#তপ্ত ভালোবাসা
#লেখিকাঃরিক্তা ইসলাম মায়া
#পর্বঃ_১২
.
🍁
উনি এই কথা গুলো বলেই আমাকে টেনে সামনে দিকে ঘুরিয়ে আমার দু’হাত নিজের দুহাত দিয়ে দেয়ালে শক্ত করে চেপে ধরে আবারও আমার দিকে ঝুঁকে আসে নিজের চোখ মুখ শক্ত রেখে,, উনি আমার সাথে এমন কেন করছে কিছুই বুঝতে পারছি না আমি, নিজেকে বড্ড অসহায় লাগছে এই মূহুর্তে, আর সেই দিনটার কথা বড্ড মনে পরছে যেদিনটাই আমি উনার সামনে পরেছিলাম, যদি ভাইয়া বিয়েতে উনার সামনে আমি না যেতাম তাহলে আজ আমাকে এই দিনটা দেখতে হতো না, সাথে উনার এমন করে টানাটানিতেও ভুক্তভোগী হতে হতো না, উনি রাগে রি রি করতে করতে আবারও আমার হাত দুটো দেয়ালের সাথে শক্ত করে বারি মারে,,,
.
উনার এমন কাজে আমি ভয়ে চোখ মুখ হিচকে হালকা শব্দ করে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে চলছি আমি, ভয় আর হাতের ব্যাথায় অস্থির হয়ে ওঠি আমি, উনি আমার হাত বারি খাওয়ানোর সাথে সাথে আমার দুহাত ভরতি কাঁচে চুড়ি গুলো দেয়ালের সাথে বারি খেয়ে ঝনঝন শব্দ করে সব-কয়টা চুড়ি ভেঙে নিচে পরে যায়, বাকি কয়েকটা চুড়ি বাদে, আমার দুহাতেই বেশ কয়েকটা চুড়ির টুকরো ডুকে গেছে আর সেই চুড়ির টুকরো দিয়ে হাত থেকে গরগর করে অঝর ধারা রক্তে ভাসতে লাগলো, আমার হাতের রক্তে উনার হাতও ভেসে যাচ্ছিল কিন্তুু সে দিকে তার কোনো হেলদোল নেই উল্টো আমাকে আরও বেশি শাস্তি দেওয়ার জন্য চুড়ি ভাঙ্গা ওপর দিয়ে ইচ্ছা করে শক্ত হাতে চেপে ধরে চুড়ি টুকরো গুলো আরও বেশি করে ঢুকিয়ে দেয় আমার হাতে, এতে করে আমি কেঁপে ওঠে উচ্চ স্বরে চিৎকার করে ওঠি ব্যাথায়,,,
.
আমার এমন করে চিৎকারটা হয়তো উনার কাছে বিষাক্ত কিছু ছিল তাই সাথে সাথে আমার হাত ছেড়ে আমাকে দেয়াল থেকে টেনে একহাতে আমার চুলের মুঠো ধরে অন্য হাতে আমার গাল চেপে ধরে সাথে সাথে আমাকে উল্টো টিকে শুয়ে দেওয়ার মতো করে উনার একটা রানের মধ্যে শুয়ে দিয়ে আমার দিকে উনি ঝুকে পরে খুব কাছে চলে আসে দুজনের নিশ্বাস এক সাথে বারি খাচ্ছে উনার দৃষ্টি আমার চোখ মুখে স্থির রেখেই রাগে গজগজ করতে করতে বলে উঠে,,,,,,
.
—” একদমই ড্রামা করবি না আমার সামনে, সেজেগুজে যখন ছেলেদের সাথে আদিখ্যেতা করিস তখন তো খুব হাসি পাই, তো এখন কেন বেগলাচ্ছিস সাথে চোখে পানিও ফেলছিস, তোর কি মনে হয় তোকে অন্যের সাথে হাসি হাসি প্রেম করতে দিব আমি, আমাকে কি তোর ভালো মানুষ মনে হয় হ্যাঁ, তোর লাইফ জাহান্নোম বানানোর জন্য আছি আমি তাই কারও থেকে সুখ নিতে দিব না, অন্য কারও মধ্যে নিজের সুখটা খুঁজা ছেড়ে দে, এতে করে তুই আর তোর সামনের মানুষটাও বেঁচে যাবি, তোকে যেমন করে শাস্তি দিচ্ছে ঠিক তেমন করেই তোর নগরকেও আমি শাস্তি দিব এর থেকে ও বেশি, তাই আমার অবাধ্য হুশনা, জাস্ট জ্বলিয়ে দিব
.
উনার এমন কলিজা কাঁপানো ধমকিতে এবার সত্যি সত্যি জান যায় যায় অবস্থা আমার, আমি বারবার কেঁপে কেঁপে উঠছিলাম উনার এমন আচরণে লাগামহীন কান্নায় মেতে উঠেছি আমি, কান্না করতে করতে এবার হিচকি উঠে গেছে আমার, আমি সেই কান্না রেশ ধরে হিচকি তুলে তুলে উনাকে (রিদ) উদ্দেশ্য করে বলে উঠে……
.
—” আপনার সাথে কি এমন করেছি আমি যেটার জন্য আপনি আমাকে এতোটা শাস্তি দিচ্ছেন, বারবার আমাকে আঘাত করছেন,,,
.
—” কি করেছিস তুই সেটা তোকে বলতে বাধ্য নয় আমি, আর যদি বলাটা একান্তই প্রয়োজন তাহলে আগে তোকে জ্বালিয়ে নেই তারপর সবটা, (দাঁতে দাঁত চেপে)
.
—” আমাকে কেন এইভাবে শাস্তি দিচ্ছেন…
.
—” বলতে বাধ্য নয়, আর তুই আমার অপছন্দের তালিকায় এক নাম্বারে আছিস তাই, আর তোকে বেসামাল ঘৃণা করি আমি,
.
—” এতোটা ঘৃণা পরও কেন পিছনে পরে আছেন আমার, পিছন ছাড়ছেন না কেন, আর আপনার কি মনে হয় আমি আপনাকে ঘৃণা না করে ভালোবাসি, ছিইইই আপনার মতো বাজে লোকের ফেসটা দেখলেই গা জ্বলে উঠে আমার, আপনার ফেসটাও আমি দেখতে চাই না কেন আসেন আপনি আমার সামনে বারবার,,, (চোখ মুখ শক্ত করে রেগে বলি)
.
আমার এমন গা জ্বালানো কথায় যেন রিদ খাঁন মূহুর্তের ফেটে ফেটে পরছে, আমার এমন কথায় যেন উনার রাগটা সপ্তম আকাশে পৌঁছানোর জন্য যথেষ্ট ছিল, উনি সেই রাগের ফায়ার ব্রিগেড মতো বাস্ট হয়ে জ্বলে পুড়ে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,,,,
.
—” একি বাণি শুনাইছ রেহ বারবার, তোকে মানা করছিলাম আমাকে বাণি শুনাইছ নাহ, আমার সাথে ধার্চ দেখাইছ নাহ, তারপরও কথা কানে যায় নাহ তোর,, জাস্ট অসয্য লাগে আমাকে তোর বলেই তোকে বিয়ে করে নিলাম, এখন বললি আরেকটা কথা, এবার তোর কি হবে আর আমি তোর কি অবস্থা করবো এবার দেখ তুই, আমার চেহারাটা যখন তোর সয্যই হয় না তখন তোকে এই চেহেরাটা দিন রাত দেখার জন্য ব্যবস্হা করে দিব আমি, আর বাকি রইলো আমার ঘৃণাটা তো তোর চিন্তা শক্তি বাইরে আমিও তোকে ঘৃণা করি, তাই তুই যেখানেই সুখ কুঁড়াতে যাবি সেখানেই তোর সুখের বাঁধা হয়ে দাঁড়াবো আমি,, সেখানেই সুখে সন্ধান সেখানেই বাঁধা অবধান আমি,,
.
উনার এমন হাড় কাঁপানো কথা দম যায় আমি, যখনি ঠিক করি কিছু একটা বললো তখনি অল্পতেই দমে যেতে হয় আমাকে, আমি উনার কথা গুলো শুনেই অশ্রু সিক্ত চোখে উনার চোখে দিয়ে তাকালাম আমার এমন করে তাকানোর দেখা উনিও আমার চোখে উনার দৃষ্টি স্থির করে, আমি ব্যাথায় কাতরিয়ে অসহায় টলমলে চোখে উনার চোখে তাকিয়ে আছি আর উনি বারবার আমার চোখে কিছু একটা খুঁজে চলছে, আমার এমন দৃষ্টি সাথে উনি চোখে মিলাতে পারেনি তাই দ্রুততার সঙ্গে নিজের চোখ অন্য দিকে ফিরিয়ে নেয়, অপর দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভেবে আমাকে ঐ অবস্থায় ঠাস করে ছেড়ে দেয়, আর আমি সাথে সাথে চিৎ হয়ে ফ্লোরে লুটিয়ে পরি, আমাকে ফ্লোরে ফেলে দেওয়ার পর সাথে সাথে আমার মুখ দিয়ে খানিকটা উচ্চ স্বরে শব্দ করে ওঠি আহহহহ,,
.
রিদ খাঁন আমাকে ফ্লোরে ওপর ফেলে শান্ত দৃষ্টিতে আমার দিকে এক পলক তাকিয়ে থেকে কিছু না বলে আমার ওপর দিয়ে ডেঁয়ে হনহন করে চলে যায়, আমি উনার চলে যাওয়ার পর হু হু শব্দ করে কান্না করে ওঠি ঐ অবস্থায়, হাতের ব্যাথায় আমি অস্থির হয়ে ছিলাম এখন আবার শরীরে ব্যাথা যা উনি আমাকে ফ্লোরে ফেলে দাওয়ার পর পেলাম,,
.
কিছুক্ষণ কান্না করার পর নিজের সামলিয়ে ওঠে বসি চারপাশে চোখ বুলিয়ে নিয়ে কাউকে দেখতে না পেয়ে
স্বস্তির নিশ্বাস ফেলাম, আমি সবসময় হাসি খুশি থাকলেও নিজের কষ্ট কাউকে শেয়ার করার মতো মেয়ে নয়, তাই এবারও নিজের কষ্ট গুলো লুকানোর জন্য হাত দিয়ে চোখে জল মুছে উঠে দাঁড়িয়ে পরি আমি, পরে হাতে দিকে এক পলক তাকিয়ে থেকে ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে আমার ব্যাগ থেকে টিস্যু নিয়ে হাতের রক্ত গুলো আস্তে আস্তে করে খানিকটা পরিস্কার করে নিলাম, পরে নিজের গায়ে লাল শাড়ির আঁচলটা নিচে হাত দুটো ভালো করে ঢুকিয়ে নিলাম যাতে কেউ বুঝতে না পারে আমার সাথে কি হয়েছে,,
.
আমি ধী পায়ে স্টেজের সামনে গিয়ে যেতেই সামনে এসে পড়লো জিসান ভাইয়া, প্রথমে হাসি মুখে আমার দিকে এগিয়ে আসলেও পরে আমাকে এক পলক দেখে অস্থির গলায় বলে ওঠে,,,,
.
—” রিতু কি হয়েছে তোর, তোর চোখ মুখ এমন ফোলা ফোলা লাগছে কেন, তুই কি কান্না করেছিস,
.
জিসান ভাইয়ার এমন কথায় ভরকে যায় আমি, মূহুর্তেই মাথার মধ্যে কটুক্তি বুদ্ধি আটকিয়ে হাসি মুখে বলে উঠি…..
.
—” ভাইয়া জানো আমি একটা গান গাইছিলাম আর আমার গান শুনে দেখলাম অনেক অনেক মানুষ ভির জমালো আমার দরজায়, আমি তো খুশিতে আৎহারা হয়ে লাফ দিতেই নিচে পরে যায় ফ্লোরে ঠাস করে, আর তখনি ব্যাথা পেয়েই সাথে সাথে চোখ খুলতেই সামনে তাকিয়ে দেখি আমার একটাও দর্শক নেই আমার সামনে, আমি এতক্ষণ চোখ বন্ধ করে স্বপ্ন দেখছিলাম, আমার স্বাদের স্বপ্নটা ভেঙ্গে যাওয়ার কান্না চলে আসছিল তাই একটু কেঁদে নিলাম, তুমি বলো কাঁদবো না আমি,
.
আমার কথা গুলো নিরব দর্শক মতো সবটা স্রবণ করলেও আমার ফ্লোরে পরে যাওয়া বিষয় হজম করতে পারিনি জিসান ভাইয়া, ভাইয়া দ্রুততার সাথে এগিয়ে এসে আমার একহাত টেনে ধরে বলে উঠে কোথাও ব্যাথা পেয়েছি কিনা, আমি তার এমন কথায় নিজের মাথা নাড়িয়ে সুমতি জানিয়ে নিজের হাত দুটো এগিয়ে দিলাম, ভাইয়া আমার হাত দুটো দেখার সাথে সাথে আতংক উঠে দ্রুততার সঙ্গে আমার হাত নিজের হাতে নিয়ে নেয়, পরে আমাকে কিছুক্ষন ভাইয়া আদেশ বাণি শুনিয়ে, বললো ডক্টর কাছে যেতে পরে আমি কিছু বলতে নিব তার আগে ভাইয়া রেগে আমাকে কিছু বলতে না দিয়ে এতো মানুষেরা ভিড়ে মধ্যে দিয়ে আমাকে সেইভ করে ডক্টর কাছে নিয়ে যেতে লাগলো, আর আমি চুপচাপ গাল ফুলিয়ে ঠোঁট উলটিয়ে ভাইয়ার সাথে সাথে যেতে লাগলাম তখনই কি মনে করে আবারও ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে স্টেজের দিকে তাকায় তখনি সাথে সাথে চোখে পড়ল রিদ খাঁনের ভয়ানক দৃষ্টি,, উনার এমন দৃষ্টি দেখে আমি সাথে সাথে ভয়ে ঢুক গিলে দ্রুত সামনে দিকে তাকিয়ে ভাইয়া পিছন পিছন যেতে লাগলাম,, না জানি এখন উনি আবার আমার সাথে কি করে বসে,,,
.
( তপ্ত ভালোবাসা গল্পটি বেশ কিছু দিন না দেয়াই সবাই অনেক মিস করছিলেন তাই পর পর তিনটা পার্ট দিয়ে দিলাম আপিদের খুশি করার জন্য, আর নেক্সট নেক্সট না করে ঘটনা মূলক কমেন্ট করুন ধন্যবাদ সবাইকে)
.
.
চলবে………