পূর্ণতা ” #নন্দিনী_নীলা ১৫.

0
270

#পূর্ণতা ”
#নন্দিনী_নীলা
১৫.
(কপি করা সম্পুর্ন নিষেধ) ❌

রোজিনা বেগম মেয়েকে জড়িয়ে ধরল শক্ত করে। তার বুকের ভেতরটা হাহাকার করছে পূর্ণতা মাকে জড়িয়ে ধরল না। রোজিনা বেগম মেয়ের মুখে অনবরত চুমু খেয়ে নিল। আদরে আদরে ভরিয়ে দিতে লাগল। পূর্ণতা পাথরের মতো শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তারপর গম্ভীর কন্ঠে বলল,,” ভেতরে যেতে দিবে না?”
রোজিনা বেগম মেয়ের কথা শুনে চমকে উঠে। মেয়েকে ছেড়ে দাঁড়ায়। পূর্ণতা বাসার ভেতরে প্রবেশ করেই দেখতে পায় শাহিন আলম সোফায় বসে আছে। ওকে দেখতেই তিনি কথা বলতে চাইলেন কিন্তু পূর্ণতা তাকে কথা বলার সুযোগ দিল না। চলে গেল নিজের রুমের দিকে। দীর্ঘ দিন পর বাসায় ফিরেছে ওর রুমটা কি আর থাকার মতো অবস্থায় আছে? পূর্ণতা রুমের সামনে এসে দেখল দরজা খুলে রাখা। ভেতরে গিয়ে লাইট অন করে খেয়াল করল রুমটা ভালোই পরিষ্কার করা। আশালতা হয়ত ফোন করে সবাইকে সব জানিয়ে দিয়েছে। পূর্ণতার ধারণাটি ঠিক আশালতা ওকে ট্রেনে তুলে দিয়েই ওদের বাসায় কল দিয়েছিল। ঘটনা সবটাই খুলে বলেছে। সব শুনে রোজিনা বেগম আর শাহিন আলম কথা বলার ভাষা পায়নি। এতো জোর জবরদস্তি করে পূর্ণতা কে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল কিন্তু সঠিক পাত্রের হাতে তুলে দিতে পারে নি। মেয়েকে মুখ দেখাবে কীভাবে তারা! পূর্ণতার অপেক্ষায় উনারা বসে ছিল। মেয়েকে স্টেশনে লজ্জায় আনতে ও যেতে পারেনি শাহিন আলম।

পূর্ণতা নিজের রুম দেখেই বুঝেছে মা পরিষ্কার করে রেখেছে ও ব্যাগ রেখে নিজের চিরচেনা বিছানায় গা এলিয়ে দিল। চোখ বন্ধ করে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। মাথাটা চাপ ধরে ব্যথা হয়ে আছে। পূর্ণতা চোখ বন্ধ করে আছে তখনি ওর মা রোজিনা বেগম আসলো। দরজায় নক করে খাওয়ার কথা বলল। পূর্ণতা না করে দিল। রোজিনা বেগম তাও দাঁড়িয়ে আছে দরজায়। পূর্ণতা ভাবছে ওকে কিছু জিজ্ঞেস করছে না কেন? কেমন নিরব হয়ে আছে দুজনেই। ওকে কিছু বলার বা জিজ্ঞেস করার মুখ যে তাদের দুজনের নেই সেটা পূর্ণতা জানে। এখন থেকে আর ওর জীবনে কারো হস্তক্ষেপ ও মেনে না। তারা কি অনুতপ্ত? একটা তাচ্ছিল্য হাসি বেড়িয়ে আসলো পূর্ণতার মুখে।
ছোট্ট এ জীবনটাই কত কিছু দেখা হয়ে গেল ওর। সামনে আর কত কিছু দেখতে হবে আল্লাহ তাআলা‌ জানেন।
এই বাসায় ও কিভাবে থাকবে? বাসার আনাচে-কানাচে মিশে আছে প্রভাতের স্মৃতি। প্রভাত ওকে ভালো থাকতে দেবে না ওর সঙ্গ ও দেবে না। পূর্ণতার চোখ বেয়ে টপটপ করে পানি পড়তে লাগল। এই শহরে ওর দম বন্ধ হয়ে আসছে। কিভাবে ও সময় পার করবে?

শশী আর দিদান রাস্তায় নেমে দাঁড়িয়ে আছে। একটু আগে ওদেরকে আশালতা বেগম বাসা থেকে বের করে দিয়েছে। দিদান বিশ্বাস করতে পারছে না ওর মা ওকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছে বাইরের একটা মেয়ের জন্য। যে মা ওকে চোখে হারাতো পাগলের মতো ভালোবাসতো সেই মা ওকে এতো‌ রাতে বাসা থেকে বের করে দিয়েছে। দিদান স্তব্ধ হয়ে বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছে আর এদিকে শশী চিল্লা মিল্লা করে আর মাথা খাচ্ছে। নিজের বাসা থেকেও বিতাড়িত হলো শশী এদিকে শ্বশুরবাড়ি একদিনও কাটাতে পারল না। রাগে দুঃখে নিজের বোকামিতে শশীর এখন হাত পা ছড়িয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। এতোদিন ধরে এতো কিছু প্ল্যান করে শ্বশুরবাড়িতে রাজত্ব করে খাবে সে চিন্তা-ভাবনা করে এখন কিনা ওকে ভিক্ষারির মতন রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে?
“তোমার মতো হাঁদারামকে বিয়ে করায় আমার সবচেয়ে বড় ভুল হয়েছে এতো চালাকি করে শেষে কেন যে তোমাকে বিয়ে করতে গিয়েছিলাম।”
“তোমাকে বিয়ে না করলে আজকে আমাকে বাসায় বাইরে এমন করে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো না। তোমাকে বিয়ে করে আমার জীবনটা শেষ। হাতের যত টাকা ছিল সেগুলো গেল মাথার উপর থেকে ছাদ ও চলে গেল এখন চলো দুজনে ভিক্ষা করি। এছাড়া তো আর কোন পথ খুঁজে পাচ্ছি না।”
” আমার জন্য তোমার নয় বরং তোমার জন্য আমার জীবনটা শেষ হয়ে গেল। তোমার জন্য আমি নিজের বাসায় ঢুকতে পারিনি আর এখন দেখো আমার ঠিকানা কোথায় হলো রাস্তায়। তোমাকে বিশ্বাস করা , ভালোবাসা, বিয়ে করাটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল।”
দিদানের মাথাটা এমনিতে গরম হয়ে আছে। শশীর কথা শুনে ওর হিংস্রতা জেগে উঠল। শশীর জন্য কত কিছু না করেছে নিজের পরিবারের সামনে খারাপ হলো বাসা থেকে বিতাড়িত হলো। কিন্তু শশীর সেইসব চোখে পড়ছে না ও বারবার ওকে দোষারোপ করে যাচ্ছে। রাগে হিংস্র হয়ে উঠল দিদান আর শশীর গালে ঠাস করে থাপ্পড় মেরে বসল। নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে আঙ্গুল তুলে শাসানো গলায় বলল,,”তুমি নিজেই শুধু সবকিছু হারাওনি আমি ও হারিয়েছি তাই ফারদার আমার সাথে চিৎকার করবে না।”
শশী থাপ্পর খেয়ে গালে হাত দিয়ে স্তব্ধ চোখের দিদানের দিকে তাকিয়ে আছে।
“তোমার এতো বড় সাহস তুমি আমাকে মারলে? আমি তোমার নামে নারী নির্যাতনে মামলা দেবো।”
“কানের কাছে ঘ্যান ঘ্যান না করে কি করতে চাও সেটাই করো না।”
শশী কথা না বলে চুপচাপ রাগে ফুসফুস করছে আর দাঁড়িয়ে আছে। দিদান কাকে যেন কল করে দুইদিনের জন্য থাকার জায়গা ব্যবস্থা করে দিতে বলল তারপর একটা অটো নিয়ে শশীকে নিয়ে সেখানে ছুটল।

পূর্ণতা মাঝরাতে উঠে বসল। তখন তো অভিমানে না খেয়ে শুয়ে পড়েছিল এখন পেটের খিদায় আর কুড়াতে পারল না রুম থেকে নিঃশব্দে বেরিয়ে আসলো।পূর্ণতা ডাইনিং টেবিলে এসে দেখলো ওর জন্য খাবার ঢেকে রাখা আছে। ও মুচকি হেসে ঢাকনা সরালো আম্মু জেগে আছে এখনো ও খাচ্ছে নাকি পরোক্ষ করছে। এটা আজকের ঘটনা নয় ছোটবেলা থেকে এসব ঘটে আসছে আম্মু ওকে আহ্লাদ করে বারবার না ডেকে খাবার রেডি রাখত। কারণ তিনি জানে রাগ যতোই করুক না কেন পূর্ণতা না খেয়ে থাকার মতো মেয়ে না।
কিন্তু পূর্ণতার মতো খিদে পাগল মেয়েও না খেয়ে ছিল প্রিয় মানুষকে হারিয়ে ও না খেয়ে ছিল। ও খাওয়া ভুলে গিয়েছিল ওর জীবন থেকে সবকিছু হারিয়ে গিয়েছিল সেইদিন থমকে গিয়েছিল পূর্ণতার জীবন সেইদিন। মনে করতে চায়না পূর্ণতা সেই বিষাক্ত দিনের কথা। হারিয়ে যাওয়ার জন্য কিছু মানুষ কেন ওদের জীবনে আসে। এলোমেলো করে দিয়ে কেন আবার চলে যায় কেন নিঃস্ব করে দিয়ে যায়?
পূর্ণতার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানির ধারা নামছে। খাচ্ছে ও কাঁদছে দুই একসাথে। দূর থেকে রোজিনা বেগম মেয়ের খাওয়া দেখছে সাথে অনগল চোখ দিয়ে জল পড়তে দেখছে। পূর্ণতা খেয়ে ওপরে চলে গেলে রোজিনা বেগম এগিয়ে এসে প্লেট নিয়ে কিচেনে গেল।
পূর্ণতা বেলকনিতে নিঃশব্দে বসে আছে ঘুম পাচ্ছে না। বেলকনিতে বসেও রাত পার করল সকালের দিকে ওখানেই ঘুমিয়ে পড়ল।
সূর্যের তেজী রশ্নি চোখে লাগতেছে পূর্ণতার ঘুম ভেঙ্গে গেল চোখের উপর হাত দিয়ে উঠে দাঁড়ালো। রাত এখানে বসে থেকে যে কখন ঘুমিয়ে পড়েছিল ও নিজেই জানে না।
পূর্ণতা ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বেরোতে বাবার মুখোমুখি হলো। ওর বাবা ওর দিকে তাকিয়ে চোখ নিচের দিকে নামিয়ে ফেলল‌।
পূর্ণতা শাহিন আলম এদিকে তাকিয়ে বলল,” নিচে দিকে তাকিয়ে আছো কেন আব্বু?”
শাহিন আলম চমকে তাকাল মেয়ের দিকে পূর্ণতা নির্লিপ্ত চক্ষে উনার দিকে তাকিয়ে আছে তিনি মেয়ে সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে পারলেন না। নিচে চলে গেলেন। লজ্জায় মেয়ের সাথে কথা বলার ভাষা খুজে পাচ্ছেন না। শাহিন আলম নিচে চলে আসলো। পূর্ণতা বাবার চলে যাওয়া দেখে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিচে যাওয়া বাদ দিয়ে ছাদে চলে গেল। সবার মধ্যে জড়তার পাহাড় হয়ে গেছে। একসময় বাবা কে এতো ভয় পেতে যে ও বাবার সাথে কথা বলতে পারতো না। আর আজকে সেই বাবার কাঠিন্য গাম্ভীর্যতা কোথায় যেন মিলিয়ে মুখটা ছোট হয়ে আছে। বাবা মায়ে রা কি সব সময় ছেলে মেয়ে ভালো করতে গিয়ে আসলেই ভালো করতে পারে। সেদিন যদি আমাকে জোর জবরদস্তি করে ব্ল্যাকমেইল করে বিয়েটা না দিতে আজকে আমাকে ডিভোর্সি হতে হতো না। বাবা মা কাউকে এতোটা অনুতপ্ত পুরতে হতো না।
পূর্ণতা ছাদে এসে নিজের ফুল গাছগুলোর দিকে তাকালো। সবগুলো গাছ আগের মতোই সজীব আছে। গাছে গাছে নানা রংবেরঙের ফুল ফোটে আছে। সবগুলো ফুল আর খুব পছন্দের। কত গুলো দিন পর নিজে প্রিয় জিনিসগুলোকে ছুঁতে পারছে দেখতে পারছে। পূর্ণতা দোলনায় বসতে প্রভাতের প্রথম আলিঙ্গন মনে পড়ল‌। ও দোলনায় মাথা ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করতেই দৃশ্যটা যেন চোখের সামনে ভেসে উঠল। চোখ বন্ধ করলে যেমন পুরনো স্মৃতিগুলো চোখের সামনে ভেসে উঠে। এভাবেই যদি নিজেকে সশরীরে সেখানে উপস্থিত করা যেত কথা না ভালো হতো। খারাপ স্মৃতি গুলোকে মুছে ফেলে শুধু সুন্দর মুহূর্ত বলে জীবনে বন্দি করে রাখা যেতো। কিন্তু হায় আফসোস সুখ
খুব ক্ষণিকের জন্য ধরা দেয় বাকি সময়টা দুঃখের সাগরে ভাসতে হয়।
#চলবে…..

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here