#ভালোবাসার_কাব্য_গাঁথবো
(১৮)
শীতল বুকে উষ্ণ ছোঁয়া পেয়েই ঘুম ছুটে গেছে তানভীরের। চোখ বুজেই অস্তিত্ব যাচাই করলো। ভীষণ মসৃন একটা পা। আলতো হাতে কয়েকবার ছুঁয়ে দিলো। তার বুকে কার পা? ভেবেই চোখ মেললো। সম্মুখে লাবিবাকে দেখে হকচকিয়ে গেলো। বত্রিশটি বছর একা ঘুমানো মানুষটা যখন ঘুমের মাঝে কোন নারী অস্বিত্বের ছোঁয়া পায় তখন ঘাবড়ানো খুব একটা আশ্চর্যের ব্যপার নয়। তানভীরের ক্ষেত্রেও ঘটলো ঠিক একই ব্যপার। একপা বুকে সেটিয়ে আরেকপা গুটিয়ে পেছনে মাথা হেলে বুক উঁচু করে কোমড় বাঁকিয়ে অদ্ভুদ ভঙ্গিতে শুয়ে আছে লাবিবা। উড়নাটাও পড়ে আছে হাতের নিচে। এইভাবে লাবিবাকে দেখে তানভীরের যায় যায় অবস্থা! তানভীর ডাকলো,
” লাবিবা! এভাবে শুয়েছো কেন? সোজা হও। পরে আর কোমড় সোজা করতে পারবেনা। ব্যথা করবে। ”
সাড়া নেই। আবার ডাকলো,
” লাবিবা।”
গভীর রাতের শুনশান নীরবতার মাঝে ঘন নিশ্বাস আবিষ্কার করলো। গভীর ঘুমে লাবিবা। তানভীর আর ডাকলো না। ঘড়িতে সময় দেখলো। তার বাঁধা দুই ঘণ্টা অনেক আগেই ইতি টেনেছে। পাহারাদার ই যদি ঘুমায় তাহলে তো হলোই। উঠে আর কাজ নেই। বালিশে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করলো। ঘুমানো যাক আবার। ঘুম কি আদৌ আসবে। বুকের ডানপাশটায় এখনো ছুঁয়ে আছে লাবিবার পা। তানভীর পা টা হাতের মুঠোয় পুরলো। শক্ত করে চেপে ধরলো বুকের মাঝে। তারপর ঘুমানোর চেষ্টা করলো। এভাবে অনেক সময় অতিবাহিত হলো ঘুমানোর নাম নেই। তানভীর নিজেকে দমিয়ে না রেখে এবার ছটফট করলো। আলতো ভাবে পা টা চেপে ধরে টেনে নিজের কাছে আনলো। ঠিক ভাবে শুইয়ে মাথার নিচে বালিশ দিয়ে দিলো। চুল গুলো একপাশে করে নিলো। বিছানা ছাড়লো। ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারে কিছু একটা খুঁজলো। বক্সের মাঝে পেয়েও গেলো। রাবার ব্যান্ড। একপাশে লাবিবার চুলগুলো মুচরে ব্যান্ড লাগিয়ে ঝুটি করে দিলো। গায়ের উপর কম্বলটা টেনে দিলো। অপেক্ষা না করে সেই কম্বলে নিজেকেও মুড়িয়ে নিলো। আঙুলের ভাজে হাত নিয়ে ছোট্ট করে চুমু দিয়ে সেও ঘুমিয়ে পরলো।
সকালে সাবিনার চেঁচামেচি তে লাবিবার ঘুম ভাঙলো। আটটা বাজতে চললো অথচ ঘুম ভাঙার নাম নেই। ঘুম ভেঙে বালিশে নিজেকে দেখে অবাক হল। তানভীরের কথা মনে পড়তেই লাফ দিয়ে উঠলো। রুমে তানভীর নেই। লাবিবার বালিশের পাশে আরেকটা বালিশ। গায়ে কম্বল! রাতে তো তার গায়ে পা দিয়ে ঘুমিয়ে পরেছিল। হায় আল্লাহ! ছি ছি! দেখে ফেললো।উড়না কই? খাটের এক কোনায় খুঁজে পেলো। অর্ধেক ফ্লোরে গড়াগড়ি খাচ্ছে। এই মুখ এখন তানভীরকে কিভাবে দেখাবে? ইসস লজ্জা! কয়েক সেকেন্ডের লজ্জার সাথে মেজাজ টাও বিগড়ে গেলো। দুটোর কম্বিনেশনে এখন কান্না চলে আসলো। বেটা আমাকে ফ্রিডমই দিয়েছিস আবার বউ নিয়ে ঘুমানোর শখ জাগে কেনো? রাগে গজ গজ করতে করতে উঠে ওয়াশরুমে ছুটলো।
লাবিবা ডাইনিং এ যেতেই তানভীরকে বসা দেখলো। কুটুস কুটুস করে আপেলে কামড় দিচ্ছে। রাতে থুতনিটা আপেল ভেবে কামড়ে দিয়েছে। আর এখন সত্যকারের আপেলে কামড় দিচ্ছে। তানভীর তাকাতেই লাবিবা চোখ সরিয়ে নিলো। কিছুতেই চোখে চোখ পড়া যাবেনা। লাবিবা লজ্জা পাবে না? লাবিবা বসতেই সাবিনা এসে উড়নায় টান দিল।
” কি ব্যাপার? উড়না দিয়ে মুখ ঢেকে আছিস কেন?”
” ব্রণ উঠেছে।”
উত্তর দিয়েই লাবিবা আড়চোখে তানভীরের দিকে তাকালো। তানভীর তার দিকেই তাকিয়ে আছে। কি ভুলটা করেছে এবার টের পাচ্ছে। সাবিনা বকা দিলো,
” ব্রণ উঠেছে তাই বলে ঐভাবে মুখে কাপড় দিয়ে রাখবি?”
” উহু সরাবোনা।”
” এসব কি? জামাই কি ভাববে? উড়না সরিয়ে তাড়াতাড়ি খা। জামাই চলে যাবে। এগিয়ে দিয়ে আয়।”
“এমনি ঠিক আছি। ”
“এইভাবে কেউ খায় নাকি? সরা উড়না সরা। ”
সাবিনা উড়নায় হাত দিয়ে টানতে গেলে তানভীর বাগড়া দেয় ।
” আম্মু ওর যখন এভাবে খেতে ইচ্ছে করছে। খাক না!”
” তুমি বাবা ওকে এভাবে আস্কারা দিও না। এমনিতেই আমার মেয়ে ভালো। কিন্তু পরে দেখবে মাথায় চড়ে নাচবে। আরেকটা ব্রেড নাও না বাবা। ”
” না। ওকে,আমার খাওয়া প্রায় হয়ে গেছে। ”
এ যাত্রায় লাবিবা বেঁচে যায়। ঐভাবেই মুখ ঢেকে ঢেকে খেয়ে নেয়। রুমে এসে দেখে আটটা পনেরো মিনিট। উনি কি এখনি বেরিয়ে যাবে? ভেবেই বারান্দায় উকি দেয়। তানভীর কার সাথে যেনো কথা বলছে। কথায় কথায় মাথা দুলাচ্ছে আর বলছে,
” হ্যা হ্যা একটু লেট হবে।”
লাবিবাও নিজের ফোনটা নিয়ে আয়েশ করে বসে। তানভীরের দেড়ি হতে থাক ততোক্ষনে একটু ইউ টিউব থেকে ঘুরে আসা যাক ।
” সারাদিন কি দেখো ফোনে?”
মাথা তুলতেই দেখে তানভীর দাঁড়িয়ে। বারান্দা থেকে চলে আসছে। বিনা বাক্যে লাবিবার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নেয়। লাবিবা চেঁচিয়ে উঠে,
” আআ আমার ইউটিউব মামা!”
” কি দেখো ইউটিউবে ? বলিউড মুভি? রোমান্স! বুকে পা দিয়ে কিভাবে পার্টনার কে আকর্ষন করে সেসব? বেয়াদব!”
এই ভয়টাই পাচ্ছিলো। লাবিবা প্রতিবাদ করে,
” এই না! আমি ভালো মেয়ে।”
“আমি কখন বললাম তুমি খারাপ মেয়ে? ”
” আমি ঐসব খারাপ ভিডিও দেখিনা। খুবই ভালো মেয়ে আমি।”
” আমি জানি তুমি ভালো মেয়ে। খারাপ হবার চান্স নেই। আমরা যে কাজগুলো কে খারাপ বলি সেই কাজগুলো করলেও এখন তুমি খারাপ হবেনা। একটা নির্দিষ্ট সময়ে খারাপ কাজগুলোও ভালো কাজের শীর্ষে থাকে। কখন জানো? ”
” কখন?”
” যখন তুমি ম্যারিড পার্সন। ”
” আমি ম্যারিড হলেও ঐসব দেখবো না। ”
“সে তুমি দেখতেই পারো। আমি মানা করছি না। এই তুমি ভুজপুরীর ফ্যান নাকি? ”
“একদম না। ”
তানভীরের কপালে চিন্তার বলি রেখা দেখা যায়।
” তাহলে ভুজপুরী নায়িকাদের মতো ফিগার বানিয়েছো কেন?”
” আপনি না একটা কলেজের প্রিন্সিপাল? কি দেখেন এসব? আসতাগফিরুল্লাহ! ”
” কোথায় লেখা আছে প্রিন্সিপালরা ভুজপুরী দেখতে পারবেনা? এই সত্যি নাকি? দেখি সার্চ করে। ”
” কি ?”
” তোমার ফোন। ”
” এই না! দিন আমার ফোন। আমি ভালো মেয়ে । আমি এসব দেখিনা। ”
” তোমাকে বিশ্বাস হচ্ছে না। রাতে যা দেখালে। তারপর থেকে তো আরও না। ”
” কি দেখিয়েছি আমি?”
” ভিডিও দেখে যা শিখেছো তাই। ”
“আমি ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম। আমি কিছুই করিনি। ”
” ঘুমের মাঝেই তো।”
লাবিবা এবার ভ্যা করে কেঁদে দিলো। সত্তর পার্সেন্ট রিয়েল হলে ত্রিশ পার্সেন্ট ই অভিনয়। তানভীরের হাত থেকে ফোনটা নেবার জন্য উঠে পড়ে লাগলো। পারলো না। তানভীর লাবিবার হাত দুটো মুঠোয় পুরে নিলো। তানভীর গ্যালারিতে ঢুকে লাবিবাকে সাবধান করলো,
” একদম পাসরা-পাসরি করবেনা। পরে আবার ব্যথা দিয়ে দিবো। থুতনির মতো দাগ হবে।”
লাবিবা শুনলো না। হাত ছাড়াতে আপ্রাণ চেষ্টা করলো। হাত লাল টকটকে হয়ে গেছে দেখে আরো ছটফট করল। তানভীরের সেদিকে খেয়াল নেই। গ্যালারিতে যা দেখলো তাতে একটু সিরিয়াস ই হয়ে গেলো। একশ আটত্রিশটি মুভি। টাইটানিক, এলিজাবেথটাউন, হিচ,দ্যা মাউন্টেইন বিটুইন আস ! পড়ার পর তানভীর আর এগোনোর সাহস পেলো না। এই মেয়ে আগেই গোল্লায় গেছে বেশ বুঝতে পারছে। থমথমে গলায় বললো,
” তো এসব দেখা হয়!এর বাইরে আর কি দেখো শুনি?”
” স্যার আমার ফোন দিন। এখন না দিলে আমি চেঁচাবো। আম্মু! আম্মু! আম্মু! ফোন দেয়না আমার। বাঁচাও আমাকে আম্মু।”
সাবিনা , ইসমাইল অনেকক্ষন থেকেই লাবিবার চিৎকার শুনছে। ইসমাইল বললো,
” যাও একটু দেখে আসো।”
” কি বলো? জামাই ঘরে। তোমার মেয়ে চিল্লালেই যেতে হবে?”
” তোমাকেই তো ডাকছে। আমার সাথে তো কথাও বলেনা। ”
সাবিনা নিজের রুম থেকেই জবাব দিলো,
” কি হয়েছে? লাবিবা?”
আর জবাব নেই। তানভীর লাবিবার হাত ছেড়ে মুখ চেপে ধরেছে। দাঁতে দাত চেপে বলে,
” চুপ থাকো। মারবো না তো। ”
” আপনি মারার থেকেও বেশি টা করেন। হাতে না মেরে মুখে মারেন।”
” আবার ইচ্ছে করছে নাকি খেতে কামড়? ”
লাবিবা চুপসে যায়। তানভীর আয়েশ করেই প্রত্যেকটা ব্রাউজিং চেক করতে থাকে। লাবিবা জোর করে হেসে বলে,
” কিছুই পাবেন না। আর ঐসব মুভি ছোট ছোট মানুষরা দেখা শেষ। আমিতো অনেক বড় হয়ে দেখছি।”
তানভীর স্কল করতে করতেই লাবিবার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসলো। সাথে সাথে লাবিবা ফোনের স্কিনে তাকালো। সর্বনাশ! এগুলো কোথায় পেলো? এ যাবৎ যত রোমান্স ক্লিপ গুলো দেখেছে সব শো করেছে। কিন্তু লাবিবাতো সব ডিলিট করে দিয়েছিলো। ক্রমের হিস্ট্রি তে যে এসব পড়ে থাকবে সেসব কে জানতো? লাবিবার অবস্থা দেখে তানভীর লাবিবার কাধে হাত রাখে।
” চাপ নিও না। তুমি তো ভালো মেয়ে। খারাপ হতেই পারো না। ”
শেষ। মান ইজ্জত এখানেই সব শেষ। লজ্জায় আর মুখ তুলতে হয়না। এবার তানভীর লাবিবার মাথায় হাত রাখে। আদুরে স্বরে বলে,
” লুকাতে হবেনা। তুমি যদি এর থেকেও আরো ডিপ কিছু দেখতে চাও আমাকে বলো। তোমার ইচ্ছা পূরণ করা আমার দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে তাইনা?”
লাবিবার কথাই ফলে। এই লোক হাতে নয় মুখেই মানুষের ইজ্জত মেরে দেয়। অপমানে, লজ্জায় লাবিবা সেখানেই শরীর ছেড়ে দিলো।
একটুখানি ছোট। কাল বড় করে দিবো ইনশাল্লাহ। ডোন্ট মাইন্ড।