#ভালোবাসার_কাব্য_গাঁথবো
(১২)
গেইটের বাইরে ইসমাইলের সাথে চারজন লোকের রেষারেষি চলছে। লোকগুলোকে লাবিবা চেনে। মুন্সি বাড়ির লোক। মুন্সি বাড়ির ছেলের জন্য লাবিবাকে গত চার বছর থেকে চেয়ে আসছে। এখন নাকি ছেলেটা ব্যবসা করে অনেক টাকার মালিক হয়েছে। ঢাকায় বাড়িও করেছে। সেগুলোই ইসমাইল কে বোঝানোর চেষ্টা চলছে। ইসমাইলের এক উত্তর। আমার মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। আমার জবানের একটা দাম আছে। কিছুতেই কথা বরখেলাপ করতে পারবোনা।
লাবিবা ঐ মুহুর্তে সেখানে উপস্থিত হয়। লাবিবাকে দেখেই একজন বলে,
“এইটাই ইসমাইলের মেয়ে লাবিবা। ”
” মাশাআল্লাহ। মেয়ে তো আসলেই অনেক সুন্দরী। ”
ইসমাইল কথা শুনেই লাবিবাকে চিহ্ন করলো। ইশারায় বললো চলে যেতে। লাবিবা বুঝলো না। বরং লোকগুলোর দিকে হা করে রইলো কাহিনী কি দেখার জন্য।
” হা করে দাঁড়িয়ে আছো কেনো? যাও ভেতরে।”
ইসমাইল রেগে মেগে ধমকে দিলো। ধমক খেয়েই লাবিবা দৌড় দিলো বাড়ির ভেতরে।
জল্পনা কল্পনা চেষ্টা অনেক করেও কোন ফল পাওয়া গেলো না। সবাই রেগে গেলো উল্টো লাবিবার দিকে। ঘরের দরজা বন্ধ করে হাওমাউ করে কাদঁলো। ফাহাদের সাথেও কথা বললো না। একবার নিজেই ফোন দিয়ে ফাহাদ কে জানালো তার সম্পর্ক আছে। আর সে তার বয়ফ্রেন্ড কে অসম্ভব ভালো বাসে। লাবিবার কথা ফাহাদ যেন গায়েই তুললো না। উল্টো হেসে উড়িয়ে দিলো। লাবিবাকে বোঝালো,
” দেখো তুমি সুন্দরী মেয়ে তোমার বয়ফ্রেন্ড থাকবে এটা স্বাভাবিক। বিয়ের আগে দুই একটা বয়ফ্রেন্ড থাকা ভালো। আমি ঐসবে মাইন্ড করবোনা। বরং এখন থেকে তুমি আমাকে নিজের বয়ফ্রেন্ড হিসেবে মেনে নাও। তারপর আমাদের হয়ে যাবে লাভম্যারেজ। মেডাম আমি কিন্তু আপনার দিওয়ানা হয়ে গেছি। আপনি রাগ করলেও পাগল হই, ঝাঁঝ দেখালেও পাগল হই হাসলেও পাগল হই। নাছোড়বান্দা করে ছেড়েছেন আমায়।”
লাবিবা বুঝলো এ বান্দা তার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। কোন উপায় কি নেই? এর মাঝে যেনো মুক্তিদূত হয়েই এলো নাকিবের ফোন।
“কোন উপায় খুঁজে পেলি?”
“না দোস্ত। ”
“তাহলে পরশু বিয়েটা করছিস ই । ”
“পারবোনা। ”
“কত উপায় আছে! পালিয়ে যা। ”
“আমি কি অবুঝ? নাকি টিনেজ? বাবা মার একমাত্র সম্বল আমি। কোথায় যাবো? মান সম্মান কিছু কি থাকবে? ”
“দোস্ত একটা হেল্প করতে পারি। যদি তুই রাজি হস।”
“হব। বল। ”
“বদনাম করবি? নিজের!”
“কি বলিস?”
“সম্মান টা বিসর্জন দে। তারপর দেখবি কিছু দিনের মাঝেই পরিস্থিতি নরমাল হয়ে উঠবে। ”
“পাগল হয়ছিস?”
“বিশ্বাস আছে তো আমার উপরে?”
“হ্যা। ”
“তাহলে চিন্তা কর।”
“এছাড়া কোন উপায় নাই?”
” না। ”
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা বেলায় জাভেদ ফাহিমের হুয়াটসএপ এ পর পর কয়েকটা ছবি যায়। ছবিতে স্পষ্ট লাবিবার সাথে একটা ছেলের খুব ক্লোজ কিছু ছবি। সীন করা মাত্রই আনসেন্ড করা হয়। বাপ বেটা এতোটাই অবাক হয় যে সস নেবার কথা মাথাতেও থাকেনা। পর পর মেসেজ আসে। যেখানে স্পষ্ট লেখা,
” আপনি যে মেয়েকে ঘরের বউ করতে চান উনি ইতোমধ্যে একজনের বউ আর তার সাথে অবাধ মেলামেশা রয়েছে। আপনার টাকা দেখে বিয়ে করতে চাইছে। বাঁচতে চাইলে এখুনি সরে আসুন ফাঁদে পড়ার আগে।”
ফাহাদের মাথা হ্যাং হয়ে যায়। কি সব দেখলো সে! প্রেম করবে কাছে যাবে এটা ঠিক ছিলো। কিন্তু বিবাহিত মেয়ে তার উপর টাকা দেখে ফাঁদে ফেলতে চাইছে ! বিশ্বাস করতে চায়না সে। সাথে সাথে টেক্সট পাঠায়,
“আপনি কে?”
রিপ্লাই আসে,
“আপনার শুভাকাঙ্ক্ষী। ”
এতোবড় একটা ভয়াবহ কথা কিভাবে মেনে নিবে? তার উপর যদি তাই সত্যি হয় তাহলে লাবিবাই কেনো আগে জানাবে যে তার রিলেশন আছে? ছবি গলো আবার না দেখতে পারলেও তখনই খেয়াল করে দেখেছে যে ঐটা লাবিবাই ছিলো কিন্তু ছেলেটার মুখ দেখা যাচ্ছিল না। আর একদমই ইডিট লাগছিল না।
বিয়ের আগের দিন এরকম কিছু দেখবে ভাবতেও পারেনি।
জাভেদের মাথায় হাত। এ কি করলো সে? খোঁজে খোঁজে এতো ইনোসেন্ট একটা মেয়েকে বউ করে আনতে চাইলো সেই মেয়ে তলে তলে এতো! না না না ভালো মানুষ আর পৃথিবীতে নাই। এই মেয়ে বিয়ের পর কি করবে? সেজন্য ই তো এতো এতো শর্ত মেয়ের বাপের। তার ছেলেটাকে ঠকিয়ে প্রথম স্বামী নিয়ে ফন্দি এটেছে। এই বিয়ে দিয়ে অনর্থ কোনভাবেই করতে পারবেনা। কিন্তু ছেলেটাকেও তো কিছু বলতে পারবেনা। ছেলেটা তার মেয়েটার প্রেমে গলে গেছে। এই মুহূর্তে না করলেই কি শুনবে? লোক জানাজানি হয়ে গেছে । হায় হায় রে আমার মান সম্মান সব গেলো রে। চিন্তায় কপাল চাপড়াতে লাগলো। তার স্ত্রী বুদ্ধি দিলো,
” এতো চিন্তা করছো কেন? বিয়েটা হয়ে যাক ঘরে বন্দি করে ফেললেই তো হলো।”
” না গো ফাহাদের মা। অন্য বউদের মতো এই মেয়ের পরিবার দূর্বল না। কিছুতেই ছেড়ে দিবে না। তার উপর একখানাই মেয়ে। ঝামেলা পাকাবে উনিশ থেকে বিশ হলে। এর বাপের কতবড় হাত তুমি জানো না। ”
“তাহলে আমার ছেলের কি হবে?”
“জানিনা। বড় মুখ করে তো আনলাম।ছেলে আমার দিওয়ানা হয়ে গেছে । এখন না করলেও ছেলেই বা শুনবে কেন? মুখ মুখেই বা না করবো?”
চিন্তায় চিন্তায় রাত পার হয়ে যায়।এদিকে ফাহাদ ও বাবাকে কিছু বলতে পারছেনা কারণ তার কাছে প্রমান নেই।আবার জাভেদ ও ছেলেকে কিছু বলতে পারছেনা। দুজনের ভাবনাতেই সকাল গড়িয়ে যায়। বাড়ি সুদ্ধ লোক। জুম্মা বাদেই রওনা হয় মেয়ের বাড়ির উদ্দেশ্যে। ভেতরে ভেতরে চলে বিস্তর পরিকল্পনা।
লাবিবার সম্পূর্ণ ভরসা আছে নাকিবের প্রতি। আপাতত সে টেনশন ফ্রি হয়ে ঘুমুচ্ছে। বিগত কয়েকদিন ঘুমুতে পারেনি। বেচারা আজ সকালেই ঘুম ভেঙ্গে ছে। খেয়ে দেয়ে আবার ঘুমিয়েছে। সাবিনা এসে ডেকে গেছে কয়েকবার। উঠার নাম নেই। পুরো বাবি আয়োজনে গম গম করছে। এলাকায় চ্যায়ারম্যান মেম্বার সহ মুরুব্বি রাও এসেছে। লাবিবার দুই চাচার আত্বীয় স্বজনরাও বাদ যায়নি। সল্প পরিসরেই কাছের আত্মীয় দের নিয়ে বেশ জমকালো আয়োজন করা হয়েছে। কাজিন মহলের বোনেরা একসাথে এসে দরজায় ধাক্কা দেওয়া শুরু করেছে।
” লাবিপু উঠো। আজ তোমার বিয়ে। উঠো উঠো। তুমি কিভাবে ঘুমুচ্ছো? বিয়ের দিন কি কেউ এভাবে ঘুমোয়?”
সাবিনা বেশ ভয়ে আছে। মেয়েটা না জানি কি করে বসে। জেদ ধরে তো আছে ই। মেয়েদের বার বার ডাকতে ইশারা করছে। লাবিবা মেয়েদের কন্ঠ শুনে উঠে বসে। আড়মোড়া ভেঙে দরজা খুলে দেয়। এতো জন কে একসাথে দেখে বলে,
” কিরে? সবাই একসাথে কি? যা বাড়ি যা। আমার বিয়ে টিয়ে কিছু হচ্ছে না। ”
“তোমাকে কি জোর করে বিয়ে দিচ্ছে লাবিপু? বলছো যে বিয়ে হবে না।”
” ওদিকে তো বরের বাড়ির লোকজন চলে আসছে। আমি দেখে এলাম। ”
“কিহ? সত্যি? ”
“হ্যা।”
“এটা কিভাবে সম্ভব? এতো কিছুর পরেও এই ভ্যাবলা বিয়ে করতে চলে এসেছে? এখন আমার কি হবে? ”
দৌড়ে গিয়ে ফোন লাগায় উর্মিলার ফোনে।
” দোস্ত এই ভ্যাবলা তো বিয়ে করতে চলে আসছে। তোরা কি পিক গুলো সেন্ড করিস নি?”
” কি বলিস? পিক তো সেন্ড করেছি। মেসেজের রিপ্লাই ও দিয়েছি। তারপরেও কেন এলো?”
“জানিনা। আমি কিচ্ছু জানিনা। ”
“দাড়া নাকিব কে কল লাগাই।”
নাকিব ফোন তুলছে না। তিন বারের মাথায় কল ধরে।
“হ্যালো নাকিব।”
“হ্যা দোস্ত বল।”
“কই তুই?”
“জিলাপী খাই। আজকে মসজিদে জিলাপী দিছে। খাবি নাকি?”
“রাখ তোর জিলাপি। এতো পিন্চ মারলাম তার পরেও হারামজাদা টা বিয়ে করতে চলে আসছে। ”
“মাইরালা! হালায় সোজা খারাপ? বিয়াত্তা মাইয়া নিবো তারপরেও লোভ ছাড়ব না। ”
” কিছু একটা কর।প্লান তো ফ্লপ হলো। ”
“তোর বান্ধবীরে সারা শরীর কালি মাখি থাকতে বলতে পারিস না? এতো সুন্দর হবার কি দরকার ছিল? ”
“বাজে না বকে তাড়াতাড়ি আয়।”
” আসতাছি। চুলোয় যাক জিলাপী। ”
লাবিবাকে সাদা জামদানি পড়ানো হয়েছে। লাল ব্লাউজে সাদার কম্বিনেশন একদম ফুটে উঠেছে। চুল গুলো খোপা করে বেলী ফুলের গাজরা আর কানের পাশে দুটো লাল গোলাপ গুজে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মুখটা কিছুতেই সাজানো যাচ্ছেনা। কান্নার দমকে চোখের জলে নাকের জলে বন্যা বইয়ে দিচ্ছে। মামী চাচী বোনরা সবাই শান্ত হতে বলছে। আদরে আদরে বুকে চেপে ধরছে। পিঠ বুলিয়ে বোঝাচ্ছে,
” সোনাটা এভাবে কাঁদে না। তোকে তো শ্বশুড়বাড়ি পাঠানো হচ্ছে না। এখানেই থাকবি। কবুলটা বলে দিবি আর একটা সাইন। আর কিছুই লাগবে না। ”
লাবিবার কান দিয়ে কথা যাচ্ছে না। আম্মু আম্মু করছে আর কাঁদছে। সাবিনা দরজা থেকে দেখেই মুখে আঁচল চেপে চলে যায়। লাবিবার কাছে আসেনা। মেয়েটা আরো ভেঙে পরবে। কলিজা ছিঁড়ে যাচ্ছে। নারী ছেড়া ধন কিভাবে আলাদা করবে! ইসমাইল তো চুপচাপ হয়ে গেছে। বাইরে সব কিছুর তদারকি করছে। কেউ ভালো নেই। কারো মন ভালো নেই। লাবিবার সকল অভিযোগ সত্য। তা ইসমাইলও জানে। তবে দিন পাল্টিয়েছে। ভালো ছেলে। সব কথা পাকা করেই মেয়েকে তুলে দিচ্ছে। তবুও যেনো শান্তি পাচ্ছে না। পাওয়ার কথাও না। মেয়ের জন্য এতোবড় ঘর পাওয়াও যায়না। আজকের পর মেয়েটা অন্যের দায়িত্বে। বুক ভার হয়ে আসছে। অবশেষে লাবিবাকে জোর করে আদর দিয়ে কোনমতে মুখে মেকাপ বসাতে পেরেছে। চোখ দুটো সাজাতে পারেনি। হালকা আইসেডো দিয়েছে না পারতে। একেকজন আসছে আর হায় হায় করছে।
” এ্যা মা। ছিহ ছিহ! কেঁদে কেটে চেহারা কি বানিয়ে রেখেছে। কান্না অফ। একটু হাস না মা। ”
” এতো সুন্দর জামাই পাচ্ছো হাসবে তা না কাঁদছে। লোকে দেখলে খারাপ বলবে তো। অনেক হয়েছে আর কাঁদেনা। ”
” যেভাবে মুখ করে রেখেছে বউ ! পরের বাড়ির লোক দেখলে তো বলবে নির্ঘাত কোথাও লাইন ছিলো জোর করে এখানে বিয়ে দিচ্ছে। মান সম্মান কি আর কিছু থাকবে? ”
লাইন থেকে বেলাইনে একেরপর এক মন্তব্য ছুঁড়ছে। ছোট কাকীকে বলতেই উনি রুমে আসে। সকলকে বাহির করে দেয়।
” আপনার সবাই একটু বাইরে যান। হাতে হাতে কাজ গুলোও করে দিবেন।আমাদের মেয়ে একটু রেস্ট নেক।”
“সাজাতেই তো পারলাম না। মরা কান্না কাঁদছে যে হারে।”
“বাকিটা আমি সাজিয়ে দিচ্ছি। একা ছাড়ুন প্লিজ।”
সবাই চলে যেতেই কাকী এসে সাদা দোপাট্টাটা মাথায় দিয়ে দেয়। ঠোঁটের লিপস্টিক গাঢ় করে। টিস্যু দিয়ে চোখ মুছে দেয়। থুতনি তুলে বলে,
” মাশাআল্লাহ। কি সুন্দর লাগছে! লাবি মা আর কাঁদে না । তুমি তো বোঝদার মা। দেখছো লোকে খারাপ বলছে। আমাদের সোনা মা।”
লাবিবা আর কাঁদে না। উর্মিলার বুকে মুখ গুঁজে থাকে। সর্বনাশ যা হবার হয়েই যাচ্ছে।
ছেলে পক্ষের সাথে বেশ তর্ক হচ্ছে। ইসমাইল দেনমোহর ধরতে বলেছে পঁচিশ লাখ। জাবেদ ধরতে চাইছে দশ লাখ। চাঁপা চাপিতে বেশ কথা উঠে। ইসমাইল নতজানু না হয়েই বলে,
” আমার মেয়ের জন্য ইচ্ছে করলেই আমি এই মুহূর্তে দশলাখ বের করতে পারি। সেখানে আপনারা কোটিপতি হয়ে মাত্র দশলাখ কিভাবে দেনমোহর ধরতে পারেন ? ”
” আহা বেয়াই। যত কম দেনমোহর হবে ততো সংসারে রহমত আসবে। ”
” আগের দিন বাঘে খাইছে। এখন আর সেসব বললে হবেনা। সামর্থ্য অনুযায়ী দেনমোহর ধরুন। ”
“আমরা দশের উপর যেতে পারবো না।”
“পঁচিশের নিচে আমি মেনে নিবো না। ”
এক কথা দুই কথায় বেশ গন্ডগোল শুরু হয়। শেষমেষ তানভীর ই একটা প্রস্তাব রাখে।
” আমার মনে হয় সমঝোতা করে নেওয়া উচিত। বিশে আসুন। দশে আসলে হবে না। ”
” না না অসম্ভব। আমরা নগদ দেনমোহর পরিশোধ করবো। দশের উপর যাবো না। ”
ফাহাদ বুঝতে পারছে না হচ্ছেটা কি। তার বাবা বা এতোকমে কেনো দেনমোহর করতে বলছে। যে কোন মূল্যেই তো এই বিয়েটা দেবার কথা। বাবার মতিগতি ধরতে বেশী বেগ পেতে হয়না। সিউর ও হয়ে যায় যখন রাগে গজগজ করতে করতে ইসমাইলের উপর হাইফত দেখায়।
” তোমার দুশ্চরিত্র মেয়েকে দিয়ে আমার ভদ্র ছেলেকে বিয়ে করাচ্ছি এটাই তো বেশী। সেখানে আবার আমাকে অসম্মান করো। ”
” আপনি নিজে দেনমোহর বাড়াচ্ছেন না বেশ কিন্তু আমার মেয়ের সম্পর্কে উল্টোপাল্টা কথা বলতে পারেন না।”
” কি উল্টোপাল্টা কথা বলেছি? সম্পত্তির লোভে মেয়েকে আমার ছেলের কাছে বিয়ে দিচ্ছেন । মেয়ে নোংরামো করে বেড়ায় সেদিকে নজর নেই আপনার। মুখোশ পড়ে থাকেন মিয়া! প্রথমে তো বিশ্বাস ই করতে চাই নাই। এখন মোহরানা নিয়ে বাধিয়েছেন। কদিন পরে ডিভোর্স চেয়ে এতো গুলো টাকা হাতিয়ে নিবেন। আপনার এই রুপ না দেখলে তো জানতামই না।”
” জাভেদ ভাই মুখে লাগাম লাগিয়ে কথা বলুন। আমার মেয়ের সম্পর্কে উল্টোপাল্টা কিছু বলবেন না। আমি কিন্তু এটা মেনে নিবো না। ছেলের সংসার পাকাপোক্ত ই যদি করতে চান তাহলে দেনমোহর কেনো এতো কম ধরছেন? কোটি টাকা ধরলেও তো সমস্যা হবার কথা না। আপনার মতলব কি আগে সেটা বলুন। ”
লাবিবার কাকারা প্রচুর রেগে যায়। জাভেদের পরিবারের সাথে ঝগড়ায় লিপ্ত হয়। জাভেদের থেকে সরাসরি প্রমান চেয়ে বসে। তাদের মেয়েকে যেচে পড়ে বিয়ে করতে এসে অপমান! তারা ছেড়ে কথা বলবেনা। কবির ও বোনের বিয়ে উপলক্ষে ছুটি নিয়েছে। সেও শাষিয়ে উঠে, মান হানি মামলা দিয়ে বসবে। ফাহাদের চাচ্চু মামা উঠে দাঁড়ায়। এই বিয়ে তারা হতে দিবে না। বিয়ে ভাঙা মেয়েকে কিভাবে বিয়ে দেয় দেখে নিবে। অত্র এলাকায় ইসমাইল কিভাবে মুখ দেখায় সেটাও দেখে নিবে। জাভেদ কে হাত ধরে টেনে তুলে। জাভেদ ছেলের দিকে তাকায়। ফাহাদ হড় হড় করে বলে,
” বাবা আমি বিয়ে না করে যাব না।”
” এই মেয়ে ভালো না বাবা। তোমাকে ভালো মেয়ে দেখে বড় বাড়িতে বিয়ে দিবো।”
” ভালোনা কে ভালো কিভাবে করতে হয় আমার জানা আছে। আমি এই বিয়ে না করে যাবো না। ”
বাবাকে আপত্তি জানিয়ে তানভীরের হাত চেপে ধরে।
” স্যার এখানেই এই মুহূর্তে আমি বিয়ে করবো।আপনি বউকে আসতে বলেন। ”
কবির রাগে গজগজ করতে করতে বলে,
” যে পরিবারের লোক বিয়ের দিন এতো নিচু মন মানসিকতার পরিচয় দেয় সেই বাড়িতে আমার বোন কতটা ভালো থাকবে আমার বোঝা হয়ে গেছে। ফাহাদ তুমি চলে যাও এই মুহূর্তে। তোমার কাছে আমার বোন বিয়ে দিব না।”
“আমি আপনার বোনকে ভালোবাসি। আমি লাবিবাকে না নিয়ে যাবনা। ”
” আমরাও আমাদের মেয়েকে ভালোবাসি। এতোক্ষন যে ছেলের বাবা আমাদের মেয়ের সম্পর্কে খারাপ খারাপ কথা বললো আর সেই ছেলে বসে বসে সায় দিলো তার কাছে আমরা মেয়ে বিয়ে দিব না। ”
কাজী সাহেব বললেন,
” দেখুন আপনারা সমঝোতা করেন। বিয়ে ভাঙলে খুব খারাপ দেখায়। আপনাদের ই মান সম্মান যাবে। ছেলের বাড়ির কিছুই হবেনা। ”
“আমাদের মেয়েও ফেলনা না। ”
জাভেদ বলে,
” উঠ ফাহাদ। এই ছোটলোকের বাড়ি আর থাকবো না।”
” না বাবা আমি লাবিবাকে বিয়ে না করে যাবো না। ”
চলবে___