#গল্পঃ_একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#পর্বঃ_১৮
#লেখাঃ_ইয়াসমিন_খন্দকার
—-
প্রভা আজ বাড়িতে ফিরল উদাস মনে। তার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে বিভিন্ন চিন্তা ভাবনা। যা তাকে শান্তিতে থাকতে দিচ্ছে না মোটেই। আবিরের প্রতি তার সন্দেহ ক্রমশ বাড়ছে। তাই সব সত্য প্রভাকে বের করতে হবে। আর সেটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব।
এদিকে প্রভা বাড়িতে আসতেই দেখল তার বাবা-মায়ের খুশি মন। প্রজ্ঞা বেগম এগিয়ে এসে প্রভার মাথায় হাত রেখে বললেন,”তাহলে শেষমেষ আল্লাহ তোকে সুবুদ্ধি দিলো। এখন তুই বিয়ে করে সংসারী হলেই আমি আর তোর বাবা নিশ্চিত নই।”
প্রভা মলিন হাসল শুধু। আকরাম খান নিজের মেয়ের উদ্দ্যেশ্যে বললেন,”বিয়ের পর দেখবি তুই অনেক সুখী হবি। অতীত আর ফিরে আসবে না তোর জীবনে।”
প্রভা এসব কথায় মনযোগ দিল না। তার এখন আবিরের ব্যাপারে জানতে হবে। আর এই জন্য সে একটা পন্থা বেছে নিলো। প্রভা আবিরের ব্যাপারে ইন্টারনেটে সার্চ করল। এতে অবশ্য তার নামে ভালো ভালো নিউজই সামনে এলো। কোথাও গরীবদেরকে বস্ত্র বিতরণ করছে তো কোন অনাথ আশ্রমে দান খয়রাতি করছে। এসব দেখে প্রভার মনে হলো,”একটা মানুষ কি সত্যিই এত সুন্দর নাটক করতে পারে? সমাজের সামনে এতটাও ভালো সেজে থাকা যায়? এমন একজন মানুষ যখন জনপ্রতিনিধি হয় তখন তো সেই এলাকার মানুষ কিছুতেই সেফ থাকে না। আমাকে এসব ব্যাপারে আরো খোঁজ নিতে হবে।”
হঠাৎ করেই একটা নিউজে প্রভার চোখ আটকে গেল। নিউজে প্রভা দেখল সেখানে লেখা,”ড্রাগ ডিলিং এর কেসে জড়িত হিসেবে সন্দেহ করাচ্ছে হচ্ছে চট্টগ্রাম-২ আসনের সংসদ সদস্য আবির হোসেনকে।”
প্রভা আরো বিস্তারিত নিউজ পড়ল। সেখান থেকেই সে বুঝল কেসটা নিয়ে পড়ে আর কথা হয়নি৷ তার মানে এই কেসটাকে ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে।হয়ত নিজের ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়েই এটা করেছে আবির। প্রভা নিউজটার ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে বলল,”যতই মুখোশ পড়ে থাকুন না কেন মিস্টার আবির হোসেন, আপনি যে কেমন মানুষ সেটা আমি উপলব্ধি করতে পারছি। এবার শুধু আপনার বিরুদ্ধ কোন প্রমাণ চাই আমার।”
~~~~~
পর দিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই প্রভা দেখল তার মা-বাবাকে ভীষণ ব্যস্ত লাগল। প্রভা এসব দেখে জিজ্ঞেস করল,”কি হয়েছে? তোমাদের এমন দেখাচ্ছে কেন?”
আকরাম খান হেসে বলেন,”আমাদের মেয়ের এনগেজমেন্ট বলে কথা। আমাদের তো একটু ব্যস্ত হতেই হবে। কত গেস্টদের দাওয়াত দিতে হবে।”
প্রভা হতবাক হয়ে বলে,”এনগেজমেন্ট মানে?”
“মিস্টার রুহুল আমিন তো আজ কল করেছিল। উনিই তো বললেন আজ তোর আর আবিরের এনগেজমেন্ট করাতে চান।”
“এভাবে হঠাৎ করে…”
“ওনারা নেতা-ফেতা মানুষ। অনেক ব্যস্ত থাকেন। এখন হয়তো ফ্রি আছেন তাই তাড়াহুড়ো করে এনগেজমেন্ট টা করিয়ে দিতে চাইছেন।”
প্রভা হতাশার নিঃশ্বাস ফেলল। না আবিরের মতো একজন মানু্ষকে সে কিছুতেই নিজের জীবনে জড়াবে না। তাই তাকে যা করতে হবে দ্রুততার সাথেই করতে হবে। এই ভাবনা নিয়েই সে বাড়ি থেকে বের হতে নিলো। এমন সময় প্রজ্ঞা বেগম তার পথ আটকে বললো,”তুই এখন আবার কোথায় যাচ্ছিস? আজ তোর কোথাও যাওয়ার দরকার নেই।”
“আমাকে যেতেই হবে মা। আমার খুব জরুরি কাজ আছে।”
এই বলে আর কোন কথা শুনেই প্রভা চলে গেল। প্রজ্ঞা বেগম হতাশ হয়ে চেয়ে রইলেন শুধু।
এদিকে প্রভা রুহুল আমিনের সাথে দেখা করতে এসেছে। আজ সকালেই রুহুল আমিন হাসপাতাল থেকে বাড়ি এসেছেন। আবির তখন বাড়িতে ছিল না। প্রভাকে দেখেই রুহুল আমিন বললেন,”প্রভা মা, তুমি এসেছ।”
“হ্যাঁ, আঙ্কেল। শুনলাম আপনি নাকি আজ আমাদের এনগেজমেন্ট করাবেন বলে ভেবেছেন।”
“ঠিক শুনেছ। আসলে আমার শারীরিক অবস্থা তো বুঝতেই পারছ। আর ক’দিন বাঁচি না মরি তার তো কোন ঠিক নেই। এই জন্য আমি চাচ্ছি আমার জীবনদ্দশাতেই তোমাদের বিয়েটা হোক। এখন আপাতত এনগেজমেন্ট টা করাই। এরপর সঠিক সময়ে বিয়ের ব্যবস্থাও করাব খুব শীঘ্রই।”
“মিস্টার আবির কি বাড়িতে আছেন?”
“না, ও কিছু জরুরি কাজে বাইরে গেছে।”
প্রভা মনে মনে বলে,”এটাই সঠিক সুযোগ। আমাকে এই সুযোগটাকেই কাজে লাগাতে হবে।”
প্রভা রুহুল আমিনকে বলে,”আঙ্কেল আপনার শ্বাসকষ্টের ওষুধটা একটু দেখতে পারি?”
রুহুল আমিন প্রভাকে ইশারা করে দেখাল। প্রভা ওষুধটা হাতে নিয়ে দেখল। আর বিড়বিড় করে বলল,”ওষুধটা তো ঠিকই আছে। তাহলে…আমায় এই ওষুধ পরীক্ষা করে দেখাতে হবে যে এখানে কোন ক্ষতিকর কিছু মেশানো আছে কিনা।”
প্রভা ওষুধের কিছু অংশ সুকৌশলে নিজের সাথে একটা বোতলে ভড়ে নেয়৷ অতঃপর রুহুল আমিনকে বলে,”আঙ্কেল, আপনি নিজের খেয়াল রাখবেন। আমি আসছি। আজ তো আবার দেখা হবেই।”
“আচ্ছা মা, সাবধানে যেও।”
প্রভা ওষুধের স্যাম্পল নিজের সাথে এনেছে৷ এখন তার উদ্দ্যেশ্য এই স্যাম্পল টা ল্যাবে টেস্ট করাতে হবে৷ তারপর যেই রেজাল্ট আসবে সেটা দেখেই সে আবিরের আসল রূপ সবার সামনে আনতে পারবে।
~~~~~
তখন সন্ধ্যাবেলা। আবির ও প্রভার এনগেজমেন্টের আয়োজন তখন করা শেষ। এখন সবাই শুধু প্রভার আসার জন্যই অপেক্ষা করছে। কিন্তু প্রভার আশার কোন কথা নেই। এদিকে রুহুল আমিনও নিজের রুম থেকে বের হন নি এখনো। প্রজ্ঞা বেগম রাগে গজগজ করছেন। নিজের স্বামীকে তিনি বলছেন,”দেখো তোমার মেয়ের কাণ্ড। এদিকে সকল গেস্ট এসে উপস্থিত হয়েছে আর ওনার কোন পাত্তাই নেই।”
আকরাম খান বলেন,”তুমি কোন চিন্তা করো না তো৷ ওর সময় হলে ও ঠিকই চলে আসবে। হয়তো কোন কাজে আটকে পড়েছে।”
আবির এগিয়ে এসে তাদেরকে বলল,”আপনারা চিন্তা করবেন না। আমি প্রভাকে আনতে ওর হাসপাতালে পৌঁছে যাচ্ছি।”
আবির বেরিয়ে পড়ে। প্রভার হাসপাতালের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। প্রভা তখনই হাসপাতাল থেকে বের হয়। আবির প্রভাকে দেখে বলে,”এসো। আমি তোমাকে নিতে এসেছি।”
প্রভা আবিরের কথা মতো চুপচাপ তার গাড়িতে উঠে পড়ে। গাড়িতে চলার পথে আবির অনেক কথা বলে। প্রভা শুধু হু হা করতে থাকে। এমন সময় হঠাৎ প্রভার ফোন বেজে ওঠে। সে ফোনটা হাতে নেয়। রিপোর্ট এসে গেছে। প্রভা যা সন্দেহ করেছিল তাই ঠিক৷ রুহুল আমিনের ওষুধে ভেজাল আছে।
প্রভাকে ফোনে ব্যস্ত দেখে আবির বলে,”এত মনযোগ দিয়ে কি দেখছ?”
প্রভা স্বাভাবিক ভাবে বলে,”তেমন কিছু না।”
আবির বাকা হাসে৷ হঠাৎ অন্ধকার একটা স্থানে গাড়ি থামিয়ে বলে,”আমাকে এতটা বোকা ভেবো না প্রভা। তুমি হয়তো জানো না রুহুল আমিনের রুমে আমি সিসিটিভি লাগিয়ে রেখেছি। তাই ওনার রুমে কখন কি হচ্ছে তার সবকিছুই আমি চাক্ষুস দেখতে পাই।”
প্রভা বুঝতে পারল সে যে রুহুল আমিনের রুম থেকে ওষুধের স্যাম্পল টেস্ট করার জন্য নিয়েছে সেটা আবির বুঝতে পেরেছে। তাই সে আর ভনিতা না করেই বলে,”আপনি এত বড় বেঈমান কি করে হতে পারলেন আবির ভাইয়া? যে মানুষটা আপনাকে নিজের ছেলের মতো দেখল আপনি তারই ক্ষতি করতে চাইছেন। আপনার মধ্যে কি একটুও মনুষ্যত্ব নেই?”
“না নেই আমার মধ্যে কোন মনুষ্যত্ব। আমি যে কতটা অমানুষ হতে পারি সেই সম্পর্কে তোর কোন ধারণা নেই৷ যদি নিজের ভালো চাস তো আমার কথা মেনে নে। সব কথা গোপন রেখে আমায় বিয়ে করে নে। আমি তোকে অনেক সুখী রাখব। একদম রাজরানী করে রাখব।”
“আপনার মতো একজন খারাপ মানুষকে বিয়ে করার কোন প্রশ্নই ওঠে না। আমি মরে গেলেও আপনাকে বিয়ে করবোনা।”
“বুঝতে পেরেছি তুই ভালো কথায় মানবি না। এবার দেখ তোর আমি কি হাল করি।”
বলেই আবির প্রভাকে টেনে গাড়ি থেকে নামাল। তারপর পাশেই একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে নিয়ে গেল প্রভাকে। তাকে মেঝেতে ফেলে বললো,”ভালো কথার মানুষ তুই না। রাজরানী হতে যখন চাস না তখন আর কি। আজ এখানেই তোকে ভোগ করে মে*রে ফেলে রেখে চলে যাব। কেউ টেরও পাবেনা।”
বলেই আবির প্রভার শাড়ির আঁচল ধরে টানতে থাকে। প্রভা নিজের সর্বশক্তি দিয়ে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে থাকে। সাথে চিৎকার করে সাহায্যর জন্য। আবির বলে,”এখানে কেউ তোকে বাঁচাতে আসবে না। আজ আমি এখানেই তোকে মে&*রে পুতে রাখব।”
বলেই প্রভার শাড়ি টেনে খুলে আবির৷ প্রভার পড়নে তখন শুধু পেডিকোট আর ব্লাউজ। সে নিজের সম্ভ্রম বাঁচানোর চেষ্টা চালিয়ে যায়। শাড়িটা কোনরকমে তুলে নিজেকে আবৃত করার চেষ্টা।
(চলবে)…
#গল্পঃএকই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
(সবাই গঠনমূলক মন্তব্য করবেন, ধন্যবাদ)