নিশীভাতি #৫৩তম_পর্ব (বর্ধিতাংশ)

0
199

#নিশীভাতি
#৫৩তম_পর্ব (বর্ধিতাংশ)

“কাওছার জেল থেইক্যা বাইর হইয়্যা যাইবো আজ কালকের মধ্যি। কালাম কেস তুইল্যা নিছে। আমার ভয় হইতাছে। কাওছার পারে না এমন কিছু নাই”

যুবাইদার কন্ঠ কাঁপছে। কন্ঠস্বরে আবছা ত্রাসের আভাস। ফোনের ওপারের মানুষের চিন্তাটি নিছক অভিনয় কিনা বুঝার উপায় নেই। হুমায়রা কিছুসময় মৌন রইলো। যুবাইদাকে তার বিশ্বাস হচ্ছে না। স্বার্থপর মানুষদের বিশ্বাস করা সবচেয়ে বড় বোকামী। তাদের কাছে নিজের স্বার্থ ব্যাতীত কিছুর গুরত্ব থাকে না। উপরন্তু যুবাইদা এমন এমন কিছু কাজ করছে যার ফলে বিশ্বাস করতে ভয় হচ্ছে হুমায়রা। যুবাইদা হুমায়রাকে মৌন দেখে আবার বললো,
“কাওছার যদি জানতে পারে, আম্মায় তারে ভিটায় ঢুকতে দিবো না। তাইলে ওর থেইক্যা ক্ষেপা ষাড় আর কেউ হইবো না। ওর তো মান সম্মানের ভয় নাই। কিন্তু রাশাদ যদি একবার জানতে পারে তাইলে আমার পোলাডা শ্যাষ হইয়্যা যাইবো”

এবার মৌনতা ভাঙ্গলো হুমায়রা। বরফশীতল স্বরে বললো,
“আমি কি করতে পারি?”

যুবাইদা এবার থমকালো। হুমায়রার প্রশ্নটা তার ভাবনার বহির্ভূত। উত্তর ঠিক করতে সময় লাগলো। তারপর অপরাধীস্বরে বললো,
“আমার লগে একবার দেহা করতি পারবি মা?”
“কেন?”
“মা-বেটিতে মিল্লা এক্কান বুদ্ধি বাইর করাম”

হুমায়রা তাচ্ছিল্যভরে হাসলো। এতদিন যে নারীর কাছ থেকে কেবল বঞ্চনা, অবজ্ঞা পেয়েছে সেই নারী আজ তাকে স্নেহ করছে। মানুষের নিজ স্বার্থে আঘাত পড়লে মনে হয় এমন ই বদলে যায়। তবুও হুমায়রা কিছু বললো না। কারণ এখানে রাশাদের ভবিষ্যত জড়িত। রাশাদের জন্ম সত্যিটা এভাবে সকলের সম্মুখে আসুক তা মোটেই চায় না হুমায়রা। তাই শান্ত গলায় বললো,
“বেশ, আমি ভেবে আপনাকে জানাবো”
“দেরি করিস না মা। দেরি করলে বেপদের পা গজায়”

হুমায়রা ফোন কেটে দিলো। চিন্তার মেঘ ঘন হলো। হাত পা কেমন নিস্তেজ লাগছে। এর মাঝে বাহির থেকে ভেসে এলো ভারী স্বর। ভাইজান এসেছে। এসেই কলপাড়ে গেলেন তিনি। বাজারের মোড়ের মসজিদ থেকে ভেসে আসছে মিষ্টি আযানের সুর। আকাশের কমলা রঙ্গখানা মিলিয়ে গেছে ধূসর সন্ধ্যায়। পাখিদের নীড়ে ফেরার তাড়া বেড়ে। সন্ধ্যাতারা পশ্চিম দিগন্তে জ্বলজ্বল করছে। মাথায় কাপড় দিয়ে বেরিয়ে এলো হুমায়রা। গামছা এগিয়ে দিলো ভাইজানের দিকে। মানুষটি অজু করলো। সহাস্যমুখে এগিয়ে দিলো একটি ঠুঙ্কা। হুমায়রা শুধালো,
“এটা কি ভাইজান?”
“হালিম আনছি। তোর তো পছন্দ?”

হুমায়রা হাসলো। রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলো ইলহা। ঘামে নেয়ে একসার মেয়েটা। ওড়নার কোন দিয়ে ঘাম মুছতে মুছতে বললো,
“ননদিনী, এটা বেড়ে খাওয়ানোর দায়িত্ব তোমার। আমি বাপু এখন রেস্টে যাবো”
“আমি তো বলেছি, যতদিন আছি তুমি রেস্টে থাকো। শোনো না তো কিছুই”
“না বাবা, নেতা সাহেব কয়দিনের জন্য তোমাকে রেখে গেছেন। যদি শুনেন তার বউকে দিয়ে কাজ করাচ্ছি ক্ষেপে যাবেন”

বলেই হেসে উঠলো ইলহা। হুমায়রার হাসলো। কিন্তু সেই সাথে মস্তিষ্ককোষে অদ্ভুত ভয় উঁকি দিলো। কাওছারের মতো মানুষের জন্য এই দুটো মানুষকে কষ্ট পাবে, এই বিশ্রী চিন্তাটি তাকে দূর্বল করে তুলছে। যুবাইদা যেমনই হোক সে নিজ ছেলেকে ভীষণ ভালোবাসেন। সুতরাং তাকে একটিবার ভরসা করাটা খুব ভুল হবে না বোধ হয়। হুমায়রাকে মৌন থাকতে দেখে ইলহা শুধালো,
“আমার কথায় রাগলে নাকি?”

স্বম্বিৎ ফিরলো হুমায়রার। স্মিত হেসে বললো,
“ধুর, কি যে বলো। আর সন্ধ্যার সময় তোমার বাহিরে থাকা উচিত নয়। বলা তো যায় না, আযান হচ্ছে। ভেতরে যাও”

রাশাদ হুমায়রার মাথায় চাটি দিয়ে বললো,
“বড্ড বেশি বড় হয়ে গেছিস দেখছি। দাদীর মত কথা বলা শিখেছিস”
“আমি পূর্বাভাস দিচ্ছি, মাইকের বানী আসলো বলে”

ঠিক ই আতিয়া খাতুন ঘর থেকেই চেঁচিয়ে উঠলেন,
“নাতবউ ঘরে যাও। বাহিরে দাঁড়ায়ে হাইসো না। জ্বিত ভুতের আছড় পড়বে বাইচ্চার উপরে”

ইলহা দাঁড়ালো না। সাথে সাথে ঘরে চলে গেলো। রাশাদ গামছাটা হুমায়রার হাতে দিতেই সে প্রশ্ন করে উঠলো,
“তুমি কি জেলে গেছিলা ভাইজান?”

রাশাদের হাসিটা খুব তাড়াতাড়ি মিলিয়ে গেলো। গুমোট আঁধারে তার কঠিন মুখখানা না দেখলো অনুধাবিত ঠিক হলো। রাশাদ দীর্ঘশ্বাস ফেললো,
“হ্যা, গেছিলাম”
“আব্বার সাথে দেখা হইছে?”
“না, করি নাই। ইচ্ছা হয় নাই। কালাম কাকা জমিটা বিক্রি করছে। ভালো টাকাই পাবে। কাল দাদীকে রেজিস্ট্রি অফিসে নিয়ে যেতে হবে। কালাম কাকা তার পাওনা বুঝে নিবে। আর বাকিটা আমি তাকে আব্বাকে দিতে বলছি। আমি দিতে গেলে হুদাই একটা গ্যাঞ্জাম করবে। এখন সত্যি গ্যাঞ্জাম, তর্কাতর্কি, কথা কাটাকাটি ভালো লাগে না”
“সে যদি বাড়ি আসে?”
“আসবে বলে মনে হয় না। সে তো টাকা পাচ্ছেই। যাই নামায পড়ে আছি। এসে একসাথে হালিম খাবো”

রাশাদ চলে গেলো। হুমায়রা ভাবলো কথাটা ভুল নয়। কাওছারকে তো ঠকানো হচ্ছে না। সে টাকা পাচ্ছে। তবুও কি সে গ্যাঞ্জাম করবে! যুবাইদার চিন্তা অহেতুক। চিন্তার মেঘখানা সরলো। নামায শেষে সপরিবার হালিম খেলো। হিমেল আবহাওয়ায় একসাথে হালিমখানা অমৃত ঠেকলো। শুধু একটাই আফসোস আজ দাদা নেই।

*************

“তুই ফেলে এসেছিস কারে, মন, মন রে আমার।
তাই জনম গেল, শান্তি পেলি না রে মন, মন রে আমার॥
যে পথ দিয়ে চলে এলি সে পথ এখন ভুলে গেলি–
কেমন করে ফিরবি তাহার দ্বারে মন, মন রে আমার॥“

আশেপাশে কোথাও রেডিও তে গান বাজছে। রাতের নীরবতাকে ছিন্নভিন্ন করছে উদাসীন গানটি। গানের মাঝে অদ্ভুত শক্তি আছে। সুর হৃদয়কে চনমনে করে তুলে আবার সেই সুর ই হৃদয়ে ঢেলে দেয় গাঢ় বিষাদ। এই সুরটির ক্ষেত্রেও একই জিনিস হলো। বেক্ষাপ্পা মনটা দূর্বল লাগছে। উদাসীনতা ভর করেছে হুমায়রার লোমকুপে। হুমায়রা তাকিয়ে আছে নিকষ কালো আকাশটির দিকে। মেঘহীন কালো আকাশ। তারা গুলো অন্ধকারে জ্বলজ্বল করছে মুক্তোদানার মতো। ফাইজানের সাথে কথা হয় না দুই দিন। মানুষটির এখনো ঢাকা থেকে ফিরে নি। ছয়দিন হয়ে গেছে সে গিয়েছে। তার দর্শন কেবল টিভিতে হয়। ইন্টারভিউ হাবিজাবিতেই তাকে দেখা যায়। প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি। তথ্য এবং সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছে সে। মন্ত্রণালয়ে কাজও শূরু হয়ে গেছে। ফলে তার ব্যাস্ততা অনেক। হুমায়রার বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বের হলো। মানুষটি গভীর ভাবে হৃদয়ে তার রাহত্ব জমিয়ে এটাতে সন্দেহ নেই। হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো। ছুটে গেলো হুমায়রা ফোন ধরতে। ফোন ধরতেই বললো,
“কেমন আছেন?”

অপাশের মানুষটি চুপ করে আছে। মৃদু হাসলো বোধহয়। হুমায়রার হৃদয় কম্পিত হচ্ছে। যেন ছোটখাট ভুমিকম্প হচ্ছে। নিঃশ্বাস আটকে গেলো যেনো। ওপাশের মানুষটি গাঢ় স্বরে বললো,
“ভালো না। মনে হচ্ছে খুব অমূল্য কিছু ফেলে এসেছি। চলছি, ছুটছি কিন্তু কেমন জড় বস্তুর মতো লাগছে নিজেকে”
“প্রতিমন্ত্রীসাহেব এগুলো বললে হয়?”
“সে তো বাকিদের কাছে”

হুমায়রা চুপ রইলো ক্ষণ সময়। তারপর শুধালো,
“কবে ফিরছেন?”
“বলতে পারছি না”
“ওহ”
“কি করছো?”
“আকাশ দেখি”
“অন্ধকারে?”
“অন্ধকারের আকাশ সবচেয়ে বেশি সুন্দর”
“তাই বুঝি? আমার মনের আকাশে মেঘ করেছে। চাঁদটা কোথাও লুকিয়ে গেছে। তাই ঐ না ছোঁয়া আকাশের প্রতি লোভ হয় না”

হুমায়রা উত্তর খুঁজে পেলো না। চুপ করে রইলো। ফাইজানও আর কথা বললো না। কথা হলো না বেশী। শুধু নিঃশ্বাসের শব্দটুকুই বলে দিলো হাজারো উপাখ্যান। রাত ঘন হলো। ফরিদ ভাইয়ের কন্ঠ শোনা গেলো,
“ফাইজান, ঘুমিয়ে পড়েছো? কথা ছিলো”

ফাইজান উত্তর দিলো। পরক্ষণে হুমায়রাকে বললো,
“রাখছি, খেয়াল রেখো”
“আপনিও নিজের খেয়াল রাখবেন”

ফোন রেখে দিলো ফাইজান। বুক চিরে আবারো দীর্ঘশ্বাস বের হলো হুমায়রার। নিস্তব্ধতা ঘিরলো হৃদয়কে। কি বিশ্রী এই শুন্যতা।

*******

সালমার অসুস্থতার খবর পেয়ে শরীফা গ্রামে এসেছে। উঠেছে দেলওয়ারের বাড়ি। দেলওয়ার বোনের এমন আগমনে খানিকটা অপ্রস্তুত হলেন। কিন্তু সেটা প্রকাশ করলেন না। তার শরীর ভেঙ্গে গেছে। দাপটের উচ্চশির যেনো নুয়ে পড়েছে। বেইল হচ্ছে না আমানের। টাকার পর টাকা খরচ হচ্ছে উকিলের পেছনের। শফির মৃত্যুর কি এমন প্রমাণ পাওয়া গেলো সেটাও বোঝা যাচ্ছে না। সামনের সপ্তাহের রবিবার আবার কোর্টে জামিনের জন্য আপিল করা হবে। সালমার অবস্থাও ভালো নয়। একমাত্র ছেলের শোকে সে কাতর। শরীফা আসার পর যা একটু কথা বলছে। শ্বাশুড়ি আসায় হুমায়রাও চেয়ারম্যান বাড়ি এলো। মামীর সাথে কথা হলো অল্পস্বল্প। শরীফা বার বার এক কথাই বলছে,
“আমার ছেলে কিচ্ছু করে নাই। সব চক্রান্ত”

শরীফা মলিন স্বরে বললো,
“কে করবে এমন বাজে ষড়যন্ত্র?”
“খারাপ মানুষের কি অভাব শরীফা?”

তাও ঠিক। ঈর্ষাপরায়ণ লোকের অভাব নেই। চেয়ারম্যানের উপর ক্ষুদ্ধ মানুষেরও অভাব নেই। হুমায়রা অবশ্য নির্বিকার। মানতে কষ্ট হলেও এটা মিথ্যে নয়। আমান নিজে তার কাছে স্বীকার গেছে। হুমকিও দিয়েছে। দেলওয়ার এর মাঝে প্রবেশ করলো ঘরে। শরীফার উদ্দেশ্যে বললো,
“ফাইজান ফিরবো কবে?”
“ফিরবে ভাইছা, আসলে নতুন মন্ত্রীত্ব। বুঝেন ই তো”
“বুঝি সব ই। কিন্তু শরীফা, মামা হিসেবে এতোটুকু তো তার কাছে আশা করতেই পারি”

শরীফা মৌন রইলো। দেলওয়ারের অস্থিরতা সে বুঝছে। ফাইজান তার ফোন ধরছে না। ধরলেও ব্যস্ততার বাহানা। ব্যাপারটি দেলওয়ারের ভালো লাগছে না। সে শরীফার উপর চাপ দেবার চেষ্টা করছে। মা ভক্ত ছেলে মায়ের আবদার শুনবে। শরীফা না পারতে বলেই বসলো,
“ভাইছা, আমান যদি নির্দোষ হয় তাহলে ভয়ের কি আছে?”
“আমান তো নির্দোষ ই। সবার সন্দেহ আছে নাকি?”

দেলওয়ার সাহেব চটে গেলেন। তার চোখজোড়া ধপ করে জ্বলে উঠলো রাগের উনুনে। শরীফা কথা বাড়ালো না। হুমায়রার ভালো লাগছে না এখানে বসতে। তাই শরীফাকে বললো,
“আম্মা, আমি বাড়ি যাই? ভাবি একা। দাদী, ভাইজান কেউ নেই”
“হ্যা, হ্যা। তুমি যাও। আমি ফিরবো কালকে। তুমি চাইলে থেকে যেও। পরীক্ষা কবে?”
“সামনের মাসের দুই তারিখ”
“আচ্ছা, যাও তাহলে।“

হুমায়রা বেরিয়ে যাবার জন্য উদ্ধত হলো। বের হবার সময় দেলওয়ার সাহেবের ক্রুদ্ধ স্বর কানে ভেসে এলো। কাউকে অশ্রাব্য ভাষায় গালি দিচ্ছেন। হুমায়রা কানে তুললো না। সে বেরিয়ে গেলো।

*************

যুবাইদার কথা দাম না দিলেও আশংকা মিথ্যে হলো না। কাওছার সত্যি সত্যি-ই বাড়ি চলে এলো। বঞ্চনার ক্ষোভের লাভায় দগ্ধ হয়ে ক্ষিপ্র স্বরে নিজের অধিকার দাবি করলো,
“আমি অন্যায় মানুম না, আমার বাপের ভিটের থেইক্যা আমারেই বাইর করবা? আমিও দেখি কেমনে? বাপের পর এই ভিটা আমার”

কালাম তাকে গুনে গুনে সাত লাখের মতো টাকা দিয়েছে। তাও তার ক্রোধ থামার নয়। এদিকে আতিয়া খাতুন মৌন। তিনি শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন ছেলের দিকে। রাশাদের কপালে বিরক্তির ভাঁজ। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সে। কাওছারের দিকে। কাওছার ঘরের মানুষদের এমন নির্লিপ্ততা বরদাস্ত করলো না। অস্থিরতা বাড়লো। ক্রদ্ধ স্বরে বললো,
“আম্মা, এই ভিটা আমার হক। আমিও দেহি এই ভিটা থেইক্যা কেমনে বাইর কর তুমি?”
“এই ভিটা তোর না কাওছার”
“কি কতি চাও তুমি?”
“তোর বাপ এই ভিটে আমার আর রাশাদের নামে লিখখ্যা দিছে। তাই তোর এখানে থাহা না থাহার সিদ্ধান্ত আমরা নিবো”

এমন কিছুর জন্য কাওছার বা বাকিরা প্রস্তুত ছিলো না। এমন কি এই ভিটে লিখে দেবার ব্যাপারটিও ছিলো সকলের অজানা। রাশাদ বিমূঢ় চোখে তাকিয়ে রইলো দাদীর দিকে। দাদীকে কঠিন পাথরের মতো লাগছে। দূর্বল, কোমল হৃদয়ী মানুষটিকে আজ অপরিচিত লাগছে। কাওছারের রাগ বাড়লো। দাঁতে দাঁত পিষে বললো,
“এইডা অন্যায় করতেছো আম্মা। আমি না তোমার পোলা, আমার লগে এমনডা করতে পারলা? আমার বাপে তো সবসময় আমারেই দোষাইছে। তুমিও?”

আতিয়া খাতুন কিছু সময় মৌন রইলেন। তারপর কঠিন স্বরে বললেন,
“পোলা বলেই তোরে ওই জমির টেহা দিছি। পোলা না হইলে দিতাম না। তোর হয়ে কালামের টেহা ফেরত দিছি। আচ্ছা,তোর লজ্জা করতেছে না? পোলা হইয়্যে কি দিছোস আমারে, তোর বাপরে? শুধু অপমান ই ভাগ্যে পাইছি। তোর মত পোলা না থাকলি পরে আজকে মানুষডা বাইচে থাকতো। বের হ তুই আমার ঘর থেইক্যা।“

আতিয়া খাতুনের কণ্ঠে ক্রোধ। তিনি হাপাচ্ছেন। রাশাদ তাকে পাশ থেকে ধরলো। শান্ত হতে বলল। এদিকে কাওছারও দমলো না। চেঁচিয়ে বললো,
“আমি মানি না। এই ঘর আমার। তুমি কিডা আমারে ঘর থেইক্যা বাইর করার। বাপে তোমার নামে ঘর লিখে দিছে আকাশে উড়তাছো। আর ওই রাশাইদ্দা। তোমার কি মনে হয় সে তোমারে দেইখে রাখবো। শালা লোভী একডা, সব নাটক ছেলো ওই বুড়ার সম্পত্তি হাতাবার লাইগ্যা। ওই একটা খা**** মাইয়্যার ঘরে আর কি ভালা হইবো”

কাওছারের ঔদ্ধত্য বাড়লো। আতিয়া খাতুনের সহ্যের সীমা উলঙ্ঘন হলো। এগিয়ে যেয়ে ঠাস করে চড় লাগালেন। আকস্মিক চড়ে বিমূঢ় হলো কাওছার। রাগে গা জ্বলে উঠলো যেনো। তেড়ে আসতে নিলেই রাশাদের মুখোমুখি হলো। শান্ত চোখজোড়া যেনো ধিক ধিক করে জ্বলছে। মুখশ্রী কঠিন হয়ে আছে। শীতল স্বরে বললো,
“এখনি বেরিয়ে যান, নয়তো ভালো হবে না”

রাশাদের শীতল ধারালো কন্ঠে ভয় হলো কাওছারের। থতমত খেলো সে। শব্দ উড়ে গেলো মুখের। ফলে বাধ্য হল বের হতে। মুখ খানা বেজার হয়ে নত মস্তকে টাকা নিয়ে প্রস্থান করলো।

সারা রাস্তা খালি রাশাদ আর শামসু মিঞাকে গালি দিলো সে। কিন্তু বাস্তবতা মাথাচড়া দিতেই অনুধাবন হলো যাওয়ার জায়গা নেই তার। পেটে ক্ষুধা। টাকাগুলো নিয়েও আশংকা হলো। কেউ যদি তার পেটে ছুরি ঢুকিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়। ভয় গাঢ় হতেই পা আটকে গেলো কাওছারের। নেতানো ভাস্করের মিয়ে যাওয়া আভায় পরিচিত মুখশ্রী। কাওছার বিমূঢ় স্বরে বললো,
“তুমি?”…………………

চলবে

মুশফিকা রহমান মৈথি

৫৩তম পর্ব
https://www.facebook.com/share/p/9e1HjHCZ3CbxCNA1/?mibextid=oFDknk

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here