প্রিয়_রুদ্র_ভাই #পর্ব-১১ #তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ

0
168

#প্রিয়_রুদ্র_ভাই
#পর্ব-১১
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ

ঘুমের মধ্যে কেউ চুলের মুঠি চেপে ধরতেই হকচকিয়ে ঘুম ছুটে গেলো তটিনীর। ঘুমঘুম চোখে তাকানোর আগেই প্রচন্ড জুরে টান দিয়ে কেউ উঠিয়ে বসালো তাকে। চোখ কচলে ভালো ভাবে তাকিয়ে বুঝতে পারলো কাজটি কার। কিছু না বলে আবারও বিছানায় শরীর এলিয়ে দিলো সে।

সেটা সহ্য হলো না ব্যক্তিটির। আবারও চুলের মুঠি চেপে ধরে উঠে বসালো। তটিনী এবার মারাত্মক রেগে গিয়ে বলল, ‘কি সমস্যা?’

তিনি চোখে মুখে বিস্ময় নিয়ে বললেন, ‘কয়টা বাজে খেয়াল আছে?’ কলেজের প্রথম দিনে পড়ে পড়ে ঘুমোচ্ছিস।’

তার এহেন প্রতুত্তরে তটিনী চমকে গেলাম। মাথা এলোমেলো হয়ে গেলো তার। আজ তার কলেজের প্রথম দিন অথচ আজই সে পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছি! চোখ মুখে অসহায়ত্ব ফুটিয়ে বলল, ‘কয়টা বাজে ?’ খুব বেশি দেরি হয়ে গেছে?’

মহামান্য সেই ব্যক্তিটি রাগে গজগজ করতে করতে বললেন, ‘তেমন দেরি হয়নি, আমি বাইকে করে নিয়ে যাবো, পৌঁছে যাবি জলদি।’

তটিনী তাহার দিকে কৃতজ্ঞতা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, ‘আজ আপনি যদি না তুলে দিতেন তো আমি প্রথম ক্লাসটা মিস করে যেতাম। ধন্যবাদ আপনাকে রুদ্র ভাই।

রুদ্র হেসে ফেললো। চলে যেতে নিয়েও তটিনীর মুখের দিকে তাকিয়ে থেমে গেলো। বলল, তোর চোখমুখ এমন শুকনো কেন বল তো?’

তটিনী শুকনো ঢুক গিলে বলল, ‘একটা মারাত্মক স্বপ্ন দেখেছি রুদ্র ভাই।’

রুদ্র আগ্রহ প্রকাশ করে বলল, ‘কিরকম স্বপ্ন?’

তটিনী ঠোঁট উল্টে বলল, ‘আমি দেখেছি যে আমি পাল্টে গেছি কোনো কারণে। আপনার সাথে কথা-টথা বলছি না। আপনি বিদেশে চলে গেছেন পড়াশোনা করতে। কিসব অনুভূতি কিসব কি দেখলাম রুদ্র ভাই। আর মনেও পড়ছে না।’

রুদ্র অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল, ‘কি দেখে ঘুমিয়ে ছিলি বলতো?’

‘একটা স্যাড ইন্ডিং মুভি দেখেছিলাম।’

রুদ্র গম্ভীর স্বরে বলল, ‘এজন্যই। তা আর কি কি দেখলি?’

‘দেখলাম আমরা ওইযে জাফলং ঘুরতে গেছিলাম না? সেখান থেকে এসেই সব কেমন পাল্টে গেছে। আপনি আগের মতো আমাকে কোথাও ঘুরতে নিয়ে যাননি। সেজন্য আমি অভিমান করে বদলে গেছি।’ সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় হলো আমি নাকি মেডিক্যালে চান্স পাইছি।’

রুদ্র এ পর্যায়ে হেসে ফেললো। বলল, ‘মেডিকেল?’

তটিনী ঠোঁট ফুলিয়ে বলল, ‘আপনি হাসবেন না তো। আমি জানি আমি মেডিক্যালে চান্স পাওয়ার মতো স্টুডেন্ট নই। কিন্তু স্বপ্নে দেখেছি।’

‘জাফলং থেকে এসে প্রায় দেড় বছর হয়ে গেছে। তুই এখনো সেখানেই পড়ে আছিস?’

রুদ্রের প্রশ্নে তটিনী মাথা নিচু করে বলল, ‘কি জানি। জায়গাটা মনে রাখার মতো সেজন্য হয়তো।’

রুদ্র দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, ‘জলদি রেডি গো। কলেজে যেতে হবে তোর। নাকি আরও পড়ে পড়ে সময় নষ্ট করতে চাস?’

তটিনী তড়িৎ গতিতে ওয়াশরুমে চলে গেলো। হাতমুখ ধুয়ে রুমে এসে জামাকাপড় চেঞ্জ করলো৷ রুদ্র কখন বাহিরে বাইকের চাবি হাতে দাড়িয়ে আছে। তটিনী ব্যাগ কাঁধে নিয়ে দৌড় দিলো। নাস্তার টেবিল থেকে রোবা নাহার ও ঈশানী চেচিয়ে ডাকলেন। কিন্তু সে কানে তুললো না। খেতে বসলে আরও দেরি হয়ে যাবে। তখন রুদ্র ভাই তাকে তুলে আছাড় দিতে দু বার ভাববেন না।’

কিন্তু হলো উল্টো। রুদ্র বাইকের চাবি আঙুল দিয়ে ঘুরাতে ঘুরাতে বলল, মা চেঁচাচ্ছে কেন? যা খেয়ে আয়। টেনশন করিস না সময় মতো পৌঁছে যাবি।

তটিনী বাধ্য মেয়ের মতো পুনরায় গৃহে প্রবেশ করলো। নাস্তা করে বের হয়ে রুদ্রের বাইকে চেপে বসলো। রুদ্র তার কথা রাখলো৷ হাওয়ার বেগে বাইক চালিয়ে তটিনীকে কলেজে পৌঁছে দিলো।

কলেজ গেইট দিয়ে যখন রুদ্রের বাইক ঢুকলো তখন হা করে কিছু মেয়েরা তাকিয়ে রইলো। তটিনী তাদের দিকে তাকিয়ে ভেংচি কাটতে ভুললো না। রুদ্র লুকিং গ্লাসে সেটা দেখে হাসলো। বাইক সাইট করে রুদ্র তটিনীকে নিয়ে নেমে দাঁড়ালো।

এটা রুদ্রের প্রাক্তন কলেজ। সে এই কলেজ থেকেই এইচএসসি পাশ করেছে।সেজন্য সবকিছু জানা শুনা আছে তার। তটিনীকে নিয়ে সোজা প্রিন্সিপালের রুমে গেলো সে। নিজের পরিচয় দিতেই প্রিন্সিপাল চিনতে পারলেন। রুদ্র তটিণী-কে দেখিয়ে দিয়ে বলল, ‘স্যার ও আমার কাজিন। এই কলেজেই ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে ভর্তি হয়েছে।’

প্রিন্সিপাল হেসে বললেন, ‘বেশ তো।

‘স্যার ও একটু চঞ্চল সেজন্য পরিচিত এটাতেই ভর্তি করিয়ে দিয়েছি। আপনারা একটু খেয়াল রাখবেন। যদিও ও অপরিচিতদের সামনে ভদ্র হয়ে থাকে। কিন্তু বলা তো যায় না, বুঝতেই পারছেন।’

প্রিন্সিপাল তার পান খাওয়া লাল দাঁত বের করে হেসে সম্মতি দিলেন। তটিনী তখন রাগে ফে*টে পড়বে ভাব। বের হতেই রুদ্রের হাত খামচে ধরে বলল, ‘আপনি ওগুলো কি বললেন? আমি কি অভদ্র?

রুদ্র নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল, ‘এমন বাঘিনীর মতো ক্ষেপেছিস কেন? আমি কি মিথ্যা বলেছি নাকি? যা সত্যি তাই বলেছি যাতে তোকে নিয়ে কোনো সমস্যা না হয়। আমি তো আর সবসময়ই এসে পাহাড় দিতে পারবো না তোকে। কার না কার সাথে ঝগড়া লেগে যাবি।’

তটিনী কিড়মিড়িয়ে বলল, ‘তাই বলে আপনি এসব বলবেন? আমি কি ছোট হচ্ছি নাকি? আগের মতো অবুঝ ও তো নই। নিজের সমস্যা নিজেই দেখতে পারবো। আপনাকে টানবো কেন? হু আর ইউ?’

রুদ্র গম্ভীর স্বরে বলল, ‘তুই যদি আর একটা কথা বলিস তো তোকে এখন তুলে একটা আছাড় দিবো।

তটিনী দমে গেলো। রুদ্র মাথায় টুকা দিয়ে বলল, ‘শান্তশিষ্ট হয়ে থাকবি। কোনো সমস্যা হলে আমাকে ফোন করবি। ঠিক আছে?’

তটিনী কোনো কথা বললো না। রুদ্র তটিনীকে ওর ক্লাসের সামনে নিয়ে গেলো। বলল, ‘এটাই তোর ক্লাসরুম। যা গিয়ে বসে পড়। সব পড়া নোট করবি। রাতে আমি সব দেখবো। মনে থাকে যেনো।

রুদ্র চলে গেলো। তটিনী পা তুলে বসলো। গালে হাত দিয়ে ভাবতে লাগলো কি করা যায়। আপাতত সে রুমে একা। তারমানে আজ সে সবার আগে এসেছে।

ঠিক কিছু সময় পর রুমটা স্টুডেন্ট ভর্তি হয়ে গেলো। তটিণী-র পাশে বসেছে দুটো মেয়ে। তটিনী তাদের মধ্যে একজনকে জিজ্ঞেস করল, ‘কি নাম তোমার?’

মেয়েটি চোখমুখে উচ্ছাস নিয়ে বলল, ‘আমি রুপান্তর, তুমি?’

তটিনী নিজের নাম না বলে ভ্রু কুঁচকে বলল, ‘রুপান্তর? ওটা আবার কেমন নাম? আচ্ছা তোমার নামের অর্থ কি?’

রুপান্তর মেয়েটি মন খারাপ করে বলল, ‘কেমন নাম তা তো জানিনা। বাবা রেখেছেন। নামের অর্থ সৌন্দর্য বা এমন কিছু হবে হয়তো। আমি সঠিক জানিনা। তুমি জানো?’

তটিনী ভাব নিয়ে বলল, ‘আমি কি সবার নামের অর্থ জেনে বসে থাকি নাকি? স্যরি টু সে আমি জানিনা রুপান্তর!

রুপান্তর দ্বিতীয় বারের মতো জিজ্ঞেস করলো, ‘তোমার নাম কি?’

তটিনী ভাব নিয়ে বলল, ‘নদী দেখেছো? নদীর অপর নাম কি? আমার নামও সেটাই।’

রুপান্তর মেয়েটি হেসে বলল, ‘ও আচ্ছা তুমি পানি?

তটিনী চোখমুখ কুঁচকে বলল, ‘পানি কেন হতে যাবো? নদীে অপর নাম কি পানি নাকি?’

রুপান্তর বুঝানোর ভঙ্গিতে বলল, ‘নদীতে তো পানি থাকে। আর জীবনের ওপর নাম পানি। সেজন্য তোমার নাম পানিই হবে। তাই না?

তটিনী চোখমুখ উল্টিয়ে বমি করার ভঙ্গি করলো৷ বলল, ‘তুমি কে ভাই? হু আর ইউ? আমার পাশে বসেছো কেন? এমন গাধা মাইয়ন জীবনেও দেখি নাই৷ অথচ রুদ্র ভাই আমাকে বলে আমি নাকি দুনিয়ায় সবচেয়ে পঁচা গাধা।’

রুপান্তর উৎসাহ প্রকাশ করে বলল, ‘রুদ্র ভাই কে?’

তটিনী বাঁকা হেসে বলল, ‘কেন প্রেম করবা নাকি?’ করতে পারো আমার রুদ্র ভাইয়ের গফ টফ কিছু নাই। হেতি পিওর সিঙ্গেল পোলা। একেবারে খাঁটি।

রুপান্তরের মন নেচে উঠলো, ‘বললো কেন নয়? প্লিজ তার সাথে আসার পরিচয় করিয়ে দিবা? রুদ্র’র বোন?’

তটিনী রেগে বলল, ‘দিতে চাইছিলাম, কিন্তু তোমার শেষের কথার সম্মোধনের জন্য দিবো না।’

রুপান্তর হয়তো কিছু বলতে চাইছিল, কিন্তু তার আগেই ক্লাসে স্যার প্রবেশ করলেন। পরিচয় পর্ব যখন বলতে বলা হলো তখনই রুপান্তর তটিণী-র নাম জানতে পারলো। অবশেষে সে বুঝলো, ‘নদীর অপর নাম হলো তটিনী!

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here