তপ্ত ভালোবাসা #লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া #পর্বঃ_৭২

0
205

#তপ্ত ভালোবাসা
#লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া
#পর্বঃ_৭২

🍁
হেনা খানের হঠাৎ এই থাপ্পড়ে জন্য মোটেও প্রস্তত ছিল না রিদ। থাপ্পড় খেয়ে খানিকটা সময় নিয়ে সোজা হয়ে দাড়িয়ে পড়ে নিজের দাদীর সামনে। বিরক্তিতে রিদের চোখে মুখে ভরপুর হয়ে আছে। চাপা রাগটা এবার স্পষ্ট ফেসে ভেসে ওঠেছে। তারপরও নিজেকে চুপ রাখার যথাযথ চেষ্টা করে চলছে রিদ। কতটা সফল হতে পারবে তা জানা নেই রিদের তারপর ও চেষ্টা করেছে সবার সামনে চুপচাপ থাকার। হেনা খান রিদকে থাপ্পড় মেরে রাগান্বিত হয়ে রিদকে উদ্দেশ্য করে বললো……
.
—” তোর জন্য একটা মেয়ে জীবন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে সেটা তোর দেখার বিষয়ই না! এতোটা পাষান্ড তুই কখন হলি রিদ।
.
দাদীর কথায় বিরক্তি হন রিদ। একটা কথা কতবার নিজের দাদীকে বুঝাবে সেই চিন্তায় চিন্তাই বিরক্তি চলে আসে রিদের মাঝে। তারপর ও রিদ বিরক্তিতা নিয়ে দাদীকে সোজাসাপ্টা উত্তরে বললো……
.
—” এখানে পাষান্ড আমি নয় তুমি দাদী। নাতী সুখের জন্য মেয়ে ঠিক করেছো অথচ একটা বার সেই নাতীকেই প্রশ্ন করনি যে তার সেই মেয়ে সাথে বিয়ে করতে ইচ্ছে পোষণ করেছে কিনা। হ্যাঁ আমি বিয়ের জন্য সমুতি দিয়ে ছিলাম কিন্তু নিধিকে বিয়ে করবো বলে তোমাকে বলেনি কখনো। তাহলে তুমি আমাকে দোষ দাও কোন অপরাধে দাদী। আমি তো তোমাকে বলেছিলাম তোমার প্রথম পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করবো। নিধি তো তোমার প্রথম পছন্দের মেয়ে নয় তাহলে। আমার জানা মতে তোমার প্রথম পছন্দের মেয়েটাই হলো আমার বউ মানে রিত। সেদিন তোমাকে স্পষ্ট ভাষায় রিতের কথা বলেছিলাম আমি। এবার তুমি যদি আমার কথা গুলো বুঝতে ভুল করো তাহলে সেটা তো আর আমার দোষ হতে পারে না তাই না দাদী। তাহলে এবার তুমি বলো এখানে আমি কখন নিধিকে ধোকা দিলাম। ভুল করবে তোমরা আর দোষ চাপাবে আমার গায়ে দাদী! আর সেটাও আমাকে মেনে নিতে হবে!

.
রিদের এমন উক্তি মূলক যুক্তিতে মূহুর্তেই বোকা বনে যায় হেনা খান সহ উপস্থিত সবাই। কাকে কি দোষ দিবে সেটা ভেবে না পেরে চুপটি করে থাকতে হয় হেনা খানকে। হেনা খান রিদের কথার গোলকধাঁধায় ফেঁসে যাওয়ার নিধিকে নিয়ে আর কোনো রকম মতো প্রকাশ করতে না পারাই খানিকটা নিজের মধ্যে সংযম রেখে রিদকে উদ্দেশ্য করে বললো……
.
—” নিধি যদি তোর পছন্দ নাই হতো তাহলে আমাকে আগের কেন বলিস নি? আর দ্বিতীয়ত্ব তোর যদি মায়ার সাথে বিয়ে হয়েই থাকে তাহলে আগের কেন বলিস নি এই ব্যাপারে আমাদের? কেন রুদ্রের জীবনটা নষ্ট করলি তোর দু’জন ?

.
হেনা খানের কথায় তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায় রিদ হেনা খানের দিকে। এই মূহুর্তে নিজের দাদীকে বড্ড জন দরদী মনে হচ্ছে রিদের কাছে। একবার নিধি জন্য তো অন্যবার রুদ্রের জন্য লড়াই করতে দেখে মূহুর্তেই রিদের মেজাজ খারাপ হচ্ছে তারপরও নিজেকে সংযম রাখার চেষ্টা করে দাদীর ওপর বিরক্তি প্রকাশ করে বললো……
.

—” বললাম তো দাদী রিতকে আমি জোর করে বিয়ে করেছি তাই ওহ আমাকে স্বামী হিসেবে মানতে নারাজ ছিল বলে আমিও কাউকে জানাই নি। আজ স্বামী হিসেবে আমাকে চাই তাই তো আজ মাইক দিয়ে বাহিরে সবাইকে পাবলিসিটি করেছি। কেন তুমি শুনোনি আমার বউয়ের কথা?

.
রিদের এমন খাপছাড়া কথায় গা জ্বলে ওঠে আবারও হেনা খানের। ছেলেটা দিন দিন বড্ড বেহায়া হয়ে ওঠেছে একে দোষ করছে তার ওপর আবারও মাইক দিয়ে পাবলিসিটি করে। পরিবারের সামনে ডিরেক্ট বলছে মেয়েকে জোর পূর্বক তুলে নিয়ে বিয়ে করেছে। ভাবা যায় কতটা অধপথন হয়েছে ছেলেটার। হেনা খান তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে কিছু বলতে যাবে তার আগেই রুদ্র রিদের মুখে মায়াকে জোর করে বিয়ে করেছে এই কথাটা রুদ্রের কানে যাওয়ার সাথে সাথে চোখ তুলে তাকাই রুদ্র রিদের দিকে। রিদের পরের কথা গুলো রুদ্রের কান অবধি না পৌঁছালেও প্রথম কথাটা ঠিকই পৌছায়। রুদ্র দ্রততা সঙ্গে উঠে দাঁড়িয়ে সবার সামনে দিয়ে রিদকে পেরিয়ে মায়ার একটা হাত শক্ত করে চেপে ধরে রুদ্র বলে উঠে…….

.
—” রিদ তো মায়ুকে জোর করে বিয়ে করেছে আর এই বিয়েতে মায়ু সুমতি ছিল না। তাই এই বিয়েকে আমি মানিনা। এই বিয়ে মায়ু মানেও না তাই আমি আজই উকিল দিয়ে ওদের দুজনের ডির্বোস করিয়ে নিব।

.
রুদ্রের কথা ও কান্ডে রিদ তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে রুদ্রকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই হেনা খান পাশ থেকে রুদ্রের সাপোর্ট করে বলে উঠে……

.
—” হ্যাঁ এই বিয়ে আমিও মানিনা। আজই রিদ মায়াকে ডির্বোস দিবে তারপর এর তিন মাস পর তোর সাথে মায়াকে আবার বিয়ে দিব আমি।

.
রুদ্র ও হেনা খানের কথায় মূহুর্তে ভরকে যায় মায়া। রুদ্র ও হেনা খানের মুখে ডির্বোস এর কথা শুনে মূহুর্তে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় রিদের দিকে অশ্রু সিক্ত চোখে। রুদ্র মায়ার একটা চেপে ধরায় অন্য হাতে দ্রুত মায়া রিদকে আঁকড়ে ধরে রুদ্র থেকে বাঁচার জন্য আর ফুপিয়ে কান্না করতে থাকে রিদের দিকে তাকিয়ে থেকে। রুদ্র মায়ার একটা হাত চেপে ধরাতে মোটেও পছন্দ হয়নি রিদের। রিদ মায়ার হাতটা রুদ্রের হাত থেকে ছাড়িয়ে নিতে নিতে রাগে দাঁতে দাঁত চেপে ধরে রুদ্র ও হেনা খানকে উদ্দেশ্য করে বললো…..
.

—” তোমাদের জিজ্ঞেসা করে আমি বিয়েটা করেনি অবশ্যই দাদী। না তখন আমার তোমাদের সুমতি প্রয়োজন ছিল না এখন আছে। এই তোমাদের দুইজনের জন্য আমার পুরো একটা রাম কাহিনি রচনা করতে হয়েছে নিজের বউকে নিজের করে পাওয়ার জন্য। (রহস্য ভাব নিয়ে) তাই আর না এখন তোমাদের দেওয়া আমাদের দুজনের দোয়া লাগবে আর না বদদোয়া। বিয়ে করেছি ব্যাস এখন আমার বউকে নিয়ে তোমাদের সাথে থাকার প্রয়োজন বোধ মনে হচ্ছে না। যখন মনে হবে আমাদের দুজনকে তোমাদের মেনে নিতে সমস্যা হবে না তখন আমাকে জানিও দাদী তার আগে নয়।
.
রিদের কথায় মূহুর্তে চুপ করে যায় হেনা খান। রিদ যা বলে তাই সত্যি সত্যি করে দেখাই। রুদ্র পরিস্থিতি বুঝে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে চলতে পারলেও রিদ তা পারে না। রিদ সবসময় নিজের জেদকে প্রাধান্য দেয় আর তার জন্যই হেনা খানের মনে সবসময় ভয় লেগে থাকে রিদকে নিয়ে। এবারও তাই হচ্ছে রিদ জিদ ধরে যদি মায়াকে নিয়ে অন্য কোথাও চলে যায় তো রিদকে আর ফিরিয়ে আনতে পারবে না হেনা খান নিজের কাছে। আর তিনি যথটাই রিদের ওপর রাগ থাকুক না কেন রিদকে তিনি কোনো কালেই হারাতে চাই না। তাই হেনা খান রিদের কথায় দমে গিয়ে শক্ত গলায় রিদকে উদ্দেশ্য করে বললো…..

—” রিদ সবকিছু একটা লিমিটেড থাকে। তোর জন্য আজ রুদ্রের এই অবস্থা। তোর কি মনে হচ্ছে না তুই বেশি বেশি করছিস?

.
দাদীর কথায় রিদ রাগান্বিত হয়ে বললো….
.

—” কোনটা বেশি বেশি হচ্ছে দাদী? আমার বিয়ে করাটা না তোমার আমাদের ওপর হামলে পড়াটা। দাদী তুমি আগে ঠিক করো তুমি কি চাও? এতদিন বলে এসেছো রিদ বিয়ে কর বিয়ে কর! আর আজ যখন বিয়ে করলাম তখন বলছো আমি রুদ্রের জীবন নষ্ট করেছি! আমি কি রুদ্রকে বলেছিলাম যে আমার বউকে বিয়ের জন্য প্রস্তাব পাটাতে তাহলে আমি কিভাবে রুদ্রের জীবন নষ্ট করলাম। হ্যাঁ তখন জীবন নষ্ট হতো যদি আমার বউয়ের সাথে রুদ্রের বিয়েটা হয়ে যেতো তো। কিন্তু আমি তা হতে দেয়নি তার মানে আমি রুদ্রের জীবন বাচিয়েছি নষ্ট হওয়া থেকে তাই না দাদী।

.
রিদের এতক্ষণ যাবত হেনা খানের সাথে কথা গুলো রুদ্র দাঁতে দাঁত চেপে ধরে শুনে যাচ্ছিল নিজের রাগ কন্ট্রোল করে। লাস্ট আর সয্য করতে না পেরে রুদ্র রিদের দিকে ঘুরে তাকিয়ে শক্ত গলায় বললো…..
.
—” রিদ দেখ তোর সাথে আমি কোনো রকম ঝামেলাই যেতে চাচ্ছি না। তোকে আমি সোজাসাপ্টা ভাবে বলছি মায়ুকে তুই ডির্বোস দিয়ে দে। ওকে তুই জোর করে বিয়ে করেছিস তাই ওহ তোর সাথে থাকতে চাই না। এর থেকে বেশি কিছু আমি তোকে বলবো না কারণ এরপর আমি আর ধয্য ধরে থাকতে পারবো না রিদ। নিজেকে কন্ট্রোল করা আমার পক্ষে অসম্ভব হয়ে পরছে রিদ…..

.
রুদ্রের কথায় মূহুর্তে কপাল কুঁচকে আসে রিদের। রিদ কপাল কুঁচকে তাকিয়ে থেকে বললো…..
.
—“তোকে আমার বউ বলেছে যে ওহ আমার সাথে থাকতে চাই না। কই আমিতো শুনেছি। এখানে উপস্থিত কেউ কি শুনেছে সেটা..? (খানিকটা উচ্চ স্বরে সবাইকে উদ্দেশ্য করে) কেউ শুনেনি মনে হচ্ছে।( ঠোঁট উল্টিয়ে) একটা কাজ কর তুই তোর ভাবিকে জিগ্যেসা কর সে আমার কাছ থেকে ডির্বোস চাই কিনা? সে যদি চাই তো দিব তাঁকে ডির্বোস আমি আজই? তারপর চলে যাবো সবসময়ের মতো বাংলাদেশ ছেড়ে বাহিরের আর আসবে না তোদের মাঝে। কিন্তু যদি রিতের আমার থেকে ডির্বোস না চাই তো আজকে পর উহুম এই মূহুর্তে পর থেকে তুই সবকিছু ভুলে যাবি রিতকে নিয়ে।
.

রিদের কথায় মূহুর্তে থমকে যায় রুদ্র। সাথে রুদ্রের মনে ভয়টাও কাজ করতে থাকে দ্বিগুণ মায়াকে নিয়ে। যদি আবারও মায়াকে হারাতে হয় তো কি করে পারবে মায়াকে ভুলে থাকতে। এতোদিনের জমানো ভালোবাসা হঠাৎ করে কিভাবে ভুলে যাবে রুদ্র। এতোটাই সহজ সবকিছু। এই সবকিছু মনে করতেই বুকটা চিনচিন ব্যাথা অনুভব হয় রুদ্রের। বুক ভার ভার হতে থাকে রুদ্রের। রিদের কথা অনুযায়ী রুদ্র মায়া দিকে তাকায় কাতর দৃষ্টিতে। মায়া তখনো নিজের মাথাটা নিচু করে হিচকি তুলে কান্না করেই যাচ্ছে। সাথে একটা হাত দিয়ে রিদকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। রুদ্র সেই হাতটার দিকে কিছুক্ষণ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে আস্তে করে বললো…….
.
—“মায়ু প্লিজ তুমি রিদকে ডির্বোস দিয়ে দাও আজই। তুমি শুধু রাজি হও বাকিটা আমি দেখে নিব। কি করতে হবে সেটা? রিদকে তোমার মোটেও ভয় পেতে হবে না আমি আছি তো তোমার পাশে।
.

নিশ্চুপ হয়ে দাড়িয়ে আছে মায়া। রুদ্রের কথার কোনো রকম উত্তর না দিয়ে মাথা নিচু করে শুধু কান্না করেই যাচ্ছে। রুদ্র মায়াকে চুপ থাকতে দেখে অধৈর্য হয়ে ওঠে। নিজের রাগের বষে কি করবে বুঝতে না পেরে রুদ্র মায়ার হাতটা আরও শক্ত করে চেপে ধরে মায়াকে ঝাড়ি মেরে উচ্চ স্বরে বলে উঠে……

.
—” তুমি কি কিছু বলবে মায়ু নাকি আমি সবকিছু শেষ করে দিব।

.
রুদ্রের এমন হুমকিতে চমকে উঠে ভরকে যায় মায়া। অতি ভয়ে কি করবে বুঝতে না পেরে মায়া সাথে সাথে ডুকরে কেঁদে ওঠে নিজের একটা হাতে রিদকে জরিয়ে ধরে সবার সামনে নিজের মুখ লুকাই রিদের বুকের মধ্যে। এতটা দেখার সাথে সাথে রুদ্র রেগে মায়াকে টেনে ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসতে যাবে তার আগেই রিদ বাঁধা প্রধান করে রুদ্রকে উদ্দেশ্য করে দাঁতে দাঁত চেপে ধরে বললো……..

.
—” দেখ ভাই! আমার সাথে আর যায় হোক পাওয়ার পাওয়ার খেলতে আসবি না। তুই তো আমাকে চিনিস! নিজের ভাইয়ের সাথে আর যায় হোক আমার পাওয়ার দেখাতে ভালো লাগবে না অবশ্যই। বউয়ের জন্য সর্বোচ্চ করতে পারি তারপর বউ নিয়ে চুল পরিমাণ ছাড় পছন্দ নয়।
.

.

.
চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here