ভালোবাসার_কাব্য_গাঁথবো (১৫)

0
732

#ভালোবাসার_কাব্য_গাঁথবো

(১৫)
ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কাপড় গুলো ঝুড়িতে ভরেছে সোহানা। তানভীর পিছনে ছুটছে।
” মম! হচ্ছেটা কি এসব? দাও আমার ড্রেস গুলো দাও। মম! ”

” একদম কথা বলবেনা আমার সাথে। তোমরা যদি নিজেদের মতো লাইফ লিড করতে যা ইচ্ছা তাই করতে পারো আমিও পারি। এই বাড়িতে এখন আমার যা ইচ্ছা তাই করবো। ঐ লুকমান ঝাড় বাতি নামা। ”

লুকমান দৌড়ে আসে এক ডাকেই। সোহানা রাগে ফুস ফুস করছে।এখন তার কথা না শুনলে বাড়িতে একটা কাজের লোক ও আস্ত থাকবে না। ঝাড় বাতি নামানোর জন্য দৌড় দিতেই ফিরোজ খান থামিয়ে দেয়। সোহানা ফিরোজকে দেখে মুখ ঝামটা দিয়ে কিচেনে চলে যায়। জাবেদা কে বলে,
” প্লেট,গ্লাস,জগ,মগ সব দুই নম্বর মার্কেটে এক্ষুনি বিক্রি করে আয়।‌ স্টিলের বাসন কোশন কিনে আনবি আসার সময়। সবাই স্টিলের প্লেটে ভাত খাবে। ”

” আহ! সোহানা করছো টাকি? স্টিলের প্লেটে জীবনে কখনো খেয়েছো তুমি? এসব ছেলে মানুষী বন্ধ করো।”
ফিরোজ খান বলে।

” আমার বাড়ি তে আমি ছেলে মানুষী করবো নাতো মেয়ে মানুষী করবো সেটা আমার ব্যপার। তুমি আমার কাজে খবরদার নাক গলাবেনা। ”

” আচ্ছা মম আমার ড্রেস গুলো দিয়ে দাও। ওগুলো ওয়াশ করতে হবে ‌। ”

“এই জবেদা! বাড়ি থেকে বেরিয়ে দুই মিনিট হাটবি। ডান সাইডে দেখবি একটা ডোবা আছে সেখান থেকে এই কাপড় গুলো ধুয়ে আনবি। ”

“ইমপসিবল। মম গিভ মি দ্যা বাস্কেট। গিভ মি। *

“নো।নেভার। ”

“সোহানা তুমি কি পাগল হলে?”

” আমি তো পাগল হবোই। তোমরা তো এটাই চাও তাই না? বাপ ছেলে মিলে আমাকে পাগল বানিয়ে ফেলছো।”

” তানভীর? হোয়াট হেপেন্ড?”

তানভীর বিরক্তিতে চোয়াল শক্ত করে দাঁড়ায়।সোহানা চেঁচিয়ে উঠে।
” কি হয়নি সেটা বলো। দুই ছেলেকে বিয়েতে বসাতে পারি না। যাও একজন বসলো বউ নিয়ে আসার নাম গন্ধ নেই। আরো বলছে সংসার করবে না। আচ্ছা ঠিক আছে। সংসার যেহেতু আমার ই থাকবে। এই সংসার আমি যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে চালাবো।”

ফিরোজ খান তানভীরকে লক্ষ্য করে।
” তোমার মম যা বলছে তা কি ঠিক? খুব তো আমার মুখের উপর কথা বলে বিয়েটা করলে এখনি শখ মিটে গেলো? আমার কি ফ্ল্যাট বেশি হয়েছিল বাবা? ”

দাঁতে দাঁত চেপেই বললো শেষের কথাটা। তানভীর তার কলিজায় টান দিয়েছে কিনা!বউকে দেওয়া গিফট বলে কথা! তানভীর মুখটা অসহায় করে ফেলে। কাঁদো কাঁদো হয়ে বলে,
” তুমি এতো বউ পাগলা কিভাবে হলে পাপা? পুরুষ জাতিকে এভাবে ঘোল খেতে সাহায্য করতে তোমার কি একটুও হৃদয় কাপলো না?”

” আমাকে বউ পাগলা বলছো? বেয়াদব! পাপা হই তোমার। সোহানা রেড়ি হোও। বেয়াদবটা কিভাবে সংসার না করে থাকে আমিও দেখে নিবো। ”

” লিসেন পাপা।‌আমি কখন বললাম যে আমি সংসার করবো না? ”

সোহানা লাফিয়ে উঠে,
” একটু আগে যখন বললাম বউকে ঘরে এনে কাপড় গুছা তখনি তো বললে যে তুমি বউকে তোমার কাজ করানো র জন্য সংসার করবে না। ”

” উফফ মম! আমি বলেছি আমার বউ কাজ করবেনা জন্য সংসারেই আসবে না। তোমার সাথে কিছুই বলা যায়না। উল্টো মিনিং ধরে রাখো।”

” তাহলে তুমি সত্যিই সংসার করবে না? ”

” মম! পাপা প্লিজ বোঝাও তোমার বউকে। আমার কলেজের স্টুডেন্ট আমার বউ হয়ে আমার সাথে সংসার করছে এটা জানাজানি হলে আমার মান সম্মান কিছু কি থাকবে? তাও আবার হাঁটুর বয়সী একটা মেয়ে! ”

” এতো সমস্যা থাকলে করেছো কেনো বিয়ে?”

” মমের কথাতে। ”

” কিহ? আমি কখন বললাম?”

” সেদিন যে মেয়েটা আসলো, তাকে দেখে আমাকে কি বলতে এসেছিলে? মনে আছে?”

” কিন্তু আমি তো বলতেই পারি নি।”

” তোমার কথা বুঝে নিয়েই তো বিয়েটা করলাম। তোমার কথা রাখতে গিয়ে আমি বিয়েটা করেছি। এবার অপেক্ষা করো বছরের পর বছর । আমার তাতে কি?”

” সর্বনাশ!”

” সর্বনাশ তো তুমি আমার করলে। বছরের পর বছর বউ ছাড়া থাকবো। তোমার কারণে।”

তানভীর আঙুল তুলে মুখ ঝামটা দিয়ে সোহানাকে দেখিয়ে দেয়। সেই মুহূর্তে পদার্পণ করে তামিম। তানভীরকে দেখে চোখ উপড়ে। অবাক হয়ে বলে,
” এসব কি হচ্ছে? তানভীর তুই ও?”

” এই ড্রামাবাজদের চাপে আমিও এঁদের মতো হয়ে যাচ্ছি ভাই। প্লিজ তোমার বউকে নিয়ে আসো । অভিনেত্রী দের জায়গা এ বাড়িতেই হবে।”

ফ্লোরার কথা বলতেই মুখটা থমথমে হয়ে যায় তামিমের। কিছুক্ষণ আগেই তার সাথে কথা হয়েছে। তীর্যক ভাবে প্রশ্ন ছুড়েছে।
” শুনলাম তানভীর নাকি বিয়ে করেছে? ”

“নিউজ পেয়ে গেছো? বাহ! গুড। ”

” এভাবে কথা বলবেনা তামিম। তুমি তানভীর নও যে এভাবে কথা বলবে আমার সাথে। আর আমি মেনে নিবো।”

” তানভীর হলে মনে হয় ভালো হত তাইনা? এইযে সব মেনে নিতে।”

” নিতাম। কারণ আমি তার নিকট অপরাধী।”

” আমার সাথে তো কোন অপরাধই হয়নি।”

” আমি তুমি কি আলাদা তামিম? যদি আলাদাই ভাবো তাহলে আমি আবার ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। প্লিজ ক্ষমা করে দাও।”

তামিম অট্টোহাসিতে ফেটে পড়ে। ফ্লোরা ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে। আজকাল কথা বলতেই কান্না আসে। সেই ভয়েজেই তামিমকে অনুরোধ করে,
” প্লিজ তামিম আমাকে তোমার ভালোবাসার সংসারে জড়িয়ে নাও। আমি আর পারছিনা তোমাকে ছাড়া থাকতে। আমি নয় ভুল করেছি। সেই ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চাইছি। তোমার কি উচিত নয় আমার ভুল গুলো শুধরে নিয়ে আপন করে নেওয়া?”

” সময় গুলো ফিরিয়ে দাও। আমি আমার উচিত কাজটাই করবো। ”

তারপর আর কথা হয়না। কথা বলার মতো কিছু নেই। নিশ্চুপ হয়ে যায় দুজনেই। দীর্ঘ শ্বাসের সঙ্গে উপস্থিতি জানান দেয় দুজন দুজনার।

চারদিন পর কলেজে পা পরে লাবিবার। তার অবস্থান ক্লাস রুমে। নিতু ইসলাম ক্লাস নিচ্ছেন। উর্মিলা গত ক্লাস গুলোর নোট দিয়ে দিয়েছে । সেজন্য কোন প্রব্লেম হচ্ছে না ম্যাথ গুলো বুঝতে। নিতু ইসলাম লেকচারের ফাঁকে ফাঁকে লাবিবার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসছেন। লাবিবার হাতে সোনার রুলি। নিতু ইসলামই পরিয়ে দিয়েছেন। কাঁচা হলুদ রঙা স্কিনে বেশ মানিয়েছে। চিকচিক করছে একদম। সেটাই দেখে নিতু ইসলামের ঠোঁটে মৃদু হাসি ফুটেছে।‌ ক্লাস শেষে বেরিয়ে যাবার সময় লাবিবাও বেরিয়ে নিতু ইসলামের পিছু ছুটে। লাবিবার হাতে একটা ওয়ালেট। ওয়ালেটটি তানভীরের। লাবিবার বাসায় ফেলে আসছে। তার সেটি নিয়ে আসার নাম নেই। অথচ ভেতরে ইমপর্টেন্ট কিছুই আছে। দুটো কার্ড আছে আর হাজার ছয়েক ক্যাশ আছে। আর কিসব কাগজ হাবিজাবি। লাবিবা অনুমতি ব্যতীত ই খুলে দেখেছে। প্রথমে ভেবেছিলো কারো পার্সোনাল ওয়ালেটে অনুমতি না নিয়ে হাত দেওয়া ঠিক হবে না। তারপর মনে হলো এটাতো মাত্র একটা ওয়ালেট! আর তার জীবনে একেরপর এক অনুমতি ব্যতীত যে জলজান্ত মানুষ এন্ট্রি নিয়ে নিচ্ছে তার ক্ষেত্রে? যার ওয়ালেট খুবলে না চাইতেও সেই মানুষটি এখন তার স্বামী। লাবিবা কিভাবে চুপ রইলো? পারতো তো এই বিয়েটাও আটকাতে। তার কি কোনভাবে সায় ছিলো? ছিলো। কিন্তু কতটুকু ছিলো? সুপুরুষ টিকে কি সে পেয়েই গেলো?

” মুখটা চিন্তিত দেখাচ্ছে কেনো আমার লাবি মার?”

নিতু ইসলামের কথায় লাবিবা চিন্তা জগৎ থেকে বেরিয়ে এলো। নিতু ইসলাম পেছন ফিরে লাবিবার কাছে এসে দাড়ালো। মাথায় হাত রাখলো,
” কি হয়েছে আমার ভাগিনাবধুর ?”

বলেই হাসতে লাগলো। লাবিবা দ্বিধা কাটিয়ে উঠতে পারছেনা। কোথায় যেনো আটকাচ্ছে। হুট করেই আপন করে নেওয়া যায়কি? লাবিবা নিলেই কি সে আপন হবে? এতো সব চিন্তাই বা সে কেনো করছে? তার চিন্তা গুলোর সমাধান কোথায় পাবে?
লাবিবা ওয়ালেটটা নিতু ইসলামের দিকে এগিয়ে দেয়।
” ম্যাম এটা প্রিন্সিপাল স্যারের ওয়ালেট। উনাকে দিয়ে দিবেন। ”

“তুমি দিচ্ছো না কেনো?”

“স্যার আসেননি আজ।”

“ফোন দাও। নিয়ে যেতে বলো। ”

লাবিবা আমতা আমতা করে। নিতু ইসলাম মুচকি হাসে। লাবিবার হাত ধরে নিজ কেবিনে নিয়ে আসে। ব্যাগ থেকে নিজ ফোন বের করে। আড়চোখে তাকায়। প্রশ্ন করে,” কথা হয় তোমার তানভীরের সাথে?”

লাবিবা দু’পাশে মাথা নাড়ে।
” না। উনার নাম্বারে ফোন দিয়েছিলাম। ধরেননি।”

” প্রাইভেট পার্সন হয়ে পাবলিক নাম্বারে কল দিলে তো পাবে না মা। আমার ভাগিনা তো আর একটা ফোন নিয়েই বসে থাকে না। নাও এই নাম্বার ফোনে তুলো। আর কল দাও।”

” এখনি দিবো?না পরে দেই।”

” তোমার ইচ্ছা। ”

লাবিবা নাম্বার নিয়ে চলে যায়। কি যেনো ভেবে আবার চলে আসে। একটু ইতস্তত করে প্রশ্ন করে,
” ম্যাম?স্যার আসেননি কেন? ”

” তোমার স্যারের গতিবিধি জানার কথা এখন কার? আমার নাকি তোমার? অনেক তো সামলালাম ছেলেকে এবার তুমি সামলাও। আমাদের তো এখন রিলাক্স করার বয়স। ”

“এতো বড় মানুষটাকেও সামলাতে হয়? কেন কি করেন উনি?”

খুব ভাবুক হয়ে পড়ে লাবিবা। নিতু ইসলাম কি উত্তর দিবে ভেবে পায়না। অন্য কাউকে এইভাবে বললে লজ্জায় মুখ তুলতো না। এই মেয়ে তো ভাবনায় ঢুবে যাচ্ছে।

দরজার বাইরে থেকে উর্মিলা ইশারায় লাবিবাকে ডেকে যাচ্ছে। লাবিবা চলে আসে উর্মিলার সাথে ‌। তার মাথায় রাজ্যের প্রশ্ন ভর করে। সেই প্রশ্ন গুলোর উত্তর পেতে হবে। তানভীর ই পারবে উত্তর গুলো দিতে। উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত কিছুতেই মন শান্ত হচ্ছে না। উর্মিলা একটা ফাঁকা জায়গা দেখে লাবিবাকে হাত টেনে দাঁড় করায়। মাথায় গাট্টা মেরে বলে,
” এভাবে ম্যামের পিছু পিছু যে ছুটলি সবাই তো বলছে তুই পালিয়ে আসলি। আর এসব কি লাব্বু? বিয়ের পাঁচদিন হয়ে গেছে এখনো স্যারের নাম্বার তোর কাছে নেই? দোস্ত স্যার কি তোর সাথে ভালো ব্যবহার করে নাই? আই মিন স্বামী স্ত্রী যেমন করে!”

লাবিবা মাথা নাড়ায়। ” করেছে।”

” তোরা তো একটা নাইটও পাস করলি না একসাথে। কি করেছে? মানে কত দূর অব্দি?”

সেদিন কার কথা মনে পড়তেই লাবিবার গাল দুটো গরম হয়ে উঠে। চোখ দুটো নুইয়ে আসে। উর্মিলা সাথে সাথেই লাবিবাকে পাঞ্জা দিয়ে ধরে মৃদু চিৎকার করে,
” দোস্ত! হাউ ইট ইজ পসিবল? তুই লজ্জা পাচ্ছিস?তার মানে সব ডান ! ইয়াহু! ট্রিট দে।”

লাবিবা আরেকটু সিটিয়ে যায়। দুপাশে মাথা নাড়ে।
” সেদিন চলে আসার সময় হুট করে জড়িয়ে ধরে উপরে তুলে ধরে। আর বলে।”

” কি বলে? বলনা। ”

” আমার কান্না ফোলা মুখ উনার একদমি সহ্য হয়না।”

” লাব্বু এই যে তোর ড্রীম পার্সন তোর হাজব্যান্ড তোর কেমন ফিল হয়? মানে এই যে সবাই তোকে মিসেস তানভীর খান বলে, তানভীর খান ও তোর কান্না সহ্য করতে পারে না, স্পেশাল ফিল করে অনুভূতি কি তোর?”

লাবিবা উর্মিলা ছাড়িয়ে নিয়ে দৌড় দেয়। উর্মিলাও ছাড়ার পাত্র না। সেও তাড়া করে।
” দোস্ত ফিলিংস টা কেমন বল না!”

” আমি বলবো না।”

” বলনা প্লিজ।”

” আমার শরম লাগতাছে। খবরদার আমার পিছু আসবিনা।”

” বলে যা না!”

” আমি বলবো না।”

পেছনে উর্মিলার দিকে তাকিয়ে ঝাউ গাছের রাস্তায় দৌড়াতেই ধাক্কা খায় শক্তপোক্ত এক দেহের সাথে। ব্যালেন্স রেখে সরে দাঁড়ায়। চোখ তুলে তাকাতে না তাকাতে ক্রস করে যায় তাঁকে। যাবার আগে একবার চোখে চোখ মেলে। দেখেও না দেখার ভান! পুরোপুরি ইগনোর! অন্যান্য কেউ হলে নিশ্চিত বকে দিতো এতোক্ষনে। অথচ লাবিবাকে কিছুই না বলে ইগনোর করে। উর্মিলা পা থামিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। চটপট মুখে হাসি নিয়ে সালাম দেয়।
” আসসালামুয়ালাইকুম স্যার। ”

” ওয়ালাইকুমুস সালাম। কলেজ মাঠে গিয়ে খেলো। সাবধানে।”

বলেই তানভীর হাঁটা দেয়। উর্মিলা লাবিবা দুজন ভ্যবলার মতো তাকিয়ে থাকে। লাবিবা ঠোঁট কামড়ে ধরে। ছেড়ে দিয়ে বলে,
” বাই এনি চান্স স্যার কি আমাদের বাচ্চাদের মতো ট্রিট করলো?”

” সাবধানে ওয়ার্ড টা কি তোর জন্য ছুঁড়ে দিলো?”

” আমার জন্য হবে কেন? বললো তো তোকে। ”

” আমিও তো এখন স্পেশাল। শালিকা! তাই না?”

” তো?”

” স্যার তো চলে আসছে। কি নাকি দিবি? যা দিয়ে আয়।”

” হ্যা। তাই তো। মনেই ছিল না। ”

লাবিবা তানভীরের কেবিনের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। পিয়ন কে সালাম দিয়ে তানভীরের কথা বলতেই পিয়ন দরজা খুলে দেয়। তানভীর মাত্র এসে বসলো সাথে সাথেই লাবিবার আগমন। হাতে এখন প্রচুর কাজ। বিকালেই কলেজের কাজে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবে। এসময় লাবিবাকে দেখেই তার কাজ থেমে গেলো। ল্যাপটপ ছেড়ে টান টান হয়ে বসলো। লাবিবা এগিয়ে গিয়ে ওয়ালেট টা ডেস্কের উপর রেখে সালাম দিয়ে বললো,
” আপনি ওয়ালেটটা রেখে এসেছিলেন। তারপর আর নিতে যাননি। আমার চোখে পড়লো তাই ফেরত দিতে এলাম। ”

” ফেরত?”

” সরিই স্যার। আমার বেডের উপর পেলাম তো তাই আপনাকে দিতে এলাম। ”

” কি আছে এতে যে অফিসেই আসতে হলো তোমাকে?”

“সরি স্যার। ওয়ালেটটা খুলে দেখার জন্য। আপনার অনেক কিছুই আছে।”

” তুমি কি ওয়ালেটের ভেতরটা পুরোপুরি দেখেছো?”

” জি স্যার। কয়েকটা পেপারস আর কার্ড,ক্যাশ সবই আছে। ”

” আবার খুলো। আমার সামনে। ”

” স্যাররর”

” ঘাবড়ানোর কিছু আছে কি? নাকি তুমি কিছু নিয়েছো?”

যে ভয়টা পাচ্ছিলো সেটাই হলো। নয়তো সামনে খুলতে বলবে কেন? লাবিবা কঠিন মুখ করে বললো,
” স্যার যেমনটা ছিলো ঠিক তেমনটাই আছে। আমি কিছুই নিই নি। ”

” খুলো। ”

লাবিবা ওয়ালেটটা খুলে একে একে সবকয়টি জিনিসই বের করে সামনে রাখে। টাকা, তারপর কার্ড তারপর পেপার্স গুলো ভাঁজ খুলে একটার পর একটা সাজিয়ে নিতেই একটা চিরকুট পায়। চিরকুট টা আগেও দেখেছিলো কিন্তু খোলা হয়নি। এখন খোলতে গিয়েই চোখ ছানাবড়া। উপরের লেখা গুলো পড়তে থাকে

” ইটস্ ফর য়্যু মাই ওয়া_

বাকিটুকু আর উচ্চারণ করার সুযোগ পায়না। তানভীর টেনে নেয় চিরকুটটা। বাকি পেপার্স গুলোর দিকে হাত বাড়াতেই লাবিবা হাতের তালুর নিচে আবদ্ধ করে। তার যা বুঝার বুঝা হয়ে গেছে। এটা তানভীর ওর জন্য রেখে আসছিলো। তানভীর দুবার নিজের নাক টেনে হাত বাড়ায় লাবিবার দিকে।
“দাও।”

লাবিবা ছেড়ে দেয়। তানভীর লাবিবার বোকাসোকা থতমত খাওয়া মুখটা দেখে পেপার্স গুলো নেয়। কার্ড দুটো লাবিবার দিকে এগিয়ে দেয়। ক্যাশ গুলোর সাথে আরো কিছু নোট এড করে লাবিবার হাতে দেয়। ছোট্ট একটা শ্বাস ছেড়ে বলে,
“তুমি নিলে আমি খুশি হতাম।‌ ভেতরের তেজটা রাইটে টার্ণ দাও লেফ্টে নয়।এবার আসতে পারো। ”

লাবিবা টাকাগুলো নিয়ে হাতে মুঠো পাকিয়ে ধরে। রাগটা ক্রমশ বেরিয়ে আসতে চাইছে। এই মানুষটা বরাবরই লাবিবাকে একটা ধাঁধায় ফেলে রাখে। সেই ধাঁধার জালে আটকে লাবিবা হাঁসফাঁস করে। বেঁচে উঠতে চাইলে আরো গভীরে ছুঁড়ে ফেলে। তবে এর উত্তর সে জেনেই ছাড়বে। সরাসরি তানভীরের চোখে চোখ রেখে জিজ্ঞেস করে,
” এ সম্পর্কের ভবিষ্যৎ কি স্যার? ”

” তোমার স্বাধীনতা, স্বনির্ভরতা, বাঁচার মতো বেঁচে থাকা।”

” আর বাঁধন গুলো?”

” আমি তোমাকে বাঁধিনি লাবিবা।”

” সুতো তো ছেড়েছেন। আচমকা গিট্টু লেগে গেছে পায়।”

দরজায় নক পড়ে। একজন প্রফেসর হালকা মাথা বের করে ডাকে।
” স্যার। একটু পরই বের হতে হবে। ডি সি সাহেব একটু পরেই অফিসে থাকবেন। ”

নিউজ টা জানিয়েই উত্তরের অপেক্ষা না করেই প্রফেসর চলে যান। তানভীর লবিবাকে বলে,
” তুমি এসো।”

“আমার উত্তর পাইনি।”

“আমি এখন ব্যস্ত। পরে কথা বলবো। ”

তানভীর নিজের চেয়ার টেনে ফাইল নিয়ে বসে। তিনটি ফাইল খুলে পেপার্স গুলো একের পর এক উল্টে চেক করে। তখন ও লাবিবা দাঁড়িয়ে আছে। মোট কথা সে আবার ধিধান্বিত হয়ে পড়েছে। একের পর এক দ্বিধা তাকে লুফে নিচ্ছে। দ্বিধাগুলো কাটিয়ে শ্বাস নিতে চায়। তানভীর আড়চোখে কয়েকবার তাকায় । লাবিবার মধ্যে চলে যাওয়ার কোন ইচ্ছাই দেখতে পায়না। শ্বাস ছেড়ে হাত বাড়িয়ে চেয়ারে ইশারা করে বলে,
” বসো। নয়তো পা ব্যথা করবে।”

লাবিবা বসে না। বরং চেয়ারের ধার ঘেঁষে দাঁড়িয়ে বলে,
” আপনাকে ডিস্টার্ব করার জন্য সরি স্যার। আমি আমার ভবিষ্যৎ জানতে চাই। কোন দিকে মোড় নিবে আমাদের অনাকাঙ্ক্ষিত সম্পর্ক? বিয়ে হবার কথা ছিলো একজনের সাথে হলো আপনার সাথে। আপনি কেন আমাকে বিয়ে করলেন ? হুট করেই এই বিয়ে, এতো গুলো টাকা দেনমোহর,ফ্ল্যাট, তারপর এখন ডেবিট কার্ড,ক্রেডিট কার্ড,টাকা! স্যার আপনার সাথে আব্বুর কি কথা হয়েছে? আব্বু কি আপনাকে বলেছে যে আমার ভরনপোষন আর উনি করবেন না তাই আমাকে বিয়ে দিতে চেয়েছিলো। আর আপনি আমার উপর দয়া করলেন। আমার ভরণপোষণের দায়িত্ব নিলেন।”

” কি বলছো ভেবে বলো লাবিবা। ”

” আমি একটা সমুদ্রে সাঁতার কাটছি। প্লিজ আমাকে ডাঙায় তুলুন। আপনি তো অজানা না। আমার আব্বু আমাকে সমুদ্রে ফেলে দিলো আর আপনি আমাকে সব থেকে গভীরতম স্থানে নিয়ে এলেন। আমার শ্বাস আটকে যাচ্ছে স্যার। অর্থ দ্বারা যদি সাহায্য করার থাকতো তাহলে তো এমনিতেই করা যেতো।‌বিয়েটা কেন করতে হলো ? ”

” তোমার অবাঞ্চিত প্রশ্নগুলোর উত্তর আমি দিতে বাধ্য নই। বেরিয়ে যাও এখান থেকে। ”

“আমার প্রশ্ন গুলো অবাঞ্চিত কেন মনে হচ্ছে?”

” অবাঞ্চিত মনে হবার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। প্রথমত, বিয়েটা তুমি ভেঙেছো। বিয়ে ভাঙার পর তোমার বাবাকে হসপিটালাইজড করেছো। সুস্থ হবার পর যে কারো সাথে তোমাকে বিয়ে দিয়ে দিতো। অথচ তোমাকে বিয়ে করতে কেউ এগোতো না। ফাহাদের ফ্যামিলি মুহুর্তেই তোমাকে নিয়ে বাজে কথা ছড়িয়ে দিয়েছিলো। তোমার বাবা বাড়ি ফেরার পর এসব শুনে আরো অসুস্থ হয়ে পড়তো। যারা তোমাকে বিয়ে করতে আসতো তারা প্রত্যেকেই লোভে পড়েই দুর্নাম রটানো মেয়েকে বিয়ে করতে আসতো। আর তোমার লাইফের করুন পজিশনটা তুমি সেখানেই দেখতে। আমি যেহেতু তোমাকে সেভ করার দায়িত্ব টা নিয়েছিলাম সেজন্য ই আমি তোমাকে বিয়ে করেছি। আর আসছে লেন দেনের কথা! খান বাড়ির ছেলে বিয়ে করবে অথচ মোহরানা বেশী হবেনা সেটাতো হতে পারে না। আর এখনকার বিষয়টা পুরোটা আমার রেসপন্সিবিলিটি থেকে করার হলেও আমি আমার সম্মান রাখতেই করছি। তোমাকে লালন পালন করতে তোমার বাবার ঠিক কতো খরচ করতে হয় তা আমি এ কয়দিনেই বেশ ভালো ভাবেই জেনে গেছি। আমি নিশ্চয় বেকার ছেলে নয় যে আমার বউকে শ্বশুরের টাকায় খাওয়াবো পড়াবো আর নিজে গা বাঁচিয়ে চলবো। আমি তোমার লাইফে হস্তক্ষেপ করতে যাচ্ছিনা। তোমাকে বরং ভরিয়ে দিচ্ছি। তুমি তোমার মতো লাইফ লিড করতে চেয়েছিলে তার ব্যবস্থাই করে দিচ্ছি। তাহলে এসব ভ্যালুলেস প্রশ্ন কেনো মনে পুষে রেখেছো? দয়া করে মানুষ হতদরিদ্রের উপর। তুমি তো তা নও। তোমার বাবার সাথে মনোমালিন্য বিষয়টা তাড়াতাড়ি আলোচনায় গিয়ে শেষ করো। উনি তোমাকে ঠিক কতোটা ভালোবাসে ভালো চায় তুমি নিজেও জানো না। ”

তানভীর থামে। কথা বলতে বলতে বেশি হাইপার হয়ে যাচ্ছে। নিজেকে দমিয়ে নেয়। চেয়ার ছেড়ে লাবিবার দিকে এগিয়ে যায়। পাংশুটে মুখটা থুতনিতে হাত রেখে উপরে তুলে। কঠিন গলায় হুকুম করে,
” বাসায় ফিরে মান অভিমানের পালা দূর করো লাবিবা। আর নেক্সট টাইম আহাম্মকের মতো এসব কথা বলবেনা। ”

লাবিবা আর কথা বলার মতো অবস্থাতে নেই। তবুও জোর টেনে বিরবির করলো,
” আপনি তো আমার দ্বিধা কাটিয়ে দিলেন না।”

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here