তপ্ত ভালোবাসা #লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া #পর্বঃ_শেষ_পর্ব

0
259

#তপ্ত ভালোবাসা
#লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া
#পর্বঃ_শেষ_পর্ব

.
🍁
চলমান গাড়িতে টানা দু-ঘন্টা বসে থাকার পর অবশেষে চলে আসে রিদের কাঙ্ক্ষিত বাংলোটিতে। গাড়িটি থামতেই রিদ হালকা ঝুকে মায়ার দিকে তাকাই। মায়া রিদের শার্টের কলার চেপে ধরে রিদের বুকের মাথা গজিয়ে ঘুমাচ্ছে। রিদ মায়াকে বাচ্চাদের মতো করে ঘুমাতে দেখে মূহুর্তে শব্দ বিহীন হেঁসে উঠে। মায়া কান্না করতে করতে রিদের বুকে একটা সময় ঘুমিয়ে পরছে তা ঠিকই বুঝতে পারে রিদ। তাই সেও মায়ার ঘুম ভাঙ্গানোর চেষ্টা না করে মায়ার মাথার ওপর ডীপলি একটা কিস করে আস্তে করে মায়াকে নিজের কোলে তুলে নেই। গাড়ি থেকে নেমে সোজা নিজের রুমে দিকে যেতে থাকে আর চারপাশে বডিগার্ড গুলো রিদ ইশারায় কিছু একটা বলে দিয়ে মায়াকে কোলে করে চলে যায় নিজের রুমে দিকে। আসিফও রিদের সাথে সাথে গাড়ি থেকে থেমে যায়। আর আসিফ পিছনে থেকে রিদের যাওয়ার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে গাড়ির মধ্যে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে থেকে আর নিজের মনে বলে উঠে…….

.
—” ভালোবাসা! এই ভালোবাসা অনেক কিছুই করতে পারে বস । একজন মাফিয়া শেষ পযন্ত ভালোবাসা নামক শব্দটি কাছে হারতে হয়েছে তাও একটা মেয়ে জন্য। মানতে হবে বস ভালোবাসা সবিই পারে।

.
কথাটি বলেই আসিফ হেসে উঠে। রিদের সাথে প্রায় পনেরো বছর ধরে আছে আসিফ। খুব ছোট থেকেই খান গ্রুপের সাথে আছে আসিফ। প্রথমত আসিফ আরাফ খানের জন্য কাজ করলেও পরে রিদের সাথে চলে আসে। আসিফ রিদকে খুব কাছ থেকে চিনে প্রায় দশ বছর ধরে। তাই রিদ সম্পর্কে আসিফ সবচাইতে বেশি অবগত। আসিফ জানে রিদ মায়াকে পেতে অনেক বড় প্লেনিং করেছে। আর সে প্লেনিং অনুযায়ী সফলতাও পেয়েছে এজন্য তো আজ মায়া রিদের সাথে। আসিফ রিদের প্লেনিং সম্পর্কে সবকিছু জানে না। কারণ রিদ কখনো কাউকে নিজের প্লেনিং সম্পর্কে জানতে দেয় না। সবাইকে রিদের প্লেনিং অনুযায়ী চলতে হয়। আর সেই অনুযায়ী আসিফও রিদের প্লেনিং এর একটা গুটি ছিল মাত্র। রিদ সবকিছুই নিহুদ ভাবে করে। যার জন্য আসিফও রিদের প্লেনিং কিছুই জানে না। আসিফ হেসে উঠে তৃপ্তিতা প্রকাশ করে আবারও বললো…….

.
—” রিদ খান ব্যাক্তিটি বড়ই অদ্ভুত। তবে আর জায় হোক মায়া ভাবির জীবনে যাতে এই রিদ খান কালো মেঘ না হয়। সবকিছু যেন শুভময় হয় তাদের জীবনের।

কথাটা বলেই আসিফ হেসে সেই চলে যায় নিজ গন্তব্যের উদ্দেশে। কাল আবারও আসবে নিজ কাজে উদ্দেশ্য রিদের কাছে। এইভাবেই চলতে থাকবে তাদের রোজকার রুটিন।

.
🍁
রিদ ঘুমন্ত মায়াকে আস্তে করে শুইয়ে দেয় নিজের বেডের ওপর। মায়াকে শুইয়ে উঠতে যাবে তখনই টান অনুভব হয়। রিদ হালকা কপাল কুঁচকে নিচের দিকে তাকাতেই চোখে পড়লো মায়া ঘুমন্ত অবস্থায় রিদের শার্টের কর্লার এখানো চেপে ধরে আছে শক্ত করে। সেটা দেখে মূহুর্তে মিষ্টি হাসে রিদ। বউয়ের প্রতি তার আজকাল ভালোবাসাটা একটু বেশি আসছে। বউয়ের এমন কাছে আসাটায় কখন জানি নিজের কন্ট্রোল হারিয়ে বসে। তার বউয়ের প্রতি ভালোবাসাটাও তো প্রচুর। আর সেই ভালোবাসার জন্য তো অনেক কাটখড় পোহাতে হয়েছে তাঁকে। শেষ পযন্ত নিজের পরিবারের সাথেও চাল চালতে হয়েছে। সবকিছুই চিন্তা করে রিদ মায়ার হাতটা নিজের শার্টের কলার থেকে ছাড়িয়ে নিতে চাই। কিন্তু ঘুমন্ত মায়া খানিকটা নড়েচড়ে উঠে নিজের দু-হাতে রিদকে জরিয়ে ধরে আরও রিদের বুকের সাথে মিশে যায়। এতে করেও রিদ আটকা পড়ে যায় মায়ার বাহুডোরে। রিদ মায়াকে এমন করতে দেখে এবার হালকা শব্দ করেই হেসে উঠে তাই রিদও আর দেরি না করে মূহুর্তেই ঠিকঠাক ভাবে শুয়ে পড়ে মায়াকে নিজের বুকের সাথে মিশে নেই। আর খুব কাছ থেকে মায়াকে নেশাক্ত দৃষ্টিতে গভীর ভাবে পযবেক্ষণ করতে থাকে রিদ। পড়নে বিয়ের লাল বেনারসি শাড়িটা। মুখে মেকাপ হালকা নষ্ট হয়েছে অতিরিক্ত কান্নার কারণে বিশেষ করে চোখের কাজলটা লেপ্টে গেছে চোখের নিচ দিয়ে। মাথার সামনের কিছু চুল গুলো এলোমেলো ভাবে পড়ে আছে মুখের ওপর। আর ঠোঁটের লাল লিপস্টিকটাও এখনো আগের মতোই আছে। সবমিলেয়ে রিদের কাছে মায়াকে কোলে পরী থেকে কম মনে হচ্ছে না। এই মূহুর্তে মায়াকে রিদের কাছে লাল টকটকে ঘুমন্ত পরী মনে হচ্ছে যাহ রিদের বুকের ওপর শান্তিতে নিদ্রা যাচ্ছে। রিদ মায়াকে দেখতে দেখতে আস্তে করে নিজের একটা হাত মায়ার গাল স্পর্শ করে মুখে ওপর এলোমেলো চুল গুলো দুপাশে দিয়ে মায়ার গালের সাইড করতে থাকে। ঘুমন্ত মায়াকে দেখতে দেখতে আস্তে করে মায়ার গালের ওপর নিজের ঠোঁট বুলাই। পরে নিজের এক আঙুল দিয়ে মায়ার ঠোঁটের সাইড করতে থাকে রিদের কাছে কেমন যেন সবকিছু এলোমেলো লাগছে হয়তো এতোদিন পর নিজের বউকে খুব কাছে পাওয়ার কারণে এমনটা লাগছে। রিদ মায়ার ঠোঁটের সাইড করার মধ্যে দিয়েই আস্তে করে নিজের চোখ খুলে তাকাই মায়া। হঠাৎ ঘুম ভেঙে রিদকে চোখে সামনে দেখে মায়া কিছুক্ষণ মন্ত হয়ে ঘুম ঘুম দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে এক দৃষ্টিতে রিদের দিকে মায়া। ঘুম ভেঙে মায়া কোথায় আছে সেটা বুঝতেই মূহুর্তে চোখ পানি চলে আসে মায়ার। কিন্তু রিদকে আগের মতোই আঁকড়ে ধরে রাখে না ছেড়ে দিয়ে। রিদ মায়ার চোখে পানি দেখে বুঝতে পারে কি হয়েছে। তাই রিদ দ্রুততার সঙ্গে মায়ার চোখের পানি মুছে দিয়ে। আরও খানিকটা মায়ার দিকে ঝুঁকে মায়ার কপালের সঙ্গে নিজের কপাল টিকিয়ে বললো…….
.
—” শুশশশ। ডোন্ট ক্লাই। সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি সব ঠিক করে দিব। তুমি দেখে নিও এক সাপ্তাহ ভিতর আমাদের পরিবার তোমার সাথে দেখার করতে আসবে এবং তোমাকে আমার পরিবারের নিয়ে যাবে। কারণ আমার দাদা-দাদি আমাকে ছাড়া এক মূহুর্তেও থাকতে পারবে না। তোমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য সরি কিন্তু আই প্রোমিস তোমাকে ভবিষ্যতে কখনো এই রকম পরিস্থিতিতে ফেলবো না।
.

রিদের কথায় মায়া চুপ করে গিয়ে। খানিকটা সময় পর নাক টেনে বললো….

.
—” সত্যি তো আমাকে এক সাপ্তাহের ভিতর নিতে আসবে আপনার পরিবার।

.
মায়ার কথায় রিদ চোখে তুলে মায়াকে এক পলক দেখে নিয়ে মিষ্টি হেসে মায়ার নাকে নিজের নাক ঘষে বললো….
.
—” হুমমম একদম সত্যি।

.
কথাটা শুনেই মায়াও টলমল চোখে আগের অবস্থায় আবারও রিদকে প্রশ্ন করে বললো…..

.
—” তাহলে আপনি সবাইকে আমার কথা গুলো মাইক দিয়ে শুনালেন কেন? এতে করে সমাজের সবাই আমার পরিবারকে কত খারাপ ভাবছে আপনি জানেন?
.

মায়ার কথাটা শুনেই রিদ মায়ার কপাল থেকে নিজের কপাল উঠিয়ে চোখে তুলে তাকাই। মায়ার ফেস থেকে রিদের ফেস মাত্র চার আঙুল দূরে। একে অপরের নিশ্বাসে ভারি খাচ্ছে। দুজনের দৃষ্টি একে অপরের ওপর স্থির করে। রিদ মায়ার দিকে তাকিয়ে থেকে শক্ত অবস্থান বললো……
.

—” এতে করে আমার কিছুই করার ছিল না রিত। তুমি সমাজের চিন্তা করে ভালোবাসার মানুষকে হারাতে পারো কিন্তু আমি নয়। আমাকে এমন করতে তুমি বাধ্য করেছো। আজ যদি আমি এমনটা না করতাম তাহলে আজ ঠিকই তোমার সাথে রুদ্রের বিয়ে হয়ে যেতো আর আমার নিধির সাথে। কারণ তুমি সবসময় আমার সাথে সাহস দেখিয়ে কথা বলতে পারো কিন্তু যখন পরিবারের কথা আসে তখন তুমি চুপ করে যাও। কাউকেই কিছু বলতে পারো না আর না আমাকে বলতে দাও। আজ যদি আমি এটা না করতাম তো তুমি কখনোই পরিবারকে বুঝাতে পারতে না তোমার মনের কথা গুলো। আর আমি কি করে পারতাম নিজের বউকে অন্যের সাথে বিয়ে দিতে। বউকে কেউ বাঁকা চোখে দেখলে সেটা আমার সয্য হয় না আর সেই বউকে আমি তুলে দিব অন্যের হাতে এতোটা পাগল আমি নয়। এতো সোজা সবকিছু তোমার কাছে রিত?
.

রিদের এমন কথায় নরম হয়ে আসে মায়া রিদ যাহ বলছে সবিই সত্যি। যাহ করেছে তাও ঠিক করেছে এছাড়া অন্য কোনো পথ ছিল না রিদের কাছে। মায়ার সবটা বুঝে নিয়ে রিদকে শান্ত করার জন্য মূহুর্তেই নিজের কথাটা ঘুরিয়ে নিয়ে বললো……
.

—” দেখুন না আমার বউ সাজটা নষ্ট হয়ে গেছে এখন আমি বাসর করবো কি করে?

.
কথাটা বলেই মায়া দুঃখ প্রকাশ করে মূহুর্তে নিজের ঠোঁট উল্টায় রিদের সামনে। রিদ এতক্ষণ যাবত নিজের মধ্যে চাপা রাগ পোষণ করলেও মায়ার কথা মূহুর্তেই সবকিছু ভুলে যায়। আর মায়া দিকে কপাল কুঁচকে তাকায়। রিদের এমন একটা ভাব যেন এই মূহুর্তে মায়ার কাছ থেকে এমন একটি কথা মোটেও আশা করেনি। রিদ মায়ার দিকে এক ভ্রুঁ কুঁচকে তাকিয়ে থেকে বললো……..
.
—” তুমি কি আমাকে ইনভিটেশন দিচ্ছো তোমার কাছে আসার?
.

রিদের কথায় মায়া খানিকটা লাজুক হেসে, রিদের শার্টের ওপরের বোতামটা নড়াচড়া করতে করতে বললো…..
.

—” কেন ইনভিটেশনটা কি পছন্দ নয় আপনার?
.

রিদ মায়ার এমন কান্ডে হতবাক হয়। রিদ মায়াকে নিজের করে পেতে চাই কিন্তু এখন নয়। রিদের কাছে এটা সঠিক সময় মনে হচ্ছে না তাই নিজেকে কন্ট্রোল করছে রিদ যাতে মায়ার কষ্ট না পাই। কিন্তু মায়ার কথায় রিদ নিজেই আবাক হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু মায়াকে এসব থেকে দূরে রাখার জন্য রিদ খানিকটা বিরক্ত সুরে
বললো…..
.

—” তুমি পাগল হয়ে গেছো…..
.

কথাটা বলেই রিদ মায়ার ওপর থেকে উঠতে নিবে তার আগেই মায়া রিদকে টেনে ধরে আবারও নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে রিদকে রাগ দেখিয়ে বললো……
.
—” পাগল আমি নয় আপনি। বিয়ে করেছি সেই কবেই বাসর করবো না এখন আমি?

.
মায়ার লাগামহীন কথায় রিদ এবার সত্যি সত্যি আবাক হচ্ছে সেই সাথে বিরক্তও। তাই বিরুক্তি নিয়ে মায়াকে খুঁচা মেরে বললো……
.

—” বউ! লজ্জা শরম কি বিক্রি করে আচার খেয়ে ফেলেছো? এতো বাসর বাসর করে

.
রিদের এমন কথায় মূহুর্তে মায়া নিজের বঙ্গিতে প্রশ্নেসিক্ত কন্ঠে রিদকে উদ্দেশ্য করে বললো……
.

—” আমি লজ্জা পেলে আপনি বাসর করবেন এখন?
.
মায়ার এমন বোকা বোকা কথায় রিদ মুচকি হাসে কিন্তু মাশার চোখে ধরা পড়ার আগেই নিজেকে সংযম করে নিয়ে প্রশ্ন বোধক দৃষ্টিতে তাকায় মায়ার দিকে। সেই সাথে কৃত্রিম রাগটা ঝুলিয়ে রাখে ফেসের ওপর। রিদকো এমন করতে দেখে মূহুর্তে মায়া দ্রুততার সঙ্গে আবারও বললো…..
.

—” আপনি নড়াচড়া করবে না। আপনি একটু অপেক্ষা করুন আমি এক্ষুনি লজ্জা পেয়ে আপনাকে দেখাচ্ছি। আমি লজ্জা বিক্রি করেনি ওটা আছে আমার কাছে। আমি দেখাচ্ছি আপনাকে।
.

কথা বলেই মায়া লজ্জা পাওয়ার ভঙ্গি করতে থাকে রিদের সামনে। এমন একটা ভাব করতে যেন মূহুর্তেই সব লজ্জা একসঙ্গে ভর করেছে মায়ার ওপর। রিদ মায়ার কৃত্রিম লজ্জা পাওয়া ফেসটা দেখে নিয়ে জোর পূর্বক হেসে দেখে নিয়ে বললো……

.
—” লজ্জা পাওয়া নাটক শেষ হয়েছে তোমার হুমমম। বাসর করার চিন্তা ভাবনা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাও। আমি সার্ভেন্টকে বলে দিচ্ছি আমাদের জন্য খারার পাঠাতে…..
.

কথা বলেই রিদ আবারও উঠতে যাবে তার আগেই মায়া রেগেমেগে রিদকে টেনে ধরে বিছানার ওপর ফেলে দিয়ে সাথে সাথে মায়া রিদের ওপর উঠে বসে এলোপাতাড়ি কিল দিতে দিতে বললো…..
.

—” বিয়ে করার সময় মনে ছিল না বাসর করতে হবে আপনার। এখন আমাকে দূরে সরিয়ে রাখছেন কেন?
.

মায়ার এমন কান্ডে রিদ শুয়ে থাকা অবস্থায় মায়ার দু’হাত শক্ত করে চেপে ধরে সাথে সাথে মায়াকে ঘুড়িয়ে নিয়ে বিছানা ওপর ফেলে দিয়ে মায়াকে শক্ত করে চেপে ধরে মায়ার ওপর উঠে যায়। আর মায়াকে বুঝানোর চেষ্টা করে বললো…..

—” আমি তোমাকে নিজের থেকে দূরে রাখছি না। তোমাকে একটু সময় দিচ্ছি বড় হওয়ার জন্য, সবকিছু বুঝার জন্য। এসবের জন্য তুমি এখনো অনেক ছোট তাই….
.

রিদের কথায় মায়া রিদের শার্টের কলার চেপে ধরে ক্ষেপ্ত হয়ে বললো…….
.

—” আপনাকে কে বলেছে আমি ছোট আর কিছু বুঝি না? আপনি জানেন আমি বয়স কতো? আমি ঊনিশ বছরের প্রদারপূণ করেছি হুহ্। আর আমি সবকিছুই বুঝি বাসর কি সেটাও বুঝি হুমমম…..

.
মায়ার এমন কান্ডে রিদ নিজের মাথাটা হালকা নাড়িয়ে চাপা সুরে বললো….
.

—” তারমানে তুমি দ্রুত পেকে গেছো তাই তো?
.

মায়া এবার সত্যি সত্যি রিদের সামনে লাজুক হেসে সুমতি জানিয়ে বললো….
.
—” হুমমম।
.
মায়াকে সুমতি জানাতে দেখে রিদ মূহুর্তেই মায়াকে খুঁচা মেরে বললো…….
.
—” ওয়াও! কপাল করে এমন বউ জোটেছে আমার।
.

—” কিহহ?( উচ্চ স্বরে)
.

—” রিত তারপরও তোমার যখন সময় হবে তখন আমি বলবো তোমাকে এখ…… (বুঝানোর চেষ্টা করে)
.

রিদের বাকি কথা গুলো বলার আগেই মায়ার নাহুচ গলায় বললো……
.

—” আমি বিয়ে করেছি সেই কবে এখনো বাসর করেনি। তাহলে আপনিই বলুন আমার ছেলে মেয়ে গুলো কবে আসবে? কবে বড় হবে? কবে আমি তাদের বিয়ে দিব? সবকিছুতে কেমন দেরি হয়েছে যাচ্ছে না আমাদের। আমরা তো পিছনে পড়ে যাচ্ছি আপনি বুঝতে পারছেন না কেন?
.

—” তুমি লম্বা একটা লিস্টও বানিয়ে ফেলেছো তাই না। সেটা কবে বানালে জানতে পারি….. (মজা করে খুচা মেরে)
.

—” আসার সময়….. (লাজুক হেসে)
.
কপাল কুঁচকে মায়ার দিকে তাকিয়ে বললো……
.

—” আসার সময় গাড়িতে? ওয়াও তোমার তো অনেক স্পিড। আসার সময় তো তুমি অনেক কান্না করছিলে পরিবারের জন্য, তাহলে এসব প্লেনিং কখন করলে শুনি।
.
স্বাভাবিক কন্ঠে বললো…..
.

—” কান্না করতে করতেই প্লেনিং করেছি। আমি একসঙ্গে দুটো কাজ করতে পারি তো।
.

রিদ মায়ার কথা ঘুরিয়ে নেওয়ার জন্য বললো…..
.

–” ওয়াও তাহলে তো আমি অনেক ট্যালেন্ডেট বউ পেয়েছি তাই না হুমম। একসঙ্গে দুটো কাজ করতে পারে বউ আমার। রিত তোমার বাকি গুণের কথা গুলো আমি পড়ে শুনব কেমন এখন উঠে তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও।
.

—” আপনি কি আমাকে এড়িয়ে চলছেন? (রাগী কন্ঠে)
.
মায়াকে এড়িয়ে চলছে এটা শুনার সাথে সাথেই রিদ মায়ার দুগাল আকড়ে ধরে মায়ার কপালে নিজের কপাল টিকিয়ে বললো……
.

—” শুশশশশ। আমি তোমাকে এড়িয়ে চলার স্বাধ নেই। সেটা আমি অনেক আগেই হারিয়ে ফেলেছি। আর এখম তুমি আমাকে দুর্বল করছো বারবার। আর কিছুক্ষণ তোমার মুখে এই বাসর বাসর শব্দটি শুনলে সত্যি সত্যি আমি নিজের কন্ট্রোল হারিয়ে বসছো যাহ আমি করতে চাইছি না। সো প্লিজ আমাকে টর্চার করা বন্ধ করো। আমি আর পারবোনা নিতে। আমি সত্যি সত্যি তোমাকে ভালোবাসি। তুমিটা আমার……..
.

রিদ থামে। সে থামতে চাইনি তাঁকে থামতে হয়। কারণ তার ঠোঁট জোড়া চলে যায় মায়ার দখলে। মায়া রিদকে আর কিছু বলতে না দিয়ে হঠাৎ রিদকে টেনে ধরে ডীপলি কিস করতে থাকে। আকস্মিক ঘটনায় রিদ স্তব্ধ হয়ে যায়। মায়ার এতক্ষণ যাবত বকবক করলেও মায়া থেকে অন্তত এ রকম কিছুই আশা করেনি। প্রথম অবস্থায় রিদ হতবাক থাকলেও পরে বিষয়টি আপোষেই মেনে নেই। কি হয়েছে বিষয়টি বুঝতেই রিদও মায়ার সাথে তাল মিলাই দীর্ঘ চুমুতে। প্রথম অবস্থায় মায়া রিদকে টেনে ধরলে পরে রিদ মায়াকে চেপে ধরে বিছানায়। রিদ মায়াতে মন্ত হয়ে মেতে উঠে গভীর ভালোবাসায় দু’জন। একত্রিত হয় দুটি মানুষ। সূচনা হয় দুজনের নতুন পথ চলার অধ্যায়।

.
🍁
এক বছর পর……..

গাল ফুলিয়ে বসে আছে মায়া। রাগটা আজ একটি বেশি পাচ্ছে মায়ার। দিন দিন যেন মায়ার রাগটা বেড়েই যাচ্ছে কেমন যেন খিটখিটে মেজাজের হয়ে গেছে। মায়া রাগ রোজই করে কিন্তু আজ রাগটা একটু বেশিই করেছে আর তার কারণটা হচ্ছে দুটো। এক হেনা খানের রোজ রোজ খাবারের টর্চার ও দ্বিতীয়ত রিদের এখনো বাসায় আসিনি তার জন্য। এখন দুপুর দুইটা বাজতে চললো। মায়ার প্রেগনেন্সি অবস্থায় রিদ মাত্র চার থেকে পাঁচ ঘন্টা অফিসের কাজে বাহিরের থাকে বাকিটা সময় মায়ার সাথেই থাকে এক মূহুর্তের জন্য মায়াকে ছেড়ে কোথাও যেতে চাই না। রিদ সকাল এদশটা সময় আফিসে যায় আর দুইটা ভিতর ভিতর চলে বাসায়। এই ভাবে চলছে বিগত ছয়টি মাস ধরে। হ্যাঁ মায়া ছয় মাসের অন্তরসর্তা। মায়া মা হতে চলেছে আজ ছয় মাস হলো। মায়ার মা হওয়া বিষয়টিতে মায়ার পরিবার ও খান পরিবারের সবাই ভিষণ খুশি হলেও রিদ তেমন একটা খুশি নয়। আর তার কারণটা হচ্ছে তার একমাত্র বউটাকে নিয়ে। রিদের ধারণা তার এতো ছোট বাচ্চা বউ সে আবার নিবে বাচ্চা। মায়াকে বাচ্চারা থেকে দূরে রাখতে চেয়ে ছিল যাতে করে মায়ার কোনো সমস্যা না হয় কিন্তু মায়ার জন্য তা পারেনি। মায়া রিদকে এসব বিষয়ের কিছু না জানিয়েই বাচ্চা প্লেনিং করে বসে আর তার জন্যই রিদের মায়াকে শত শত চিন্তা। রিদ নিজেই মায়ার সব রকম খেয়াল রাখে যাতে মায়ার কোনো রকম সমস্যা না হয়। সাথে হেনা খান ও মায়ার বিশেষ খেয়াল রাখে সবসময়। রিদ ও মায়াকে রিদের পরিবার ঠিক তিনদিন পরেই গিয়েই নিয়ে আসে খান বাড়িতে। কারণ হেনা খান ও আরাফ খান কখনোই রিদ থেকে দূরে থাকতে পারে না আর মায়াও তাদের পছন্দের পাত্রী তাই কোনো রকম বনিতা ছাড়াই গিয়ে নিয়ে আসে। মায়ার পরিবারের সবাই অবশ্য মানতে একটু সময় নেই তারা দুমাস পরে মায়ার সাথে দেখা করতে আসে। রুদ্রের পরিরের সবাই এখন আসার যাওয়া করে। রুদ্র এখন লন্ডন আছে। বিয়ের দিন রাতেই রুদ্র লন্ডন চলে যায় এখনো আসেনি দেশে কখনো আসবে কিনা জানা নেই । রিদের সাথেও যোগাযোগ নেই রুদ্রের। মাঝে মধ্যে হেনা খানের সাথে ফোনে একটু একটু কথা বলে তবে অন্য কারও সম্পর্কে কিছু জানতে চাই না কখনো।হয়তো অভিমানটা একটু বেশিি জমে গেছে নিজের মধ্যে তাই। হয়তো কোনো একদিন অভিমানে পাহাড় ডিঙিয়ে রুদ্র চলে আসবে আপনজনদের মাঝে।নিধি বিয়ে হয়ে গেছে আজ পাঁচ মাস হলো স্বামী নিয়ে সুইজারল্যান্ড আছে এখন। সবমিলিয়ে ভালোই আছে সবাই। হেনা খান জোর করে মায়াকে আরও কিছু খাবার খাইয়ে দিতে থাকে। এমনত অবস্থায় দ্রুততা রুমে ডুকে ঘড়ির টাইম দেখতে দেখতে। দুইটা আঠারো মিনিট বাজে আজ আঠারো মিনিট লেড। রিদ ঘুড়ি সময়টা দেখে অপরাধী দৃষ্টিতে তাকায় মায়ার দিকে। মায়া রিদকে রাগী দৃষ্টিতে দেখে নিয়ে মূহুর্তেই ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় অন্য দিকে গাল ফুলিয়ে। হেনা খান সবটা দেখে নিয়ে মুচকি হেসে কিছু না বলে খাবার গুলো নিয়ে চুপচাপ চলে যায় রুম ছেড়ে। হেনা খান যেতেই রিদ রুমে দরজা আটকিয়ে আস্তে করে বসে মায়ার পাশে তারপর আস্তে করে মায়ার কোলে নিজের মাথাটা রেখে মায়ার পেটের ওপর অংশ চুমু দিয়ে বলে উঠে…..
.

—” রিত তুমি আমার শেষ ঠিকানা। তুমি ছাড়া আমি অসম্পূর্ণ। কারণ তুমিটা আমার পূণতা। আমি ভালোবাসি তোমায়। ভিষণ ভাবে ভালোবাসি। তুমিটা আমার জীবনে সুখের অালো হয়ে এসেছো। তুমিটা আমার সুখের ঠিকানা রিত।

.
রিদের এমন কথায় মূহুর্তে মায়া সব রাগ ভুলে গিয়ে রিদের মায়ায় হাত বুলাতে বুলাতে আদুরের সুরে বললো……
.
—” ভালোবাসি প্রিয়। খুব বেশি ভালোবাসি। সারাজীবন ঠিক এই ভাবেই ভালোবাসতে চাই তোমার।

.
মায়ার কথায় দ্রুততা উঠে বলে রিদ বললো….

.
—-” তুমি? বউ আজ প্রথমবারে মতো তুৃমি বলেছে সেই জন্য তো আমার বউকে এখন আদুর করা উচিত তাই না।
.

রিদের কথায় মায়া খানিকটা নড়েচড়ে উঠে বললো…..
.

—” এই একদমই না। যখন থেকে আমি প্রেগনেট হয়েছি তবে থেকে দেখছি আপনার শুধু একটা বাহানা দরকার হয় আমার কাছে আসার। আমাকে শুধু টর্চার করার সুযোগ খুঁজেন তাই না।
.

রিদ মায়াকে নিজের কাছে টেনে এনে বললো…..
.

—” মোটেও টর্চার করি না তোমায়। আমি কি করবো তুমি বলো যবে থেকে তুমি বেবি কন্সিভ করেছো তখন থেকে আরও বেশি সুন্দর হয়ে ওঠেছে তোমাকে দেখলেই আমার কেমন আদুর আদুর লাগে। তাই তোমার সাথে সবসময় চিপকে থাক। আর এখন তোমাকে আমার আদুর করতে মন চাইছে তো করবো।বউকেই তো করছি তাই না।

.
কথাটা বলেই রিদ মায়াকে কিছু বলতে না দিয়ে সাথে সাথে মায়ার ঠোঁটে জোরে দখল করে নেই নিজের মাঝে। এইভাবে বেচে থাকুক তাদের ভালোবাসা গুলো। আর রিদের অজানা রহস্য গুলো সব রিদের মাঝেই রয়ে গেল। তা কখনোই প্রকাশ ভাবে মায়া বা অন্য কারও সামনে।

.
(নেক্সট গল্পটি ঈদের পরে শুরু করবো যারা #শুধু_তোকে_চাই গল্পটি চাইছেন তাদের জন্য ঈদের পর পরই শুরু করবো ইনশাআল্লাহ)

…………………..সমাপ্তি…………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here