#তপ্ত ভালোবাসা
#লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া
#পর্বঃ৩৬
.
🍁
—” তোমার এই মন ভুলানো মায়া কান্নাটা অন্য কোনো ছেলের সামনে কাঁদলে হয়তো তার মন গলতে পারে। রিদ খানের তো মন নামক বিষয়টিই নেই তাহলে গলবে কি করে হুমমম।
.
রিদ নামক লোকটির এমন কথায় কষ্টটা যে আরও বেশি পোহাতে হচ্ছে আমার। এজন্য যে, রিদ খানকে কখনো কাউকে দয়া মায়া দেখাতে দেখেনি আমি। তাহলে আজ আমাকে কিভাবে দয়া মায়া দেখাবে এই লোকটা। বিনা দোষে কাউকে মারতে যার হাত কাঁপে না বিন্দু মাত্র। সেই ব্যাক্তি কি আমাকে ছেড়ে দিবে দোষ থাকা শর্তেও? সেটা কোনো কালেই হবার নয়। বরং আমাকেও অন্য সবার মতো ঠাস ঠাস গুলি করে উড়িয়ে দিবে আকাশে উচ্চ প্রান্তে। এটা ভাবতে ভয়ে আরও সিটিয়ে যায় আমি। কি করে পারবো এই জঘন্য লোকটার হাত থেকে রক্ষা। কে দিবে আমাকে রিদ খানের কবল থেকে মুক্তি সেটা ভেবেই পাচ্ছিলাম না আমি। আমার ভয় পাওয়া ধাপটা যেন এবার আমার শরীরের শিরা উপশিরায় ভয়ে যাচ্ছে ক্ষনে ক্ষনে।
আমি কম্পিত অবস্থায় হিচকি তুলে কান্না করতে করতে উনাকে বলে উঠি………
.
—” প্লিজ আমাকে মারবেন না। আমি আপনার সামনে মিথ্যা কান্না করছি না সত্যি বলছি । বিশ্বাস না হলে আমার মাদার আর কেয়া বর্ষাকে জিগ্যেসা করে দেখতে পারেন। ওরা বলবে আপনাকে যে, আমি সত্যিই আপনাকে অনেক ভয় পাচ্ছি। আর কান্নাটাও আমার সেই ভয়ে থেকেই আসছে। কারণ আমিও গুন্ডা টাইপের লোকদের পছন্দ করিনা একদমই। তাই আপনি আমাকে বিশ্বাস করতে পারেন আমি মায়া কান্না করছি না।
.
কথা গুলো আমি সেদিন নিচের দিকে তাকিয়ে বললেও। তখন এতটা বুঝতে পেরেছিলাম আমার কথা গুলো শুনে মূহুর্তেই চুপ করে গিয়ে, কপাল কুচকে এসেছিল রিদ খানের। রিদ খান আমার দিকে বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে কপাল কুচকে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ করে আমার দিকে হালকা ঝুঁকে এসে বলে উঠে…….
.
—” বিশ্বাস জিনিস কোনো কালেই আমার মধ্যে ছিলা না । তোই বিশ্বাস নামক এই লাইনটা আপাতত আমি বাদ রাখছি তোমার বলা কথা গুলো থেকে। তো এখন আসি মেইম পয়েন্ট এ, সকালে ঘটনাটা মেনে নিলাম তুমি এক্সিডেন্টলি আমার সামনে এসেছিলে। কিন্তু তোমার দুপুরে আমার সামনে আসাটাকে কি বলবে হুম। তোমার ফ্রেন্ডের পিছনে লুকিয়ে ছিলে সেটা। আর এখন সোজা আমারিই পার্টিতে ঢুকে আমার আমারই রুমে চলে এলে। তোমার কি মনে হয় রিদ খানকে বোকা বানানোটা এতটা সহজ। যতটা সহজে তোমার রিদ খানকে পছন্দ না সেটা বললে আমাকে এটা। খুব সহজ হুমম। তোমার কাছে খুব সহজ মনে হচ্ছে।
.
রিদ খানের কথা গুলো শুনেই আমি মূহুর্তে থমকে যায়। এটা ভেবে যে তার মানে রিদ খান আমাকে দেখে ফেলেছিলো আগেই যে আমি দুপুরে ঐখানেই দাঁড়িয়ে ছিলাম বর্ষার পিছনে। এটা ভেবেই আমি চমকিত হয় গভীর ভাবে কিন্তু মুখে তা প্রকাশ করেনি। রিদ খানের সম্পূর্ণ কথা গুলোয় আমাকে কি বুঝালো রিদ খান তা হয়তো আমি সেদিন বুঝতে পারিনি ঠিকই কিন্তু সেদিনের পর থেকে বড্ড বাজে ভাবে ফেঁসে যায় আমি এই ব্যাক্তিটি কাছে। আমার বলা শেষ লাইনটা কারণে। আমি উনার দিকে তাকিয়ে থেকে অশ্রু সিক্ত চোখে বলে উঠি…………
.
—” সত্যি বলছি সবগুলো ঘটনা আমার ইচ্ছাতে হয়নি। আমি আগে জানলে কখনোই ঐসব স্থানে যেতাম না। আমি ভয় পায় আপনাদের মতো গুন্ডা টাইপের মানুষ গুলোকে। সেইজন্য আপনাকেও না। আমাকে যেতে দিন প্লিজ। আমি………
.
আমার বাকি কথা গুলো শেষ করার আগেই রিদ খান সজোড়ে আমাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে রুডলি ভাবে রেগেমেগে দাঁতে দাঁত চেপে ধরে। উনার এমন কান্ডে আরও ভরকে যায় আমি। প্রাণটা যেন যায় যায় অবস্থা। আমাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরার সাথে সাথেই রিদ খানের একটা হাত দিয়ে আমার দুই গাল শক্ত ভাবে চেপে ধরে উনার মুখ বরাবর উঁচু করে ধরে আমাকে। রিদ খানের মুখ বরাবর ধরতেই আমার চোখে পড়ল উনার টগবগিয়ে উঠা রক্ত লাল চোখ গুলো। যা আমার দিকে নিক্ষেপ করা, পরে আমার চোখে উনার চোখ রেখে রাগে রি রি করতে করতে বললো……..
.
—” তোকে পছন্দ করতে বলেছি আামকে। আর আমি গুন্ডা তাই না, তোর সাহস দেখে আমি আবাক হচ্ছি, আমার সামনে দাঁড়াতে ভয়ে বড় বড় মাফিয়াদের বুক কাঁপে। সেই তুই একটা পিচ্চি হয়ে আমাকে কথা শুনচ্ছিস। যে আমাকে তোর পছন্দ না। ইচ্ছা তো করছে বন্দুকের ছয়টা থেকে ছয়টা গুলিই তোর কপালে ঢুকিয়ে দিয়ে তোর কপালটাই গুলিতে উড়িয়ে দেয়। কি দেই উড়িয়ে। লাইফে ফাস্ট টাইম কোনো মেয়ের আমাকে পছন্দ না। মন তো চাইছে কি যে করি তোকে।
.
কথা বলেই আমাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয় সাথে সাথে। আমি উনার হঠাৎ ধাক্কায় তাল সামলাতে না পেরে ফ্লোরে পরি উপুড় হয়ে। তখন তিনি রাগে দেয়ালে সজোরে লাতি মেরে। আবারও আমার কাছে এসে আমার এক বাহু চেপে ধরে টেনে তুলে বলে উঠে……
.
—” না, না, না, এই না শব্দটাই সয্য করতে পারি না আমি লাইফ। আর সেটাই তোই বারবার বলছিস আমার। আর এই না টা তোর লাইফে সবচেয়ে বেশি বড় ভয়ানক কিছু হবে তোর জন্য আমাকে বলাতে। আমার লাইফে না টা যেকোনো ক্ষেত্রেই হোক না কেন আমি হ্যাঁ করেই দম নেই। তারপর সেই ব্যাক্তিটিকে উপরের টিকেট ধরিয়ে দেয় অনাহেষেই আমার না করার জন্য। আর আমাকে না বলার কারণে তোকেও এটা সাফার করতে হবে আর তার শুরুটা এখন থেকেই শুরু হলো। অল দ্যা বেস্ট…..
.
কথা গুলো বলার সাথে সাথেই আমাকে ছেড়ে দেয় সুইমিং পুলের মধ্যে ঠাস করে। আমাকে পানিতে ছেড়ে দেওয়ার সাথে সাথে উনি চলে যায় রাগান্তি হয়ে। আমি পানিতে পড়ার সাথে সাথে চটপট করতে থাকি নিজেকে বাঁচানোর জন্য। কারণ আমার সাতার জানা ছিল না তখন তাই পানিতে পড়ায় ডুবে যাওয়ার সম্ভবনায় বেশি ছিল। কিন্তু সুইমিং পুলের পানি বেশি না থাকায় আর আমার গলা অবধি পানি হওয়ায় সেইদিন সেই যাত্রায় ডুবার থেকে বেঁচে যায় আমি।
.
কিন্তু পানিতে ডুবার থেকে বেঁচে গেলেও। সেদিন রিদ খানের এমন কান্ড প্রচুর ভয় পেয়ে ছিলাম আমি। তাই সুইমিং পুলের সাইডের দেয়ার ধরে অঝোর কান্না করতে লাগি আমি। আমি সুইমিং পুলের পাশ ধরে দাঁড়িয়ে থেকে শব্দ করে কান্না করা সময়, আমার কান্না শব্দ পেয়ে সেই শব্দের উৎস খুঁজে হঠাৎ কোথায় থেকে বর্ষা আর কেয়া দৌড়ে আসে আমার কাছে আামকে বাঁচানো জন্য। হয়তো এতক্ষণ যাবত আমাকেই খুচ্ছিল সবটায় ওরা। আমি পানি পরে থাকার কারণে দুজনেই ভয় পেয়ে যায় প্রচন্ড ভাবে। তাই দ্রুততা সঙ্গে আমাকে পানির থেকে টেনে তুলে সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের সাথে জরিয়ে নেয় বর্ষা ও কেয়া। শীতে আমাকে কাঁপতে দেখে বর্ষা নিজের গায়ের শুকনো ওড়না আমার গায়ে ছড়িয়ে দিয়ে। বর্ষার বুকে আমাকে চেপে ধরে নিজের দু’হাতে সাথে উত্তেজিত কন্ঠে বলে উঠে…..
.
—“কি হয়েছে পৃপ্তী কান্না করছিস কেন? আর তুই পানি পড়লি বা কিভাবে বল?
.
পাশ থেকে কেয়াও উত্তেজিত কন্ঠে বলে….
.
—” হ্যাঁ পৃপ্তী কি হয়েছে তোর? বল আমাদের?
.
ওদের কথায় আমি হু হু শব্দ করে কান্না করে বসি বর্ষাকে জরিয়ে ধরে। আমার সাথে এতক্ষণ যাবত কি হয়েছে সেটা কেয়া আর বর্ষাকে খুলে বলেই আবারও ডুকরে কেঁদে উঠি বর্ষাকে জরিয়ে ধরা অবস্থায়।
.
আমার সম্পূর্ণ কথা গুলো শুনেই ক্ষেপ্ত হয় বর্ষা। আমার সাথে পর পর দুবার রিদ খান একিই দিনে খারাপ আচরণ করতে দেখে মূহুর্তে রেগেমেগে লাল হয়ে যায় বর্ষা। আমাকে নিজের ছোট বোন বা বাবা মা মতোই ভালোবাসায় বা শাসন করে থাকে। আর সবার থেকে আমাকে বর্ষা আঁকলে রাখার চেষ্টায় বর্ষার অধিকারটা আমার ওপর বরাবরই একটু বেশি। তাই বর্ষা রাগান্বিত হয়ে বলে উঠে……
.
—” ব্যাস অনেক হয়েছে। আমারই ভুল হয়েছে তোর হাতটা ছাড়া একদমই ঠিক হয়নি আমার। ঐ বাজে লোকটা পেয়েছে কি এই নিয়ে দুইবার তোকে চর্চার করে চলে গেল। আমরা এতিম বলে কি আমরা মানুষ না। রিদ খানের মতো বড়লোকদের সামনে না শব্দটাও উচ্চারণ করতে পারবো না আমরা। তুই চল পৃপ্তী আমার সাথে এই পাটিতে আর এক মূহুর্তেও থাকবো না। মাদার বলে এক্ষুনি চলে যাবো এই পাটি থেকে …..
.
কথা গুলো বলে আমাকে নিয়ে উঠে দাড়ায় বর্ষা ও কেয়া। এটা রিদ খানের বাড়ি বর্ষা সেটা জানতে পেরে আমাকে নিয়ে আর একটা মূহুর্তে উপেক্ষা না করে, বেড়িয়ে যায় রিদ খানের বাড়ির থেকে ফাদার ও মাদারের উদ্দেশ্য।
.
( আচ্ছা, আপিরা আপনারা সিওর তো যে পৃপ্তীই মায়া। না আসলে আমি একটু জানতে চাইছিলাম আরকি যে কার কার মনে হচ্ছে এটাই মায়া)
.
.
.
চলবে……….