এক_ফালি_সুখ🌼 |১২| #তাসনিম_জাহান_মৌরিন সুহাসিনী

0
166

#এক_ফালি_সুখ🌼 |১২|
#তাসনিম_জাহান_মৌরিন সুহাসিনী
আবছা আলোয় কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই বাইকের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটিকে পরখ করে নিতে সক্ষম হয় মৌরিন। এটা আর কেউ নয়, তাকে এক মুহূর্তের জন্যও সহ্য না করতে পারা তূর্য। ভ্রুযুগল কিঞ্চিৎ কুঁচকে নিলো মৌরিন, তূর্যর বাড়ি এদিকে নয়। তাই এইসময় তার এখানে থাকারও কথা নয়।

চোর যখন চুরি করে ধরা পরে যায়,তখন তার মুখভঙ্গি আর বর্তমানে তূর্যর মুখভঙ্গির মাঝে একটু হলেও মিল রয়েছে। মৌরিন এর থেকে দ্বিতীয়বার কোনো প্রশ্ন না পেয়ে বুঝতে পারলো, মৌরিন তাকে চিনতে পেরেছে। এখন হয়তো প্রশ্ন করবে এখানে কি করছে?
এই রোডটা মেয়েদের জন্য কতটা ডেঞ্জারাস হতে পারে সেটা তূর্য নিজেই খুব ভালো করেই জানে। মৌরিন আত্মবিশ্বাস নিয়ে বেরিয়ে এলেও চিন্তা হচ্ছিল তূর্যর। কেন? সেটা জানা নেই। তাই ধীর গতিতে বাইক চালিয়ে মৌরিন এর পিছন পিছন আসছিলো সে। এতটুকু তূর্য নিজেও স্বিকার করতে বাধ্য,মৌরিন ভীষণ সাহসী মেয়ে। বাকিদের মতো নিজেকে দূর্বল মনে করেনা সে, তাই নিজেকে সামলে নেওয়ার ক্ষমতাও তার রয়েছে।
আরাফকে মৌরিন এর পথ আটকে দাড়াতে দেখে প্রথমে কিছুটা অবাক হয়েছিলো তূর্য, ভালো ঘরের ছেলেই তো মনে হচ্ছে তাকে। কিছুক্ষন পরে মনে হয়েছিল মৌরিন তাকে চেনে, বেশ আগ্রহ নিয়েই তূর্য দেখতে চাইছিল মৌরিন কি করে। তবে মৌরিন যা করলো এর জন্য সে খুব একটা প্রস্তুত ছিলোনা। তাই অবাক হয়ে কেবল তাকিয়ে ছিলো মৌরিন এর দিকে।

তূর্যর ধারণা বরাবরের মতো এবার ও ভুল প্রমাণিত হলো। মৌরিন তার থেকে চোখ সরিয়ে হাতব্যাগ এর চেইন টা খুলে পানির বোতলটা বের করলো, এরপর আবারো নিজের পথে হাটা শুরু করলো। এত অদ্ভুত কেন মেয়েটা? তার মনে কি কখনো কোনো প্রশ্ন আসে না? নিজে থেকে কখনো কোনো প্রশ্ন কেনো করেনা সে? তূর্যকে একবারের জন্যও জিজ্ঞেস করলোনা সে এখানে কি করছে?

এই ব্যবহারগুলো মাঝেমধ্যে অপমানের মনে হয় তূর্যের কাছে। মৌরিন কি তাকে ইগনোর করছে? যাকে দেখার জন্য মেয়েরা উৎসুক হয়ে থাকে সেই তূর্যকে দেখে সে এভাবে ইগনোর করতে পারে কি করে? নিজের ভাবনায় নিজেই ইতি টানে তূর্য, আজ তার অপমানবোধ হচ্ছেনা। তবে জানতে ইচ্ছে করছে মৌরিন এর এমন ব্যবহার এর কারণ।

বাইকে চেপে আবারো মৌরিন এর সঙ্গে যেতে লাগলো তূর্য, বাইক এতো আস্তে চালাচ্ছে যে কেউ বুঝতে পারবে ও কাউকে ফলো করছে। তবে মৌরিন যেহেতু একবার বুঝতেই পেরে গেছে,তখন আর লুকিয়েই বা লাভ কি? কয়েক মিনিট এভাবেই চললো, মৌরিন তার মতো হাটছে আর তূর্য ও তার প্রায় পাশেপাশেই বাইক নিয়ে চলছে। এবার আর নিজেকে আটকে রাখতে পারলোনা তুর্য, বাইক থামিয়ে মৌরিন এর উদ্দেশ্যে বললো,
_”মৌরিন দাড়াও..”

থামলো মৌরিন,তবে পিছন ঘুরে তাকালো না। তূর্য বাইকটা নিয়ে এবার ঠিক মৌরিন এর অপর পাশে এসে থামলো। দুজনের মাঝে দূরত্ব অনেকটা, রাস্তার একপাশে মৌরিন আর অন্যপাশে তূর্য। মৌরিন নিজের হাতে থাকা পানির বোতলটা খুলে কিছুটা পানি খেয়ে বললো,
_”বলুন”

_”তুমি আমাকে দেখে কিছু বললেনা কেন?”

মৌরিন বোতলের মুখ আটকাতে আটকাতে বলে,
_”কী বলবো?”

তূর্য বলার মতো কিছু খুজে পেলো না। মৌরিন বোতলটা ব্যাগে রেখে মৃদু হাসলো। তূর্যের দিকে তাকিয়ে বললো,
_”আপনি যে আমায় ফলো করছিলেন এটা আমি আগেই ধারণা করেছিলাম,তাই খুব বেশি অবাক হইনি।”

তূর্য ঘাড়ে হাত ঘষে বলে,
_”আমি মোটেই তোমাকে ফলো করছিলাম না।”

মৌরিন আবারো স্মিত হেসে হাটা শুরু করলো। এই মেয়ে পালটা একটা প্রশ্ন ও করবে না! তূর্য ও কিছু না বলে ধীরেধীরে বাইক চালিয়ে মৌরিন এর পাশাপাশি চলতে লাগলো।
কয়েক কদম এগিয়ে থামলো মৌরিন,থামলো তূর্য ও। মৌরিন সামনের দিকে তাকিয়েই গম্ভীর গলায় বললো,
_”আমার জন্য নিজের সময় নষ্ট করার কোনো দরকার ছিলো না। সময়ের অনেক দাম আছে।”

_”তোমার কথা শুনতে হবে আমায়?”

_”কেন আমার সঙ্গে আসছেন সেটাও জানি। তাই বলছি, আমায় নিয়ে ভাবার প্রয়োজন নেই। আমি নিজেকে প্রটেক্ট করতে জানি।”

_”সবসময় ত্যাড়াভাবে কথা না বললে চলে না?”

_”ত্যাড়া বা সোজা কোনোভাবেই কথা না বললে আমার জন্য আরো বেশি ভালো হয়।”

কথাটা বলেই আবারো হাটা শুরু করলো মৌরিন। তূর্যও তার সঙ্গে এগিয়ে বললো,
_”ব্যাগে নিশ্চই কারিকরি মরিচের গুড়ো রেখে দাওনি তুমি। আর এখানে যতটা আলো দেখছো সামনে গিয়ে ততটাও আলো পাবেনা।”

মৌরিন স্মিত হেসে বলে,
_”তো কি হয়েছে,আমার তো অন্ধকার ভালোই লাগে।”

তূর্য তার দিকে তাকিয়ে বললো,
_”সামনে গিয়ে কোনো বিপদে পরলে তখন?”

_”নাটক সিনেমার মতো হিরো এসে আমাকে বাঁচাবে না এটুকু তো জানি। আর আল্লাহ আমায় সুস্থ সবল রেখেছেন এখনো, হাত পা সবই রয়েছে। যেকোনো বিপদ থেকে কি করে বেঁচে ফিরবো সেটা নিয়েও আমাকেই ভাবতে দিন। আপনাকে খামোখা মাথা ঘামাতে হবেনা এই নিয়ে।”

একনজর তূর্যের দিকে তাকিয়ে এবার বেশ দ্রুতই পা চালিয়ে বাড়ির দিকে চলে গেলো মৌরিন। তূর্য তবুও খানিকটা পথ ওর পিছনে এসেছিল, মুখ থেকে আর টু শব্দটি ও বের করেনি মৌরিন। তূর্যও কিছু বলেনি, এই মেয়ের সাথে কথায় টিকে থাকতে পারবেনা সে এটুকু অন্তত বোঝা হয়ে গেছে।

______
ছুটে এসে এবার জ্যোতির হাত টেনে ধরলো নির্ঝর। থেমে যেতে বাধ্য হলো জ্যোতি। পিছনে না ঘুরেই বললো,
_”হাতটা ছাড়ো,যেতে দাও আমাকে।”

নির্ঝর ওর হাত ধরে রেখেই সামনে এসে বলে,
_”যেখানে খুশি যা, কিন্তু দিয়াকে নিয়ে কোনো বাজে কথা বলবিনা।”

_”বাবাহ,তোমার খুব গায়ে লাগছে তাইনা?”

_”লাগবেই তো,আমার হবু বউকে নিয়ে কোনো বাজে কথা শুনবো না আমি।”

_”কে তোমার হবু বউ?”

_”কে আবার? দিয়া, আরে আজ মানছে না তো কি হয়েছে। আমি ঠিক ওকে মানিয়ে নেবো। তাই নিজের ফিউচার ভাবিকে সম্মান করতে শেখ।”

জ্যোতি কিছুটা নরম স্বরে বললো,
_”তুমি সত্যিই ওকে ভালোবাসো?”

_”তা নয়তো কি আমি মিথ্যে বলছি?”

_”তোমার সাথে ওকে একদম মানায় না এটা কি বুঝতে পারছো না?”

_”কেন মানাবে না শুনি? আমি কি দেখতে খারাপ নাকি?”

_”আরে বাবা,তুমি দিয়ার চেয়ে ভালো মেয়ে ডিজার্ভ করো।”

_”ওর চেয়ে সুন্দরি মেয়ে আমার দরকার নেই ভাই।”

জ্যোতি বিরক্তির ভাব নিয়ে বললো,
_”তূর্য ভাইয়ের বাতাস লাগলো নাকি তোমার?”

_”মানে?”

_”তুমি আবার কবে থেকে সৌন্দর্যের পিছনে ঘোরা শুরু করলে শুনি? সুন্দর হলেই যে সে ভালো হবে এমন তো কোনো কথা নেই।”

নির্ঝর জ্যোতির কথা কানে না নেওয়ার ভাব নিয়ে বললো,
_”জ্ঞান দিসনা তো।”

_”বেশ, দেবোনা জ্ঞান।”

দু কদম এর বেশি এগোতে পারলো না জ্যোতি কারণ নির্ঝর এখনো তার হাতটা ছাড়ে নি।

_”আরে আবার কোথায় যাচ্ছিস?”

_”জাহান্নামে যাচ্ছি, যাবে?”

_”আচ্ছা তুই দিয়াকে সহ্য করতে পারিস না কেন বল তো।”

জ্যোতি চোখ বন্ধ করে রাগী নিঃশ্বাস ছেড়ে নির্ঝর এর সামনে আঙুল উঁচিয়ে বললো,
_”আর একবার দিয়ার নাম নিলে তোমাকে আমি..”

নির্ঝর ভ্রু কুঁচকে ওর আঙুলটা নামিয়ে দিয়ে বললো,
_”কেন বলবনা? আরে তোর কাছে না বললে কার কাছে বলবো বল তো?”

_”যাকে খুশি বলো,আমাকে কিছু বলবে না এই নিয়ে ব্যাস।”

নির্ঝর কিছু বললো না, জ্যোতি তার দিকে তাকিয়ে ভেংচি কেটে বললো,
_”আর ঐ মেয়েও না কখনো তোমার প্রপোজাল এক্সেপ্ট করবে না মিলিয়ে নিও। তখন আবার আমার কাছে এসে বলোনা যেন ‘জ্যোতি,আই কান্ট টলারেট দ্যাট। প্লিজ গিভ মি সাম সান্ত্বনা।”

শেষের কথাটা কিছুটা অভিনয়ের ভাব নিয়ে বললো জ্যোতি। আর নির্ঝর সরু চোখে তাকিয়ে কেবল তাকে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো।

#চলবে?

[তূর্যর মনে কি চলছে বলুন তো?
হ্যাপি রিডিং।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here