#তপ্ত ভালোবাসা
#লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া
#পর্বঃ৩০
.
🍁
নীল ডাইরিটা হাতে নিয়ে বসে আছি বেশ কিছুক্ষণ হয়েছে, ডাইরিটা খুলে দেখার তুমুল আগ্রর থাকলেও এই মূহুর্তে কোনো রকম ভাবে ডাইরিটা খুলতে পারছি না আমি, নিজের মধ্যে কেমন একটা দ্বিধা বোধ কাজ করছে ভিতরে ভিতর সাথে একটা অজানা ভয়ও। না জানি এরপর কি-হয়, না জানি আমাকে কোন বাস্তবতা সাথে মুখোমুখি হতে হয়, আচ্ছা এই ডাইরিটা পরে আমার জীবনের ধরণ পালটে যাবে নাতো, হয়তো যেতেও পারে, জানি না কোনো কিছুই, আর যতক্ষণ না পর্যন্ত আমি এটা খুলে পড়ছি ততক্ষণ পর্যন্ত আমাকে চরম ভাবে অস্থিরতার শিকার হতেই হবে। তাই আমি আমার সকল চিন্তা ভাবনায় সাথেই কিছুটা নিজের মধ্যে সাহস জুগিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে আস্তে করে ডাইরির প্রথম পৃষ্ঠা উল্টাতেই চোখে পড়ল সেখানে বড় বড় অক্ষরের লেখা……
.
—” আমি জানতাম তুমি চুরি করতে আমার রুমেই আসবে, তাই আগের থেকে আসল ডাইরিটা সরিয়ে ফেলেছিলাম আমি সেখান থেকে,, গুড টাইয় ব্যাট রিদ খানের সামনে কিছুই না এটা……
.
উনার এমন কাট কাট কথায় মূহুর্তে চমকে উঠে আমি, সাথে এক ঝুলি ভরপুর সমান কষ্টটাও হয় আমার, কতটা আগ্রহ আশা নিয়ে ডাইরিটা চুরি করেছিলাম আমি, ভেবে ছিলাম হয়তো এবার এতশত চিন্তা অবসান ঘটবে আমার, কিন্তু না এই রিদ খান আমার শত শত চেষ্টা মধ্যে মূহুর্তেই পানি ফেলে দিল, একটুও ভাবলো না আমার কথা, আচ্ছা উনি কিভাবে বুঝতে পেরেছে যে আমি আগের থেকে উনার রুমে যেতে পারি এই ডাইরিটার জন্য হুমমম। আচ্ছা বাই চান্স উনি কোনো অন্তত জামিন নয়তো আল্লাহ, হতেও পারে উনার ওপর কোনো বিশ্বাস নেই আমার কারণ উনি আমার চিন্তা ভাবনায় বাহিরের অপর্দাথ মানুষ একটা,, কথা বলেই রাগে ক্রোবে ফুসফুস করতে করতে ডাইরিটা ঠাস করে বন্ধ করে দেয় । আমার খুব কষ্ট লাগছে আমার এতটা আশা নিয়ে ডাইরিটা অবধি পৌঁছিয়ে ছিলাম আমি তারপরও সফল হতে পারিনি, কিছুই জানতি পারিনি আমি গুপ্ত রুমে ঐ ছবি গুলো সম্পর্কে, তাই এই মূহুর্তে কিছুই ভালো লাগছে না আমার, আর আমার এই খারাপ লাগা ভাবটা নিয়ে ডাইরিটা বন্ধ করে নিজের মাথাটা চেপে ধরে হতাশ পূণ্যতা নিয়ে, কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে নিচের দিকে জোকে থাকতেই হঠাৎ করে মনে হয় সম্পূর্ণ ডাইরিটা একটু ভালো চোখ বুলিয়ে নেওয়ার দরকার হয়তো কিছু পেলেও পেতে পারি, আমার এমন চিন্তা ভাবনায় মাঝে আবারও দ্রততা সঙ্গে ডাইরিটা হাতে নিয়ে দ্বিতীয় পৃষ্ঠা খুলতেই আমি চমকে উঠে, যা ভেবেছিলাম তাই দ্বিতীয় পৃষ্ঠায়ও কিছু লিখা আছে, আমি আগ্রের সাথে সেখানে তাকাতেই চোখে পড়ল স্পষ্ট ভাষায় লেখা,,
.
—” নাক ফুলিয়ে রাগ দেখালে বন্দ রুমের ভিতরে কেউ দেখবে না, তাই রাগ দেখিয়ে কোনো লাভ নেই তোমার, কারণ সমস্যাটা তোমার তাই সমাধান তাও তোমাকেই করতে হবে…..
.
উনার এমন কথা থতমত খেয়ে যায় আমি, আমি নাক ফুলিয়ে রাগ করি সেটা উনি কিভাবে জানে আর আমি যে এখন বন্দ রুমে ভিতরে আছি সেটাও উনি কিভাবে বুঝতে পেরে। আচ্ছা উনি আমার রুমে কোনো রকম সিসি ক্যামেরা সেটআপ করে দেয়নি তো, হঠাৎ করে সিসি ক্যামেরার কথাটি মাথাই আসতেই আমি ঝটপট চারপাশে তাকায়, কিন্তু কোথাও কিছু দেখতে না পেয়ে আবারও কৌতুহল নিয়ে তৃতীয় পৃষ্ঠাটি উল্টাতে চোখে পড়ল…..
.
—” আমাকে দূরে খুঁজতে যেও না রিত আমি তোমার চারপাশেই আছি, তবে আপাতত তোমার রুমে কোনো রকম সিসি ক্যামেরা সেটআপ করিনি আমি সো রিলাক্স,, এই কথা গুলো আমি আরও আগে লিখেছি তোমার জন্য তার মানে আমি জানি তুমি কখন কি করতে পারো….
.
উনাকে পরপর আমার মনে কথা গুলো বলতে দেখে, আমার কেন জানি সন্দেহ পূর্ণতা আরও দৃঢ় ভাবে বাড়ছে, আর সেই সাথে আগ্রহটাও, যার কারণে আমি উনার লেখাটা পড়েই নিজে নিজেই বলে উঠে…..
.
—” কিন্তু কিভাবে……
.
কথা বলে আমি আবারও চতুর্থ পৃষ্ঠা উল্টাতেই আর সেখানে চোখে পড়ল উনার লেখা এই কথা গুলো…..
.
—” তো লক্ষে পৌঁছাতে হলে আমার কোনো রকম সাহায্য তুমি পাবে না। একদমই না। নিজ থেকে খুঁজ তোমার কোথায়ই কি ছুটে গেছে,, সামনে এগিয়ে যাওয়ার আগে পিছনে ফিরে দেখ তোমার পিছনে কি ফেলে রেখে এসেছো,, তোমার লক্ষ যাই কিছু হোক না কেন তোমার মঞ্জিলটাই আমি,, তাই তুমি আমাকে তোমার সামনে নয় পিছনে খুজে দেখ সেখানেই পাবে আমাকে……
.
উনার এমন কথায় মূহুর্তে চমকে উঠলাম আমি, উনি প্রতিবারই আমাকে পিছনে ফিরে দেখার কথা বলছে মানে উনি আমাকে ইশারায় কিছু বুঝাতে চাইছে হয়তো অনেক বড় কিছু যা আমার সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে । কিন্তু আমি কোন পিছনে ফেরে দেখবো সেটাই তো বুঝতে পারছি না,, তাই আবারও কৌতুহল নিয়ে পঞ্চম পৃষ্ঠাটি উল্টায় আমি কিন্তু সেখানে কোনো রকম লেখা না দেখে অনেকটা পাগল পারা হয়ে যায় মূহুর্তেই, কারণ আমি এখনো উনার বলা কথা গুলো মানে বুঝতে পারিনি কিছুই, আর আমার এমন অবুঝ অবস্থায় উনি আমাকে মাঝ রাস্তায় রেখে এইভাবে সবটা শেষ করে দিতে পারে না, আমি সেটা করতে দিবো না উনাকে দরকার হলে উনার সামনে গিয়ে দাঁড়াবো আবারও, তবু আমার সকল প্রশ্নের উত্তর চাই-ই চাই । আর যদি উনি আমাকে উত্তর দিতে না পারে তো অন্তত একটা ক্রো তো দিয়ে যেতে হবে, আমার এমন সব চিন্তা ভাবনায় মাঝেই আমি উত্তেজিত হয়ে পাগল পাগল হয়ে ডাইরিটার পর পর প্রত্যেকটা পৃষ্ঠা উল্টাতে থাকি, কোথাও কিছু দেখতে পারছি না বলে কষ্টে কান্না করবো করবো ভাব, চোখ দুটো আমার টলমল করছে মূহুর্তেই তখনই হঠাৎ করে শেষের দিকের একটা পৃষ্ঠায় চোখে আঁটকে গেলো আমার কারণ সেখানটায় কিছু লেখা ছিল আর সেটা হলো……
.
—” উত্তেজিত হওয়ার কিছুই নেই, কারণ আমি তোমাকে অলরেডি প্রথম ক্রোটা দিয়ে ফেলেছি,, দ্বিতীয়টা হলো, তোমার নাস্তা নয়, তোমার লক্ষ্যটা ঠিক করবে তুমি কতটা হাঁটবে সামনে, তোমার রাস্তাটা ও এখানে তোমার লক্ষ্যটাও এখানে, ( পৃপ্তীলয়)…
.
পৃপ্তীলয় নামটা কেমন একটা চেনা চেনা লাগছে মনে হচ্ছে কোথাও শুনেছি নামটা আমি কিন্তু কোথায়, আমি মনে করা চেষ্টা করতে করতে সম্পূর্ণ ডাইরিটা ভালো করে একটু দেখে নেই কারণ রিদ খান আর কোথাও কোনো কিছু লেখেনি তারমানে আমাকে উনার এমন পঞ্চম বাক্যের মাঝে রহস্য উন্মোচন করতে হবে। আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ডাইরিটা বন্ধ করি, আর ভাবতে থাকি কেন উনি আমাকে বার বার পিছন ফিরে দেখার কথা বলছিল, আমার পিছনে কি ছুটে গেছে। পিছন, পিছন, পিছন, নিজের দুহাতে মাথা চেপে ধরে বসে ভাবতে থাকি কোন পিছনের কথা বলছিল সে, বেশ কিছুক্ষণ মন্ত হয়ে বসে থাকার পর হঠাৎ লাফিয়ে উঠি এই চিন্তা ভাবনায় সাথে যে, হ্যাঁ আমি পেরেছি উনি আমাকে বার বার অতীতে ফিরে দেখার কথা বলছিল। মানে আমি নিশ্চিত আমার অতীতে কিছু একটা মিস হয়ে গেছে যার জন্য আজ আমি ঐ গুপ্ত রুমে রহস্য গুলো বুঝতে পারছি না । আচ্ছা আমার সাথে ঐ গুপ্ত রুমে কোনো রকম জোরালোভাবে সম্পর্ক নেই তো, সম্পর্কের কথাটা ভেবেই আমি আবারও চমকে উঠি কারণ আমার সাথে যদি ঐ গুপ্ত রুমের সম্পর্ক থাকে তাহলে ঐ রুমের এতো রক্ত গুলো কিসের ছিল,, উফ কিছুই চিন্তা করতে পারছি না যতবার ভাবি এখন সমাধান হতে চলছে ততবারই আমি ঠিক আগেই জায়গায় দাঁড়িয়ে পরি,,,
.
এই কথা ভেবে নিয়ে উনার দেয়া দ্বিতীয় ক্রোটা ভাবতে থাকি, যেটা উনি আমাকে বলেছিল যে, তোমার রাস্তা নয়, তোমার লক্ষ্যটা ঠিক করবে তুমি কতটা হাঁটবে সামনে, তোমার রাস্তাটা ও এখানে তোমার লক্ষ্যটাও এখানে, ( পৃপ্তীলয়)…
.
.
তার মানে এই পৃপ্তীলয়ে মধ্যে সব রহস,আর আমার লক্ষ, রাস্তা দুটোই এখানে পৃপ্তীলয়ে ইয়েস আমি পেরেছি। কিন্তু এই পৃপ্তীলয় নাম কার কাছে শুনেছি আমি উফ, পৃপ্তীলয় হয়তো কোনো জায়গায় নাম নয়তো কোনো বস্তু নাম হতে পারে দুইটা থেকে একটা, আর এই পৃপ্তীলয়ে আমার সকল প্রশ্নের উত্তর রয়েছে, কারণ উনি নিজেই বলেছে, আমার রাস্তাটাও এখানে, আমার লক্ষ্যটাও এখানে পৃপ্তীলয়, তার মানে আমার এই নামের মধ্যে কোনো রহস্য রয়েছে যেটা আমাকে খুজে বের করতে হবে কিন্তু কিভাবে,, আর কার কাছে শুনেছিলাম এই নামটা আমি, কার কাছে, কার কাছে….
.
উত্তেজিত হওয়া মাত্রাটা যখন আমার চরম পর্যায়ে হয়ে
কথা গুলো ভাবতে থাকি তখনই আমার রুমের দরজায় কেউ টকটক শব্দ করে উঠে, দরজার খটখট শব্দে মনোযোগ ভস্ম হয় আমাম । আমি কপাল কুচকে বিরক্তি নিয়ে দরজা খুলতেই চোখ পড়ল জরিনাকে( কাজের মেয়ে) চা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, আমার রুমের দরজার সামনে । আমি জরিনা দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকাতেই জরিনা তার বত্রিশ পাঠি দাঁত বের করে হেসে চা নিয়ে হেলেদোলে আমার রুমের ভিতর প্রবেশ করে, আর জরিনাকে এমন হেলতে দুলতে দেখে আমার বিরক্তিটা যে আর একধাপ বেশি বেড়ে যায়, এখন এমনিতেই প্রচুর টেনশনে আছি আমি, অন্য সময় হলে হয়তো আমিও জরিনার সাথে সহমত পোষণ করতাম কিন্তু এই মূহুর্তে আমার নিজের মাথায় পাগল পাগল হয়ে আছে আর অন্য কিভাবে উৎসাহিত করবো পাগলামি করতে । আর আমার এই পাগল টাইপ মাথা নিয়ে আর জায় হোক মজা তো আর করা যায় না। জরিনা হেলতে দুলতে চা টা আমার পড়ার টেবিলে রাখতে রাখতে বলে উঠে…….
.
—” আপামনি এই নেন আন্নের চা…..
.
জরিনার কথায় কোনো রকম উত্তর না দিয়ে নিজেকে শান্ত রেখে বলি…..
.
—-” আপনি এখন যান তো খালা……
.
আমার এমন কথায় কিছুটা হতাশ হয় জরিনা হয়তো আরও কিছুক্ষণ আমার সাথে থাকতে চেয়েছিল কিন্তু আমি চলে যেতে বলিছি বলে বিনিময় সুরে বলে উঠে….
.
—” আইচ্ছা……
.
জরিনা কথাটা বলেই নিজের মতো করে আবারও চলে যেতে থাকে আমার রুম থেকে, আর আমি জরিনার আচ্ছা কথাটি শুনেই আবারও ভাবতে থাকি পৃপ্তীলয়ে কথা, চিন্তা ভাবনায় সাথে সাথে আস্তে আস্তে বিড় বিড়ও করতে থাকি পৃপ্তীলয় বলে বলে । আমার মুখে হঠাৎ করে পৃপ্তীলয় নামটা শুনে থেমে যায় জরিনা, পরে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে স্বাভাবিক কন্ঠে বলে উঠে…
.
—” হহ আপা আপনে পিতালয় দিইয়া কি করবেন…..
.
জরিনার এমন কথাটা শুনেই আমি চমকে উঠে তার মানে জরিনা জানে পৃপ্তীলয় কোথায় আছে, মানে পৃপ্তীলয় কি সেটা জরিনা জানে………
.
চলবে……….