তপ্ত ভালোবাসা #লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া #পর্বঃ_০৯

0
838

#তপ্ত ভালোবাসা
#লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া
#পর্বঃ_০৯

.
🍁
পহেলা বৈশাখ মানেই বাঙালিদের মাঝে বাহারী রঙের পোশাক সাথে সাথে একরাশ আনন্দও নেমে আসে সবার মাঝে, সবাই নিজের পছন্দ মতো রঙ্গে সাজিয়ে থাকে, যদিও পহেলা বৈশাখ এর প্রধান রং লাল সাদা, কিন্তুু আমরা বাঙালিরা নিজেকে ভিন্ন রকম রঙের সাজিয়ে থাকি যেমন সবুজ, কালো, লাল,সাদায়,, সবার মাঝে রঙ্গের তুলি ভিন্ন থাকলেও খাবার ঝুলি মিল রয়েছে আদিম কাল থেকেই,,,

.
আজ পহেলা বৈশাখ আমাদের ভার্সিটিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজিত করা হয়েছে, ভার্সিটির সকল শিক্ষার্থী মধ্যে ছেলেরা পাঞ্জাবি আর মেয়ে শাড়িতে রাঙিয়েছে নিজেকে, চারদিকে যেন আনন্দ আমেজের হৈ হুল্লোড় মেতে উঠেছে সবাই,, আর সেই আনন্দের সাথে পাল্লা দিয়ে মেতে উঠেছি আমরা ষষ্ঠীয় বান্ধবীরা,
সাদার মধ্যে লাল পাইরে শাড়ীর পরেছি আমরা সবাই, খোলা চুল চোখে ঘাড় কাজল ঠোঁটে সিধু লাল লিপস্টিক, পায়ে আলতা, হাত ভরপুর লাল কাঁচে চুড়ি, সবমিলিয়ে ঠিক ঠাক আছি আমরা সবাই,,,

.
আমি, শিলা, রুপা মাহি, সাজি, রাখিঁ, আমরা ষষ্ঠ বান্ধবীরা মিলে স্টেজের দ্বিতীয় সারিতে বসে পরি বিনা বাক বয়ে, কারণ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সব কাজ আমাদের সিনিয়র ভাইয়া আপুরা করে থাকছেন, এতে করে আমরা জুনিয়রা শুধু নাম মাত্র অংশ গ্রহণ করছি অনুষ্ঠানে মূল ভূমিকা পালন করছে তারা, এতে করে আমাদের জুনিয়র দের কোনো রকম আপত্তি নেই,,,
তাই আমরা বসে বসে সবটা পযবেক্ষন করছি বেশি মনোযোগ সহকারে আমাদের এমন মনোযোগ খন্ন হলো পিছনে থেকে চিৎকার চেচামেচি শব্দে আমি ঘাড় ঘুরিয়ে পিছন ফিরে তাকায় তখনই চোখে পড়ল বেশ বড় বড় তিনটি গাড়ি প্রবেশ করছে,

.

গাড়ি গুলো দেখে আমি খানিকটা নড়েচড়ে ওঠে কৌতুহল হয়ে বেশ মনোযোগ সহকারে তাকায় গাড়ি গুলোর দিকে কিন্তুু আমার এমন করে থাকানোতেও তেমন একটা সফল হতে পারিনি আমি, কারণ আমার থেকে গাড়ি গুলো অনেকটাই দুরে হওয়ায় কিছু স্পষ্ট দেখতে পারছি না আমি, সাথে বড় আপু ভাইদের ভির থাকায় গাড়ি থেকে নামা প্রধান অতিথি কেও দেখা যাচ্ছে না বিন্দু মাত্র,,, আমাদের ভার্সিটির প্রধান অতিথি কে আমি তা জানি না তাই উকি বারবার উঁকি ঝুঁকি মেরে কিছুই দেখতে না পেয়ে আহত মনে ঘুরে বসি আমি,, তখনি পাশ থেকে শিলা বলে উঠে,,,

.
—” দোস্ত চল না হল রুমে গিয়ে আমাদের নাচটা আরও একবার প্র্যাক্টিস করে আসি, আমার ভয় করছে রে নাচটা নিয়ে,,,

.
শিলার এমন কথায় মূহুর্তেই আমরা পঞ্চ বান্ধবী সায় জানিয়ে স্টেজ সামনে থেকে ওঠে পা বাড়ায় হল রুমের দিকে আমাদের যখন ডাকা হবে তখনই আমরা স্টেজে একেবারে ওঠবো নাচের জন্য, এখন নিজেদের সম্মান বাঁচানো জরুরি তাই নাচ প্যাক্টিস করতেই হবে,,,,,

.

টানা এক ঘন্টা যাবত নাচ প্যাক্টিস করেও দক্ষ হলাম নাচের মধ্যে আমরা সবাই , তারপর কিছু সময় নিয়ে নিজেকে শান্ত করতেই স্টেজ থেকে আমাদেরকে উদ্দেশ্য করে ডাকে লাগলো ঐখানে গিয়ে নিজের গুণ গুলে প্রকাশ করার জন্য, তাই আমার ষষ্ঠীয়রা বান্ধবীরা মিলে বিনা বাক বয়ে ধীর পায়ে এগিয়ে গেলাম স্টেজের দিকে,,,

.
স্টেজ সামনে দাঁড়িয়ে আছি আমি, বাকিরা সবাই যার যার মতো করে স্টেজ দাঁড়িয়ে পরেছে, আমিও দাড়াতে যাব তার আগেই সাদিক নামক ভার্টিটির বড় ভাইয়া আমার পথ আটকে দাঁড়িয়ে পরে, উনাকে আমি এই ভার্সিরিতে আসার পর থেকেই চিনি, সাদিক ভাইয়া আমার সামনে আসাতে তেমন একটা চমকায়নি আমি, তাই বাকিরা সবাই যার মতো স্টেজর চলে গেলেও আমি দাঁড়িয়ে আছি সাদিক ভাইয়ার সামনে উনি কি বলতে চাই সেটা জানার জন্য,

.
সাদিক ভাইয়া আমাকে ওপর থেকে নিচ পযন্ত দেখে নিয়ে হাসি মুখে বলে উঠে,,,

.
—” তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে মায়ুপাখি, আর নাচের জন্য অল দ্যা বেস্ট মায়ুপাখি

.
সাদিক ভাইয়ার কথায় আমি ঠোঁট প্রশারিত করে হেসে উঠি আমাকে হাসতে দেখে সাদিক ভাইয়া খানিকটা আবেগাপ্লুত হয়ে বলে উঠে,,

.
—” এইভাবে হাসতে নেই মায়ুপাখি গালে খুব করে,,, (বুকে হাত দিয়ে)

.
সাদিক ভাইয়া এমন কথায় আবারও হেসে উঠি আমি পরে সেই হাসিটা ঠোঁটের মধ্যে বজায় রেখে সাদিক ভাইয়াকে পাশ কাটিয়ে সামনে এগিয়ে স্টেজর ওঠাতেই চোখে পড়ল চিপ গেস্ট হিসেবে রিদ নামক ভয়ানক প্যারাবাসিকে, উনি আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে হয়তো আমাকে এখানে মোটেও আশা করেনি, উনার এমন করে তাকানোতে আমি খানিকটা ভয়ে কাচুমাচু করতে থাকি, উনি আমাকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দেখে আমার মনে হচ্ছে উনি
এতক্ষণ আমাকেই দেখছিলেন আমি যে এতক্ষণ সাদিক ভাইয়া সাথে হেঁসে হেঁসে কথা বলেছি সবটাই উনি দেখেছেন,, তাই উনার এমন করে তাকানোতে আমি মুহূর্তেই ভয়ে সিটিয়ে যায় পরে আস্তে করে ধীর পায়ে ওদের সাথে দাঁড়িয়ে পরি, পরে আরচোখে উনাকে একবার দেখে নেয়, উনি তখনো আমার দিকে তাকিয়ে ছিল, উনাকে এমন করে তাকাতে দেখে আমি দুকদম পিছিয়ে গিয়ে মাহির পিছনে লুকিয়ে পরি,,,

.

উনার সামনে আমি কিছুতেই পরতে চাই না, উনি একটা প্রচন্ড রকমে বাজে গুন্ডা লোক, উনার জন্য ঐ দিন আমার পরিবার কাছে অনেক কিছু শুনতে হয়েছে,,, পরে জিসান ভাই সবার কাছে মিথ্যা বলে আমাকে বাচিয়েছিল, রিদ খাঁন যখন আমাদের সবাইকে ছেড়ে দেন,,, তখন জিসান ভাই ঐ দিন সবকিছু ম্যানেজ করে আমরা রাতের আটটায় বাসায় পৌঁছায়, রিদ খাঁন ওরা সবাইকে একসাথে আমার পাশের রুমে বন্দী করে রেখেছিল, বিয়ে করার পর পরই উনি আমাদের সবাইকে একসাথে ছেড়ে দেয়,

.
আমি কাউকেই আমার বিয়ের কথাটা জানাতে পারিনি ভয়ে, আর রিদ খাঁনও এই বিয়েটা মানে না, জেদের বশে বিয়ে করেছে আমায়, উনি আমার ফেসটাও দেখতে চাই না, যদি আমি উনার সামনের আসি তো আমাকে গুলি করে মারবেন উনি, তাই ঐ দিনের পর থেকে আর দেখেনি উনাকে আমি আজ পনেরো দিন হয়েছে,,, তাই আমি কাউকে বিয়ে বিষয়টা এই মূহুর্তে বলার প্রয়োজন মনে করিনি, কিন্তু জিসান ভাইয়া ও আমার পঞ্চ বান্ধবীরা মাথা খাওয়া টাইপ প্রশ্ন করে যাচ্ছিল কেন রিদ খাঁন সবাইকে একসাথে বন্দি করে রেখে ছিল, আর আমাকে একা কেন রেখেছিল,,, আমি তাদের এমন প্রশ্নে উত্তরে শুধু একটা কথা বলেছি যে আমাদের শাস্তি দেওয়ার জন্য এইভাবে আটকিয়ে রেখেছিল রিদ খাঁন, আর আমি উনার কাজে হস্তক্ষেপ করছি তাই আমাকে একা বন্দী করে রেখে ছিল বেশি শাস্তি দেওয়ার জন্য ব্যাস,,,

.
আমার এমন কথায় ঐদিন সবাই বিশ্বাস করে ছিল আর জিসান ভাইয়া আমাকে বাসায় এনে পরিবারের সবাইকে বলে উনি সারাদিন আমার সাথেই ছিল, জিসান ভাই কথা ঐ দিন আমি বেচে গেলাম আম্মু হাত থেকে,,,,৷ আমার এমন সব চিন্তা ভাবনায় মাঝেই হঠাৎ করেই মিউজিক বেজে ওঠে, মিউজিক এর শব্দে আমি চমকে উঠি সাথে সাথে চারপাশে চোখ বুলিয়ে বুঝতে পারি আমাদের এখন নাচতে হবে তার রিদ নামক প্যারাবাসিকে দূরে টেলে নিজের নাচের মনোযোগ হই,,,

.
সম্পূর্ণ নাচ সুন্দর ভাবে কমপ্লিট করেই রিদ খাঁন এর চোখের সামনে থেকে পালানোর জন্য উনার দিকে তাকিয়েই স্টেজ থেকে দ্রুততার সঙ্গে নামতে গিয়ে আবারও সামনে এসে সাদিক ভাইয়া উনি সবার সামনে আমার হাত টেনে হ্যান্ড শিপ করার জন্য ধরে বসে কংগ্রাচুলেশন জানাতে, আমি বোকার মতো তাকিয়ে আছে উনার দিকে পরে ভদ্রতা বজায় রাখতে জোর পূবক হাসি দিয়ে ওয়েলকাম জানিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে পিছন ফিরে রিদ খাঁনের দিকে তাকায়,,, সাথে সাথে চোখে পড়ল রক্তে টগবগে উঠা উনার চোখ দুটো, চোখে মুখে হিংস্র ফুটে আছে ব্যাপক ভাবে, উনাকে এমন ভাবে রাগতে দেখে আমি সাথে সাথে আতংকে উঠি, উনার এমন হঠাৎ রাগের কারণ আমি বুঝতে পারছি না আর উনি রেগে গেলে কতটা ভয়াবহ হতে পারে তা আমি জানি, তাই উনার সামনে কোনো ভাবেই আর পরতে চাই না, উনার এমন নজর থেকে বাচার জন্য কোনো দিকে আর না তাকিয়ে সাদিক ভাইকে রেখেই দৌড় লাগায় হল রুমের দিকে,,, আর যায় হোক কোনো ভাবেই রিদ নামক ভিলেন এর সামনে আসা যাবে না তাই চুপচাপ গিয়ে হল রুমে লুকিয়ে পরলাম,, আমার এমন করে লুকানোটা যে কারও জন্য এতটা সুবিধা বয়ে আনবে জানলে এই জন্মে ও লুকাই প্লেয়িং করতাম না,,,,,,

.

(আমি আমার কথা রেখেছি আপিরা দুটো পার্ট এই গল্পের দিয়েছি আমি)

.

চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here