সুখের_ঠিকানা #শারমিন_হোসেন #পর্ব০৯

0
116

#সুখের_ঠিকানা
#শারমিন_হোসেন
#পর্ব০৯

লিয়ার গালে টুপ করে একটা চুমু খেয়ে নাতাশা উচ্ছ্বসিত হয়ে বলতে থাকে,,”থেংকিউ মিষ্টি আন্টি।এত সুন্দর একটা গান গাওয়ার জন্য।অনেক অনেক থেংকিউ।”

লিয়া স্মিত হাসলো।এমন সময় নাতাশা জারিফের সামনে গিয়ে একহাত কোমড়ে রেখে স্ট্রেইট দাঁড়ালো। তৎক্ষনাৎ ডানহাতটা বাড়িয়ে ভাঙ্গা ভাঙ্গা স্বরে বলতে থাকে,,”মামা তোমার ফোনটা একটু দাও তো।”

জারিফ বিনাবাক্য ব্যয়ে সাথে সাথেই একহাত দিয়ে প্যান্টের পকেট থেকে ফোনটা বের করে নাতাশার হাতে দেয়।নাতাশা কপাল কুঁচকে বলে,,”লকড খুলে দিবে তো।”

জারিফ মৃদু হাসলো। কিয়ৎক্ষন পরেই শীতল কন্ঠে বললো,,”পিন আর ফেস লকড দেওয়া আছে।পিনটা আমার জন্য আর ফেস লক তো তোমার জন্য।তোমারই তো ফেস লক দেওয়া আছে।”

নাতাশা একহাত কপালে রেখে ঠোঁট উল্টে বলে,,”ওহ্। উফ্!ভুলে গিয়েছিলাম তো।”

নাতাশা মিষ্টি হেসে জারিফের খোঁচা খোঁচা দাড়ি ওয়ালা গালে চুমু খায়। অতঃপর লিয়াদের পাশে এসে বসে।ক্যামেরা অন করে লিয়া আর তুলিকে উদ্দেশ্য করে বলে,,”আন্টি তোমাদের সাথে সেলফি তুলতে চাই।নাও এবার সেলফি তুলো।”

লিয়ার দিকে ফোনটা ধরে নাতাশা কথাগুলো বলে।লিয়া ফোনটা ধরতে চাইছে না।লিয়ার মনমস্তিষ্ক ফোনটা ধরতে অনীহা প্রকাশ করছিলো।সেইসময় পাশ থেকে তুলি ফোনটা ধরে ফন্ট ক্যামেরা অন করে।তুলির হাতে ফোন ।নাতাশা লিয়ার গলা জড়িয়ে ধরে লিয়ার গালের সাথে মুখটা লাগিয়ে রাখে।ফলে নাতাশার ঠোঁট লিয়ার ফর্সা গাল অনায়াসেই স্পর্শ করে।একসাথে ওরা সেলফি তোলে।আবার নাতাশা ফোন হাতে ক্যাচক্যাচ শব্দ তুলে লিয়ার কয়েকটা ছবি তোলে।লিয়ার চোখমুখ বিরক্ত প্রকাশ করছিলো।তবুও লিয়া মুখ ফুটে কিছু বলতে পারছিলো না। নাতাশা লিয়ার কোলের উপর বসে ছবি গুলো দেখাতে থাকে।যতই লিয়া সবকিছু স্বাভাবিকভাবে নেওয়ার চেষ্টা করছে।ততই যেনো পরিবেশ পরিস্থিতি কেমন এলোমেলো হয়ে আসছে।যার ছায়া থেকেও নিজেকে একশোগজ দূরে রাখার চিন্তা ভাবনা মনমস্তিষ্কে গেঁথে রাখার চেষ্টা করে চলছে। তথাপি সিচুয়েশনের জন্য বারংবার সব কিছুতে না চাওয়া সত্বেও মানুষটা জড়িয়ে যাচ্ছে।এখান থেকে বাসায় না ফিরা অব্দি লিয়া স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারছে না।দম বন্ধকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে লিয়ার কাছে।সবাই কত সুন্দর স্বাভাবিক ভাবে গল্প গুজব করছে। আনন্দঘন পরিবেশটা উপভোগ করছে। কিন্তু লিয়া পারছে না এই আনন্দঘন পরিবেশটা ইনজয় করতে। দাঁতে দাঁত চেপে মনের মধ্যে পুষে রাখা ব্যাথাটা থেকে থেকেই যেনো অসয্য জ্বলনে পরিনত হচ্ছে।সেই জ্বলনে ঘি ঢালার জন্য যেনো পরিবেশটাও অনুকূল ভূমিকা পালন করছে।লিয়া ব্যাথাতুর ভগ্ন হৃদয় নিয়ে দৃষ্টি ফ্লোরে নিবদ্ধ করে নিজেকে নির্বিকার রাখে।

“আমি এমন একটা তুমি চাই!এমন একটা তুমি চাই!যে তুমিতে আমি ছাড়া অন্য কেউ নাই!তুমি একবার বলো যদি আমি পারি দিবো খরস্রোতা নদী! তুমি একবার বলো যদি আমি পারি দিবো খরস্রোতা নদী! ভালোবাসা দিবো পুরোটাই!!!”

নীল গিটারে টুং টুং শব্দ তুলে গলা ছেড়ে গাইতে থাকে।লিয়া মাথাটা তুলে নীলের দিকে একপলক তাকায়।মনেমনে নিজের উপর নিজেই তাচ্ছিল্য হাসে।জারা ভেংচি কাটলো।বিড়বিড় করে বলতে থাকে,হু!যে তুমিতে আমি ছাড়া অন্যকেউ নেই।নিজের মনের ভেতর কুড়িজন রেখে সেকিনা এমনটা আশা করে। ভাবা যায়! উফ্!যার কিনা সেকেন্ডে সেকেন্ডে এ বেবি সে বেইবি ফোনের পর ফোন দিতেই থাকে।ওর মনের গলিতে তো জ্যামে ভরা।একদম লেডিসদের যানজট।তার মুখে এমন গান। হুঁ।

জারার বিড়বিড় করা কথাগুলো হালকা লিয়ার কর্ণদ্বয় শ্রবণ হতেই লিয়া মৃদু হাসে। নীল গান শেষ করে গিটারটা জারিফের দিকে বাড়িয়ে দেয়।তারপর অন্যহাতে কপালের উপর আসা ঝাঁকড়া চুলগুলো পেছনে ঠেলে দিয়ে বলতে থাকে,,”ব্রো এবার তোর পালা।নে ধর।আর একটা সুন্দর গান গেয়ে এই সুন্দর উপভোগ্য মূহূর্তটা আরো আনন্দময় করে তোল।”

জারিফ সোজা বসা থেকে ফট করে উঠে দাঁড়ায়।তারপর কাঠকাঠ গলায় বলে,,”অসম্ভব। তোরা গাইতে থাক।”

এতটুকু বলে জারিফ গটগট করে নিজের রুমের দিকে যেতে থাকে।নাতাশা তুলি আর লিয়ার মাঝে বসে জারিফের ফোনে গেইমস খেলছিলো।এরমধ্যে নিরুপমা বেগম এসে সবাইকে ডিনারের জন্য ডাকে।সবাই ডায়নিং এ গিয়ে বসে। জারা চেয়ার টেনে বসতে যাবে সেইসময় জাহানারা বেগম বললেন,,”জারা যাতো।জারিফকে ডেকে আন।সবাই একসাথেই খেয়ে নিবে।”

“ঠিক আছে।”

বলে জারা জারিফকে ডাকতে যায়।জারা মিনিট খানেক পরে এসে চেয়ার টেনে বসতে বসতে বলে,,”ভাইয়া আসছে।”

এরমধ্যে একটা ফাঁকা চেয়ারে জারিফ বসে পড়ে। জাহানারা বেগম আর নিরুপমা বেগম খাবার সার্ভ করছেন।বাকিরা সবাই খেতে বসেছে।জারা,তুলি লিয়া পাশাপাশি চেয়ারে ।ওদের ঠিক সামনা-সামনি চেয়ারে তুষার ,রাহবার, জারিফ।জারিফের উপস্থিতি বুঝতে পারার সাথেসাথেই লিয়া নিজেকে একদম গুটিয়ে নেয়।মাথা নুইয়ে একহাতে প্লেটের খাবার নেড়ে চলছে। নিরুপমা বেগম একনজর লিয়ার দিকে তাকিয়ে মায়াজড়ানো গলায় বললেন,,”আরে লিয়া তুমি তো দেখছি খাবার শুধু নেড়েই চলছো। খাবার ভালো লাগছে না বুঝি? রান্না ভালো হয়নি বোধহয়?”

নিরুপমা বেগম ছেলের মতোই খুব মিশুক স্বভাবের।সহজ সরলভাবে সবকিছু বলে ফেলেন।এটা ওনার স্বভাবসুলভ আচরণ।লিয়া তৎক্ষণাৎ মাথাটা তুলে নিরুপমা বেগমের দিকে তাকিয়ে হালকা হাসার চেষ্টা করে। ঠোঁটের কোণে জোরকরে হাসি ফুটিয়ে বলে উঠলো,,”নাহ্ আন্টি।খাবার অনেক টেস্টি হয়েছে। খাচ্ছি তো।”

নিরুপমা বেগম অমায়িক হাসলেন। চিংড়ির মালাইকাড়ির বোলটা একহাতে তুলে নিয়ে আদুরে গলায় ফের বললেন,,”আমার হাতের মালাইকাড়ি।খেয়ে দেখো তো কেমন হয়েছে?”

কথাটা শেষ করেই লিয়ার প্লেটে চিংড়ির মালাইকাড়ি দিতে থাকেন।লিয়া একবার প্লেটের দিকে তাকালো আবার নিরুপমা বেগমের মুখের দিকে। কত সুন্দর আদর করে ভালোবেসে তুলে দিলেন। ‌তাই লিয়া ভদ্রতা রক্ষার্থে কিছু বলতে পারলো না।লিয়ার চিংড়ি মাছে এলার্জি। চিংড়ি খাওয়া কড়াকড়ি ভাবে নিষেধ।লিয়া মনেমনে আওড়ায়,একদিনই তো হালকা একটু খেলে সমস্যা হবে না।লিয়া এইভেবে খেতে থাকে।

সবারই খাওয়া প্রায় শেষের দিকে। জাহানারা বেগম নিরুপমা বেগমকে উদ্দেশ্য করে বললেন,,”ছোটো তুই এদিকটা দেখিস ।আমি যাই দেখে আসি।নাতাশা ঘুম আসছে কিনা?চারু তো কখন নাতাশাকে ঘুমাতে নিয়ে গিয়েছে।এখনো ফিরছে না যে।চারু বেচারিকে একের পর এক গল্প শোনানোর জন্য জ্বালাতন করছে হয়তো।”

জাহানারা বেগম কথাটা শেষ করে রুমে যান।লিয়ার খাবার খাওয়া প্রায় শেষ।এমন মূহূর্তেই লিয়ার মুখ হাত চুলকাতে শুরু করে।লিয়া বেকায়দায় পরে যায়।বাম হাত দিয়ে আলতোকরে মুখের একপাশে চুলকাতেই আরো যেনো বৃদ্ধি পেতে থাকে। সাথে হালকা কাঁশি শুরু হলো। লিয়াকে কাঁশতে দেখে সবার দৃষ্টি যায় লিয়ার দিকে। লিয়াকে দেখে সবাই হকচকিয়ে উঠে।ডানপাশে বসা জারা বড়বড় চোখ করে চেয়ে চিন্তিত গলায় শুধালো,,”একি তোমার মুখটা এতো লাল হলো কিকরে?কিহয়েছে?”

জারিফ সামনে বসা লিয়ার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়।সবার দৃষ্টি লিয়ার উপর। নিরুপমা বেগম চিন্তিত হয়ে ব্যতিব্যস্ত গলায় বললেন,,”লিয়া কিকরে হলো এসব? মাত্রই তো সব ঠিক ছিলো। হঠাৎ করে কি এমন হলো।”

লিয়ার চুলকানি, কাঁশি সাথে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়।যার ফলে লিয়ার কথা বলতে কষ্ট হচ্ছিলো।লিয়ার প্লেটে থাকা চিংড়ি মাছের দিকে নজর পড়তেই তুলি বলে উঠলো,,”একি লিয়া তুই চিংড়ি খেয়েছিস।তোর না চিংড়িতে এলার্জি।”

তুলির কথাটা শ্রবণ হতেই জারিফের একসেকেন্ডও বাকি থাকে না যে এটা মূলত এলার্জির জন্য হয়েছে।জারিফ লিয়ার দিকে একপলক তাকায় অতঃপর খাবার রেখেই হাত ধুয়ে নিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে চলে যায়।সবাই এটাসেটা হুহতাশ করেই চলছে। নিরুপমা বেগম তখন থেকেই আফসোস করে চলেছেন।উনি লিয়ার গায়ে অনবরত হাত বুলিয়ে যাচ্ছেন আর অপরাধীর স্বরে বলছেন,,”ইশ!আমার জন্য এরকমটা হলো।কেনো যে আমি মালাইকাড়িটা দিতে গেলাম।সব দোষ আমার।আমার জন্য এখন মেয়েটাকে এত কষ্ট পেতে হচ্ছে।”

লিয়া মুখ হাত চুলকাচ্ছে। কাঁশি সাথে শ্বাসকষ্ট। শ্বাসকষ্টটা যেনো সময়ের সাথে সাথে বাড়ছে। নিরুপমা বেগম নীলকে উদ্দেশ্য করে শুধালেন,,”এই নীল এভাবে চুপ করে বসে থাকবি ।যা ডক্টরকে ফোন কর।আর নাহয় এখনি মেয়েটাকে হসপিটালে নিয়ে চল।”

আকস্মিক ঘটনায় সবাই হতবাক হয়ে গিয়েছে।নীল চিন্তিত হয়ে বলে,,”মিস লিয়া আপনি চিন্তা করবেন না।আমি এক্ষুনি ডক্টরকে ফোন করছি।”

তুলি তুষারকে বলে মেজো চাচিমার কাছ থেকে ফোন দিয়ে জেনে নিতে।এরকম হলে লিয়াকে কি মেডিসিন দেয়।তুষার তখনই চেয়ার ছেড়ে উঠে যায় কল দিতে।নিরুপমা বেগম একহাতে লিয়াকে জড়িয়ে আছেন।অন্যহাত লিয়ার মাথায় আর পিঠে হাত বুলাতে থাকেন।নীল ফোন বের করে ডক্টরের নম্বরে ডায়াল করতে করতে বলে,,”আম্মু তোমার একটু বুঝে শুনে দেওয়া লাগতো।নতুন পরিবেশে লিয়া লজ্জায় মুখফুটে বলতে পারেনি। উফ্!দেখছো তোমার জন্য এখন কিরকম একটা বাজে সিচুয়েশন ক্রিয়েট হলো।ওনাদের বাড়ির লোকজন কি ভাববে? প্রথম দিন ঘুরতে এসেই।তাদের বাড়ির মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লো। বিষয়টা দৃষ্টিকটু লাগবে না।”

নিরুপমা বেগম অসহায় মুখশ্রীতে তাকিয়ে আফসোস করে ফের বলতে লাগলো,,”উফ্!কি থেকে কি হয়ে গেলো।কেনো যে আমি মেয়েটাকে জোর করে মালাইকাড়ি দিতে গেলাম।”

কথাটা শেষ করে নিরুপমা বেগম আল্লাহ কে স্মরণ করতে থাকেন।হে মাবুদ সবটা দ্রুত ঠিক করে দাও।লিয়ার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে দেখে সবারই ভীষণ খা’রাপ লাগতে থাকে।লিয়া চোখ বন্ধ করে টেনে টেনে শ্বাস নিতে থাকে।লিয়ার ফর্সা দুইগাল ফুলেছে অনেকটা। সাথে র”ক্তা”ক্ত বর্ণ ধারণ করেছে।ডক্টর ফোন রিসিভ না করায় নীলের ইচ্ছে করছে ফোনটা ছুড়ে ফ্লোরে ফেলতে। এরমধ্যে জারিফ এসে লিয়ার সামনা-সামনি দাঁড়ায়।হাতে থাকা একটা মেডিসিনের পাতা থেকে একটা বড়ি বের করতে করতে গম্ভীর গলায় বলে,,

“সমস্যাটা যার তার তো না জানার কথা নয়। সেতো বাচ্চাও নয় যে ভুলে যাবে। আর তার জন্য নিষিদ্ধ খাবারগুলোই আগে খাবে।সবাইকে টেনশনে ফেলবে।”

জারিফের কথা শ্রবণ হয়ে নিউরনে সাড়া জাগাতেই লিয়ার ভীষণ কান্না পায়। একটা মানুষ যেকিনা অসুস্থ আর তারজন্য তাকেই কিনা দোষারোপ করা হচ্ছে।লিয়া ক্লান্ত চোখে ঘন পল্লব তুলে তাকায় জারিফের গম্ভীর মুখশ্রীতে।জারিফ লিয়ার হাতে বড়িটা ধরিয়ে দেয়। অতঃপর পানির গ্লাসটা জারাকে দিতে বলে।জারা দ্রুত এগিয়ে এসে লিয়াকে হেল্প করে।লিয়া বড়িটা গলাধঃকরণ করে।জারিফ গম্ভীর মুখাবয়ব করেই ফের বলে উঠলো,,

“ছোটোমা যখন তোমার প্লেটে চিংড়ি দিয়েছিলো।সেই মূহূর্তেই তোমার বলা উচিত ছিলো।তোমার এটাতে এলার্জি আছে।”

এরমধ্যে তুষার এসে বলতে থাকে,,”মেজো চাচিমার থেকে শুনেছি।**এই ট্যাবলেট দিলেই চুলকানি কমে যাবে।সাথে সাফোকেটিংও।”

জারিফ দুইহাত প্যান্টের পকেটে গুঁজে শান্ত কন্ঠে বললো,,”আমি ডক্টর এর থেকে ফোনে শুনে নিয়েছি।আর আপাতত এই গ্রুপের একটা ট্যাবলেট বাসায় ছিলো।সেটা দিয়েছি। আশা করা যায় দ্রুতই ঠিক হয়ে যাবে। আধা ঘন্টার মধ্যে যদি না কমে তবে হসপিটালে এডমিট করতে হবে।ডক্টর এমনটাই বলেছেন।”

জারিফ জারাকে ডেকে বলে,,”জারা লিয়াকে তোর রুমে নিয়ে যা।ও আপাতত রেস্ট করুক।”

লিয়া টেনেটেনে শ্বাস নিয়ে ধীরে ধীরে বলতে থাকে,,”আ আমি বাসায় যাবো।”

জারিফ কিছুটা কঠোরভাবে বলে,,”জারা তোকে কি বললাম শুনতে পাসনি।আর বাসায় বা যেখানেই যাক কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর।”

নিরুপমা বেগম লিয়াকে উদ্দেশ্য করে আদূরে গলায় বললেন,,”লিয়া সোনা আম্মু।জারিফ ঠিকই বলেছে ‌এভাবে যাওয়া মোটেও ঠিক হবে না।এসেছো সুস্থ সবল মানুষ।এখন এরকম অসুস্থ অবস্থায় গেলে আমাদের নিজের কাছেই খা’রাপ লাগবে।তাই বলছি না থেকো যেয়ো।তবে একটু বেটার হও তখন।”

পাশ থেকে তুষারও একই সুরে বলে উঠলো,,”হ্যা লিয়া আন্টি একদম ঠিক বলেছে।কিছুক্ষণ ওয়েট করি।যখন একটু বেটার ফিল করো তখন যাবো।কেমন?”
.

জারার রুমে বিছানার হেডের সাথে বালিশ ঠেকিয়ে তাতে হেলান দিয়ে পা মেলে শুয়ে আছে লিয়া।লিয়ার পাশে জাহানারা বেগম বসে। নিরুপমা বেগম অপর পাশে মুখভার করে বসে।জারা তুলি পা ঝুলিয়ে বিছানার একপাশে বসে।সবারই মুখভার।ঘড়ির কাঁটা রাত সাড়ে দশটার ঘরে। প্রায় একঘন্টার মতো হবে লিয়াকে মেডিসিন খাওয়ানো হয়েছে।আগের থেকে লিয়া এখন অনেকটা বেটার ফিল করছে। শ্বাসকষ্টটা কমে এসেছে সাথে চুলকানিও কমেছে।তবে মুখটা লাল আছেই।জারিফ তুষার আর নীল ড্রয়িংরুমে বসে ছিলো।জারিফ লিয়ার অবস্থা জানার জন্য উঠে আসে।হালকা কেশে জারার রুমে প্রবেশ করে।রুমে প্রবেশ করতেই বিছানায় হেলান দিয়ে শুয়ে থাকা লিয়ার দিকে দৃষ্টি যায়। ফর্সা গাল ফুলে রক্তিম হয়ে আছে। টানাটানা হরিণী বড়বড় কালো মিচমিচে চোখের মনি চোখদুটো ভীষণ ক্লান্ত দেখাচ্ছে।লিয়ার ক্লান্তিমাখা চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতেই লিয়ার সাথে চোখাচোখি হয়।লিয়া এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে।লিয়া কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে দ্রুত দৃষ্টি ঘুরিয়ে নেয়।জারিফ রুমের মাঝবরাবর দাঁড়িয়ে কন্ঠে একরাশ শীতলতা নিয়ে লিয়াকে শুধায়,,

“এখনও কি আগের মতো সমস্যা হচ্ছে?কমেনি একটুও?বেশি কষ্ট হচ্ছে কি?”

দুদিকে ঘাড় নাড়ায় লিয়া।যার অর্থ না কষ্ট হচ্ছে না।ঠিক আছি।লিয়া দৃষ্টি নুইয়ে রেখেই জবাবে মৃদুস্বরে ফের আওড়ালো,,”এখন সমস্যা নেই।অনেকটা বেটার ফিল করছি।”

পরপর তুষার আর নীলও ভেতরে ঢোকে।লিয়া আবার বাসায় চলে যাওয়ার কথা বলে।সেইসময় একইসুরে
তুষার জাহানারা বেগমকে উদ্দেশ্য করে বলে,,”আন্টি এখন নাহয় আমরা আসি।লিয়া তো এখন অনেকটাই ভালো আছে।”

জাহানারা বেগম সাথে নিরুপমা বেগম অনেক করে আজকে থাকার কথা বললেও লিয়া তুলি তুষার ওরা অনেক কিছু বলে কয়ে বুঝিয়ে -সুঝিয়ে চলে আসে।এখান থেকে ক্যান্টনমেন্ট বেশি দূরে নয়।তাই রাত হলেও যাওয়া ব্যাপার নয়। অনেক করে বলার পর ওনারা যেতে দেন।
.
খোলা আকাশের নিচে চাঁদের মৃদুআলোয় ছাদের রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে জারিফ।জারিফের মনটা আজকে বিষন্ন লাগছে।জারিফ আশা করেছিলো, তাসনিম হয়তো কল ব্যাক করবে।সরি বলবে।নিজ থেকে কথা বলবে।না এমন কিছুই হলো না। বরঞ্চ এসব ভেবে জারিফ কিছুটা আহত হয়।জারিফের হৃদয় হতাশ হয়।জারিফ ঠোঁট গোল করে ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে। পরক্ষণেই জারিফের মনেহয়,তখনকার কথায় তাসনিম মাইন্ড করতে পারে।হয়তো ও অভিমান করে আছে। সেইজন্য ফোন ব্যাক করেনি।আমার কথায় হয়তো হার্ট হয়েছে। এটা ভাবতেই জারিফের নিজের কাছে অপরাধবোধ লাগছে।মনটা বারবার কুঁড়েকুঁড়ে খাচ্ছে। অনুশোচনায় জড়জড়িত হচ্ছে মন।এখন এই শান্ত নিস্তব্ধ পরিবেশে জারিফের মন বলছে ,তখন বোধহয় তাসনিমের সাথে একটু বেশিই রিয়াক্ট করে ফেলেছি।কড়া করে অনেক কিছুই বলে ফেলেছি।যা একদম উচিত হয়নি।আমার তো তাসনিমকে নিয়ে আরো প্রাউড ফিল করা উচিত ছিলো।ওর কাছে ওর মানবতাবোধ, রেসপনসিবিলিটি আগে। অনেস্টলি নিজের দায়িত্ব পালন করে। উফ্!তখন কি হয়েছিলো?নিজেও বুঝতে পারছিনা।

নীল ফোন স্ক্রল করতে করতে ছাদে আসে।জারিফকে দেখতে পেয়ে এগিয়ে যায়।আকাশে জ্বলজ্বল করে জ্বলতে থাকা চাঁদমামার দিকে তাকিয়ে গলা ছেড়ে গায়, রাতের আকাশ যেমন চাঁদের আলোয়!তোর কথা মনে হলে লাগে ভালো। এতটুকু গেয়ে দুইহাতে ভর দিয়ে ধপ করে রেলিং এ বসে পড়ে।জারিফ সরু দৃষ্টিতে একবার নীলের দিকে তাকায়। অতঃপর দূরে অন্ধকারে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে রাখে।জারিফের কোনো কথা না পেয়ে নীল মুখে মুচকি হাঁসি নিয়ে বলে উঠল,,

“কি ব্যাপার ব্রো।খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে জোৎস্না গায়ে মেখে ভাবীর কথা স্মরণ করছিস বুঝি।আর নাকি ভাবীর সাথে ফোনে প্রেমালাপ করছিস?কোনটা?”

নীলের এহেন প্রশ্নে জারিফের ভ্রু যুগল কুঁচকে যায়।জারিফ কিঞ্চিত ভ্রু খানিকটা সরল করে নীলের দিকে মৃদু রা’গ দেখিয়ে বলে উঠলো,,”খেয়ে দেয়ে কোনো কাজ নেই তোর?সবসময় উল্টাপাল্টা বলা ছাড়া।”

নীল অবাক গলায় বলে উঠে,,”আরে বাস! উল্টাপাল্টা কি বললাম?তুই তোর হবু বউয়ের সাথে ফোনে প্রেমালাপ করতেই পারিস।এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।আর আমার মনেহয় যদি হবু বউয়ের সাথে ফোনে মিষ্টি মিষ্টি আলাপন না হয়।তাহলে সেটাই অস্বাভাবিক।হুম।এখানে কিছু একটা কম আছে।কারো দিক হতে ঘাটতি আছে।”

নীলের শেষের কথাটা জারিফকে বেশ ভাবাচ্ছে।আসলেই কি কোনো কিছুর ঘাটতি আছে? পরক্ষণেই জারিফ মনেমনে আওড়ালো,এই গাধাটার কথা শুনে দিনদিন বুদ্ধি শুদ্ধি হ্রাস পাচ্ছে।কিসব ভাবছি। উফ্!জারিফকে অন্যমনস্ক দেখে নীল ফোন স্ক্রল করতে করতে প্রশ্ন করে উঠলো,,”তা ব্রো তোর বোধহয় মন খা’রাপ।ভাবী আজকে আসেনি সেইজন্য তোর খুব অভিমান জমেছে।আমি ভাবতে পারছিনা আমার গোমড়ামুখো ব্রো কিনা শেষমেষ মেয়েদের মতো অভিমানী হয়ে গেলো।লাইক সিরিয়াসলি?”

কথাটা শেষ করেই নীল শব্দ করে হেসে উঠলো।জারিফের একটা ধমকে মূহূর্তেই সেই হাসিটা থেমে যায়।জারিফ ধমক দিয়ে বলে,,”আজেবাজে কথা রাখ।আর আমাকে ডিস্টার্ব না করে যা ঘুমিয়ে পড়।অনেক রাত হয়েছে।”

নীলের চোখেমুখে কৌতুহল খেলে যায়।নীল ভাবে কিছু একটা হয়েছে। সেইজন্য হয়তো ব্রো এর মেজাজটা খা’রাপ আছে।নীল কৌতুহলী হয়ে ফের শুধালো,,”ব্রো কি হয়েছে?সাত পাঁচ না ভেবে আমাকে বলে ফেল।দেখি তোকে হেল্প করা যায় কিনা।ঐ কথায় আছে না উড়াইয়া দেখো ছাই,পাইলেও পাইতে পারো অমূল্য রত্ন।তো আমাকে বল ভালো কোনো ডিসিশন দিতেও তো পারি।”

নীলের একরোখা প্রশ্নের কাছে হার মেনে জারিফ বলে,,”তখনকার ফোনকলে হয়তো তাসনিম হার্ট হয়েছে।আমার উচিত হয়নি রিয়াক্ট করা।ভাবছি ফোন করে সরি বলে নেবো।”

নীল ঠোঁট কামড়ে ধরে বলে উঠলো,,”ওকে ব্যাপার না।মাঝে মাঝে মান অভিমান হওয়া ভালো।এতে করে সম্পর্কটা আরো শক্তপোক্ত হয়।

কিয়ৎক্ষন থেমে ফের সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলতে থাকে,,”ব্রো একটা ভালো আইডিয়া দেই।তুই সরাসরি ভাবীকে এখন ফোনে সরি না বলে।ভাবীকে টেক্সট করে দিবি রেস্টুরেন্টে দেখা করার জন্য।আর একগুচ্ছ সাদা গোলাপ নিয়ে গিয়ে সরি বলবি আর সাথে প্রোপোজ করবি। তোর কথাশুনে বুঝলাম তুই কখনো অফিসিয়ালি প্রপোজ করিসনি।তার আগেই ফ্যামেলির মাধ্যমে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিস।এটা তো ব্যাক ডেটেড।আর এখনকার মেয়েরা চায়

নীলকে থামিয়ে দিয়ে জারিফ বলে উঠলো,,”থামবি তুই। তোর আইডিয়া মোটেও আমার কাছে গ্রহণযোগ্য হলো না।অন্যকিছু বল।”

নীল আবারও একইসুরে একই কথা বললো। অবশেষে জারিফ ছাঁদ থেকে প্রস্থান করতে করতে বললো,,” আচ্ছা ভেবে দেখবো।”

পিছন থেকে নীল একহাত উঁচু করে গলা ফাটিয়ে বলতে থাকে,,”দেখবো টেকবো নয়।আমি কালকে একটা রেস্টুরেন্ট বুকড করে রাখবো। সেখানে তুই একদম ফিটফাট হয়ে প্রস্তুতি নিয়ে যাবি।”
.
সকালে ডায়নিং এ খাবার সাজাচ্ছেন নিরুপমা বেগম।জারিফ চেয়ারে বসে হালকা নাস্তা শেষে চা খাচ্ছে জাহানারা বেগম এসে একটা চেয়ার টেনে বসে চা খেতে থাকেন। নিরুপমা বেগম ম্লান গলায় হঠাৎ করেই বলে উঠলেন,,”জারিফ বাবা মেয়েটার খবর নিয়েছিস?এখন কেমন আছে?”

ছোটোমার এমন প্রশ্নে জারিফ কিছুটা অবাক হয়।জারিফের বোধগম্য হয়না কার খোঁজ নেওয়ার কথা বলছেন।জারিফ কপাল কুঁচকে বললো,,”ছোটোমা কার কথা বলছো? বুঝতে পারছি না।”

“আরে লিয়ার কথা বলছি।কাল রাতে ওভাবে চলে গেলো।আহারে হঠাৎ করে অমন অসুস্থ হয়ে পড়লো।”

জারিফ ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,,”নাহ্।আর ফোন করা হয়নি। বাসায় পৌঁছে তুষার ফোন করেছিলো। ঠিকঠাক পৌঁছেছে।আর লিয়ার বেশি সমস্যা হয়নি। এতটুকুই জানি।”

নিরুপমা বেগম ছোট করে বললেন,,”ওহ্!”

একটু থেমে আফসোস করেই ফের বললেন,,”মেয়েটা খুব মিষ্টি দেখতে।আমার তো খুব ভালো লেগেছে। আচ্ছা ভাবী তোমার হবু বৌমা কেমন?তাকে তো এখন পর্যন্ত দেখাই হলো না।”

জাহানারা বেগম গালে থাকা চা টুকু গিলে নেন। অতঃপর শান্ত গলায় বলেন,,”তাসনিম দেখতে অনেকটা লিয়ার মতোই।চাচাতো বোন হলেও যে কেউ দুইজনকে একসাথে দেখলে আপন বোন বলবে বাহ্যিক দিক হতে।তবে লিয়ার থেকে গায়ের রঙটা একটু চাপা তাসনিমের।তবে লক্ষি মন্ত শান্ত শিষ্ট বললে একবাক্যে যে কেউ তাসনিমকে বলবে।এইজন্য তাসনিমকে আমার একটু বেশিই ভালো লাগে।তবে ঐ পরিবারের সবার আচরণই আমাকে মুগ্ধ করেছে।”

নিরুপমা বেগম একগাল হাসেন। ঠোঁটের কোণে বিস্তৃত হাঁসি রেখেই ফের আবেগি গলায় বললেন,,”হুম ঠিকই বলেছো।তবে জানো আমার নিজের উপর খুব রাগ হচ্ছিলো ।কালকে আমার জন্য এত সুন্দর মিষ্টি মেয়েটাকে কতটা কষ্ট পেতে হলো।আমার মুখের উপর লজ্জায় বলতে না পেরে আমার তৈরি খাবার খেয়েই মেয়েটার কি বেহাল দশা হলো।ছি ছি কি একটা বিশ্রী অবস্থা হলো।লিয়ার মুখটাই যেনো একটা আস্ত মায়ায় জড়ানো। আমার মনে তো গেঁথে আছে মেয়েটার ফেস।আমার তো ইচ্ছে করছে পারলে মেয়েটাকে আমার কাছে রেখে দিতাম।”

এরমধ্যে নীল এসে চেয়ার টেনে বসতে বসতে মৃদুস্বরে বললো,,”তবে দাও রেখে।রাখার তো অপশন আছেই।চোখ কান খুলে তাকালেই মেয়েটাকে তোমার কাছে সব সময় রাখার অপশন পাবে।”

নীলের কথা জারিফের কর্ণগোচর হতেই জারিফ বাঁকা চোখে নীলের দিকে তাকায়। জাহানারা বেগমও অবাক চাহনিতে তাকায়। নিরুপমা বেগম বোকা বোকা চোখে চেয়ে নীলকে প্রশ্ন করে উঠলেন,,”মানে?কি বলতে চাইছিস?”

নীল একহাতে নাইফটা নিয়ে তাতে জেল জড়িয়ে ব্রেডে জড়িয়ে নেয়।বড় করে একটা বাইট দিয়ে মুখে ব্রেড পুড়ে নেয়। অতঃপর চিবুতে চিবুতে দেখে উপস্থিত সবাই নীলের দিকে অবাক হয়ে জিগ্গাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।নীল নিজের একটু আগে বলা কথা স্মরণ হতেই ভ্যাবাচেকা খায়।নীল খাবার টুকু কোনো রকমে গলাধঃকরণ করে থমথমে মুখাবয়ব করে ক্ষীণ আওয়াজে বলে,,”আরে ওর বোন আর কদিন পর এবাড়ির বউ হয়ে আসছে।আর আত্বীয় হলে তো মাঝে মাঝে ঘুরতে আসবেই।তখন নাহয় জোর করে দুইচার দিনের জন্য আটকিয়ে রেখো।”

কথাটা শেষ করে নীল জোরকরে হাসার চেষ্টা করে।জারিফ উঠে চলে যায়। ভার্সিটি যেতে হবে।আজ নয়টায় প্রথম ক্লাস নেওয়ার আছে।
.
জারিফ ক্লাস নিয়ে বের হচ্ছে।সেইসময় নীল ফোন করে বলে, রেস্টুরেন্ট বুকড করে রেখেছি।আর রেস্টুরেন্টের নামঠিকানাও বলে দেয়।জারিফ কিছুটা জড়তা নিয়ে বলে,আজই কেনো?সেখানে নীলের স্পষ্ট জবাব।মান অভিমান পুষে রাখতে নেই।তাই দেরি করা ঠিক হবে না।তাই আজকে বিকেলেই রেস্টুরেন্টে দেখা করবি।
.
বিকেল পাঁচটা বাজে।জারিফ আর নীল সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছে।তিনতলার করিডোরে আসতেই নীল জারিফকে শুধায়,,”ব্রো ভাবীকে মেসেজ দিয়েছিস তো। রেস্টুরেন্টের ঠিকানা সেন্ট করেছিস তো।”

“হুম।হটস আ্যপে সেন্ট করেছি। তাসনিম সিন করে রিপ্লাই দিয়েছিলো।আসবে দেখা করতে।”

নীল ফোঁস করে নিঃশ্বাস নিয়ে বলে,,”গুড।”

কাঁচের পোল মি দরজার সামনে আসতেই নীল আর জারিফের নজর যায় ভিতরে উল্টো দিক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা শুভ্র রঙের থ্রি পিস পড়িহিত মানবীর দিকে।নীল মুচকি হেসে বললো ,,”বাহবা ভাবী তো আগেই এসে ওয়েট করছে।”

জারিফ ফোনে সময় দেখে নিয়ে বলে,,”আমাদেরই লেইট হয়েছে। পাঁচটা পার হয়ে গিয়েছে দেখ। মেসেজে পাঁচটার কথা উল্লেখ করেছিলাম।”

নীল ওর হাতে থাকা সাদা গোলাপ গুলো জারিফের হাতে দিয়ে বলতে থাকে,,”আচ্ছা ব্রো যা যা বলেছি মনে আছে তো।দারুন একটা রোমান্টিক পরিবেশে।হালকা মিউজিক চলছে।সেখানে তুই গিয়ে ভাবীর কোমড় জড়িয়ে ধরবি।তারপর স্লো ভয়েজে সরি বলবি।তারপর হাঁটু গেড়ে বসে প্রোপোজ করবি।”

একনাগাড়ে কথাগুলো বলে নীল।জারিফ মোটা চোখে তাকিয়ে শক্ত গলায় বললো,,”নেভার এসব জড়িয়ে ধরা আমার পক্ষে পসিবেল নয়। এটা আপাতত বাদ থাক।”

নীল একহাত কপালে রেখে বলে,,”ওহ্ ব্রো!এসব নব্বই দশকের মতো বিহেভ বাদদে।আর কদিন পরে তোদের বিয়ে।তাই এটা বেশি কিছু নয়।আর মেয়েদের মন গলানোর এটা একটা টপিকস, হুম।ভাব বিয়ের পরতো আরো কতো ক্লোজ হবি। যাইহোক সেসবে আবার আমার কোনো এক্সপ্রিয়েন্স নেই।তাই রেফারেন্স টানতে পারলাম না।”

এই গাধাটার সাথে কথা বলাই বেকার। লাগামহীন কথাবার্তা।জারিফ আর কথা না বাড়িয়ে একহাতে দরজাটা টান দিয়ে ভেতরে যায়।নীল অল দ্যা বেস্ট বলে।জারিফ কিছুটা নার্ভাস ফিল করছে।কেমন জানি আনইজি লাগছে।সামনের টেবিলের উপর গোলাপ গুচ্ছ নিঃশব্দে রাখে। অতঃপর এগিয়ে যায় ধীর পায়ে। কাঁচের দেওয়াল ভেদ করে দৃষ্টি সামনের রাস্তায় নিবদ্ধ।কোনোকিছু নিয়ে গভীর ভাবনায় নিমজ্জিত।তাইতো কারো উপস্থিতি এখন অব্দি টের পায়নি শুভ্র রঙের পোশাক পড়া রমণী।জারিফের নিঃশ্বাসের গতি বেড়ে যায়।জারিফ অনেকটা আনইজি নিয়েই পিছন হতে কোমড় জড়িয়ে ধরে। কাঁধে থুতনি রাখে।

নীল দরজার সামনে থেকে চলে যেতে থাকে। করিডোর দিয়ে কয়েক পা এগিয়ে যেতেই নীলের চক্ষু চড়কগাছ হয়ে যায়। নীলের দৃষ্টি বড়বড় হয়ে যায়।সাথে মুখটা হা হয়ে যায়।নীল মনেমনে আওড়ায়,এই রে হবু ভাবী এখানে তাহলে ভেতরে কে?আর ব্রো কার কোমড় জড়িয়ে ধরলো? আল্লাহ মালুম।এইবার তো ব্রো এর কপালে দুঃখ আছে।কোনো অচেনা মেয়েকে হুট করে জড়িয়ে ধরার জন্য ব্রো এর মুখে না ঠাসঠাস করে থা’প্প’ড় পড়ে।হে গড!কোনো লোহার হাতের অধিকারী মেয়ে ব্রো এর গালে চ’ড় না বসিয়ে দেয়।

একহাত আলতোকরে নিজের গালে ডলে নিয়ে ফের আওড়ায়,লে বাবা। ব্রো এর ফর্সা গালে এবার পাঁচ আঙ্গুলের ছাপ বসে যাবে, নিশ্চিত।আর হবু ভাবীতো এসব দেখে নির্ঘাত ভুলটুল বুঝবে। এবার কি হবে?আর উক্ত মেয়ে যদি ব্রো এর নামে ইভটিজিং এর মামলা দায়ের করে। ব্রো এইসবের প্লান কারির নাম হিসেবে আমার নামটা বললে।তখন তো দুইভাই একসাথে কারাগারে যাবো।

তাসনিম যতই এগিয়ে আসছে।নীলের ভাবনা ততই বেড়ে চলছে।সাথে হাত পা কাঁপতে থাকে।নীল শুকনো ঢুক গিলে নিয়ে ভাবে,, তিনতলার এইপুরোটা স্পেস তো আমি নিজেই আজকে বুকড করে রেখেছিলাম।সেখানে অন্য মেয়ে কিকরে ভেতরে? স্ট্রেইন্জ?

[চলবে…ইন শা আল্লাহ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here