#তপ্ত ভালোবাসা
#লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া
#পর্বঃ২৭
.
🍁 উনি অগোছালো ভাবে আমার দিকে দৌড়ে আসছে তারপর আর কিছু বলতে পারিনি আমি ঐখানেই অজ্ঞান হয়ে যায়…….
.
আমার চোখে মুখে পানির তীব্র ছিটা ফোটা পারতেই পিট পিট করে তাকায় আমি, চোখের সামনে রিদ খানের ফেসটা আসতেই আমি কতক্ষণ স্তব্ধ মেরে উনার দিকে তাকিয়ে থাকি, আমার চারপাশে কে আছে, বা আমি কোথায় আছি কিছু বুঝতে পারছি না আমি তাই উনার দিকে এক প্রকাশ অনুভূতি হীন চোখে তাকিয়ে রয়েছি, আমাকে এমন স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে রিদ খানও আমার দিকে করুন চোখে তাকিয়ে থাকে আমরা দুজন দুজনকে এই ভাবে দেখার মধ্যে দিয়েই পাশ থেকে রুদ্র আমার মাথা হাত বুলাতে বুলাতে চিন্তাত সুরে বলে উঠে…..
.
—” তুমি ঠিক আছো মায়ুপাখি…..
.
রুদ্রের এমন কথায় আমি আস্তে করে পাশ ফিরে তাকায় চোখে সামনে সবাইকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কিছু বুঝতে পারছি না আমি, যে আমার আবার কি হবে আর সবাই আমাকে ঘিরে এই ভাবে দাঁড়িয়ে আছে কেন, আর আমি বা কোথায় আছি,, বিষয়টি ভেবে নিয়েই হালকা কপাল কুচকে চারপাশে তাকাতে তাকাতে আস্তে করে উঠে বসি,, আমাকে উঠে বসতে দেখে দাদী পাশ থেকে এসে আমার সাথে বসে পরে আমাকে উদ্দেশ্য করে চিন্তত সুরে বললো……
.
—” মায়া কি হয়েছে তোর তুই অজ্ঞান হলি কি করে রিদের রুমে…….
.
দাদীর এমন কথায় আমি চমকে উঠি, ভুলে যাওয়া বিষয় আবাসিক স্পষ্ট ভাবেই মনে পরে যায় আমার, কি কারণে অজ্ঞান হয়েছি সেটিও মনে পরে যায় ভালো ভাবেই, বিষয় গুলো মনে করতে আমি দ্রুত সামনে রিদ খানের দিকে তাকায়, উনাকে আমার দিকে চুপচাপ থাকিয়ে থাকতে দেখে আমি উত্তেজিত হয়ে উনাকে একটা আংগুল দিয়ে দেখিয়ে ইশারা করে আঁটকে আসা গলায় থেমে থেমে বলে উঠি…….
.
—” উ উ উনি উনি ওখানে কতগুলো কতগুলো……
.
বারবার কেঁপে কেঁপে উঠা কন্ঠে পুরো কথাটা শেষ হলো না আমার তার আগেই পাশ থেকে রুদ্র বলে উঠে……
.
—” রিলেক্স মায়া, রিদ তোমাকে কিছুই করেনি, উল্টো ওহ তোমাকে অজ্ঞান অবস্থায় এখানে এনে শুইয়ে দিয়েছে সেফলি, এখন বলো তোমার কি হয়েছিল তুমি রিদ এর রুমে অজ্ঞান হলে কি করে…….
.
রুদ্রের কথায় পাশ ফিরে তাকায় ওর দিকে, কি দেখেছি সেই অনুভূতিটা কাউকে বুঝাতে পারছি না আমি, কিন্তু আমি সবাইকে বলতে চাই কি দেখেছি উনার (রিদ) রুমে, কিন্তু উনার রুমে দেখা বিষয়টি এতটাই প্রভাব ফেলেছে আমার ওপর যে কোনো রকম কথাও আসছে না এই মূহুর্তে আমার গলা দিয়ে,, শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখা ছাড়া,, আর আমি এতক্ষণ খান বাড়ির ড্রয়িংরুমে সোফায় শুয়ে ছিলাম অজ্ঞান অবস্থায়, রিদ খান আমাকে উনার রুম থেকে দ্রুত এনে এখানে শুইয়ে আমার চোখে মুখে দ্রুত পানির ছিদা দিতে থাকে হুশ ফিরিয়ে আনার জন্য……
.
কিন্তু উনি কি করে উনার রুমে উপস্থিত হল যখন আমি অজ্ঞান হচ্ছিলাম আর উনার রুমে ঐ গুলো কি ছিল, আর উনি সবার সামনে এখন যেমনটা দাড়িয়ে আছে স্বাভাবিক অবস্থায়, উনি মোটেও ততটা স্বাভাবিক নয়, রিদ খান শুধু সবাইকে প্রেজেন্ট করে স্বাভাবিক হওয়াটা,, উনার অস্বাভাবিক হওয়া বিষয়টি আমি আজই দেখলাম নিজের চোখে উনার গুপ্ত রুমে সবটা…..
.
সবটা পযবেক্ষন করার পরও একটা কিন্তু থেকেই যায় আর সেটা হচ্ছে উনি করে জানলো যে আমি উনার গুপ্ত রুমে আটকা পরেছিলাম, আর উনিত দেশের বাহিরে ছিল তাহলে তখন উনি আমাকে বাঁচাতে উনার গুপ্ত রুমে আসলো কি করে,,, সম্পূর্ণ বিষয়টি আমি মনে মনে ভাবতে পারলেও মুখ ফোটে কিছু বলতে পারছি না কাউকে, কেমন একটা ভয়ে সিটিয়ে যাচ্ছি আমি, আমার ভিতর থেকে জড়তা কাজ করছে যার জন্য কথা বলার বাক শক্তি হারিয়ে ফেলেছি তাই শুধু এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম রিদ খানের দিকে আমার অজানা সব প্রশ্ন উত্তরের জন্য, তাই আবারও খানিকটা সাহস জুগিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় রিদ খানকে দেখিয়ে রুদ্রকে উদ্দেশ্য করে বলি…….
.
—” রররর রুদ্র উউনি(রিদ) ঐখানে রুমে আমি ঐগুলা…….
.
আমার এমন প্যাচানে আর ঘুরপার পাক কথায় রুদ্র কতটা বুঝতে পারলো তা জানি না,, তবে রুদ্র আমাকে ভয় সাথে সাথে উত্তেজনায় হয়ে রিদ খানের দিকে তাকাতে দেখে রুদ্র আমাকে শান্তনা দিতে দিতে আস্তে আস্তে করে বলে উঠে……
.
—” মায়ুপাখি রিলাক্স, শান্ত হও তুমি রিদের কথা জানতে চাইছো তো,, রিদ আসলে ওহ ওর রুমেই ছিল বাথরুমের ভিতরের ছিল ফ্রেস হচ্ছিল, রিদ সকালেই বাংলাদেশে ফিরে কিন্তু নানুমা কিছু জানে না ওর ফিরার বিষয়ে রিদও বলেনি তাই,, এমনটা প্রায় হয় রিদ কাউকে কিছু বলে না,,,, কারণ আমাদের বাহিরের যাওয়া আসাটা অনেকটাই বেশি হয়ে থাকে যেমনটা তুমি তোমার আম্মুকে না বলে পাশের বাড়ির আন্টির সাথে কথা বলতে যাও ঠিক তেমনটাই আমরাও পরিবারকে প্রায় না জানিয়ে দেশের বাহিরে যাওয়া আসাটা করে থাকি,, আজও তাই হয়েছে রিদ সকালেই নাকি বাংলাদেশ ফিরেছে কিন্তু আমরা কেউ জানি না, ওহ ওর রুমের ভিতরেই ছিল,,, ওহ ভিতর থেকে লক করে রেখেছিল তাই আমি বাহির থেকে লক চাবি দিয়ে লক খুলে প্রবেশ করতে হয়েছিল,, আর রিদ বলেছে ওহ নাকি রুমের ভিতরে কিছু শব্দ শুনে তোমার কাছে যায়, তখন নাকি তুমি অজ্ঞান হয়ে পরেছিলে ওর রুমের মধ্যে,, এখন তুমি বলো তুমি হঠাৎ করে অজ্ঞান হলে কি করে………..
.
রুদ্রকে আমি যা বুঝাতে চেয়ে ছিলাম সেটা রুদ্র বুঝতে না পারলেও রুদ্র আমাকে রিদ খানের উপস্থিত হওয়া বিষয়টি ক্লিয়ার করে,,, সবটা শুনার পর আমি আবারও তাকায় রিদ খানের দিকে, রিদ খান তখনও চুপচাপ আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে আমার দিকে হতাশ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে,,, আমি উনার এমন হতাশ হওয়া দৃষ্টি যেন কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না,,,, আচ্ছা উনি কি জন্য এতটা হতাশ আমি উনার গোপন রাখা বিষয় দেখতে পেরে গেছি সেই জন্য নাকি আমি উনার গোপন করা বিষয়টি সবটা দেখার পরও বুঝে উঠতে পারছি না সেই জন্য হতাশ………..
.
আমি দুটানার মধ্যে ভুক্তভোগী হয়ে হঠাৎ কেঁদে বসি, আমার কেন যেন কান্না আসছে ভিতর থেকে আমি কিছুই মেনে নিতে পারছি না,, আমার চারপাশটা ধোঁয়াসা ধোঁয়াসা লাগছে, আমার সামনে আজ রিদ খানের নতুন একটা রুপ আসলো যেটার সাথে আমি বলা উনার পরিবার অন্য কেউ পরিচিত নয়, উনি সবার থেকে হয়তো এই রুপটা লুকিয়ে রেখে এসেছে যা আজ আমার সামনে ধরা পরে গেলো,, আর সেই রুপ সম্পর্কে আমার ভালোভাবে অবগত হতে হবে নয়তো সবকিছু ধংশ হয়ে যাবে, সবটাই শেষ হয়ে যাবে রিদ খান সবটা নিজের হাতে শেষ করতে পারলেও আমি পারবো সবটা শেষ করতে যতক্ষণ না পর্যন্ত আমি সবকিছু রিদ খানের মুখের থেকে শুনতে পারছি, আমাকে জানতে হবে সবকিছু আর তার জন্য আমার রিদ খানকে একা প্রয়োজন, নয়তো আমি কখনোই জানতে পারবো না কোনো কিছু…….
.
আমাকে হঠাৎ কাঁদতে দেখে রিদ খান সাথে সাথে নিজের দুহাত মুষ্টি বদ্ধ করে নেয় আমার দিকে তাকিয়ে থেকে আর পাশ থেকে দাদী আমাকে নিজের সাথে জরিয়ে ধরে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে শান্তনা সুরে বললো…….
.
—” কি হয়েছে সোনামা আমাকে বল, কাঁদছিস কেন তুই……
.
দাদীর কথা আমি কান্না করতে করতে বলি…….
.
—” দাদী আমি বাড়িতে যেতে চাই, প্লিজ আমাকে বাড়িতে পাঠানো ব্যবস্ত করে দাও,,,,
.
—” আচ্ছা ঠিক আছে যাবি কিন্তু আরও পরে আর তো….. (শান্তনা সুরে)
.
দাদী বাকি কথা গুলো শেষ করার আগেই আমি আবারও কান্না জরিত কন্ঠে বলি…..
.
—” দাদী প্লিজ আমি এখন যেতে চাই তুমি না করো না প্লিজ……..
.
আমাকে এতটা জেদ করতে দেখে দাদীও হার মেনে যায় পরে দাদী আমাকে রুদ্র সাথে যেতে বলে,,, রুদ্র আমাকে বাসায় পৌছিয়ে দিবে বিষয়টি জানাতেই রিদ খান সেখান থেকে চলে যেতে নেয় কিন্তু তার আগেই আমি রিদ খানের পিছন থেকে আমি স্বাভাবিক কন্ঠে দাদীকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠি…….
.
—” দাদী আমাকে রুদ্র নয়, তোমার দ্বিতীয় নাতি বাসায় পৌছায় দিবে…..
.
আমার এমন কথায় দাদীর সাথে রুদ্রও চমকে উঠে আর রিদ খান সাথে সাথে জায়গায় দাঁড়িয়ে পরে আমার দিকে ঘুরে তাকায় কিন্তু এতেও আমার কোনো রকম হেলদোল নেই, আমাকে এমন করে বলতে দেখে দাদী চমকে উঠে বললো……
.
—” মানে তুই কি রিদের কথা বলছিস……
.
—” হুমমম (মাথা নাড়িয়ে সুমতি জানা)
.
আমার এমন কথায় রুদ্র সাথে সাথে কপাল কুচকে বললো…..
.
—” কেন রিদ কেন তোমাকে নিয়ে যাবে আমি আছি তো,,, আমি নিয়ে যাবো তোমাকে, এখন চল তুমি আমার সাথে……..
.
রুদ্র এমন কথায় আমি বাহুচ সুরে বলে উঠে……
.
—” না আমি উনার সাথেই যাব, আমার কিছু কাজ আছে উনার সাথে…..
.
আমার এমন কথায় রুদ্র সাথে সাথে দাদীও ভ্রুঁ কুচকে তাকায় আমার দিকে, তাদের এমন করে তাকানো মানে হলো যে আমার কি এমন কাজ থাকতে পারে রিদ খানের সাথে, আমি তাদের এমন দৃষ্টি মানে বুঝতে পেরে কথাটা ঘুরানো জন্য কাচুমাচু করতে করতে বলি…..
.
—” আসলে দাদী আমি উনার সাথে যখন জাগলে আটকা পরি তখন আসিফ ভাইয়া আমাদের খুজতে একটা পুলিশ কেস করে, আর সেটা নিয়েই পুলিশ আমাকে যেতে বলেছিল ঐখানে কিন্তু আমি সবকিছুতে ভয় পাই আর আমার পরিবারকে তো কিছুই জানায় নি,, আর রুদ্র নিজেই তো না করেছে জানাতে, তাই আরকি উনাকে(রিদ) নিয়ে আগে পুলিশ স্টেশনে যাবো পরে বাড়িতে সেই জন্য আরকি……..
.
আমার এমন কথায় স্বাভাবিক হলো দাদী ও রুদ্র কিন্তু অস্বাভাবিক থেকে গেলে রিদ খান কারণ উনি ভালো করে জানেন আমি মিথ্যা বুলছি আর কেন বলছি সেটাও হয়তো বুঝতে পেরেছেন তাই তো এখনো চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে,,, আর তখনিই পাশ থেকে দাদী বলে উঠে…..
.
—” ওটা তোর দেখতে হবে না রিদ আছে ওহ ই সবটা সামলে নিবে, এখন তুই অসুস্থ তাই এখন তোকে অন্য কোথাও যেতে হবে না…….
.
দাদীর কথায় রুদ্রও সায় জানিয়ে বলে উঠে…..
.
—” হুমম সেটাই রিদ দেখে নিবে তোমাকে চিন্তা করতে হবে না, এখন চলো তোমাকে বাসায় পৌছিয়ে দিয়ে আসি……
.
রুদ্রের এমন কথায় পিছনে থেকে রিদ খান ড্রয়িংরুমে দরজা দিয়ে বাহিরে দিকে যেতে যেতে রুদ্রকে উদ্দেশ্য করে বললো……
.
—” র্ফমালেটি এযে র্ফমালেটিই হয়, তাই ওকে ও আমার সাথে পুলিশ স্টেশনে যেতে হবে,, তাই তুই দাদীর সাথে বাসায় থাক আমি ওকে নিয়ে আগে পুলিশ স্টেশন যাবো পরে নাহয় বাসায় পৌছিয়ে দিয়ে আসবো……
.
কথা গুলো বলেই পিছনে দিকে আর না ফিরে চলে যায় বাহিরের দিকে গাড়ি উদ্দেশ্য,, আমার সাথে সাথে এখন উনিও মিথ্যা বলছে সেটাও আমি বুঝতে পারছি কিন্তু দাদী ও রুদ্র না বুঝা বিষয়টি নিয়ে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে রিদ খানের যাওয়ার দিকে, যদি রিদ খান একবার পিছন ঘুরে তাকাতো তাহলে দেখতে পেত দাদী আর রুদ্রের অবাক করা দৃষ্টিতে যা উনার দিকেই নিক্ষেপ করা ছিল,,
.
কারণ রিদ খান কখনো পুলিশ স্টেশন গিয়েছে কিনা বড় বড় বিষয়ে তাই সন্দেহ আছে আর সে কিনা সামন্য বিষয় নিয়ে পুলিশের কাছে যাবে, আর সবচেয়ে বড় কথা রিদের খানের মতো মানুষ কাউকে বাসায় পৌছিয়ে দিবে বিষয়টি তাদের চিন্তা ভাবনায় বাহিরের ছিল তাই আমিও তাদের এমন চিন্তা ভাবনায় সাথে ছেড়ে দিয়ে ওদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ধীর পায়ে এগিয়ে যায় রিদ খানের গাড়ির দিকে,,, কারণ আজ আমার সব প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে রিদ খানকে, উনিও বুঝতে পেরেছে কেন আমি উনার সাথে যাওয়ার জন্য জেদ ধরে বলছি, উনি সম্পূর্ণ বিষয়টি বুঝতে পেরেই আমার সাথে যাচ্ছেন হয়তো উনিও বলতে চাই উনার না বলা কথা গুলো…..
.
.
.
চলবে……….