে ওনাকে দেখে।ওনার কথাবার্তা, চালচলনে মনে হয়না উনি এমনি এমনি ডাকবেন। নিশ্চয় সিরিয়াস কিছু হবে।কোনো সিরিয়াস পেশেন্টের ব্যাপারে কথা বলতেও পারেন। এতকিছু ভেবে থাকলেও বিগত পাঁচ মিনিট ধরে তাসনিম বুঝতে পারছে না।আসলে আলিফ কিজন্য ডেকেছে?আলিফ আয়েশি ভঙ্গিতে কফি খাচ্ছে। তাসনিম কপাল কুঁচকে ক্ষীণ স্বরে বেশ ভদ্রভাবে বলে,,

“স্যার কিজন্য ডেকেছেন? নাহ্!মানে।কিছু বলার আছে?”

আলিফ টেবিলের উপর দুইহাত ভাঁজ করে রাখে।শীতল চাহনিতে তাসনিমের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলে,,”হুম।বলার আছে।”

কিয়ৎক্ষন থেমে। একটু নড়েচড়ে বসে।মুখায়ব টানটান করে।কিছুটা জড়তা নিয়ে বলতে থাকে,,”মিস তাবাসসুম তাসনিম।আমি কোনো কথা ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বলতে পছন্দ করিনা।আর কখনো সেরকম বলিও না।আমি স্পষ্ট কথা বলতে পছন্দ করি।জানিনা কথাটা শোনার পর আপনার রিয়াকশন কেমন হবে?আপনি আমার ব্যাপারে কিরুপ ভাববেন?আমার প্রতি ব্যাড ধারণাও জন্মাতে পারে।যাইহোক।”

একটু থেমে একহাত ঝরঝরে চুলের মধ্যে চালনা করে। তাসনিমের চোখে চোখ রেখে শান্ত গলায় বলে উঠলো,,”ডু ইউ ম্যারি মি?”

এরকম একটা কথা শোনার জন্য তাসনিম মোটেও প্রস্তুত ছিলো না। তাসনিমের মাথায় যেনো আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। ডক্টর খাঁন সরাসরি তাসনিম কে বিয়ের প্রস্তাব দিবে।এটা তাসনিম কল্পনাও করেনি।আজ কয়েক মাস ধরে স্যারের সাথে রাউন্ডে যায়। বিভিন্ন কথাবার্তা হয়।তবে ঘুনাক্ষরেও বোধগম্য হয়নি। তাসনিমের উপর আলিফের কোনো ফিলিংস আছে। তাই বিষয়টাতে তাসনিম একটু বেশিই আশ্চর্যান্বিত হয়। তাসনিম যেনো বাকশুন্য হয়ে পড়ে।অবাক চোখে সামনে বসা গাম্ভীর্য মানবের সুদর্শন ফেসের দিকে ঠায় তাকিয়ে রয়। তাসনিমের কোনো উত্তর না পেয়ে আলিফ গম্ভীর কন্ঠে ফের শুধালো,,

“এইতো গতমাসে আমার আম্মু যখন ময়মনসিংহে আমার বাসায় আসছিলো।সেইসময় একদিন মেডিকেলে ঘুরতে আসছিলো।একজন পেশেন্টের ফাইল হাতে আপনি আমার চেম্বারে এসেছিলেন। আপনার মনে আছে? সেইসময় একজন মাঝ বয়সী ভদ্রমহিলা আমার কেবিনে ছিলেন।উনি আমার আম্মু।”

তাসনিম মাথায় চাপ দিয়ে স্মরণ করতে থাকে।আবছা সেই ফেসটা মনেহয়। তাসনিম জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে ক্ষীণ আওয়াজে বলে,,”হুম।আমার মনে আছে।”

আলিফ ছোট শ্বাস ফেলে।নরম কন্ঠে ফের আওড়ালো,,”সেইদিনের পর থেকে আমার আম্মু আপনার কথা অলওয়েজ বলে।আপনাকে নাকি খুব মনে ধরেছে আমার আম্মুর। ইভেন আপনার বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাওয়ার জন্য একদম উঠেপড়ে লেগেছে।তো আমার কেনো জানি মনেহলো, আপনার বাড়িতে প্রস্তাব পাঠানোর আগে।এ ব্যাপারে আপনার সাথে কথা বলা দরকার।আপনার মতামত আগে নেওয়া জরুরী।তাই আমি আগ পিছ না ভেবে। আপনাকে সরাসরি কথাটা বললাম।বাকিটা আপনার ইচ্ছে।”

তাসনিম হতভম্ব হয়ে যায়।কথা বলতে তাসনিমের কন্ঠনালী কাঁপছে। কাঁপা কাঁপা কন্ঠেই বলে উঠলো,,”সরি।স্যার।বাসায় আমার বিয়ের কথাবার্তা চলছে।সব কিছুই প্রায় ঠিক।শুধু ডেট ফিক্সিড হয়নি।”

তাসনিমের এহেন জবাবে আলিফের মুখটা লহমায় বিবর্ণ হয়ে যায়।কেনো জানি হৃদস্পন্দন স্থির হয়ে যায়। বুকের বা পাশে হালকা ব্যাথা অনুভব হয়।আলিফ মনেমনে আওড়ায়,মায়ের কথায় প্রস্তাবটা আমি রেখেছি। এখানে নেগেটিভ উত্তর হওয়ায় তো আমার কিছু আসা যাওয়ার কথা নয়।তবুও কেনো এই নেগেটিভ উত্তরটা আমার মন মেনে নিতে পারছে না।আলিফের নিজের প্রতি কনফিডেন্স ছিলো।কোনো মেয়ে তাকে রিজেক্ট করবে।তা ভাবতে পারিনি।আলিফ মুখশ্রীতে স্বাভাবিকতা বজায় রেখে অপরাধীর স্বরে বলতে থাকে,,

“সরি।আমি জানতাম না। প্লিজ,ডোন্ট মাইন্ড।এগেইন সরি।আপনার মূল্যবান সময় ন’ষ্ট করার জন্য।”

তাসনিম ম্লান স্বরে বলল,,”ইটস্ ওকে।”

আলিফ ব্যাথাতুর নয়নে তাসনিমের দিকে তাকিয়ে ফের কৌতুহল বশত বলে ফেলে,,”এ্যট ফাস্ট সরি। পার্সোনাল বিষয়ে কিছু জানতে চাওয়ার জন্য।তবুও কিওরিওসিটি কাজ করায় না বলে থাকতে পারলাম না।আপনি তাকে পছন্দ করেন।আই মিন সেই সৌভাগ্যবান মানুষকে ভালোবাসেন।”

আলিফের কথা কিসের ইঙ্গিত দিচ্ছে তা তাসনিমের তীক্ষ্ণ নার্ভ ঠিকই ধরেছে।তাই তাসনিম অসহায় ফেস করে মৃদুস্বরে আওড়ালো,,”আমি তাকে ভালোবাসি কিনা।সেটা এখন ম্যাটার করছে না।আমি এখন কমিটেডের মধ্যে আছি।আর আমার ফ্যামেলি খুব রেস্ট্রিকটেড।আমি সবসময় আমার পরিবারের মতামতকে প্রায়োরিটি দিয়ে এসেছি।আর ভবিষ্যতেও দিতে চাই।আর স্যার আপনাকে,এখন শুধু একটা কথাই বলার আছে,আপনার আরো আগে বলা উচিত ছিলো।লেইট হয়ে গিয়েছে।আমার পক্ষে কমিটমেন্ট ভাঙ্গা পসিবেল নয়।”

আলিফ মেকি হেসে স্পষ্টভাবে বললো,,”কনগ্রাচুলেশন।শুভ কামনা রইলো।আপনার জীবন সবসময় আনন্দে ভরে থাকুব এই কামনা করি।আর আমার একটা রিকোয়েস্ট থাকবে।আপনি আগের মতো স্বাভাবিক থাকবেন।এসব কথা পাড়লে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিবেন। এসবের জন্য কোনো হেজিটেশন ফিল করবেন না।”

তাসনিম ঠিক আছে বলে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। মৃদুস্বরে বলে,,”আমার একটু তাড়া আছে।আসছি স্যার। আসসালামুয়ালাইকুম।”

তাসনিম চলে আসতে থাকে।কিছুটা দূরে এসে আবার ঘাড় ঘুরিয়ে পিছন ফিরে তাকায়।আলিফ চেয়ারের হেডে কাঁধ রেখে একহাতে চুলগুলো মুঠো করে রেখেছে। দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে তাসনিম ক্যান্টিন থেকে বেড়িয়ে আসে। তাসনিম কর্তব্যরত ডক্টরস রুমে আসে।সেখানে নিজের ব্যাগ থেকে ফোন বের করে ওপেন করতেই।জারিফের অনেকগুলো মিসড কল দেখতে পায়। তাসনিম অস্পষ্ট স্বরে বলে, উফ্!ব্যাগের ভেতর ফোন ছিলো। এদিকে জারিফ তো অনেকবার কল দিয়েছে দেখছি। এখনো তো স্যারের থেকে ছুটিই নেওয়া হয়নি।এদিকে কত লেইট হয়ে গেলো।

এখনকার ডিউটিতে থাকা এমবিবিএস ডক্টরকে উদ্দেশ্য করে তাসনিম ছুটির কথা বলতে যাবে।তার আগেই ডক্টর কিছু লিখতে লিখতে তাসনিমকে ডেকে বলে উঠলো,,”মিস তাসনিম **নম্বর বেডে একজন সিরিয়াস পেশেন্ট আছে। অনেক পানি বের করা হয়েছে। বাচ্চাটা খুব উইক।আর এখন আ্যলবুটিন দিতে হবে।আ্যলবুটিন চলাকালীন পুরোটা সময় আপনি পর্যবেক্ষণ করবেন।কোনো সমস্যা হলে সাথে সাথে আমাকে ইনফর্ম করবেন। ক্লিয়ার?”

তাসনিম অসহায় নজরে তাকিয়ে সাহস জুগিয়ে জড়তা নিয়ে বলে,,”স্যার আমি বলছিলাম যে।আমার এখন বাইরে যেতে হবে।”

কিছুটা কঠোরভাবে বলে উঠে,,”আশ্চর্য!একজন পেশেন্ট সিরিয়াস।আর আপনি এখন বাইরে যেতে চাইছেন।আর আপনার শিফট এখন। খা’রাপ কিছু হলে এর দায়ভার কিন্তু শুধু আমার উপর নয়।আপনার উপরও পড়বে। জবাবদিহিতা করতে হবে।সো বলছি নিজের কাজে সিরিয়াস হোন।”

কথাটা শেষ করে প্যাড থেকে কাগজটা ছিঁড়ে তাসনিমের হাতে ধরিয়ে দেয়। তাসনিম কাগজটা নিয়ে নেফ্রোলজি ওয়ার্ডে গিয়ে পেশেন্টের বাড়ির লোকের হাতে ঔষধের নাম লেখা কাগজটা দিয়ে বলে,,” ইমিডিয়েটলি আ্যলবুটিন দিতে হবে।আর এটা বাইরে থেকে নিতে হবে।কুইকলি নিয়ে আসুন।”

তাসনিম করিডোরে দাঁড়িয়ে ভাবতে থাকে,আ্যলবুটিন শেষ হতে মিনিমাম টু আওয়ার্স লাগবে।এরমধ্যে হাতে থাকা ফোনটা কেঁপে উঠে। তাসনিম তৎক্ষনাৎ রিসিভ করে।ফোনের ওপাশ থেকে তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে চিন্তিত গলায় জারিফ বলে উঠলো,,”হ্যালো! তাসনিম তুমি ঠিক আছো?”এতোবার কল দিচ্ছি রিসিভ করছো না কেনো?আর এখনো আসছো না?কোনো সমস্যা?”

তাসনিম এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে। ম্লান স্বরে ঠোঁট আওড়ালো,,”সরি!জারিফ।আমি যেতে পারবো না।এখানে ইমার্জেন্সি আমাকে থাকতে হবে।সিরিয়াস পেশেন্ট আছে।তাই এখন যাওয়া কোনোভাবেই পসিবেল নয়।”

এমন জবাব জারিফ মোটেও আশা করেনি। মূহূর্তেই জারিফের মেজাজ বিগড়ে যায়।জারিফ কন্ঠে কঠোরতা নিয়ে বলে উঠলো,,”তুমি মজা করছো?এখানে সবাই তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।নাতাশা বারবার তোমার কথা বলছে।মা ছোটোমা বারবার আমাকে জিগ্গেস করছে তোমার আসতে দেরি হচ্ছে কেনো।আর এতক্ষণ ফোন না ধরে এখন এসে তুমি মজা করছো।”

“আমি মোটেও মজা করছি না।আর ফোন ব্যাগে ছিলো।আমি বিজি থাকায় খেয়াল করিনি।ডিউটিতে থাকা স্যারের কাছে ছুটির কথা বলেছি।বাট লাভ হয়নি।”

তাসনিমের শেষের কথা শুনে জারিফের রা’গ টা একটু কমে।জারিফ ফের নরম গলায় বললো,,”আচ্ছা ঠিক আছে।আমি আসছি।আমি ফোনে ডক্টর খানের সাথে কথা বলে নিবো।ওনাকে বলবো তোমার ছুটির জন্য।”

ডক্টর খানের কথা শ্রবণ হতেই তাসনিম সাথে সাথে বলে উঠলো,,”নাহ্।থাক স্যারকে বলতে হবে না।আর এখানে রিয়েলি একজন সিরিয়াস পেশেন্ট আছে।এভাবে আমার দায়িত্ব ফেলে আমি কিকরে যাই? হিউম্যানিটিরও ব্যাপার আছে।”

জারিফ তাচ্ছিল্য করে বলে,,”আচ্ছা।তুমি তোমার হিউম্যানিটি নিয়ে থাকো।আসতে হবে না। এখানে এতগুলো মানুষ তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।সেখানে তোমার কোনোই দায়িত্ব নেই।”

তাসনিম চোখ বন্ধ করে তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,,”তুমি ভুল বুঝছো।আমি ওভাবে বলিনি।আর ইনভাইট রক্ষার্থে আমার বাড়ির কেউ যায়নি এমনতো নয়।আমার ভাইবোনেরা তো গিয়েছে।”

জারিফ কন্ঠে কঠোরতা মিশিয়ে ফের বললো,,
“তোমাকে দিয়েই তোমার বাড়ির সবার সাথে আমাদের পরিচয় হতে যাচ্ছে।তাদের থেকেও তোমার থাকাটা ইম্পর্ট্যান্ট ছিলো।”

“আমি বুঝতে পারছিনা।সামান্য একটা বিষয়ে তুমি রিয়াক্ট কেনো করছো। আশ্চর্য!”

জারিফ রা’গটা কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে।চোখ বন্ধ করে বড় করে শ্বাস টেনে নেয়। স্পষ্ট গলায় বলে,,”এখানে আমি নাতাশাকে কথা দিয়েছিলাম।আজকে ওর সাথে তোমার মিট করিয়ে দেবো।নাতাশা বারবার একই প্রশ্ন করে চলেছে। বাচ্চা একটা মেয়ে আশা করেছিলো।এখন আমি যদি বলি,তুমি আসছো না। ও ভীষণ মন খা’রাপ করবে।আর এটাকে তোমার রিয়াক্ট মনে হচ্ছে।”

“সময় চলে যাচ্ছে না।আজ হলো না।আমি পরে পাছে নাতাশার সাথে দেখা করে নেবো।আর নাতাশা আমাকে চেনে না এমন তো নয়।”

তাসনিমের এমন কথায় জারিফের রা’গটা তরতর করে আকাশ ছুঁইয়ে যায়।জারিফ আর দ্বিতীয় কথা না বলে খট করে কল কে’টে দেয়।

জারিফ বাড়ির সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে দেয়। তাসনিম আসতে পারবে না।ওর আজকে নাইট শিফট ছিলো। কোনোভাবেই ম্যানেজ করতে পারেনি।তাই ওর জন্য আর লেইট না করে কেক কাটা যাক।জারিফ একটা বড় টেডি গিফট করে নাতাশাকে।নাতাশা তবুও গাল ফুলিয়ে থাকে।হবু মামী না আসাতে।নীল একটা বড়সড় বক্স এনে নাতাশার সামনে ধরে।তারপর মুচকি হেসে বলে,,

“উফ্!সরি নাতাশা বেবি।আজকেও বাতাসা আনতে ভুলে গিয়েছি। গালটা কমলার মতো ফুলিয়ে রেখো না।আজকের মতো এই গিফট নাও। নেক্সট বার্থডে তে বাতাসা আনবো।”

নাতাশা দুইহাত কোমড়ে দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,,”আবার বাতাসা।নীল মামু কতবার তোমাকে বলবো আমি বাতাসা খাই না।”

নীল বক্সটা খোলে। বক্সের ভেতর থেকে একটা সাদা বিড়াল মাথা উঁচু করে আশেপাশে ঘাড় ঘুরিয়ে মিঞ ডেকে উঠে। নাতাশার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা জারা হলুদ চোখের প্রাণীটির আচমকা ডাক শুনে একলাফে ছিটকে দূরে সরে দাঁড়ায়।বুকে থুতু ছিটিয়ে জারা বলে উঠলো,,”কি আশ্চর্য!আমি তো চমকে উঠেছি।এটাও কেও গিফট দেয়! অদ্ভুত!”

নাতাশা ঠোঁট প্রসারিত করে হাসে।হাসিমুখে বলে,,”ওয়াও!ক্যাট।দেখতে খুব প্রিটি।”

নীল জারাকে উদ্দেশ্য করে বলে,,”সরফরাজ অভ্রনীল মানুষটাই অদ্ভুত।তাই তার কাজকর্ম সব কিছুই সবার থেকে আলাদা।তার দেওয়া গিফটও অদ্ভুত!বুঝলি জারা?”

জারা বিড়বিড় করে বলে,,নিজের গায়ের রঙ যেমন সাদা বিলাইয়ের মতো। ঠিক অমনি দেখতে একখান সাদা বিড়াল গিফট করছে।হু।

নাতাশা একহাত বিড়ালের গায়ে আলতোকরে ছুঁইয়ে বলে,,”নীল মামু একে কি বলে ডাকা যায়।এর নাম কি রাখবো,উম!”

নীল পাশে থাকা লিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে,,”মিস লিয়া এর একটা সুন্দর নাম সিলেক্ট করেন তো।”

লিয়ার ইচ্ছে করছিলো বিড়ালটাকে কোলে নিতে।লিয়ার বিড়াল ভীষণ পছন্দ।লিয়া দশ সেকেন্ড ভেবে বলে উঠলো,,” স্যান্ডি। স্যান্ডি রাখলে কেমন হবে?”

নীল বাহবা দিয়ে বলে উঠে,,”এক্সিলেন্ট!ধন্যবাদ এত সুন্দর একটা নাম বলার জন্য।”

জারিফ এসে গম্ভীর মুখশ্রীতে বলে,,”এসব নামটাম রাখা শেষ হলে। অনুষ্ঠান শুরু করা যাক। এমনিতেই অনেক লেইট হয়ে গিয়েছে।আর টাইম ওয়েস্ট করা ঠিক হবে না।”

নাতাশার একপাশে জারিফ দাঁড়িয়ে আছে।অন্যপাশে জারা।এমনসময় নাতাশা লিয়ার একহাত ধরে টেনে এনে নিজের পাশে দাঁড় করিয়ে বলে,,”মিষ্টি আন্টি তুমি এখানে দাঁড়াও।”

জারাও ইশারায় লিয়াকে থাকতে বলে। কেক কেটে একটুকরো কেক নিয়ে প্রথমে নাতাশা জারিফকে খাওয়ায়।জারিফ একপাশে হালকা বাইট দেয়।নাতাশা তারপর হাতে থাকা সেই কেকের টুকরা লিয়ার সামনে ধরে।লিয়া ঠোঁট কামড়ে ধরে নির্বাক থাকে।সেই সময় নাতাশা ঠোঁট মেলে বলতে থাকে,,”কিহলো মিষ্টি আন্টি। নিচ্ছো না যে। আমার হাত ব্যাথা হয়ে যাচ্ছে তো।কতক্ষণ এভাবে ধরে রাখবো,হ্যা।”

জারিফ দৃষ্টি সরু করে লিয়ার দিকে তাকায়।লিয়া খেয়ালি নজরে তা দেখে নির্বিকার থাকে।লিয়া তৎক্ষণাৎ এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে।নিরুপমা বেগম হাসিমুখে লিয়াকে উদ্দেশ্য করে মায়াভরা আদূরে গলায় বললেন,,”লিয়া তুমি বুঝি কেক খাওনা।নাতাশা যখন এতো করে বলছে।তখন আজকের জন্য নাহয় একটু মুখে নাও। বাচ্চা মেয়ে বলছে।নাতাশা আবার ভীষণ অভিমানী।”

অবশেষে লিয়া নাতাশার সামনে হাঁটু ভেঙ্গে বসে।একহাতে নাতাশার হাতটা ধরে আলতোকরে হালকা বাইট দেয়।তারপর বাকিটুকু নাতাশার মুখে দিয়ে দেয়।

কেক কাটা পর্ব শেষে জাহানারা বেগম আক্ষেপ করে বললেন,,”তাসনিম আসতে পারলো না। আচ্ছা যাইহোক তোমরা রাতে ডিনার করে যাবে।”

.

তুলি বিরক্তিকর ফেস করে লিয়ার কানের পাশে মুখটা নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,,”আমার আপুর কান্ডজ্ঞান দেখেছিস।ওর হবু শ্বশুর বাড়ির সবাই ওর জন্য অপেক্ষা করছিলো।আর ও আছে ওর ডিউটি নিয়ে। অদ্ভুত! মানুষ একটা।”

বড়রা টেবিলে খাবার সাজাচ্ছে।ছোটরা সোফায় বসে।এরমধ্যে গিটার হাতে নীল আসে।সোফায় জারিফের পাশে বসে পড়ে।জারিফ তুষারের সাথে কথা বলছিলো। নাতাশা জারিফের কোলের উপর বসে ছিলো।গিটারে টুং টুং শব্দ তুলে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে নীল । জারা লিয়া তুলি গল্প করছিলো।সবার দৃষ্টি নীলের দিকে যেতেই নীল গলা খাঁকারি দিয়ে বলে,,”গাইস।এখন একটা গান হলে কেমন হয়।এখানে কে ভালো গাইতে পারে?”

নীলের কথাটা বলতে দেরি তুলির উত্তর দিতে দেরি হয়না।তুলি উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বলে ফেলে,,”লিয়া।লিয়া খুব ভালো গাইতে পারে।”

লিয়া কথাটা শোনার সাথে সাথেই ঝড়ের বেগে তুলির দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকায়।তুলি ফাঁকা ঢুক গিলে নেয়। মনেমনে আওড়ায়,এইরে এটা তো বাড়ি নয়।নতুন একজায়গায় এসে।এভাবে লিয়ার নামটা বলা মোটেও আমার উচিত হয়নি। লিয়ার ফেস দেখে মনে হচ্ছে ও তো বেশ চটেছে আমার উপর।

লিয়ার কথা শোনার সাথে সাথেই জারা এক্সাইটেড হয়ে বলে,,”বাহ্!তাই নাকি। আচ্ছা তুমি তবে এবার একটা গান গাইয়ে শুনাও।আমি তো খুব এক্সাইটেড।”

জারার সাথে নীলও একই সুরে বললো।তবুও লিয়া কিচ্ছুতেই রাজি হচ্ছিলো না।নাতাশা এসে লিয়া আর তুলির মাঝে বসে বলে,,”প্লিজ, মিষ্টি আন্টি।গাও না।আমার বার্থডে স্পেশাল গিফট হিসেবেই নাহয় গাও।”

এত সুন্দর মায়াময় আবদার কি ফেলা যায়?লিয়া নাতাশার আবদার রাখতে অবশেষে গাইতে থাকে।একহাতে নাতাশার মিষ্টি তুলতুলে গালটা টিপে দেয়। অতঃপর গায়,,

হিরে মানিক তো নয়,
আমি শুধুই তোমায়,
ভালোবাসি🖤🖤
রুপকথার চেয়েও
নীল পাখির থেকেও
তোমায় আমি ভালোবাসি🖤🖤

হিরে মানিক তো নয়,
আমি শুধুই তোমায়, ভালোবাসি 🖤🖤

[চলবে…ইন শা আল্লাহ]

(আমার প্রথম ভুল ছিলো গল্পের থিমটা ভাবায়। দ্বিতীয় ভুল আগের গল্পের চরিত্র গুলোর নাম নেওয়ায়।আমি চাইলেই এখন এই ভুলগুলো শুধরে নেওয়ার উপায় নেই😔। গল্পটা ডিলেট করা ছাড়া শুধরানোর উপায়ও নেই।আবার নীল ক্যাফের পেজের সাথেও কমিটেড।মাঝপথে গল্প বাদ দেওয়া যাবে না।আর গল্প আগাতে হলে।আমার মতোই আমাকে আগাতে হবে। গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক।বাস্তবতার সাথে কোনই মিল থাকবে না।আর ২০২৪সালে এসে অনেকে এরকম অবাস্তব গল্প পছন্দ করবেন না। গল্পটা আপনাদের কাছে ইন্ডিয়ান সিরিয়ালের মতো লাগতে পারে। আপনাদের পছন্দ হবে না।সেটা কমেন্টে এসে ছাড়বেন।আমার লেখার প্রতি অনিহা তৈরি হবে।সব শেষে আমি অনুরোধ করবো, এরকম অবাস্তব গল্পকে আপনারা ইগনোর করুন।আর আমার জ্ঞানের পরিধি খুবই পোর।তাই হয়তো এরকম একটা বা’জে থিম ভেবেছি।যাদের ভালো লাগবে না,একদম ফা’জ’লামি লাগবে।তারা প্লিজ ইগনোর করবেন।আর যদি দুইজনও পড়েন।তাদের প্রতি অনুরোধ রইলো, গল্পকে গল্প হিসেবে বিনোদনের জন্য নিবেন। ভুলত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন 😔)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here