গল্পঃ_একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায় #পর্বঃ_১৭ (বোনাস) #লেখাঃ_ইয়াসমিন_খন্দকার

0
199

#গল্পঃ_একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#পর্বঃ_১৭ (বোনাস)
#লেখাঃ_ইয়াসমিন_খন্দকার
—-

প্রভা নিজের কেবিনে বসে রোগী দেখছিল। এমন সময় হঠাৎ করে আবির হন্তদন্ত করে এসে তার কেবিনে প্রবেশ করল৷ আবিরকে দেখে প্রভা ভড়কে গেল। সুধালো,”আপনি হঠাৎ এখানে? আপনাকে তো আমি বলেছিলাম যে, আমি ভেবে চিন্তে নিজের সব সিদ্ধান্ত আপনাকে জানাব। আপনার কি একটুও তড় সইছে না?”

আবির হাফাতে হাফাতে বলল,”তুমি আমায় ভুল বুঝছ প্রভা। আমি এমনি এমনি এখানে আসিনি। রুহুল আমিন আঙ্কেল অনেক অসুস্থ। ওনার অবস্থা বেশি ভালো না। ওনাকে এই হাসপাতালেই ভর্তি করা হয়েছে। উনি তোমাকে দেখতে চাইছেন। প্লিজ তাড়াতাড়ি চলে আসো।”

রুহুল আমিনের অসুস্থতার কথা শুনে অস্থির হয়ে উঠল প্রভার মন। সে ত্বরিত উঠে দাঁড়িয়ে বলল,”কি হয়েছে আঙ্কেলের?”

“হঠাৎ করেই ওনার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছে। অবস্থা বেগতিক দেখেই ওনাকে হসপিটালে নিয়ে এসেছি।”

প্রভা আর এক মুহুর্ত সময় নষ্ট করল না। আবিরকে বলল,”চলুন। আমি এক্ষুনি যাচ্ছি।”

আবির আর প্রভা একসাথে রুহুল আমিনের কেবিনের বাইরে এসে উপস্থিত হলো। আবির প্রভাকে বলল,”আমি তো পেশেন্টের বাড়ির লোক তাই আমাকে এখন ওরা যেতে দিচ্ছে না ভেতরে। তুমি তো একজন ডাক্তার। তুমি গিয়ে ওনার সাথে দেখা করো।”

প্রভা তাই করল। কেবিনে প্রবেশ করেই রুহুল আমিনের চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা ডাক্তারকে সে বলল,”ওনার অবস্থা এখন কেমন?”

“আরে ডা:প্রভা, উনি তো তখন থেকে আপনার কথাই বলছিলেন। ওনার অবস্থা বেশি ভালো না। তীব্র শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। ওনাকে অক্সিজেন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আশা করি দ্রুতই সুস্থ হয়ে উঠবেন।”

প্রভা বৃদ্ধ রুহুল আমিনের দিকে তাকালো। লোকটাকে দেখে প্রভার অনেক খারাপ লাগে। গোটা চট্টগ্রামের মানুষ এই লোকটাকে শ্রদ্ধা করে। একজন এমপি হয়েও যে জনগণের সেবা করা যায়, নিজের স্বার্থের ঊর্ধ্বে গিয়ে সকলের মন জয় করা যায় তার উদাহরণ এই লোকটা। অথচ আজ তার এই কি বেহাল দশা। প্রভা একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললো,”আপনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন আঙ্কেল। আমি এই কামনাই করি।”

বলেই সে কেবিন থেকে বেরিয়ে আসে। প্রভাকে বাইরে আসতে দেখে আবির তার নিকটে গিয়ে বলে,”আঙ্কেলের এখন কি অবস্থা? উনি ঠিক আছেন তো?”

“আপনি চিন্তা করবেন না। উনি ঠিক হয়ে যাবেন ইনশাআল্লাহ।”

আবির প্রভাকে দেখানোর জন্য নাটক শুরু করল। মিছে কান্না করে বলতে লাগল,”ঐ লোকটাই তো এখন আমার একান্ত আপন। উনি ছাড়া আমার আর কে আছে বলো? ওনার কিছু হয়ে গেলে যে আমি একদম একা হয়ে যাব।”

প্রভা নিশ্চুপ থাকে। আবিরের নিদারুণ অভিনয় আর চোখের জল দেখে তার মনেই হয়না যে সে কত বড় নাটক করছে৷ প্রভার মন একটু হলেও গলে যায় আবিরের প্র‍তি। সে আবিরকে আশ্বাস দিয়ে বলে,”আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন। উনি সবকিছু ঠিক করে দেবেন।”

এটুকু বলেই প্রভা সেখান থেকে বিদায় নেয়। কারণ একটু পর তার একটা অস্ত্রোপচার করতে হবে।

~~~~~~~
অটি থেকে বেরিয়ে সোজা রুহুল আমিনকে দেখতে তার কেবিনের সামনে গিয়ে হাজির হলো প্রভা। বাইরে থেকে সে একটি সুন্দর দৃশ্য দেখতে পেল। আবির নিজের হাতে রুহুল আমিনের পাশে বসে তার হাত-পা ডলে দিচ্ছে৷ তার জন্য চোখের জলও ফেলছে। এসব দেখে প্রভার মন আবিরের প্রতি আরো কোমল হতে থাকে। প্রভা ভাবে আজ রায়ান বেঁচে থাকত হয়তো সেও এভাবেই নিজের বাবার সেবা করত। আবিরের প্রতি তার এতদিনের ধারণা এখন ভুল মনে হতে থাকে। তার মনে হয়, সত্যি হয়তো আবির অতীতের জন্য অনুতপ্ত। তাই হয়তো সে এখন রুহুল আমিনের সেবা করছে এভাবে। প্রভা কেবিনে প্রবেশ করে। রুহুল আমিনের পাশে গিয়ে বলে,”আপনি এখন ঠিক আছেন আঙ্কেল?”

রুহুল আমিন অসুস্থতার মাঝেও স্মিত হেসে বলেন,”পরিস্থিতি আর আমায় কই ঠিক থাকতে দিচ্ছে মা। যতবার আমার মনে পড়ে আমার ছেলের শেষ ইচ্ছাটা অপূর্ণই থেকে যাবে ততবার আমার বুক কেপে ওঠে। মৃত্যুর পর ওর সামনে গিয়ে দাঁড়াব কিভাবে?”

প্রভা চুপ হয়ে থাকে। কিছু বলার নেই তার। আবির বলে ওঠে,”আঙ্কেল, কারো ওপর জোর করার অধিকার তো আমাদের নেই। আপনি এসব নিয়ে ভাববেন না। এতে আপনার শরীর আরো খারাপ হবে।”

প্রভা রুহুল আমিনের পাশে বসে। তার হাতটা ধরে আশ্বাসের সুরে বলে,”আপনি চিন্তা করবেন না আঙ্কেল। রায়ানের শেষ ইচ্ছা অপূর্ণ থাকবে না। আমি আবিরকে বিয়ে করতে রাজি আছি।”

প্রভার মুখে এই কথা শুনে আবিরের মনে যেন লাড্ডু ফোটে। সে মনে মনে বলে,”অবশেষে প্রভাকেও আমি তোর কাছ থেকে চিরতরে কেড়ে নিতে পেরেছি রায়ান। তোর সবকিছুই এখন আমার।”

রুহুল আমিন প্রভার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,”আমি জানি, তুমি রায়ানকে অনেক ভালোবাসো৷ হয়তো সারাজীবনই এমন ভালোবেসে যাবে। তবে তোমার কাছে একটাই অনুরোধ। এই হতভাগা আবিরকে একটু ভালোবাসা দিও। ছেলেটা বড্ড ভালোবাসার কাঙাল।”

প্রভা এর প্রতিত্তোরে কিছু বলে না। কারণ তার পক্ষে রায়ান ছাড়া অন্য আর কাউকে ভালোবাসা সম্ভব নয়।

~~~~
আবির সেদিনই প্রেস কনফারেন্স ডাকল। প্রেস কনফারেন্সের মূল উদ্দেশ্য ছিল রুহুল আমিনের শারীরিক অবস্থার সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে সবাইকে অবগত করা। কিন্তু আবির মূলত তার আর প্রভার বিয়ের ব্যাপারটাকেই হাইলাইট করেছে। যাতে প্রভা আর এরপর চাইলেও নিজের সিদ্ধান্ত থেকে সহজে পিছিয়ে আসতে না পারে। সব নিউজ চ্যানেলেই এই নিউজটা চর্চিত হয় যে, চট্টগ্রামের এমপি আবির হোসেন বিয়ে করতে চলেছেন ডা:প্রভা আহসান কে।

এইদিকে প্রভা উদাস মনে হাসপাতালের করিডোরে বসে রয়েছে। হঠাৎ করেই ভীষণ মানসিক দ্বন্দ্বে ভুগছে সে। পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি যে মানুষকে কতটা অসহায় করে দিতে পারে তার বাস্তব উদাহরণ এখন সে নিজেই। প্রভা চোখ বন্ধ করল। এমতাবস্থায় সে শুধু রায়ানকেই দেখল পেল। এমন সময় হঠাৎ কারো ডাকে তার ঘোর ফিরল। একজন নার্স এসে তাকে বলল,”ম্যাম আপনাকে ইমিডিয়েটলি অটিতে যেতে হবে।”

“হুম যাচ্ছি।”

প্রভা উঠে বসে। নিজের ব্যক্তিগত জীবনের জন্য সে দায়িত্বে অবহেলা কিছুতেই করতে পারে না। তাই সে নিজের মন খারাপ পাশ কাটিয়ে যেতে লাগল। হঠাৎ করেই ডা:খানের কেবিনের সামনে এসে তার মনে হলো ভেতরে যেন কোন ঝামেলা হচ্ছে। ডা: খানই রুহুল আমিনের চিকিৎসার দায়িত্বে আছেন। প্রভা কৌতুহল বশত সেখানে দাঁড়িয়ে পড়লো। তখনই ডা:খানের কেবিন থেকে বেরিয়ে এলেন নার্স সুমি। তাকে ভীষণ ভীত লাগছিল। সুমি চলে যেতে নিলে প্রভা তাকে দাঁড় করালো। সুমি দাঁড়িয়ে পড়ল। প্রভা তার কাছে গিয়ে বলল,”ভেতরে কিসের ঝামেলা লেগেছে?”

“কি…কিছু না।”

“সত্যি করে বলো।”

সুমির সাথে প্রভার বেশ ভালো সম্পর্ক। প্রভাকে বেশ সম্মানও করে সুমি। নার্সদের মধ্যে সেই বেশ অন্যরকম, প্র‍তিবাদী স্বভাবের। সুমি এদিক ওদিক তাকিয়ে প্রভার কাছে এসে বলে,”জানেন ম্যাম, মিস্টার রুহুল আমিনের কেস নিয়ে আমার কিছু সন্দেহ আছে। আমি একজন নার্স হওয়ায় আমারও ওষুধ সম্পর্কে কিছু ধারণা আছে। রুহুল আমিনকে যেসব ওষুধ খাওয়ানো আছে তার মধ্যে নিশ্চয়ই কোন ভেজাল আছে। আমি নিজের চোখে দেখেছি ডা:খান প্রেসকিপশনে যেসব ওষুধ লিখে দিচ্ছে তা একজন শ্বাসকষ্ট রোগীর আরোগ্যের জন্য নয় বরং এসব খেলে শ্বাসকষ্ট আরো বাড়তে পারে।”

“এসব কি বলছ তুমি সুমি?”

“আমি একদম ঠিক বলছি।”

“কিন্তু ডাক্তার খান কেন এমন করবেন হঠাৎ? উনি তো এই হাসপাতালের অনেক পুরাতন একজন ডাক্তার।”

“সেটা তো আমি বলতে পারব না। তবে আমি এমপি মহোদয়ের সাথে ওনাকে এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে শুনেছি।”

“আবির!!”

সুমি বলে,”আমি একজন সাধারণ নার্স। এত বড় মানুষদের সাথে লড়তে পারব না। তাই এই বিষয়ে আর কোন সাহায্য করতে বলবেন না প্লিজ।”

বলেই সুমি চলে যায়। প্রভা সুমির বলা কথাগুলোই ভাবতে থাকে। তার মনে সন্দেহ দানা বাধে। প্রভা মনে মনে বলে,”তাহলে কি আবিরের এসব ভালোমানুষির পেছনে গভীর কোন চক্রান্ত লুকিয়ে আছে? আমাকে সবটা জানতেই হবে। আমি আঙ্কেলের কোন ক্ষতিই হতে দেবো না।”

(চলবে)…
#গল্পঃএকই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়

(সবাই গঠনমূলক মন্তব্য করবেন, ধন্যবাদ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here