#ভালোবাসার_কাব্য_গাঁথবো (১৪)

0
215

#ভালোবাসার_কাব্য_গাঁথবো

(১৪)
ঘরের দরজা দিয়েছে লাবিবা। আর খোলার নাম নেই। শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছে। হৃদপিন্ড অসংখ্য বার অস্বাভাবিক বিট করছে। কি হচ্ছে তার সাথে? একেরপর পর অস্বাভাবিক ঘটনা গুলো ঘটেই যাচ্ছে। সম্মানের চোখে যে স্যারকে এতো দিন মাথায় উচ্চতায় বসিয়ে এসেছে সে স্যার আজ বুকে নেমে আসার পথ ধরেছে। পৌঁছেও গেছে। ঢুকতে পেরেছে কি? কিভাবে দরজা খোলবে? স্যার ই বা এরকম দয়া করতে গেলো কেনো? সমাজ যা ইচ্ছে তাই বলুক। লাবিবার কোন যায় আসতো না। কারো সাথে ঘর বাঁধার স্বপ্ন ও সে দেখেনি। তাহলে কেনো তানভীর স্যার ইঙ্গিত পূর্ণ আচরণ করবেন? তানভীর স্যার কি লাবিবাকে পড়ে নিয়েছে? দু মন টাকে শান্ত করতে পারছেনা কিছুতেই। উত্তর চায় লাবিবা। উত্তরের আশায় প্রশ্নটা ও করে বসে সে।
” আপনিই কেন স্যার?”

তানভীর মোটেও বিচলিত নয়। তার জীবনের এতো বড় একটা মোড় ঘুরে গেছে তা নিয়ে তার ভেতর অনুশোচনা ও নেই আবার উচ্ছাস ও নেই। যেনো সব স্বাভাবিক। প্রতিবারের মতো আজো তার লয়্যাল এনসার। তিনি যে একজন স্যার তিনি তার কথা কিংবা ব্যবহারেই প্রকাশ করেন। সোজাসাপ্টা উত্তর,
” প্রমিস করেছিলাম তোমাকে গিফট দিবো। দিলাম। তুমি যা চাও সেটাই দিলাম। এবার তুমি স্বাধীন। পড়াশোনা করো। নিজের পায়ে দাড়াও। দায়িত্ব পালন করো। লাইফটাকে ইনজয় করো। দুর্বলতাকে ভালোবাসো। তোমার সব রেসপন্সিবিলিটি আমার।”

“অন্যভাবে ও তো গিফট দেওয়া যেতো। ”

“যেতো কি?”

লাবিবার মুখ বন্ধ। কি উত্তর দিবে? সত্যিই তো যেতো না। কেউ না কেউ তো তার লাইফে আসতো ই। শুধু আসতো না কর্তৃত্ব ও ফলাতো। নিয়মে বেঁধে তবেই ছাড়তো। কিন্তু এমন মানুষ টাই বা কেনো? লাবিবা কি আদৌ কোন দিক থেকে তার যোগ্য? নয়তো। তাঁদের মধ্যে রয়েছে বিস্তর ফারাক। পরিবারের ফারাক, ফিনান্সিয়াল ফারাক, বয়সের ফারাক, যোগ্যতার ফারাক, সৌন্দর্যের ফারাক। ওতো বড় মানুষ টা সারাজীবন ভীতির ই সৃষ্টি করে গেছে। সামনে গেলেই বুক কেঁপে উঠে। ব্যাক্তিত্ব, ক্রোধ,দাম্ভিকতা,দক্ষতা, বিশালতা, প্রাচুর্যের ভীড়ে হয়ে উঠেছে চুনোপুঁটির মতো শিষ্যত্ব অর্জন করা। সেই সম্মানীয় আজ হয়ে উঠলো স্বামী। কিভাবে নিজেকে শান্ত করবে লাবিবা? তিনি সত্যি সত্যি নিজের কথা রাখলেন। নিরবে জিতে গেলেন।

দরজায় অসংখ্য করাঘাত। লাবিবা সেদিকে মন দিলো না। দুরু দুরু বুকে ক্লান্ত দেহ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লো বিছানায়। এতোসব কি না হলেই হতো না? আব্বু কিভাবে পারলো তার সাথে এরকম করতে? এতো গুলো মানুষের সামনে বিয়ে ভাঙ্গা মেয়েকে নিয়ে গিয়ে সরাসরি বললো সাইন করো। তাও আবার কার জন্য তার কলেজের সম্মানীয় প্রিন্সিপালের জন্য। লোকে জানলে কি বলবে? এতো লোকের ভয় তাহলে এরকম একটা কাজ করার আগে একবার ভাবলো না এর পরিণাম কি হবে? এতোই তাড়া মেয়েকে পরের অধিনস্থ করার জন্যে? অবাধ্য দু চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে।
সারা রাত ঘুম হবেনা যে!

বাড়ি সুদ্ধ মানুষ দরজা ধাক্কিয়েও লাবিবাকে বের করতে পারে না। এদিকে তানভীর কে জোর করে রেখে দেওয়া হয়েছে। বিয়ের দিন ই জামাই মেয়েকে রেখে চলে যাবে লোকে শুনলে কি বলবে? জামাই সহ জামাইয়ের বন্ধু বান্ধব রাও আজ এখানেই থাকবে। তাঁদের থাকার জন্য রুম গুছিয়ে রাখা হয়েছে। কিন্তু জামাই কোথায় থাকবে? লাবিবা যে দরজাই খোলছে না। তানভীর চলে যেতে চেয়েছিলো। সাবিনা হাতে ধরে রেখে দিয়েছে। একেতো দুপুরে মেয়ের বিয়ে ভাঙলো তারপর এখন রাতে বিয়ে হলো অনাকাঙ্ক্ষিত একজনের সাথে। বিয়ে হতে না হতেই ফুলের মতো মেয়েটাকে রেখে জামাই চলে যাবে? তাঁদের তো একটু আলাদা সময় দেওয়া উচিত। তবে যদি মেয়েটার বুকের ভার একটু কমে। কষ্টে কষ্টে যে শেষ হয়ে যাচ্ছে। জামাইকে তো সেজন্য ই রেখে দিলো যাতে মেয়েটাকে একটু হাত করে নিতে পারে। এখন যদি দরজাই না খোলে জামাইয়ের সামনে কোন মুখে দাঁড়াবে? কি লজ্জা কি লজ্জা! সোহানা ইসলাম তো ছেলে আর ছেলের বউকে নিয়ে যাবার জন্য উঠে পড়ে লাগছিলো। মেয়ে তার এখানে দাম দিচ্ছে না ঐখানে গিয়ে না জানি কি করে! সাবিনা জানে ভিতু মেয়ে তার কিছুই করবেনা। কিন্তু কেটে কেটে অজ্ঞান হবে। এখন তো মনে হচ্ছে জামাইকে যেতে দেওয়াই উচিত ছিলো। এর চেয়ে লজ্জার আর কি থাকতে পারে! ইসমাইল ঘরে রেস্ট নিচ্ছে। মাঝরাত অব্দি যখন ডেকে ডুকে ঘর থেকে টু শব্দ ও করাতে পারলো না তখন তানভীর এসে বাগড়া দিলো।
” আন্টি আমি আমার ফ্রেন্ডস দের সাথেই থাকছি। আপনি টেনশন করবেন না। ”

“ইয়ে মানে বাবা।”

” আপনার মেয়ে অনেক স্ট্রং। আপনি চাপ নিবেন না। আংকেল অসুস্থ প্লিজ গিয়ে শুয়ে পড়ুন।”

” কিছু মনে করো না বাবা। বুঝতেই তো পারছো মেয়েটা আমার এত্তো জেদি যে ”

” আমি বিষয়টা নরমাল ই নিচ্ছি। ওর দিক টাও তো ভেবে দেখতে হবে। একটা অসম বন্ধনে আমরা জড়িয়ে গেছি। সবটা নরমাল হতে সময় লাগবে। আপনি প্লিজ গিয়ে শুয়ে পড়ুন। ”

“দোয়া করি বাবা। এভাবেই আমার মেয়েটাকে বুঝে শুনে যেনো আগলে রাখতে পারো। সুখী হও তোমরা। ”

তানভীর গিয়ে বন্ধুদের পাশে শুয়ে পড়ে। দুই বন্ধু তানভীর কে নিয়ে আফসোসের ডালা খুলে বসে। মুখে চুক চুক আওয়াজ করে। আশিক‌ বলে,
” বন্ধু রমেশ!”

” হ্যা বন্ধু!”

“মনে পড়ে তোর তোর বাসর রাতের কথা?”

“হ্যা বন্ধু। কি সেই স্মৃতি আর তোর ভাবীর ভালোবাসা এই জীবনে ভুলতে পারবো না। আহ!”

” তুই তো শালা ভাগ্যবান। আমিও তোর ভাবীর সাথে প্রথম রাত! কি প্রেম! কি অনুভুতি! সেসব কি আর আমৃত্যু ভোলা যায়?”

” তুইও তো শালা ভাগ্যবান। আমার তো আফসোস হচ্ছে সেইসব অভাগার জন্য যারা বাসর রাতে বউয়ের কাছে যেতে পারে না। বউকে জড়িয়ে ধরে না ঘুমিয়ে বন্ধুদের পাশে ঘুমায়। আহ! আফসোস। ”

দুজনের ঠোঁট চৌখা করে চুক চুক শব্দ করে।
” আহ! কি কষ্ট। আমরা থাকি আকাশে আমাদের বন্ধু থাকে চকিতে।”

” ঐ তোরা চুপ করবি?”

” আরে বন্ধু ঘুমাও নাই? ও তোমার তো আজ ঘুম হবো না। নরম গরম জায়গা রেখে কি শক্ত জাজিমে ঘুম আসবো!”

” আশিক প্লিজ মজা পরে করিস। মাথাটা ধরেছে আমার। ঘুমোতে দে।”

রাগে মাথা ব্যাথা করছে তানভীরের। কত্তবড় বেয়াদব মেয়ে! বাড়ির কারো কথা শুনবিনা মানলাম তানভীরের কথাটাও ভাববি না? বেয়াদব মেয়ে একটা। চরম অবাধ্য। হুস জ্ঞান কিচ্ছু নেই। এর জন্যই বলে যার জন্য করি চুরি সেই বলে চুর। উপকারীর উপকার করবিনাতো কৃতজ্ঞতা ও জানাবে না।

ব্রেকফাস্টেও লাবিবা নেই। তানভীর কি যেন একটা ভাবতে ভাবতে আপেলে কামড় দিচ্ছে। পুরো টেবিল জুড়ে খাবার। জামাই আদরে কোন ফাঁক রাখছেন না শ্বাশুড়ীরা। তানভীর বলে,
” আন্টি আংকেল আমরা বেরোবো। ব্রেকফাস্টের পরেই একসাথে বেরোচ্ছি। ”

সাবিনা লাবিবার রুমের দিকে তাকায়। মেজজা কে ইশারা করতেই বলে,
” এখন যাওয়া হচ্ছেনা। দুপুরে খেয়ে তারপর যাবে। বাড়ির প্রথম জামাই তুমি। ব্রেকফাস্ট না করিয়ে ছাড়ছিনা।”

” আন্টি আমার ফ্রেন্ডসদের যেতে হবে। আমিতো আসছিই পরে। ”

” না না তা হবে না। লাঞ্চের আয়োজন করছি বাবা। থেকে যাওনা।”

কাজিন মহলকে ইশারা দিতে তাঁরাও তানভীরের হাত চেপে ধরে,
” দুলাভাই পরে যান না। আমাদের তো ঠিক ভাবে আলাপ ই হলো না। আমরা কিন্তু আপনাদের ছাড়ছিনা।”

সাবিনা ছোট জাকে নিয়ে লাবিবার রুমে যায়। জানালা খোলা। উপুড় হয়ে ভুস ভুস করে ঘুমুচ্ছে মেয়েটা। গতকালের শাড়িটাও ছাড়েনি। তানভীর ডাইনি্ং এ এখনো বুঝানোর চেষ্টা করছে। চলে যাবে সে। আর এদিকে মেয়েটা ঘুম থেকেই উঠেনি। দুপুর পর্যন্ত থাকলে যদি দুজনের আলাপ হয় সেজন্য তানভীরকে আটকাতেই হবে। অনেক ডাকাডাকির পর লাবিবাকে ঘুম থেকে উঠানো যায়। বেচারা চোখ মেলতেই পারছেনা। গতদিন এতো কান্নার পর রাতেও কেঁদেছে। ঘুমিয়েছে ঘন্টা তিনেক হলো প্রায়। মা কাকীর ডাকাডাকিতে বাধ্য হয়ে দরজা খুলতে হলো। সাবিনা ছোট জা কে ইশারা করে চলে গেলো। ঘরে নতুন জামাই। অনেক পদ রাঁধতে হবে তাকে।

ছোট কাকী এসে লাবিবাকে মৃদু আওয়াজে বকা ঝকা করে এরকম বোকামোর জন্য। নতুন জামাই তার উপর এতো বড় মাপের লোক! তার সামনে মান ইজ্জত সব শেষ করে দিয়েছে। শ্বশুরবাড়িতে প্রথম রাত কাটাতে হলো বন্ধুদের সাথে! শ্বশুড় শ্বাশুড়ির এর থেকে বড় লজ্জা কি আর কিছু হতে পারে? লাবিবা যেনো ভূলেই গিয়েছিলো তানভীরের কথা। এখন মনে পড়তেই হাঁসফাঁস করতে লাগলো। কাকী ঠেলে ঠুলে গোছল করতে পাঠালো। গোছল শেষে লাবিবা পড়লো একটা সুতি গাউন। সেটা দেখেই কাকী রেগে গেলো। চোখ রাঙিয়ে বললো,
” লাবি মা তুই হলি নতুন বউ! গতকাল বিয়ে হয়েছে। তুই পড়বি শাড়ী। তা না পড়ছিস গাউন! জামাই আছে ঘরে। তাড়াতাড়ি চেঞ্জ কর। ”

” কাকী মনি প্রেশার দিবে না একদম। সব কিছুতেই তোমাদের প্রেশারে আমি শেষ হয়ে যাচ্ছি। এখন ড্রেসটাও মন মতো পরতে পারবোনা?”

” মা রে চুপ যা। আস্তে। জামাই শুনতে পাবে যে। তোর কলিজায় ডর ভয় কি নেই? মান সম্মান আর আমাদের রাখবিনা।”

” কাকী মনি আমি ঠিক ঠাক শাড়ি সামলাতে পারিনা।”

” ভেতরেই থাকবি। বাইরে তো যাবিনা। পড়ে নে না মা।”

শাড়ি পড়িয়ে দিয়ে লাবিবাকে খাইয়ে আবার ছুটে রান্নাঘরে।ঘরে নতুন জামাই রান্না দেখতে হবে।

ফাহাদ ছেলেটা ছেড়ে দেওয়ার ছেলে নয়। সে এসে অসভ্যতামো শুরু করেছে। লাবিবাকে বিয়ে করবে বলে আরজি জানাচ্ছে। তানভীর লাবিবাকে বিয়ে করেছে শুনে তার অসভ্যতার মাত্রা বেড়ে গেছে । গলা ফাটিয়ে লাবিবাকে ডাকছে। তানভীর ফাহাদকে নিয়ে বাড়ির বাইরে চলে যায় । রাস্তা দেখিয়ে বলে,
” চলে যাও। আর ভুলেও এদিকে আসবে না। ”

” স্যার আপনি এটা কি করে করতে পারেন? এতো বড় বেইমানি আমি মেনে নিবো না। লাবিবার সাথে আমার বিয়ে হবার কথা ছিলো । আর কারো না। ”

” চুপ চাপ চলে যাও ফাহাদ। আশেপাশে লোক জড়ো হবে। এমনিতেই কাপুরুষের মতো চলে গেছো বিয়ে করতে এসে। মেয়েটার কথা একবারো চিন্তা করোনি। তোমার জন্য এই পরিবারের প্রধান হসপিটালাইজড হয়েছে। আজকে আমি আনমেরিড জন্য বিয়েটা করে তাঁদের বাঁচাতে পেরেছি। নয়তো কি হতো একবার ভেবে দেখেছো?”

” লাবিবাকে ছেড়ে দেন না স্যার। আমি আর বাবার কথা শুনবো না। লাবিবাকে নিয়ে ঢাকায় চলে যাবো।”

” এই কথাটা গতকাল তোমার ভাবা উচিত ছিলো। বিয়েটা যে ভাবেই হোক না কেনো হয়েছে। লাবিবা এখন আমার ওয়াইফ। আমার একটা সম্মান আছে। আমার সম্মান হানি কারক কোন কিছুই আমি এলাও করবো না। আমার ওয়াইফের থেকে দূরে থাকবে।”

” আমি লাবিবাকে ভালোবেসে ফেলেছি স্যার। প্লিজ আপনি ওকে ছেড়ে দেন।”

” ছেড়ে দিয়েই কি হবে? লাবিবাই তো তোমাকে চায়না। আমাকে বার বার বলেছে সে তোমাকে পছন্দই করেনা। তার বাবার জন্য তোমাকে মেনে নিচ্ছে। ফয়দা কি ব্রো?”

“আমি ওকে ঠিক আমার করে নিবো ।”

” ইতোমধ্যে সে আমার হয়ে গেছে। সসম্মানে যেতে চাইলে এখনি যাও ব্রো। আমার রাগটা আবার বেশ খারাপ। বেশিক্ষন কন্ট্রোল করতে পারিনা।”

চরম অপমান নিয়ে ফাহাদ চলে যায়। লাবিবা বারান্দায় দাঁড়িয়ে সবটাই খেয়াল করে। সে আর রুম থেকে বের হয়না। লাঞ্চ শেষে তানভীর যখন চলে যাবে তখন শালা শালীরা তানভীরকে লাবিবার সাথে দেখা করানোর জন্য লাবিবার রুমে নিয়ে যায়। কিন্তু কেউ সেখানে থাকেনা। দরজা অব্দি পৌঁছে দিয়েই চলে যায়। রুমে নক না করেই ঢুকতে হয়। দরজা খোলা। ভেতরে পা রাখতেই লাবিবাকে দেখে থেমে যায়। লাল টকটকে সিল্কের শাড়িতে খোলা চুলে লাবিবাকে দেখে তানভীরের চোখ জুড়িয়ে যায়। হিযাপে মেয়েদের ফিফটি পার্সেন্ট সৌন্দর্য ঢাকা পড়ে এটা তানভীর বিশ্বাস করতে বাধ্য হয়।‌ চোখে ঘোর লেগে যায়। লাবিবা কাঁচুমাচু করে দাঁড়ায়। সত্যি সে অভদ্রতা করছে। এখন কি বলবে খুঁজে পাচ্ছে না। বরাবরের মতো ফর্মাল ড্রেসে সামনে দাঁড়ানো শ্যামপুরুষের চোখে চোখ রাখার ক্ষমতা নেই। বরং চিরপরিচিত ভিতীটাই কাজ করছে। নিরবতা তানভীরই ভাঙে।
” ঠিক আছো?”

” হু।”

” আমি তাহলে যাচ্ছি। ”

লাবিবা মাথা নাড়ে। ” হু। ”

তানভীর হাতটা লাবিবার দিকে তুলে। গভীর দৃষ্টিতে তাকায়। হাত পাঁচেক দুরুত্ব বজায় রেখেই আবদার জানায়,
” তোমায় একটু ছুই? ”

” হু? ”

চমকে তাকায় লাবিবা। তানভীরের ঠোঁটে খেলা করে মৃদু হাসি। সেই হাসিতেই খেই হারিয়ে ফেলে লাবিবা। হা করে তাকিয়ে থাকে। তানভীর লাবিবাকে আপাদমস্তক দেখে নেয়। অনেক কিছুই বলতে ইচ্ছে করছে তার। কিন্তু এই মুহূর্তে সেসব কথা সমিচীন নয়। তবে একটু প্রশংসা না করেও থাকা যাচ্ছে না। তাই আবদারের সহিত বলেই ফেলে,
” তুমি সত্যিই অনেক কিউট। তোমায় একটু ছুঁই? ”

” কি_কি_কি কেন?”

ফের আবার সেই প্রশ্ন। তুতালাতে থাকে লাবিবা। তানভীর সেই মুহূর্তে এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটিয়ে ফেলে। লম্বা তিন পা বাড়িয়ে আচমকা লাবিবার পেটের দুপাশে হাত গলিয়ে পিঠ চেপে বুকের উপর তুলে জড়িয়ে ধরে। লাবিবাকে আচমকাই হটাৎ উপরে উঠাতেই তাল সামলাতে চিৎকার দিয়ে দুহাতে জড়িয়ে ধরে তানভীরের গলা। তানভীর চোখ বন্ধ করে লাবিবার কাঁধে মুখ রেখে কয়েক সেকেন্ড সময় নেয়। অনুভব করে তার গতকালের বিবাহিত বউটার সান্নিধ্য। নাকে শুষে নেয় অগোছালো শ্যাম্পু করা চুলের ঘ্রাণ। কাঁধ থেকে মাথা তুলে সমান্তরালে চোখে চোখ রাখে। ধীর কন্ঠে বলে,
” এভাবে কখনো কান্না কাটি করে মুখ ফুলাবেনা। তোমার বিদ্ধস্ত মুখ আমার একদমই দেখতে ভালো লাগে না। “‘

চলবে ___

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here