#তপ্ত ভালোবাসা
#লিখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া
#পর্বঃ_০৪
.
🍁
অসহ্য মাথা ব্যথার সাথে পিটপিট করে চোখ খুললাম আমি,, নিজের অবস্থান বুঝার জন্য চোখ মুখ হালকা কুঁচকে ফোলা ফোলা চোখ নিয়ে চারপাশে নিরবে তাকায়,,, চোখে সামনে সবকিছু ঝাপসা দেখতে পেয়ে, ধীর গতি হালকা নাড়াচাড়া করতেই নিজেকে আবিষ্কার করি বাঁধা অবস্থায়,,, চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকারে ছেয়ে আমার চারপাশে,,,
.
প্রথমে বিষয় বুঝতে আমার খানিকটা সময় লেগে যায়,,,, পর মূহুর্তে নিজের অবস্থান বুঝতে পেরে আতংকে উঠি আমি,,, আমাকে একটা চেয়ারের সাথে বাঁধে রাখা হয়েছে শক্ত ভাবে, কিন্তুু কেন রাখা হয়েছে তা আমি জানি না,,, সাথে সাথে আমার মাথায় একঝাঁক প্রশ্নের ঝুলি উদয়ন হয় মূহুর্তেই,,, যেমন, * আমি এখানে কেন, *আমাকে এখানে কে বেঁধে রেখেছে,,? আমি এখানে কিভাবে আসলাম,,? ইত্যাদি এমন আরও অসংখ্য প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে আমার মাথায়,,,
.
প্রচন্ড উত্তেজনায় আমি এই মূহুর্তের বিশেষ কিছু মনে করতে পারছি না,, তাই প্রশ্নের প্যারাটা থেকেই গেল আমার মাথায়,,, নিজের প্রশ্নের উত্তর না পাওয়া আশায় আর নিজেকে বন্দীবাসি হতে দেখে, মূহুর্তেই অস্হির হয়ে উঠলাম আমি,, আর সেই অস্থিরতা রেশ ধরে কান্না করে বসি আমি, সাথে প্রচন্ড জোরে জোরে চিৎকার করতে করতে বলে উঠে,,,,,
.
—” হ্যালো কেউ আছেন এখানে,,, আমাকে কেন এখানে বেঁধে রেখেছেন,,, আমাকে ছেড়ে দিন প্লিজ,,, আমি বাসায় ফিরে যেতে চাই,,, আমাকে যেতে দিন,,,
.
কথা গুলো বলেই হু হু করে আবারও কান্না করে বসি আমি,, কি করবো কিছু ভেবে না পেরে বার বার চিৎকার করতে থাকি,,, কারণ আমার চারপাশে পরিবেশটা খুবিই ভয়ানক আর থমথমে,,, গা শিউরে ওঠার মতো,,, চারদিকে এতোটাই নিস্তব্ধ যে বারবার আমারি কান্না আওয়াজ ভেসে আসছে প্রতিধ্বনি হয়ে,,,
ভয়ানক আর বিদঘুটে অবস্থায় পরে আছি আমি,,, আমার কান্না আওয়াজ ছাড়া একটা পোকার আওয়াজ ও পাচ্ছি না আমি,,,
.
এই মূহুর্তে কি করবো আমি কিছুই জানা নেই আমার,,, বারবার পরিবারের কথাই মনে হচ্ছে আমার তাদের সাথে আমার আর দেখা হবে কি না তাও জানি না আমি,, কিছুই জানি না আমি,,, শুধু জানি আমাকে কেউ বেধে রেখেছে এই অন্ধকার রুমটিতে,,,, কান্না করতে করতে একটা সময় চুপ করে যায় আমি,, এতোক্ষণ উত্তেজিত হয়ে কান্না ফলে আমার কিছুই মনে পরছিল না,, কিন্তুু এখন চুপ থাকার ফলে সবটাই স্বাভাবিক লাগছে আমার কাছে সাথে মনে হতে লাগলো একে পর এক করে সবটা,,,,
.
ঠিক ঠাক ভাবে সবটা মনে করতেই আতংক উঠলাম আমি, ভয়রা যেন মূহুর্তের আবারও আমাকে গ্রাস করলো শক্ত ভাবে,,, চোখে সামনে ভেসে আসতে লাগলো সেই ভয়ানক র্স্রীতি চারণ, আমি মূহুর্তেই কেঁপে কেঁপে ওঠি সেইসব মনে করে,,, কারণ আজ দুপুরের আমরা সবাই একসাথে ছিলাম রিদ খানের সামনে, উনি আমার মাথায় নিজের বন্দুকটা তাক করেছিল তারপর আমার আর কিছুই মনে নেই জ্ঞান হারায় আমি সেখানেই,,,
.
আমার সাথে আমার আরও পঞ্চ বান্ধবী ছিল জিসান ভাইয়া ছিল, বাকিরা সবাই কোথায় তাহলে, ওরা কি আমার সাথেই আছে, নাকি ওরা কেউ নেই আমাকে শুধু একা বেধে রাখা হয়েছে,,,, এমন সব প্রশ্নের সাথে সাথে আবারও আমার শরীরটা নেতিয়ে পরছে মূহুর্তেই, কারণ আমি প্রচন্ড উত্তেজনা বিষয়টি কোনো কালেই নিতে পারি না, সাথে আবার এতোক্ষন কান্না ফলে মাথাটাও জিম ধরে আছে তাই গুংড়াতে গুংড়াতে হেলিয়ে পরি চেয়ারে বাঁধা অবস্থায়,,,,,
.
প্রচন্ড ঠান্ডা কিছু আমার ওপরে পরছে অনুভব করায় ধরফরিয়ে উঠি আমি,, কিন্তুু উঠা আর হলো কই আমার, মূহুর্তেই ভুলে যাওয়া বিষয়টি মনে পরে গেল আমার,,, কারণ উঠার সাথে সাথে থামতে হয় আমাকে হাতে টান অনুভব করায়,,,, আমাকে চেয়ারের সাথে বাঁধা হয়েছে বিষয় খেয়াল করতেই সামনে তাকায় আমি,,, সাথে সাথে পরে পড়ল লাল বালতি হাতে রিদ খানকে,, উনাকে লাল বালতি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কপাল কুচকে এলো আমার,,,
আর সাথে সাথে চিন্তা ভর করলো মাথায়,,,, আচ্ছা উনি কি নিজের বিজনেস ছেড়ে, বালতির ব্যবসা করায় নেমে গেল নাকি,, আর তার সেই লাল বালতি জন্যই আমাকে ধরে বেধে রাখা হয়েছে এখানে,,, নিজের লাল বালতি আমার কাছে বিক্রি করা জন্য,,, আচ্ছা লাল বালতি ছাড়া কি অন্য কোনো বালতি পাওয়া যাবে না উনার কাছে,,, আজব মানুষ উনি একটা লাল বালতি বিক্রি করার জন্য, আমাকে এখানে এই ভাবে ধরে বেধে রাখার মানে হয়,,, আমাকে বললেই হতো আমি না হয় আম্মুকে বলে একটা লাল বালতি কিনে নিতাম উনার থেকে,,,,
.
আমার এমন সব চিন্তা ভাবনায় মাঝে আবারও ঠান্ডা কিছু পরে আমার মাথায়, আমি ভয়ে ধরফরিয়ে উঠি সাথে সাথে,,, পরে নিজের দিকে তাকিয়ে দেখি আমার গায়ে ছোট ছোট বরফের গুড়ো ডালা হয়েছে পর পর দুই বালতি,,, আমি বরফের প্রচন্ড ঠান্ডা জমে যাচ্ছি,,, তাই নিজেকে আর ধরে রাখতে না পেরে কাদু কাদু সুরে বলে উঠি,,,,
.
—-” নিব না আপনার লাল বালতি,,, যান তো,,
.
আমার এমন কথায় উনি চোখ মুখ হালকা কুঁচকে আমার দিকে তাকায়, পরে একবার আমার দিকে তাকিয়ে আবারও নিজের হাতে ধরা বালতির দিকে তাকায়,,, উনাকে বালতি দিকে তাকাতে দেখে আমিও সাথে সাথে উনার হাতে থাকা বালতির দিকে তাকায়,,, সাথে সাথে চোখে পড়ল কালো একটা বালতি, কালো বালতি দেখে আমার কাছে তখন বিষয়টি চকমকে মতো ছিল,,, যে উনি কালো বালতিও বিক্রি করে তার মানে আমি আরও ভিন্ন কালারের বালতি পাব উনার কাছে,,, তাই আমি আমার চোখ দুটো বড় বড় করে আবারও প্রশ্ন করে বসি,,,,,
.
—” আপনার কাছে কালো বালতিও আছে,,,
.
আমার এমন কথায় উনি কিছু বুঝতে না পেরে হাতে থাকা বালতিটার দিকে তাকিয়ে থেকে, জোরে চুরে মারে ফ্লোরে,, সাথে সাথে আমি কেঁপে ওঠে উনার এমন আচরণে,,, উনার দিকে করুণ ভাবে তাকাতেই উনি আমার সামনে বসে পড়েন চেয়ারের পায়ের ওপর পা তুলে,,,, আমি উনাকে এ রুপ বসতে দেখে ও ভাবান্তর হল না আমার, আমি উনার দিকে এক পলক তাকিয়ে থেকে আবারও তাকায় ফ্লোরে ভাঙ্গা বালতির দিকে,,, দৃষ্টি আমার সেখানেই রেখেই বলে উঠি,,,
.
—” আমি আপনার ভাঙ্গা বালতি নিব না,,, আমাকে ভালো বালতি দিতে হবে,,,,
.
বলেই উনার দিকে তাকায় আমি, উনার ফেসটা তখনো ছিল স্বাভাবিক,,,, না কোনো রাগ না অন্য কিছু,,, গম্ভীর মুখ বসে আছে আমার সামনে,,, আমাকে উনার দিকে করুণ ভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে উনি আয়েশ করে বসে বলে উঠে,,,,
.
—” লুক, তোমাকে এখানে বাঁধা হয়েছে মেরে ফেলার জন্য, তুমি কি মরতে প্রস্তুুত আছো,,, আমি কাউকে মারতে গেলে তাকে কখনোই পারসোনাল ভাবে জানতে চাই না আমি, কিন্তুু তোমাটা চাইছি,,, কারণ তুমি একটা মেয়ে তাই,,, তোমাকে সম্মান দেখানো জন্য, বলা আরকি,,, তো তুমি কি বলো,,,
.
উনার এমন কথায় মেজাজ খারাপ হয়ে গেল মূহুর্তেই এই লোকটা কত নাম্বার পাগল হলে একটা মেয়েকে মরার অফার করে আল্লাহ জানে,,, আমি রাগটা বজায় রেখে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে,,,,
.
—-” আমার ইচ্ছে করছে আপনি নামক প্রাণিটাকে, লবণ সাথে অনেক বেশি মরিচ গুঁড়ো মিশিয়ে, এমনি এমনি গিলে ফেলতে,,, আপনি এতটা খারাপ কিভাবে হতে পারেন,,, আপনি খারাপ মানুষ, আপনি প্রচন্ড রকমের খারাপ মানুষ একটা,,,
.
আমার এমন কথায় উনি আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়,, পরে রেগে ঝাঁজালো কন্ঠে বলে উঠে,,,
.
—” তোমার কাছ থেকে কি আমি সাটিফিকেট নিতে এসেছি ভালো খারাপ এর,,, আগে গুলি করি, তারপর ওপারে গিয়ে হিসাব করিও কে ভালো, কে খারাপ, তার আগে নয়,,, পরে আমাকে ভালো খারাপে সাটিফিকেট দিতে এসো স্বপ্নে,, এখন মেরে দেয় আগে,,,
.
উনার কথা দমে যায় নি আমি রাগটা যেন মাথায় চেপে বসেছে আমার,,, তাই রেগে রি রি করতে করতে বলে উঠি,,,,
.
—“দেন,, মেরে দেন আমাকে,,,, আপনাকে দেখলে বড্ড গা জ্বলে আমার,,, সাথে এই চিন্তাটা ও আসে একটা মানুষ কতটা ভয়াবহ আর খারাপ হলে বাবার বয়সের মানুষকে মারতে পারে,,, আপনার প্রতি আমার প্রচন্ড রকমে ঘৃণা আসে বারবার,,,
.
—” তোমাকে কি আমি প্রেম করার জন্য বেঁধে রেখেছি,,, বারবার তুমি ঘৃণা করা কথা শুনাচ্ছো আমায়,,, (তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে)
.
উনি খানিকটা থেমে হাতে তাকা বন্দুকটা ঘুরিয়ে দেখতে দেখতে স্বাভাবিক কন্ঠে আবারও আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,,,,
.
—” ধার্চ, আই লাইক ইউর ধার্চ,,, তবে এটা অন্য কারও জন্য তুলা রাখো আমার জন্য না,,, আর তোমার ধারণা বাহির আমি খারাপ, তাই আমাকে বারবার খারাপ বলে সম্মোধন করা বন্ধ করো,,, তোমার সাথে শান্ত ভাবে কথা বলছি বলে,,, যে আমি শান্ত ছেলে হয়ে গেলাম সেটা কিন্তুু মোটেও সত্য না,,, তাই অহেতুক আমাকে ক্ষেপিয়ে লাভ নেই,, এতে করে তোমার সাথে সাথে বাকিরাও সমস্যায় পড়তে পারে, আর তো……
.
উনাকে বাকি কথা গুলো বলতে না দিয়ে দ্রততার সঙ্গে তাড়া দিয়ে প্রশ্ন করে বসি,,,
.
—-” আমার পঞ্চ বান্ধবী আর জিসান ভাইয়া কোথায় আছে,, আপনি কি করেছেন তাদের সাথে,,,,
.
—” আছে,,, (স্বাভাবিক ভাবেই)
.
উনার এমন উত্তর আরও মাথা খারাপ হয় আমার, তাই সে মাথা খারাপ ভাবটা নিয়ে উনাকে আবারও বলে উঠে,,,, ,
.
—” আছে মানে কি, তাদেকে আমার সামনে নিয়ে আসুন অসভ্য বাজে লোক একটা আপনি, আম…..
.
অসভ্য, বাজে, খারাপ, ঘৃণা এই চারটি শব্দ যে আমার জীবন কতটা ভয়াবহতা সৃষ্টি করেছে,, তা আমাকে রিদ খান বুঝায়, ভেঙ্গে গুলিয়ে,,,,, আমার মুখে এইসব কথা শুনে আর নিজের ধরে রাখতে না পেরে সাথে সাথে চেয়ার থেকে উঠে একহাতে আমার গাল আর অন্য হাতে শক্ত করে আমার চুলের মুটি ধরে,,, পরে টগবগে হয়ে ওঠা রাগটা দমিয়ে রাখতে না পেরে গাল চেপে ধরা হাতটা আরও শক্ত করে চেপে ধরে, দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে,,,,,
—” তোকে আমার সাথে ধাচ দেখাইতে মানা করছিলাম না আমি, তারপরও দেখাইলি,,, আমাকে না আঙলাতেও পারতিস,,, এবার এটার জন্য কতটা চুকাতে হয় তোকে দেখ,,, বলেছিলাম আমাকে রাগাস না, এবার আমি আমিতে মেতে উঠবো, আর সেই সাথে তোকেও পুড়াবো বরাবরই,,,, যেটা না করতে চেয়েছিলাম না এবার সেটাই করবো আমি,,,,,
.
বলেই আমার গাল ছেড়ে দিয়ে জোরে জোরে আসিফকে ডাকতে লাগলো উনি,,, আমি উনার এ রুপ চিৎকারে দমে যায় ভয়ে,,, তাই অশান্ত মনে শান্ত হয়ে বসে আছি উনার সামনে,,,
.
উনার চিৎকারের সাথে সাথে হতত্বম্ব হয়ে দৌড়ে রুমে উপস্থিত হয় আসিফ নামক পদার্থটি,, থমথমে পরিবেশ দেখে মূহুর্তে চুপসে যায় সেই, আর সেই চুপসে যাওয়া ফেস নিয়ে আমাকে এক পলক দেখে আবারও তাকায় রিদ নামক অপদার্থের দিকে,,,
.
আসিফ তাকা তাকি পর্বটা চুকানো আগেই রিদ নামক অপদার্থে ঝাঁজালো কন্ঠে আসে আমার কানে, উনি প্রচন্ড রেগে আসিফকে কিছু একটা বলছেন করার জন্য, আর সেটা আসিফ বাধ্য ছেলে মতো শুনে মাথা নাড়িয়ে সুমতি জানি প্রস্হান করেন রুম ছেড়ে,,,,
গল্পের পেইজ লিংক
https://www.facebook.com/profile.php?id=100069402592136
.
চলবে……….