এক_ফালি_সুখ🌼 |১১| #তাসনিম_জাহান_মৌরিন

0
156

#এক_ফালি_সুখ🌼 |১১|
#তাসনিম_জাহান_মৌরিন
_”ভালো না বলতে?”
তন্নির কথার প্রতিত্তরে ছোট করে এইটুকুই বললো মৌরিন। তন্নি ওর দিকে এগিয়ে এসে বলে,
_”বুঝতেই তো পারছো, তোমার বাড়ির দিকে যাওয়ার গলিটাতে অনেক বখাটে ছেলেরা বসে থাকে। আর এই সময়ে তুমি রিক্সাও পাবেনা ঐদিকে যাওয়ার জন্য, রাস্তাটা একদম ভুতুড়ে ভুতুড়ে লাগে। আমি গিয়েছিলাম দু তিনবার,তাই বলছি।”

মৌরিন সামান্য হেসে বলে,
_”সমস্যা নেই আপু,আমি ঠিক চলে যেতে পারবো।”

_”বলছো তো? তুমি চাইলে আমি তোমাকে ড্রপ করে দিতে পারি,সমস্যা হবেনা কোনো।”

_”তুমি যে আমায় নিয়ে ভাবছো তার জন্য ধন্যবাদ। তবে আমি একাই যেতে পারবো, এমন রাস্তা দিয়ে চলার অভ্যাস আমার আগে থেকেই আছে।”

তূর্য ফোনের দিকে নিজর রেখেই বলে উঠলো,
_”ওভারকনফিডেন্স থাকা ভালো নয়।”

ঠোঁটজোড়া প্রশস্ত করে হাসলো মৌরিন। আড়চোখে সেদিকে তাকালো তূর্য, মৌরিন তার দিকে না তাকিয়েই বললো,
_”প্রত্যেক মানুষই কোনো না কোনো বিষয়ে ওভারকনফিডেন্ট থাকে। কিছু কিছু বিষয়ে ওভারকনফিডেন্ট থাকাই আমাদের বিপদ থেকে বাঁচায়, তবে অন্যান্য বিষয়ে ওভারকনফিডেন্ট থাকা মানুষের জীবন ধ্বংস করে দেয়। আমার ওভারকনফিডেন্স আমার ক্ষতি করবে নাকি উপকার করবে সেটা আমি জানি। বাকিদের নিজেদের টা ভেবে দেখা উচিৎ।”

কপাল কুঁচকে মৌরিন এর দিকে তাকিয়ে রইলো তূর্য। মৌরিন সেদিকে দৃষ্টি না দিয়ে তন্নির উদ্দেশ্যে বললো,
_”আমি আসছি আপু, আর রাতুল ভাইয়াও বোধ হয় কালকের মধ্যে ফিরে আসবে।”

_”ওকে,এজ ইয়োর উইশ।”
রুবেল এর কাছে আরো একবার বলে অফিস থেকে বেরিয়ে এলো মৌরিন। তূর্য সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়িয়ে সেদিকে আঙুল উঁচিয়ে বলে,
_”ও কি ইনডিরেক্টলি আমাকে বলে গেলো কথাটা?”

_”বলতেই পারে।”
কথাটা বলে তন্নি তূর্যর পাশের চেয়ারে এসে বসে পরলো।
তূর্য খানিকটা রাগী গলায় রুবেল এর দিকে তাকিয়ে বললো,
_”ঐ মেয়ে আমাকে ইনসাল্ট করলো ভাইয়া,আপনি বুঝতে পারছেন? আমাকে জ্ঞান দিয়ে গেলো?”

রুবেল তূর্যর কথায় তেমন পাত্তা না দিয়ে হেসে বললো,
_”ভুল কিছুতো আর বলেনি। আর আমি এটাও খেয়াল করেছি,তুই মৌরিন এর সাথে সবসময় খারাপ আচরণ করার চেষ্টা করিস। মেয়েটা খুব ইন্টেলিজেন্ট, তাই আর তুই পেরে উঠছিস না ওর সঙ্গে।”

কথাটা বলে আবারো হাসতে লাগলো রুবেল, তন্নিও তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে হাসতে হাসতে বললো,
_”ঠিকই বলেছেন রুবেল ভাই। আর হ্যা, তূর্যর জন্য কিন্তু এমনই একটা মেয়ে প্রয়োজন। তাহলেই ওর জেদগুলো কমবে।”

তূর্য কটমট চোখে তাকায় তন্নির দিকে। তন্নি তা দেখে বলে,
_”ভুল কিছুই বলিনি আমি। আমি শুধু বলেছি মৌরিন এর মতো মেয়ে, ওর কথা কিন্তু বলিনি।”

প্রতিত্তরে কিছু বললোনা তূর্য। কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে পাশ থেকে নিজের হেলমেট টা পরে নিলো। এরপর বাইকের চাবিটা হাতে নিয়ে বললো,
_”রুবেল ভাই,আমি চললাম।”

_”এখন ই যাচ্ছিস? একসাথে যেতে পারতাম তো।” (তন্নি)

_”তুই রাতুল ভাইয়ার জন্য এখানে বসেই ওয়েট কর। সে সকালে বেলা এসে তোকে নিয়ে যাবে।”

বেরিয়ে গেলো তূর্য। রুবেল জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তন্নির দিকে তাকিয়ে বললো,
_”তন্নি, তূর্য এটা কি বলে গেলো রে?”

তন্নি মাথা চুলকে আমতাআমতা করে বললো,
_”ও কিছুনা ভাইয়া,আপনি ওর কথা কানে তুলছেন কেন?”

_______
_”আমি লাস্ট বারের মতো দাঁড়াতে বলছি তোকে, এবার কিন্তু কান ধরে নিয়ে আসবো।”

নির্ঝর এর কথায় জ্যোতি থেমে যায়। পিছনে ঘুরে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলে,
_”আমি কি তোমাকে ভয় পাই নাকি? আর আমাকে ডাকছো কেন? আমার আর কি প্রয়োজন?”

নির্ঝর বুকে হাত গুঁজেই এগিয়ে আসে জ্যোতির দিকে। একহাতে তার কপালে টোকা দিয়ে বলে,
_”কি হয়েছে বল তো, এমন অদ্ভুত বিহেভ করছিস কেন আমার সঙ্গে?”

কিছু বললোনা জ্যোতি। নির্ঝর কিছুক্ষন থেমে আবারো বললো,
_”কোথায় আমায় একটু হেল্প করবি, তা না নিজেই রেগে বসে আছিস?”

_”আমি আর কি হেল্প করবো তোমাকে?”

_”এই যেমন মেয়েদের মন কি করে জয় করা যায়। পুরো তিনদিন ধরে দিনরাত দিয়াকে পটানোর চেষ্টা করছি, আর সেই মেয়ে কিনা আমাকে পাত্তাই দিচ্ছে না। কিছু টিপস..”

নির্ঝর এর কথা শেষ না হতেই জ্যোতি আরো রেগে গিয়ে বলে,
_”পারবোনা আমি কোনো টিপস দিতে। তোমার যে এত অবনতি হয়েছে সেটাতো ফুফুকে জানাতে হবে আমার, শেষ পর্যন্ত তার ছেলে কিনা দিয়ার মতো নির্লজ্জ মেয়ের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে।”

আবারো উল্টোদিক ঘুরে হাটা শুরু করলো জ্যোতি। তার কথাটা নির্ঝর এর ঠিক পছন্দ হলোনা। সে আবারো জ্যোতির পিছনে হাটতে হাটতে বললো,
_”এই তুই কোন সাহসে দিয়াকে নির্লজ্জ বলছিস? ও ভীষণ স্মার্ট একটা মেয়ে। তোকে আমি দাঁড়াতে বলেছি জ্যোতি..”

_____
সেই শুনশান রাস্তা থেকেই হেটে যাচ্ছে মৌরিন। তার মধ্যে তেমন কোনো ভাবান্তর সেই, স্বাভাবিকভাবেই চলছে সে। কথাটা সত্যিই বলেছে, এমন রাস্তা দিয়ে হাটার অভ্যাস তার আগে থেকেই রয়েছে।
তবে তন্নির কথা সত্যি না হলেও ঘটলো অন্য এর ঘটনা। রাস্তায় আজ প্রকাশ্যে কোনো বখাটে ছেলে এখন পর্যন্ত দেখেনি মৌরিন। তবে তার সামনে পরলো একজন মুখোশধারী ব্যক্তি, যার নাম আরাফ।
দাঁত কিড়মিড় করে মৌরিন এর দিকে তাকিয়ে আছে আরাফ, রাগে ফুঁসছে সে। হঠাৎ এমন রাস্তার মাঝে তাকে দেখেও ভড়কালো না মৌরিন, এমন কিছুর জন্য যেন প্রস্তুত ছিলো সে। এভাবে বাবা মায়ের সামনে ছোট হয়েছে, এত সহজে নিশ্চই ছেড়ে দেবেনা মৌরিন কে।

আরাফকে দেখেও না দেখার ভঙ্গিতে চলে যেতে নিলো মৌরিন,তবে আরাফ তার পথ আটকে দিলো। মৌরিন শান্ত কণ্ঠে বললো,
_”পথ ছাড়ুন।”

_”ছাড়বো না, কি করবে করো। খুব সাহস তাইনা তোমার? এবার আমিও দেখবো, তুমি কি করে পালাতে পারো।”

_”শেষবার বলছি, হাতটা সরিয়ে নিন।”

আরাফ এবার আরো বড় একটা কাজ করে বসলো, মৌরিন এর এক হাত শক্ত করে চেপে ধরে বললো,
_”আমিও বলছি, ছাড়বো না।”

মৌরিন একনজর হাতটার দিকে তাকালো,এরপর অগ্নিচোখে তাকালো আরাফের দিকে। এক ঝটকায় নিজের হাতটা ছাড়িয়ে ঠা*স করে চ’ড় মার’লো আরাফের গালে। আরাফ ঘুরে তার দিকে তাকাতে নিলেই মৌরিন একহাতে চেপে ধরলো তার শার্টের কলার,অন্যহাতে থাকা লাল রঙের পাউডার জাতীয় কিছু আরাফের চোখের উপর ছুড়ে মারতেই সেকেন্ড এর মধ্যে দুচোখ চেপে ধরে কাতরাতে শুরু করে আরাফ। বোঝা গেলো,ঐ পাউডার জতীয় বস্তুটি ছিলো মরিচের গুড়ো।

আরাফকে সামনে দেখেই নিজের নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য ব্যাগের ভিতর ছোট প্যাকেটে থাকা মরিচের গুড়ো বের করে হাতে রেখেছিল মৌরিন। এখন তার ই উপযুক্ত ব্যবহার করলো। আরাফের কলার চেপে ধরেই শান্ত কন্ঠে বলে,
_”আপনি ডাকটা খুব সম্মানের,আর তোমার প্রতি আমার বিন্দুমাত্র সম্মান অবশিষ্ট নেই। বলছিলে না, আমি কি করতে পারি? তাহলে যেনে রাখো মিস্টার আরাফ, আমি যা করতে পারি তার একভাগ ও এখনো তুমি দেখো নি। আমায় বাকিদের মতো দূর্বল ভেবে ভীষণ ভুল করলে।”

চোখে এতই জ্বালা করছে আরাফের,যে মৌরিন এর কথাগুলোও কানে নিতে চাইছেনা সে। তবে এখন এখানে থাকাটা যে তার জন্য সুখকর হবেনা,এটা বেশ ভালোই বুঝতে পারলো। তাই মৌরিন কলার চেপে ধরে রাখা হাতটা আলগা করতেই কোনোমতে পথ দেখে বাড়ির দিকে ছুটে পালালো সে।

তার দিকে দু সেকেন্ড তাকিয়ে নিজের হাতটা ঝেড়ে নিলো মৌরিন। উল্টোদিকে ফিরে তাকাতেই তার চোখ যায় কিছুটা ব্যাবধানে দাঁড়িয়ে থাকা একজন লোকের দিকে,পাশেই একটা বাইকও রয়েছে। মৌরিন সেদিকে তাকিয়ে বললো,
_”কে ওখানে?”

#চলবে?

[ছোট হয়েছে জানি,আজকে এটুকুই পড়ুন। কাল বড় পর্ব দিবানি, হ্যাপি রিডিং।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here