(১)
(❌কপি করা নিষেধ ❌)
”প্রিন্সিপাল স্যার থার্ড ইয়ারের একটি মেয়েকে ডেকে পাঠিয়েছেন ম্যাম।”
” ড. মি. তানভীর খান?”
“জি ম্যাম।”
অফিসিয়াল ফাইলে গুরুত্বপূর্ণ একটি আর্টিকেল দেখছিলেন মিসেস নিতু ইসলাম। হাতের কলমটা টেবিলে রেখে সরাসরি পিয়নের দিকে তাকিয়ে তিনি প্রশ্ন করেন। পিয়ন উত্তর দিতেই তিনি ঠোঁট জোড়া ”চ” আকৃতির করে নেন। তানভীর খান কোনো স্টুডেন্টকে কেন ডেকে পাঠাবে? তাও আবার মিসেস নিতু ইসলামের ডিপার্টমেন্টের! কোনো প্রয়োজন হলে তাকেই জানাতেন। ডেকে পাঠালেন কেন হঠাৎ? নিশ্চয় কোনো বড়সড় ব্যপার।
” কি নাম?” মিসেস নিতু ইসলাম পিয়নকে প্রশ্ন করেন।
” লাবিবা ম্যাম।”
মিসেস নিতু ইসলামের মুখাকৃতি আগেই স্বাভাবিক হয়ে গেছে। তবে নামটা তাকে এতোটাই চমকায় যে ভ্রু দুটো কুঁচকে বক্রাকৃতি ধারণ করে। লাবিবা নাম তার। লাবিবা অর্থ জ্ঞানী,চালাক হলেও আদতে সে একজন কিউট, আবেগী , বোকা এবং ইন্টারেস্টিং একটি চরিত্র,কখনো সখনো উড়নচন্ডী। তার এই স্বভাব গুলো সম্পর্কে গত তিন বছর ধরেই একটু একটু করে অবগত হয়েছেন মিসেস নিতু ইসলাম। ডিপার্টমেন্টের হ্যাড হবার সুবিধার্থে সিনসিয়ার গার্ডিয়ান যারা আছেন প্রথমে তার সাথেই কথা বলতে আসেন। সেই সুবাধে ইসমাইল মন্ডলও এসেছিলেন মেয়েকে নিয়ে তার নিকট। পর পর কয়েকবার এসেছেন। বছর খানেক লাবিবাকে স্ট্যাটিস্টিক্সও দেখিয়ে দিয়েছেন আলাদা ভাবে উনার অনুরোধে। হটাৎ করে তানভীরই কেন ডেকে পাঠালো লাবিবাকে? মেয়েটা কি কোন অঘটন ঘটিয়েছে? আদতে এই মুহূর্তে লাবিবাকে নিয়ে অঘটন ছাড়া অন্য কিছু মাথায় আসছেনা মিসেস নিতু ইসলামের। সব সময় না হলেও অঘটন ঘটন পটিয়সী বলা যায় এই মেয়েকে। চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন নিতু ইসলাম।চোখ থেকে পাওয়ারফুল চশমাটা নামিয়ে হাক ছাড়লেন,
” মিলন…এই মিলন? ”
সেকেন্ড ইয়ারের ফর্ম ফিলাপ চলছে। মিলন রেজিঃ কার্ড জমা নিচ্ছিলো স্টুডেন্টদের কাছ থেকে। চেয়ারম্যান ম্যামের ডাক শুনে তাড়াহুড়ো করে পেপার্স গুছিয়ে অফিসে আসে।
” ম্যাম ডেকেছিলেন?”
” হ্যা। এক্সাম হলে গিয়ে লাবিবাকে বলো এখনই একবার প্রিন্সিপাল স্যারের রুমে যেতে।”
সামনে দাঁড়ানো প্রিন্সিপালের পিয়নকে দেখে মিলন বিরক্ত হয় মনে মনে। পিয়নকে দিয়ে ডেকে পাঠালেই তো হতো। শুধু শুধু তাকে হয়রানি কেন করাতে হবে ? সে এক্সাম হলের দরজার সামনে গিয়ে উঁকি দেয়,
” এইখানে লাবিবা কে? ”
লাবিবার সময় নেই উঠে দাঁড়ানোর। সে ডান হাত দিয়ে লিখছে তাই বাম হাত উপরে তুলে। মিলন দেখে অস্ফুটে উচ্চারণ করে,
“ওহ!”
লাবিবার এই শব্দটুকু ভালো লাগে না। লেখা বাদ দিয়ে সে উঠে দাঁড়ায়। সাথে সাথে প্রশ্নপত্রটা উড়ে সামনের বেঞ্চের নিচে গিয়ে পড়ে। লাবিবাকে বলতে হয় না। নাকিব দেখা মাত্রই তুলে দেয়। লাবিবা সেদিকে আর গুরুত্ব না দিয়ে মিলনকে বলে,
” মামা! আপনি মাসে কতবার আমার নাম ভুলে যান? ”
” ঐতো আর কি মনে থাকে না।”
” আমি কালই আপনার জন্য কমপ্লেন মেমোরি চার্জার নিয়ে আসবো। হাজার টাকার একটা নোট ছাড়েন। দাম দিয়ে যা থাকবে বাকিটা আমার টিপস।”
মিলন জোরপূর্বক হেসে বলে,
” তার আগে প্রিন্সিপালের রুম থেকে ঘুরে আসো মা। তোমার ডাক পরেছে।”
” কেন? আমি কি করেছি?”
” জানিনা। পিয়নের সাথে যাও। ”
লাবিবা গার্ডকৃত স্যারের দিকে তাকায়। স্যার তাকে আশ্বস্ত করে,
” তুমি যাও দেখা করে আসো। তোমার বাকি এক্সাম নেওয়ার ব্যবস্থা করবো।”
লাবিবা পিয়নের পিছু পিছু যায়। পিয়ন আগে প্রিন্সিপালের রুমে ঢুকে তারপর ঢুকে লাবিবা। ভেতরে স্যাররা ব্যতীত আরো তিনজন আছে। একজন কম বয়সী এবং দুইজন মধ্যবয়সী লোক। লাবিবা তাদের চিনে না। নাস্তা দেওয়া হয়েছে সবাইকে। খাওয়া দাওয়া দেখে লাবিবা একপাশে গিয়ে দাঁড়ায়। মনে মনে ভাবে, ভুল সময়ে এন্ট্রি নিয়েছে। আরেকটু পরে এলেই হতো।
” তোমার নামই লাবিবা?” প্রিন্সিপাল তাকে উদ্দেশ্য করে বলে।
লাবিবা মুচকি হেসে বলে,
” জি স্যার।”
” বিয়ে হয়েছে তোমার?”
” না স্যার। হলে তো দাওয়াত পেতেন।”
প্রিন্সিপাল তানভীর খান ভ্রু জোড়া কপালে তুলে ইন্টারেস্টিং একটা এক্সপ্রেশন দেয়। কথাটা একদমি বাড়তি কথা। স্টুডেন্টের সাথে এতোটা সুসম্পর্ক নয় যে বিয়ে হলে কলেজ স্টাফকে দাওয়াত করবে। তার উপর প্রিন্সিপাল স্যার! স্টুডেন্টসরা জমের মতো ভয় পায় তাকে। অথচ ভয় পাবার মতো ব্যাপার দু-চার বারের বেশি ঘটেনি। কলেজ পুকুরে দু বছর আগেও সন্ধ্যার পর প্রেমিক প্রেমিকার আড্ডা বসতো। অনৈতিক কাজ কারবারও হতো। একবার প্রিন্সিপাল স্যার যে খেলা দেখালো! এক জুটিকে ধরে পিঠে চাবুক মারলো তো মারলোই তাঁদের বিয়েও দিয়ে দিলো। যদিও মেয়েটা বিবাহিত ছিলো! তার স্বামীই ক্লাসমেটের সাথে স্ত্রীর পরকিয়া সম্পর্কে প্রিন্সিপালের নিকট নালিশ দিয়েছিলো। তারপর একবার তো ভি.সির সাথে প্রব্লেম হলো। কী জানি এমন হলো প্রিন্সিপালের জন্য ভি.সি এই কলেজের আঙিনাই ছেড়ে দিলো। আরও কতো ঘটনা! এই মুহূর্তে লাবিবার মনে পড়ছেনা।
অচেনা মধ্যবয়স্কদের একজন জিজ্ঞেস করল ,
” তোমার বাসা কোথায়? ”
“মেলান্দহ।”
” কয় ভাইবোন তোমরা?”
” আমি একাই।”
“বাবা কি করেন?”
এইবার লাবিবার ভয় হয়। হুটহাট এভাবে প্রশ্ন করার মানে কি?পরিচয় জেনে ধরে নিয়ে যাবে নাতো? মুক্তিপণ চাইবে? কত ? লাবিবার মুখটা শুকিয়ে যায়। ভেতরের ভয়টা চেহারায় ফুটে উঠে। কম বয়সী যুবকটি বিষয়টা খেয়াল করে বলে,
” হেই! তুমি কি ভয় পাচ্ছো? ”
তানভীর মাথা নাড়ায়। সিরিয়াস মুডে বলে,
” থার্ড ইয়ারে পড়ে ভয় কিসের? এতো বড় মেয়ে!”
কিন্তু লাবিবা ভয় পাচ্ছে। ঠোঁট দুটো স্পাউট করে চেপে রেখেছে। দেখতে বেশ লাগছে। যুবক মুচকি হাসে। তানভীর লাবিবার দিকে তাকিয়ে বলে,
” লাবিবা তুমি ভয় পেও না। আমি তোমার একটা পিক্স নিবো। টেনশন নিও না এই পিক্স কোথাও যাবেনা। আমি তোমার সাথে এই ব্যাপারে পরে কথা বলবো। ”
আবার পিক্স! বড় কোনো ডিলারের হাতে যাচ্ছে নাতো? খবরের কাগজে একের পর এক কুকর্মের নিউজ পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু এখানে তো স্যার আছেন।স্যার তো উনাদের সাথে যুক্ত থাকবে না। এতো গুলো মানুষের মধ্যমনি লাবিবা আর স্যারকে কিছু জিজ্ঞেস করতে পারলেন না।
এক্সাম শেষে লাবিবার জন্য বাইরে অপেক্ষা করছিলো নাকিব, স্মৃতি, উর্মিলা। লাবিবাকে ঘিরে ধরলো।
” এই প্রিন্সিপাল তোকে কেন ডাকলো রে? কি বললো?”
“নাম ,ধাম, পরিচয় জিজ্ঞেস করলো। তারপর ছবিও নিলো। সেখানে অচেনা তিনজন লোকও ছিলো।”
নাকিব হাসতে হাসতে বললো,
“দোস্ত তু তো গায়া! এর আগেও স্যার দুইটা বিয়ে পরিয়েছে এবং এই কলেজেই পরিয়েছে। স্যাররা তো খোঁজে স্মার্ট মাইয়া। জাহাঙ্গীর স্যার কি বলে শুনসনাই? সুন্দরী মেয়ে খুঁজে রে সুন্দরী মাইয়া। ”
” হয়তো কেউ তোর কথা বলছে বা দেখতে আসছে সেজন্য ডেকে নিছে। হতে পারে না? কোন সিনিয়র ভাই যে তোকে দেখেছে তারপর বাসা থেকে লোক পাঠিয়েছে আবার এমন ও হতে পারে প্রিন্সিপালের পরিচিত সেজন্যই স্যারের মাধ্যমে ব্যাপারটা এগিয়ে নিচ্ছে। বাসায় তো খবর যাবে। শুনে জানাস কি অবস্থা।”
লাবিবা মুচকি হাসে। মাথা নাড়িয়ে বলে,
” আরে না। আব্বু আমাকে এখনই বিয়ে দিবে না।”
#ভালোবাসার_কাব্য_গাঁ