পূর্ণতা ” #নন্দিনী_নীলা ১৪.

0
78

#পূর্ণতা ”
#নন্দিনী_নীলা
১৪.

রাত ৮:২৫ বাজে পূর্ণতা ঘড়িতে সময় দেখল। ঢাকা পৌঁছাতে ওর আর খুব বেশি সময় লাগবে না। পূর্ণতা ফোন অফ করে জানালা দিয়ে তাকিয়ে আছে। বাইরে বৃষ্টির দমকা হাওয়া বইছে। পূর্ণতার পাশে বসা তুষার পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে হঠাৎই বলে উঠল,,”আপনি যে খিচুড়িটা খাচ্ছিলেন সেটা কি ফেরত বাসায় নিয়ে যাবেন?”
পূর্ণতা কপাল কুঁচকে ওর দিকে তাকাল। তুষার ওর তাকানো দেখে থতমত খেয়ে বলল,,” ওভাবে তাকাচ্ছেন কেন?”
“কেন আপনি খিচুড়ি খাবেন নাকি?”
“হ্যাঁ আসলে আমি শুধু ফাস্টফুড এনেছি তো তাই পেট ভরেনি। আপনি না খেলে আমাকে দিতে পারেন বাসায় গেলে তো আর আপনার খাবারের অভাব পড়বে না আমার জানামতে।”
পূর্ণতা বলল,,”ওটা আমি খেয়েছি আমার খাওয়াটা খাবেন কেন? সরি ওটা আমি দিতে পারব না। ঢাকায় পৌঁছাতে আর খুব বেশি সময় লাগবে না বাসায় ফিরে গেলে আপনার ও খাবারের অভাব পড়বে বলে আমার মনে হয় না।”
“এখনো আরো ঘন্টাখানিক সময় আছে আপনি না খেলে আমাকে তো দিতেই পারেন। এটো কোথায় হয়েছে আপনি তো আর হাত দিয়ে খাননি চামচ দিয়ে খেয়েছেন।”
অবাক বিষ্ময়ে তাকিয়ে আছে পূর্ণতা তুষারের দিকে ছেলেটা এতো ছেঁচো কেন? এভাবে কেউ কারো খাওয়া খাবার চেয়ে খেতে চায়? কিছুক্ষণ রাগী চোখে তুষারের দিকে তাকিয়ে থেকে ও ভাবলে হয়তোবা লোকটার অনেক আসলেই অনেক খিদে পেয়েছে আর লোকটা থেকে পানি খেয়েছে ও তাই ব্যাগ খুলে বক্স বের করে তুষারের দিকে বারিয়ে দিল।
পূর্ণতা নিজের চামচ টাই টিস্যু দিয়ে মুছে তুষার কে দিল। তুষার থ্যাংক ইউ বলে খুব তৃপ্তি করে খেল আর প্রশংসা সুরে বলল,,” বাহ আপনার রান্নার হাত তো দুর্দান্ত।”
“এটা আমার মায়ের হাতের রান্না।” পূর্ণতা বলল।
তুষার বলল,,” ওহ আচ্ছা।”
তুষার পানি খেয়ে টিফিন বক্সটা ফেরত দিয়ে বলল,,”আপনার বাসা কি রাজশাহী নাকি ঢাকা?”
পূর্ণতা বলল,,”আমার বাসা কোথায় জেনে কি করবেন?”
“আপনার বাসায় ডাকাতি করতে যাব।” তুষার পূর্ণতার কথা শুনে মজা ছলে কথাটা বলে হেসে উঠল।
“আমার বাসায় ডাকাতি করার মতো মহামূল্যবান কিছু নেই।”
“আচ্ছা না বললেন। আমার বাসা ঢাকাতেই যদি আপনার বাসা ঢাকায় হয় তাহলে আমাদের আবার দেখা হবে। আর তখন আপনাকে সম্বোধন করার মতো কিন্তু আপনার নামটা এখন অব্দি বললেন না। আমাদের যাত্রা কিন্তু শেষ হওয়ার পথে।”
“আমি নাম বলতে ইন্টারেস্ট নই।”
তুষার মুখটা গোমড়া করে পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে আছে। পূর্ণতা গাড়ি থেকে নামার আগে পানির বোতল তুষারের হাতে দিয়ে বলল,,”এটার আর প্রয়োজন হবে না তাই আপনার জিনিস আপনার কাছেই থাকুক।”
“আপনি কারো জিনিস নিতে চান না দিতেও চান না তাই না। আপনি খুব কৃপণ টাইপের মেয়ে।”
“আপনার ধারণা সঠিক।”
পূর্ণতার যাওয়া দিকে তাকিয়ে তুষার বিড়বিড় করে বলল,, কঠিন ব্যক্তিত্বের মেয়ে। আমার মতো একজন সুদর্শন ছেলের পাশে বসেও যে মেয়ে কথা বলার আগ্রহ পায় না। সে মেয়ের হৃদয় কতটা কঠিন সেটা আল্লাহ তাআলা‌ই জানে। কানের কাছে এতো ঘ্যানঘ্যান করেও সামান্য নামটাই জানতে পারলাম না। হে আল্লাহ এই মেয়েটার সাথে যেন আমার আবারো দেখা হয় আমি এর বিষয়ে অনেক কিছু জানতে চাই।”

পুরো রাস্তায় থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে কিন্তু এই ট্রেনটা থামতেই বৃষ্টির আকার নাই বাইরে। বৃষ্টি থাকলে অন্তত একটু কথা বলা চান্স পাওয়া যেতো। তুষার ব্যাগ কাঁধে নিয়ে পূর্ণতার পিছু পিছু নামল। পূর্ণতা স্টেশনের বাইরে এসে গাড়ি খুঁজছে। এদিকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছে। পূর্ণতা রাণী গোলাপি রঙের সেলোয়ার কামিজ পড়েছিল। বৃষ্টির কয়েকটা ফোঁটায় ওর হালকা সুতি ওরনা ভিজে গাঢ় হয়ে যাচ্ছে ও ছাউনির নিচে দাড়াল। তুষার পূর্ণতার পিছু এসে পাশেই দাড়াল। পূর্ণতা এক পলক তুষারের দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে মাথার পানি ছাড়তে লাগল।
তুষার বলল,,” বৃষ্টিটা চলে গিয়েছিল আবার নামল এখন তো বাসায় যাওয়া বিপদ হয়ে পড়বে সাথে তো ছাতাও নাই। আপনার কাছে ছাতা আছে?”
পূর্ণতা তুষার কে আবার নিজের পাশে দেখে বিরক্ত হলো। ও তুষার কথার উত্তর দিল না। তারপর পূর্ণতা হঠাৎ করেই তুষারের দিকে তাকিয়ে বলল,,” আপনি আমার পিছু নিয়েছেন?”
তুষার চমকে উঠে বলল,” আপনি কিভাবে বুঝলেন? আপনি তো দারুন বুদ্ধিমতী!”
পূর্ণতা নাক লাল করে রাগান্বিত স্বরে বলল,,”এখানে বুদ্ধিমত্তার প্রয়োজন নেই আপনি যেভাবে পিছনে পড়েছেন তাতে যে কেউ বুঝতে পারবে। আমি কিন্তু এতক্ষণ ধরে আপনাকে যথেষ্ট ভদ্র ভেবেছি আর ভদ্র আচরণ করেছি। যদি আমার পেছনে খারাপ কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে পরে থাকেন তাহলে চুপচাপ নিজের রাস্তা মাপুন না হলে আমাকে অবলা নারী ভেবে ভুল করবেন।”
এদিকে ঝরঝর করে বৃষ্টি নামতে শুরু করেছে। তুষার পূর্ণতার কথা শুনে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। তারপর হাহাহা করে হেসে উঠল। তুষার পূর্ণতার কথা শুনে পেট চেপে ধরে হাসছে। হাসতে হাসতে ওর চোখে জল চলে এসেছে। পূর্ণতা হতবুদ্ধি চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ওর হাসি দেখে পূর্ণতার রাগে গা জ্বলছে। তুষার অনেক কষ্টে নিজের হাসি নিয়ন্ত্রণ করে সোজা হয়ে দাঁড়াল। তারপর পূর্ণতা দিকে তাকিয়ে বলল,,” আপনি আমাকে খারাপ ছেলে ভাবছেন ও মাই গড। ভয় পাবেন না আমি ভালো ছেলে। খারাপ কোন উদ্দেশ্য নিয়ে আপনার পিছু আসি নি। আপনাকে জানার আগ্রহ আমার আছে। কিন্তু সেটা শুধু কৌতুহল খারাপ কোন উদ্দেশ্য নিয়ে নয়। আর আমি আপনাকে নজরে রেখেছিলাম কিন্তু আপনার পিছু নেব না কারণ আমার এখন বাসায় ফিরতে হবে। যদি দ্বিতীয় বার দেখা হয়ে যায় তখন নিশ্চিত ভাবে আপনার পিছু আমি তুষার ছাড়ব না প্রমিজ।”

হতবিহ্বল চোখে পূর্ণতা তুষারের দিকে তাকিয়ে আছে। তুষার আকাশ ভেঙ্গে পড়া এই তীব্র বৃষ্টির মধ্যে ভিজে ভিজে ওর পাশ থেকে চলে গেল। এক রাশ বিস্মিত চক্ষুদ্বয় মেলে ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল পূর্ণতা। একটু বেশি মনে হয় বাড়াবাড়ি করে ফেলল লোকটার সাথে। ওর জন্য এতো রাতে ভিজে ভিজে চলে গেল। কিছুটা অনুতপ্ত হলো পূর্ণতা এখনকার দিনে কি কোন ছেলেকে বিলিভ করা যায়? আর ও একা একটা মেয়ে বের হয়েছে তার মধ্যে এরকম বৃষ্টি।
একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে পূর্ণতা দাঁড়িয়ে আছে শীত শীত লাগছে আবার কোন সিএনজি পাওয়া যাচ্ছে। এখান থেকে ওর বাসা খুব একটা দূরে নয়। এই বৃষ্টি কখন যাবে কে জানে নাকি এখানে আজ রাত পার করতে হবে!
পাক্কা পনেরো মিনিট তীব্র বৃষ্টির হয়ে আস্তে আস্তে কমতে লাগল। বৃষ্টি কমতেই পূর্ণতা কিসে করে যাওয়া যায় সেটা খুঁজতে লেগে পড়ল। তখনো গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছে ওভাবে রাস্তায় নেমে গেল পূর্ণতা।
তুষার ছেলেটাকে তো ধমক দিয়ে পাঠিয়ে দিল কিন্তু আরেকটু দূরে থেকে দুই তিন জন ছেলে ওর দিকে কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে। একা একটা মেয়েকে দেখছে এর জন্য তাদের কামুক দৃষ্টি ওর উপর পড়েছে।
পূর্ণতা দেখতে পেলে একটা গাড়ি এগিয়ে আসছে ওর দিকে। ওর সামনে এসে জিজ্ঞেস করল আপা যাবেন?
পূর্ণতা হ্যাঁ বলেই তাড়াতাড়ি গাড়িতে উঠে বসে হাফ ছেড়ে বাঁচল।

পূর্ণতা বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। বৃষ্টি এখন একদম নেই আকাশ একদম পরিষ্কার হয়ে গেছে। ঘড়িতে এখন সাড়ে এগারোটা বাজে। পূর্ণতা ছলছল চোখে বাড়ির দিকে তাকিয়ে আছে। কতদিন পর নিজের বাড়িতে ফিরল ওর চোখের পানি বাদ মানছে না। পূর্ণতা বাসার ভেতরে ঢুকল দাড়োয়ান চাচা ওকে দেখে তো চমকে উঠল। উত্তেজিত কন্ঠে এটা ওটা বলতে লাগল ও তার কথার প্রেক্ষিতে শুধু হাসল একটু আর কেমন আছেন চাচা বলে গেইট পেরিয়ে ভেতরে ঢুকল। ওদের একতলা বাড়িটার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ভেতরে এখনো আলো জ্বলছে। সবাই জেগে আছে নাকি? পূর্ণতার বাসার ভেতরে ঢুকতে ইচ্ছে করছে না। ওর পা যেন অকেজো হয়ে পড়েছে ও থমকে দাঁড়িয়ে আছে। কলিং বেল ও চাপতে ইচ্ছে করছে না। ব্যাগ নিচে নামিয়ে পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
পূর্ণতা হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখের অশ্রু মুছে কলিং বেল চাপতে হাত এগিয়ে নিবে ওমনি ওর সামনে সদর দরজা টা খট করে খুলে গেল। ও চমকে উঠে দুই কদম পিছিয়ে গেল। ড্রয়িংরুম থেকে চকচকে আলো এসে পূর্ণতার চোখে লাগল। পূর্ণতা সামনে স্তব্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে।
#চলবে….
( আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন সবাই? সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন। ভালোবাসা অবিরাম)

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here