গল্পঃ_একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায় #পর্বঃ_১৯ #লেখাঃ_ইয়াসমিন_খন্দকার

0
191

#গল্পঃ_একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#পর্বঃ_১৯
#লেখাঃ_ইয়াসমিন_খন্দকার
—-
আবির প্রভার উপর ঝাপিয়ে পড়তে যাবে ঠিক সেই সময় কেউ এসে পিছন থেকে আবিরের মাথায় রড দিয়ে আঘাত করে। আবির মাথায় হাত দিয়ে পিছনে ফিরে তাকায়। সে দেখতে পায় হুডি পড়া এক ব্যক্তিতে। মাস্ক পড়ে থাকায় যার চেহারা সে দেখতে পায় না। আবির বলে ওঠে,”কে তুই?”

কিন্তু সে কোন উত্তর না দিয়ে আবিরের মাথায় আরো একটা বাড়ি মা*রে। আবির মাটিতে পড়ে যায়। এই সুযোগে প্রভা উঠে দাঁড়ায়। কোনরকমে শাড়িটা নিজের গায়ে জড়িয়ে নিয়ে সে দৌড় দেয়। হুডি পড়া লোকটিও তার পিছনে যায়। আর আবির অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকে। বাইরে এসে লোকটি প্রভাকে একটি গাড়ি দেখিয়ে সেখানে উঠতে বলে। কিন্তু প্রভা লোকটিকে বিশ্বাস করতে পারছিল না তাই ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকে। এরপর লোকটি নিজের মুখ থেকে মাস্ক সরাতেই হতবাক হয়ে যায় প্রভা। কারণ সে আর কেউ নয়, সৌভিক।

সৌভিককে দেখে প্রভা বলে,”দাদা আপনি?”

সৌভিক বলে,”হ্যাঁ, আমি। এখন আর সময় নষ্ট করো না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গাড়িতে উঠে বসো। আবির যে কোন সময় আবার চলে আসবে। আমি যেতে যেতে তোমায় সব বলছি।”

সৌভিকের কথা মতো প্রভা গাড়িতে উঠে বসে। অতঃপর সৌভিকও গাড়িতে উঠে বসে এবং ড্রাইভারকে গাড়ি স্টার্ট করতে বলে। প্রভা সৌভিকের উদ্দ্যেশ্যে বলে,”দাদা আপনি এখানে কি করে এলেন? আপনি কি জানতেন আবির এমন কিছু করতে পারে?”

সৌভিক বলে,”হ্যাঁ, এই কদিনে আমি আবিরকে খুব ভালোই চিনেছি। তাই ও কি করতে পারে সেই ব্যাপারে আমার ঠিকই ধারণা আছে।”

“আপনি তো সবসময় আবিরের সাথেই থাকেন। ওর ব্যাপারে যদি আপনি আগেই সব জেনে গেছিলেন তাহলে কোন পদক্ষেপ নেন নি কেন?”

সৌভিক অসহায় কন্ঠে বলে,”তুমি আবিরের ব্যাপারে কিছু জানো না জন্য এমন বলছ। আবিরের যে কত ক্ষমতা সেটা আমি জানি। ও যে কত অপরাধ করেছে নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে সেটা তুমি জানো না। আমি কিছুদিন আগেই ব্যাপারটা জেনেছি।”

“ওনার সব অপরাধের প্রমাণ আমি বের করবোই। উনি যে আঙ্কেলকে ভুল ওষুধ খাইয়েছেন সেটা আমি জানি। আর এর প্রমাণও আমার কাছে আছে।”

সৌভিক বলে,”এসব প্রমাণে কোন লাভ হবে না প্রভা। তুমি ব্যাপারটা বুঝছ না। আবির চাইলে সব প্রমাণ বদলে দিতে পারে। আর বর্তমানের আইন সম্পর্কে তো তুমি জানোই। সবই টাকা দিয়ে কেনা যায়।”

“তাহলে আপনি কি বলতে চাইছেন? ওনার সব অপরাধের ব্যাপারে জেনেও আমরা চুপ থাকব? আজ উনি আমার সাথে যেটা করতে চেয়েছিলেন তারপর আমি কিছুতেই চুপ থাকব না। ওনাকে যোগ্য শাস্তি দেবোই।”

সৌভিক প্রভাকে অনুরোধের সুরে বলে,”এতটা অধৈর্য হয়ো না বোন। আবিরের পেছনে যে কতজন আছে তুমি জানো না। সব নামী-দামী নেতা মন্ত্রীদের সাথে ওর ওঠাবসা। তুমি ওর বিরুদ্ধে কিছুই প্রমাণ করতে পারবে না উল্টে ঐ তোমাকে ফাসিয়ে দেবে।”

“তার মানে আপনি কি চাইছেন দাদা? আমি চুপ থাকি?”

“আমি মোটেই সেটা চাইছি না। কিন্তু এখন তোমার ভালোর জন্য এছাড়া আর কোন উপায় নেই। আপাতত এখানে থাকা তোমার জন্য নিরাপদ নয়। আবির কু**ত্তাটা এখন যেন তেন প্রকারে তোমার ক্ষতি করতে চাইবে। তোমায় মেরে ফেলতে দুবার ভাববে না।”

“আমি এটার ভয় পাইনা। আমি ওনার মুখোশ খুলবোই।”

“এখনই সেটার সঠিক সময় আসে নি বোন। তুমি তোমার এই দাদার উপর ভরসা রাখো। আমি আবিরের সব মুখোশ খুলে দেব। কিন্তু এখন সব থেকে বড় ব্যাপার হচ্ছে তোমার নিরাপত্তা। আমি রায়ানকে কথা দিয়েছিলাম তার অবর্তমানে আমি তোমায় দেখে রাখব। আমার সেই কথা আমি রাখবোই।”

এই বলে সৌভিক নিজের ব্যাগ থেকে কিছু কাগজপত্র বের করে প্রভার হাতে তুলে দিয়ে বলে,”এই নাও।”

“কি আছে এখানে?”

“এখানে তোমার কানাডায় যাওয়ার পাসপোর্ট, ভিসা সব আছে।”

প্রভা অবাক হয়ে বলে,”কিন্তু এগুলো কিভাবে হলো? আমি তো এখনো এপ্লাই করিনি।”

“এখন এত কিছু বলার সময় নেই বোন। আমি তোমায় এখন বিমানবন্দরে নিয়ে যাচ্ছি একটু পরেই কানাডার ফ্লাইট। তুমি যেই হাসপাতালে জবের জন্য এপ্লাই করেছিলে সেখানেই তুমি এখন ডক্টর হিসেবে জয়েন করতে পারবে৷ আর এখন তোমার নিরাপত্তার জন্য তোমায় কানাডায় যেতেই হবে। আর বাকি কথা তুমি কানাডায় গেলেই জানতে পারবে। অনেক কিছুই তোমার অজানা।”

প্রভা অবাক হলো ভীষণ। কি তার অজানার মধ্যে রয়ে গেছে?

~~~~~
বিমানবন্দরের কাছাকাছি পৌঁছে গাড়ি থেকে নামল প্রভা ও সৌভিক। সৌভিক প্রভাকে বলল,”সাবধানে যেও।”

এমন সময় অনুরাধা সামনে থেকে চলে এলো। সে বিমানবন্দরেই প্রভার জন্য অপেক্ষা করছিল। প্রভাকে দেখেই তাকে জড়িয়ে ধরে সে। দুই বান্ধবী একে অপরকে জড়িয়ে ধরে আবেগপ্রবণ হয়ে কান্না শুরু করে দেয়। অনুরাধা প্রভাকে বলে,”সাবধানে যাস তুই। ওখানে গিয়ে নিজের খেয়াল রাখিস। এদিকটা আমি সামলে নেবো।”

“মা-বাবাকে একটু দেখে রাখিস অনু।”

“তুই এসব নিয়ে ভাবিস না। তোর অবর্তমানে আঙ্কেল আন্টির দায়িত্ব আমার।”

সৌভিক তাড়া দিয়ে বলল,”তোমরা আর সময় নষ্ট করো না। এই দেশে থাকাটা এখন প্রভার জন্য নিরাপদ নয়। ঐ আবির নিশ্চয়ই এতক্ষণে জ্ঞান ফিরে পেয়েছে এবং চারিদিকে নিজের লোক পাঠিয়ে দিয়েছে প্রভাকে খোঁজার জন্য। তাই প্রভা তুমি যত দ্রুত সম্ভব এখান থেকে যাও।”

প্রভা অনুরাধা ও সৌভিকের থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায় বিমানবন্দরের ভেতরে। সে চলে যাবার পর সৌভিক অনুরাধার সামনে এসে বলে,”এখনো কি আমার উপর রাগ করে আছ?”

অনুরাধা নিজের চোখের জল মুছে বলে,”নাহ, আমি কেন রাগ করে থাকব? তুমি আমাকে সবটা বলতে পারতে তো। তাহলে আমার এত কষ্ট হতো না।”

“কিভাবে বলতাম বলো? ও তো আমায় এসব বলতে মানা করেছিল। ওর নির্দেশেই তো আমি এতদিন সবকিছু করছিলাম। আবিরের বিশ্বস্ত হওয়ার জন্যই তোমাদের সাথে এত খারাপ ব্যবহার করতে হয়েছে।”

অনুরাধা সৌভিককে জড়িয়ে ধরে বলে,”যদিও তুমি কোনদিন আমায় এসব ব্যাপারে আমায় বলো নি তবুও যান আমি তোমার এই বদলে যাওয়া রূপ কখনোই সহজে মানি নি। সব সময়ই আমার মনে হতো তুমি এতটা বদলে যেতে পারো না। হয়তো কোন বিশেষ উদ্দ্যেশ্যেই এমন কাজ করছ। অবশেষে আমার ভাবনাটাই মিলল।”

সৌভিক প্রভার কপালে একটু চুমু খেয়ে বলে,”আমার উপর এই ভরসাটা রাখার জন্য ধন্যবাদ। নাহলে তো আমি ভেবেছিলাম এই খারাপ হওয়ার অভিনয় করার চক্করে আমি না আবার আমার বউকে হারিয়ে ফেলি।”

“আমি যখন তোমার হাত ধরে বেরিয়ে এসেছিলাম তখনই শপথ করেছিলাম যে মৃত্যুর আগে অব্দি আমি এই হাত ছাড়ব না। তুমি যদি সত্যি বদলেও যেতে তবুও আমি তোমায় ছেড়ে যেতাম না সৌভিক।”

সৌভিক শক্ত করে অনুরাধাকে জড়িয়ে ধরে বলে,”এই সুযোগ তুমি কখনো পাবেও না। আমি তোমায় নিজের থেকে দূরে কোথাও যেতে দেবো না। তুমি আমার ছিলে, আমার আছো আর সবসময় আমারই থাকবে।”

সৌভিক ও অনুরাধা খুব খুশি আজ। আজ আবার অনেকদিন পর তারা এত সুন্দর মুহুর্ত উপভোগ করছে।

(চলবে)…
#গল্পঃএকই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়

[সৌভিক যে খারাপ হয়ে যায়নি, এটা জেনে আপনাদের কেমন লাগল?]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here